Saraswati Puja 2024 | প্রাচীন বৈদিক যুগ থেকে সরস্বতী হিন্দুর অন্যতম দেবী হিসেবে পূজিত! জানুন বাগদেবীর সম্পর্কে নানান পৌরনিক কাহিনী!

Wednesday, February 14 2024, 10:18 am
highlightKey Highlights

কোথাও দেবীর চার হাত, কোথাও আবার দুটি। শুধু হিন্দু ধর্মেই নয়, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মেও দেবী সরস্বতীর উল্লেখ পাওয়া যায়। সরস্বতী পুজোতে জানুন সরস্বতী দেবী সম্পর্কে বেশ কিছু অজানা কাহিনী।


বাগদেবীর আরাধনায় মেতেছে সকল বাঙালি। সক্কাল সক্কাল পড়ুয়ারা স্নান সেরে মায়ের কাছে বিদ্যা-বুদ্ধির জন্য সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) সেরে অঞ্জলি সেরেছেন। ১৪ই ফেব্রুয়ারি সরস্বতী পুজো ২০২৪ (Saraswati Puja 2024) পালিত হচ্ছে। বসন্ত পঞ্চমীর দিনে জ্ঞানের সরস্বতী দেবী (Saraswati Devi) আবির্ভূত হয়েছিলেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের স্রষ্টা ব্রহ্মাদেব যখন পৃথিবী সৃষ্টি করেছিলেন, তখন তিনি অনুভব করেছিলেন কোনও কিছু অনুপস্থিত রয়েছে। শব্দ সঞ্চারের জন্য তিনি তাঁর কমণ্ডলু থেকে পৃথিবীতে জল ছিটিয়ে দেন। আর ঠিক সেই সময়ই পৃথিবী কাঁপিয়ে আবির্ভূতা হয়েছিলেন সরস্বতী ঠাকুর (Saraswati Thakur)। হাতে তাঁর বীণা, জপমালা ও বই। দেবী সরস্বতী তার বীণার সঙ্গে বসন্তের রাগ বাজিয়েছিলেন। সৃষ্টি তাঁর বীণার ধ্বনি থেকে বাক ও সঙ্গীত লাভ করে। দেবী জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়েছেন, যা থেকে বিশ্বকে জ্ঞানের আলো প্রসারিত হয়েছে। তবে দেবীর প্রচলিত রূপ ছাড়াও আরও নানান রূপ রয়েছে। কোথাও দেবীর চার হাত, কোথাও আবার দুটি।

শুক্লপক্ষের পঞ্চমীর দিনে ব্রহ্মার মুখ থেকে সরস্বতী দেবীর আবির্ভাব ঘটে
শুক্লপক্ষের পঞ্চমীর দিনে ব্রহ্মার মুখ থেকে সরস্বতী দেবীর আবির্ভাব ঘটে

সরস্বতী ব্রহ্মার কন্যা, কিন্তু ব্রহ্মা সরস্বতীর রূপে মুগ্ধ হয়ে তাঁকেই নাকি বিবাহ করে বসেন। তবে এর থেকে আলাদা কাহিনিও রয়েছে। স্কন্দপুরাণে সরস্বতীকে শিবের কন্যা বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। বাঙালিরাও সরস্বতীকে শিবের কন্যা হিসেবেই পুজো করে থাকেন। শুধু হিন্দু ধর্মেই নয়, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মেও দেবী সরস্বতীর উল্লেখ পাওয়া যায়। এছাড়া তন্ত্রেও সরস্বতীর উল্লেখ আছে। দক্ষিণ ভারতে দেবী সরস্বতীকে নবরাত্রির সময়েই পুজো করা হয়। অনেকে বলেন, সরস্বতী দেবী (Saraswati Devi) এর চার হাত নাকি মানুষের মন, বুদ্ধিবৃত্তি, সচেতনতা ও অহমের প্রতীক। কারও কারও মতে, সরস্বতীর চার হাত ঋক, সাম, যজুঃ ও অথর্ব এই চার বেদেরও প্রতীক। তবে সাধারণত উত্তর ভারতেই দেবীর এই ছবি বা মূর্তি পূজিত হয়। তবে বাঙালিরা সাধারণত দু’হাতের সরস্বতী মূর্তি বা ছবিরই পুজো করেন। বাঙালিরা যে দেবীর পুজো করেন, তাঁর সঙ্গে বাকি ভারতের সরস্বতীর ভাবনায় কিছুটা ফারাক রয়েছে। সেখান থেকেই দেবীর অন্য ধরনের রূপের জন্ম বলে মনে করা হয়। এখানে দেবীকে অনেক বেশি মানবী বলে মনে করা হয়।

সরস্বতী ঠাকুরের ইতিহাস : 

মাঘ মাসের শুল্কা পক্ষের পঞ্চমী তিথি বা দিনটি বসন্ত পঞ্চমী তিথি। এই বসন্ত তিথিতেই বাগদেবী অর্থাৎ সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja) হয়।‌ বলাই বাহুল্য রীতি অনুসারে মাঘ মাসের শুক্ল পঞ্চমী তিথি আর বসন্তের আগমণ। এই দুই মিলে এর অন্য আরেক নাম বসন্ত পঞ্চমী। পুরান মতে, শুক্লপক্ষের পঞ্চমীর দিনে ব্রহ্মার মুখ থেকে সরস্বতী দেবীর আবির্ভাব ঘটে । ঋকবেদে সরস্বতী একজন দেবীরূপে বর্ণিত আছে । সেই প্রাচীন বৈদিক যুগ থেকে সরস্বতী হিন্দুর অন্যতম দেবী হিসেবে মর্যাদা পান ও পূজিত হন। সরস্বতীর রূপকল্প বর্ণনায় পুরাণে উল্লেখ আছে কোথাও দ্বিভুজা কোথাও চতুর্ভূজা এই দুই হাতেই পূজিত হন । দুই হাতে বীণা, পুস্তক থাকে চতুর্ভুজের চার হাতে কলম বীণা পুস্তক ও অক্ষরমালা থাকে। শাস্ত্রীয় প্রথা আচার বিধি মেনে এই পুজো হিন্দুরা জাঁকজমকে করে। হিন্দুর বারো মাসে তেরো পার্বণের এটি বিশেষ আরেক পার্বণ বলে প্রচলিত। বাংলায় সরস্বতী পুজোয় দেবীর দুটো হাত ও রাজহাঁসের পিঠে বসে আছে এমন মূর্তি দেখা যায়। রাজহংস হল জলে এবং স্থলে এবং অন্তরীক্ষে অর্থাৎ সব জায়গাতেই হাঁসের গতি সমান। তেমনি জ্ঞান ও দক্ষতার গতি সব জায়গাতেই সমান ভাবে প্রকাশ পায়। এছাড়াও বিশ্বাস করা হয়, একমাত্র রাজহাঁস জল ও দুধের পার্থক্য করতে পারে অর্থাৎ দুধে জল মিশিয়ে দিলে তার মধ্যে দুধ ও জল কে আলাদা করে দিতে পারে। আর সেই কারণেই জ্ঞানসাধনার ক্ষেত্রেও কিন্তু হাঁসের এই স্বভাব অনেকটাই তাৎপর্য বহন করে থাকে। সেক্ষেত্রে ভালো জ্ঞান গ্রহণ করা হোক, আর খারাপ কিছু বর্জন করা হোক।

কাহিনী ও পুরাণ অনুযায়ী দেবী সরস্বতী ব্রহ্মার মুখ থেকে উৎপত্তি লাভ করেন। দেবী সরস্বতীর সমস্ত রকম সৌন্দর্য ও দীপ্তির উৎস হল ব্রহ্মা। পুজোর দিন পুজোর জন্য দেবী সরস্বতীর মূর্তি শ্বেতবস্ত্র অর্থাৎ সাদা রঙের কাপড় পরিধান করে থাকে, যা পবিত্রতার নিদর্শন। বলাবাহুল্য, সরস্বতী পুজো প্রাচীনকালের বর্তমান সরস্বতী পুজোর মত ছিলনা। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকি কাঠের উপর তালপাতা, দোয়াত-কলম রেখে পুজো করার প্রথা ছিল। কেন না বিদ্যার সমস্ত সরঞ্জাম যেমন বই-খাতা, কালির দোয়াত, খাগের কলম, তালপাতা যার উপরে প্রাচীনকালে লেখা হতো, সবকছুকে দেবী সরস্বতী হিসেবে মানা হতো। সেই কারণে প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে এমনভাবে সরস্বতী পুজোর প্রচলন ছিল। 

কাহিনী ও পুরাণ অনুযায়ী দেবী সরস্বতী ব্রহ্মার মুখ থেকে উৎপত্তি লাভ করেন
কাহিনী ও পুরাণ অনুযায়ী দেবী সরস্বতী ব্রহ্মার মুখ থেকে উৎপত্তি লাভ করেন

সরস্বতী ঠাকুর (Saraswati Thakur) এর নানা রকম মূর্তি আছে, যেমন অন্য নানা দেবদেবীরও। তবে সচরাচর তিনি চতুর্ভুজা, এবং তাঁর চার হাতে বই, মালা, বীণা এবং জলপাত্র কোথাও বা পাত্র থাকে না, বীণাটি দু’হাতে ধরা থাকে। বেদ যেহেতু চারটি ঋক, সাম, যজুঃ এবং অথর্ব, তাই সরস্বতীর চারটি হাতকে চার বেদের প্রতীক বলে ধরে নেওয়া হয়। তবে শাস্ত্রমতে চতুর্ভুজের অন্য অর্থ আছে। নানা মুনির নানা মত। একটি মতে, বই হল গদ্যের প্রতীক, মালা কবিতার, বীণা সঙ্গীতের, আর জলপাত্র পবিত্র চিন্তার। যেহেতু সরস্বতী বিদ্যার দেবী তাই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই এ উৎসব অনেক বড় করে পালিত হয়। আর সেখানে দল বেঁধে অঞ্জলি দেয় শিক্ষার্থীরা। মানুষের ভেতরের পশুকে নিবৃত্ত করে জ্ঞান দান করেন বিদ্যার দেবী সরস্বতী।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File