Labour Day | গোটা বিশ্বের থেকে ভিন্নভাবে শ্রমিক দিবস পালন করা হয় আমেরিকায়! জানেন কীভাবে ভারতের ইতিহাসে যুক্ত হয় এই দিবস?

Wednesday, May 1 2024, 12:57 pm
highlightKey Highlights

ভারত সহ একাধিক দেশেই ১লা মে এই বিশেষ দিন পালন করা হয়। তবে আমেরিকা এই দিন পালন করে না মে দিবস।


প্রতি বছর ১লা মে প্রায় গোটা বিশ্ব জুড়ে পালিত হয় মে দিবস বা আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। ভারত সহ একাধিক দেশেই ১লা মে এই বিশেষ দিন পালন করা হয়। তবে আমেরিকা এই দিন পালন করে না মে দিবস। এর নেপথ্যে কারণ জানার আগে জেনে নেওয়া যাক শ্রম দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে।
 আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসের ইতিহাস : 
১৮৮৬ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটে নিহত শহিদদের আত্মত্যাগকে মনে রেখে এই দিনটি পালিত হয়। সেদিন দৈনিক ৮ ঘণ্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত করেছিলেন। তাঁদের ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি কেউ একজন বোমা ছোঁড়ে। তার পরে পুলিশ শ্রমিকদের উপর গুলি চালাতে শুরু করে। ফলে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হন। ১৮৮৯ সালে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব করেন রেমন্ড লাভিনে। এভাবেই আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের সূচনা।


১৮৯১ সালে প্যারিসেই আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। স্বীকৃতি পায় মে দিবস। ১৯০৪ সালে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষ্যে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সকল গণতান্ত্রিক দল এবং ট্রেড ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে সব শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে ‘বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার’ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন, চিন, কিউবা-সহ বিশ্বের অনেক দেশেই মে দিবস একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। সে সব দেশে এই উপলক্ষ্যে সামরিক কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়।


ভারতে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসের ইতিহাস : 
১৯২৩ সালে লেবার পার্টি অব হিন্দুস্তান ভারতে এই দিনটি পালন করার সিদ্ধান্ত নেয়। চেন্নাইয়ে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের লাল পতাকা তোলা হয়।


আমেরিকায় ভিন্ন দিনে পালন শ্রম দিবস :
বিশ্বব্যাপী ১লা মে শ্রমিক দিবস পালন হলেও আমেরিকার ক্ষেত্রে ঘটনা একটু আলাদা। শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্র হয়ে ওঠা আমেরিকার নিউইয়র্কে ১৮৮২ সালে নাইটস অব লেবার সংগঠনের ডাকে বড় সভা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ওই বছরের ৫ মে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের অংশগ্রঞনে নিউইয়র্কের রাস্তায় শ্রমিকদের বড় মিছিল হয়, যার মূল আয়োজক ছিল সেন্ট্রাল লেবার ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের সেক্রেটারি ম্যাথিউ ম্যাগুয়ার ওই দিনটিতে শ্রমিকদের জন্য ছুটি ঘোষণার দাবি তোলেন। ১৮৮৭ সালে প্রথম অঙ্গরাজ্য হিসেবে ওরেগন এই দাবি মেনে শ্রমিক দিবসের ছুটি ঘোষণা করে।


এদিকে শিকাগোর শ্রমিক আন্দোলনের রক্তাক্ত ঘটনার পর আমেরিকায় শুরু হয় শ্রমিক ইউনিয়নবিরোধী আন্দোলন। একই সময়ে অনেক কারখানা ও প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটি ও কর্মঘণ্টার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে শুরু করে। তাই ‘মে দিবস’ পালন করা হবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধায় ছিল মার্কিন কর্মকর্তারা। যুক্তিটা ছিল এমন—শ্রমিকদের সাপ্তাহিক ছুটি ও অন্যান্য দাবিদাওয়া নিয়ে তো ভাবা হচ্ছেই। এদিকে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য তত দিনে ৫ সেপ্টেম্বর শ্রমিক দিবসের ছুটি দেওয়া শুরু করে। ফলে ১৮৮৯ সালে ওঠা প্রস্তাবের সাথে বিদ্যমান শ্রমিক দিবস মিলিয়ে একটা বিতর্কের শুরু হয়। শ্রমিক নেতাদের একাংশের ভাষ্য ছিল—১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে শ্রমিকদের রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে বেশি প্রাসঙ্গিক।

কিন্তু অন্য অংশ এরই মধ্যে চালু হওয়া সেপ্টেম্বরের শ্রমিক দিবসের পক্ষেই অবস্থান নেন, যা মার্কিন প্রশাসনেরও পক্ষে যায়। কারণ, তা ছাড়া মে দিবস পালনে উৎসাহ দিলে শ্রমিকরা আবারও জড়ো হওয়ার সুযোগ পাবে এবং সেখানে সহিংসতা হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। আর এই সুযোগটাকেই বেশ চাতুর্যের সঙ্গে কাজে লাগান তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড। তিনি সেপ্টেম্বরের প্রথম সোমবার শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর ১৮৯৪ সালে দিনটি সরকারি ছুটি হিসেবে গৃহীত হয়।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File