খেলাধুলা

Dhyan Chand | রাতে চাঁদের আলোয় করতেন হকির অনুশীলন! তার থেকেই নাম ধ্যান 'চাঁদ'! ধ্যান চাঁদের শ্রদ্ধায় 'জাতীয় ক্রীড়া দিবস' পালন!

Dhyan Chand | রাতে চাঁদের আলোয় করতেন হকির অনুশীলন! তার থেকেই নাম ধ্যান 'চাঁদ'! ধ্যান চাঁদের শ্রদ্ধায় 'জাতীয় ক্রীড়া দিবস' পালন!
Key Highlights

কিংবদন্তি ধ্যান চাঁদের জন্মদিনে গত ১২ বছর ধরে দেশে পালন হয় জাতীয় ক্রীড়া দিবস। এই বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

আজ জাতীয় ক্রীড়া দিবস (National Sports Day)। প্রয়াত কিংবদন্তি ক্রীড়াবিদ মেজর ধ্যানচাঁদের (Major Dhyan Chand) জন্মদিনটিকেই জাতীয় ক্রীড়া দিবস হিসেবে পালন করে গোটা দেশ। প্রত্যেক বছরের মতো চলতি বছরেও ভারত (India) জুড়ে 'জাতীয় ক্রীড়া দিবস' পালন করা হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে নানান ছোট বড়ো ক্লাবে। এই বিশেষ দিনে দেশের সব ক্রীড়াবিদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে 'জাতীয় ক্রীড়া দিবস' উপলক্ষে ভাষণ (National Sports Day Speech ) দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Prime Minister Narendra Modi)। প্রয়াত ধ্যানচাঁদের প্রতিও শ্রদ্ধা জানান তিনি।

চলতি বছরে ১২ তম জাতীয় ক্রীড়া দিবস বা ন্যাশনাল স্পোর্টস ডে বা রাষ্ট্রীয় খেল দিবস পালন করছে ভারত। এই বিশেষ দিনে দেশের সকল ক্রীড়াবিদদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মোদি সোশ্যাল মাধ্যমে লেখেন, যে সমস্ত ক্রীড়াবিদরা দেশকে গর্বিত করেছেন, জাতীয় ক্রীড়া দিবসে তাদের সকলকে শুভেচ্ছা। জন্মবার্ষিকীতে মেজর ধ্যানচাঁদকেও সম্মান জানান  মোদি।

যে সমস্ত ক্রীড়াবিদরা দেশকে গর্বিত করেছেন, জাতীয় ক্রীড়া দিবসে আমার পক্ষ থেকে সকলকে শুভেচ্ছা। জন্মবার্ষিকীতে আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি মেজর ধ্যানচাঁদ জিকে।

 প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

জাতীয় ক্রীড়া দিবসের ইতিহাস । History of National Sports Day :

২০১২ সাল থেকে ২৯সে অগাস্ট দেশে জাতীয় ক্রীড়া দিবস পালন করে আসা হচ্ছে। চলতি বছরে ১২ তম জাতীয় ক্রীড়া দিবস পালন করছে ভারত। কিংবদন্তি ধ্যান চাঁদকে (Major Dhyan Chand) সম্মান জানানোর জন্যই এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়। ১৯২৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত হকির দুনিয়া দমিয়ে রাখতেন তিনি। ১৮৫ ম্যাচে ৪০০-র বেশি গোল করেছেন ধ্যান চাঁদ। এছাড়াও ১৯২৮, ১৯৩২ ও ১৯৩৬ পরপর তিনটি অলিম্পিক্সে ভারতকে সোনা জয়ের হ্যাটট্রিক করানোর পিছনে অন্যতম বড় ভূমিকা ছিল বিশ্বের সর্বকালের অন্যতম সেরা এই হকি খেলোয়াড়ের। এদিন গোটা দেশ জুড়ে জাতীয় ক্রীড়া দিবস পালন করা হয়। সমাজকে শরীর চর্চা এবং নানা প্রকার ক্রীড়ার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য উৎসাহিত করা হয়।

জাতীয় ক্রীড়া দিবস ২০২৩ এর থিম । Theme of National Sports Day 2023 :

প্রায় সবার জীবনেই সময়ের সঙ্গে জীবন থেকে খেলাধুলো-শরীরচর্চার চল কমছে। স্ট্রেস ও কাজের চাপের মাঝে তরতাজা থাকতে খেলার বিকল্প নেই, সেই কথাটাই এবারের থিমের বা প্রতিপাদ্যর মাধ্যমে দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার ভাবনা নেওয়া হয়েছে জাতীয় ক্রীড়া দিবসের দিন। চলতি বছরের ক্রীড়া দিবসের থিম, 'সমাজকে সুস্থ-সবল করে তুলতে অপরিহার্য খেলাধুলো'। শুধু শরীর-স্বাস্থ্য ভাল রাখাই নয়, খেলার মাধ্যমে তৈরি হয় একাত্মবোধ। ভবিষ্যতে পথ চলার ক্ষেত্রে একসঙ্গে সবাইকে নিয়ে চলার পাথেয় হিসেবে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করেন সকলে। সেই দিকেই নজর দেশেরও।

কিংবদন্তি মেজর ধ্যান চাঁদের জীবনী । Biography of the Legendary Major Dhyan Chand :

ভারতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে অন্যতম নক্ষত্র কিংবদন্তি ধ্যান চাঁদ(Major Dhyan Chand), হকির (Hockey) জাদুকর হিসেবেও পরিচিত। সবুজ ঘাসে তাঁর হকি স্টিকের কাজ মোহিত করেছিল দেশবাসী তথা গোটা বিশ্বকে। তিনি দেশকে এনে দিয়েছিলেন একাধিক খ্যাতি,সম্মান। তাই জন্যই কিংবদন্তির জন্মদিনের দিনই দেশে পালন করা হয় জাতীয় ক্রীড়া দিবস।

জন্ম ও ছেলেবেলা । Birth and Childhood :

১৯০৫ সালে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজের (Prayagraj, Uttar Pradesh) এক রাজপুত পরিবারে জন্ম নেন ধ্যান সিং।  সামেশ্বর সিং এবং সারধা সিং-র প্রথম সন্তান ধ্যান চাঁদ। সামেশ্বর সিং ছিলেন ব্রিটিশ অধীনস্ত ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক সিপাহী। বাবার ক্রমাগত বদিলর চাকরি হওয়ার ফলে চাঁদের জীবনেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বদল হয়েছে বারংবার। তবে মাত্র ছয় বছর প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণের পর তাঁর পড়াশোনা স্থগীত হয়। পরে যদিও বা ঝাঁসি লতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করার পর পুনরায় চাঁদের পড়াশোনা শুরু হয়। ১৯৩২ সালে গোয়ালিয়রের (Gwalior) ভিক্টরিয়া কলেজ থেকে স্নাতক লাভ করেন ধ্যান চাঁদ। ১৯২২ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ব্রিটিশ অধীনস্থ ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন সিপাহী হিসেবে যোগদান করেন তিনি। এখানেই তাঁর জীবনে সূত্রপাত হয় হকির।

হকির রাজা ধ্যাকান চাঁদ । Dhyan Chand, King of Hockey :

প্রথমে কুস্তিই (Wrestling) তাঁর জীবন জুড়ে থাকলেও ১৯২২ সাল থেকে হকি প্রবেশ করে দেন চাঁদের জীবনে। ১৯২২ থেকে ১৯২৬ সল্ পর্যন্ত ক্রমাগত সেনাবাহিনীর হয়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে নিয়মিত খেলতে থাকেন ধ্যান চাঁদ। হকির প্রতি তাঁর এতটাই টান, ভালোবাসা বেড়ে যায় যে দিনে খেলার সময় না পাওয়ার ফলে রাতে চাঁদের আলোয় তিনি অনুশীলন করতেন। তাই জন্যই ধ্যান সিং-কে তাঁর সতীর্থরা ধ্যান 'চাঁদ' বলতেন। এরপর থেকেই 'ধ্যান সিং' হয়ে উঠলেন 'ধ্যান চাঁদ'।

১৯২৭ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দল নিউজিল্যান্ডে (New Zealand) একটি সিরিজ খেলতে যায়। গোটা সিরিজে ১৮টি জয়, ২টি ড্র এবং মাত্র একটি ম্যাচে পরাজিত হয় ধ্যান চাঁদের দল।  ১৯২৮ সালে ব্রতোষ অধীনস্থ ভারতীয় দল প্রথম অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করে। ১৯২৮,১৯৩২,১৯৩৬ পর পর তিনবার অলিম্পিকে স্বর্ণ পদক জয় করে এই হকির দল। ১৯২৮ সালে আমস্টারডামে (Amsterdam) অলিম্পিকে ধ্যান চাঁদ সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। মাত্র ৫টি ম্যাচে ১৪টি গোল করেন তিনি। উল্লেখ্য, এই সময় ধ্যান চাঁদের ভাই রূপ সিং-ও ভারতীয় হকি দলের সদস্য ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৩২ সালে আমেরিকার লস এঞ্জেলস ( Los Angeles)- এ অনুষ্ঠিত অলিম্পিকে অপ্রতিরোধ্য হয়ে বিজয়ী হয় ভারতীয় দল। সমগ্র টুর্নামেন্টে ভারতীয় দল মোট ৩৫টি গোলে করে যার মধ্যে ধ্যান চাঁদ এবং তাঁর ভাইয়ের করা গোল সংখ্যা ২৫টি। ১৯৩৬ সালে বার্লিনে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক থেকেই জাতীয় হকি দলের অধিনায়ক হিসেবে নির্বাচিত করা হয় ধ্যান চাঁদকে। তাঁর অধীনত্ব করা কালীনই জার্মানিকে হারিয়ে ৮-১ গোলে হারিয়ে তৃতীয় বারের জন্য সোনা যেতে ভারতের দল। ফাইনালে হ্যাট্রিক করেন ধ্যান চাঁদ।

মোট তিনটি অলিম্পিকে ১২টি ম্যাচ খেলে সর্বমোট ৩৩টি গোল করেন হকির রাজা ধ্যান চাঁদ। উল্লেখ্য, বার্লিনে অলিম্পিকে ধ্যান চাঁদের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়ে পড়েন তৎকালীন জার্মান প্রধান হিটলার (Hitler)। যার ফলে চাঁদকে জার্মানির নাগরিকত্ব গ্রহণের এমনকি জার্মান সেনাবাহিনীর কর্নেল হিসেবে নিযুক্তর প্রস্তাব দেন হিটলার। যদিও এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত মণিপুর, বার্মা প্রভৃতি স্থানের যুদ্ধে অংশ নেন ধ্যান চাঁদ।

ধ্যান চাদ শেষ ১৯৪৮ সালে ইস্ট আফ্রিকান সিরিজে ভারতীয় হকি টিমের অধিনায়ক ও সক্রিয় সদস্য হিসেবে অংশ নেন। সেই সময় ৪০ বছর বয়স হলেও সেই সিরিজে ২২ টি ম্যাচে ৬১টি গোল করেন তিনি। অন্যদিকে, ধ্যান চাদ ৩৪ বছরের কর্মজীবনের শেষ 'মেজর' পদমর্যাদায় থাকাকালীন ১৯৫৬ সালের ২৯সে অগাস্ট অবসর নেন তিনি। সেই বছরই তাঁকে 'পদ্মভূষণ' (Padma Bhushan') সম্মানে সম্মানিত করে ভারত সরকার। পরবর্তীকালে পাতিয়ালার জাতীয় হোকি সংস্থার প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ধ্যান চাঁদ। তবে শেষ বয়সে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হন কিংবদন্তি। ১৯৭৯ সালের ৩রা ডিসেম্বর ইহলোক ত্যাগ করেন ধ্যান চাঁদ।

মেজর ধ্যান চাঁদকে সম্মান জানাতে তাঁর মৃত্যুর ঠিক এক বছর পরই তাঁর নামাঙ্কিত  একটি ডাক টিকিট প্রকাশ করা হয়। ২০০২ দিল্লির জাতীয় স্টেডিয়ামটি ধ্যান চাঁদের নাম নামাঙ্কিত করা হয়। ক্রীড়া জগতে ভারতের সর্বোচ্চ পুরস্কারের নাম বদলে ধ্যান চাঁদ পুরস্কার করা হয়।