দেশ

Jawaharlal Nehru Children's Day | নেহরুর জন্মদিনে নয়, আগে শিশু দিবস পালিত হতো অন্যদিনে! জানুন জওহরলাল নেহরু-শিশু দিবসের সম্পর্ক!

Jawaharlal Nehru Children's Day | নেহরুর জন্মদিনে নয়, আগে শিশু দিবস পালিত হতো অন্যদিনে! জানুন জওহরলাল নেহরু-শিশু দিবসের সম্পর্ক!
Key Highlights

জওহরলাল নেহরুর জন্ম তারিখে অর্থাৎ ১৪ নভেম্বর দেশ জুড়ে পালিত হয় শিশু দিবস। জানুন কেন এই দিনেই শিশু দিবস পালন হয়? জওহরলাল নেহরু ও শিশু দিবসের কী সম্পর্ক? জানুন শিশু দিবসের পটভূমি।

প্রত্যেক বছর ১৪ই নভেম্বর গোটা ভারত জুড়ে পালন করা হয় শিশু দিবস (Children's Day)। শিশু সুরক্ষা, শিশু স্বাস্থ্য ও শিশু শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং ব্যবস্থা নিতেই এই দিন পালন করা হয়। তবে আগে এই তারিখে অর্থাৎ ১৪ই নভেম্বর দেশে শিশু দিবেন পালন করা হতো না। পূর্বে মার্কিন মুলুকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারতেও শিশু দিবস পালিত হত ২০ নভেম্বর। তাহলে কেন বর্তমানে ১৪ই নভেম্বর পালিত হয় এই বিশেষ দিন?

শিশু দিবস (Children's Day) এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে একটি নাম, 'চাচা'। এই 'চাচা' আর কেউ নন পন্ডিত জওহরলাল নেহরু (Pandit Jawaharlal Nehru)।নেহরুর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত শিশু দিবস পালিত হত ২০ নভেম্বর। তবে তাঁর মৃত্যুর পর এই দিবসের তারিখ পরিবর্তন করা হয়। ২০ তারিখের পরিবর্তে ১৪ নভেম্বর নেহরুর জন্মদিনে পালন করা শুরু হয় শিশু দিবস।  ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর পর জওহরলাল নেহরুর জন্ম তারিখ (Jawaharlal Nehru Date of Birth)কেই বেছে নেওয়া হয় শিশুদের উদযাপনের জন্য, কারণ শিশু সুরক্ষা ও শিশু শিক্ষার প্রসারের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান ছিল অনস্বীকার্য।

জওহরলাল নেহরু ।  Jawaharlal Nehru : 

১৮৮৯ সালের ১৪ই নভেম্বর এলাহাবাদ শহরে জন্ম নিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জহহরলাল নেহরু। পিতা মতিলাল নেহেরু ও মা স্বরুপ রানি। আইন ব্যবসার কারণে মতিলাল নেহেরু এলাহাবাদে বসবাস শুরু করেন এবং সেখানে একজন আইনজ্ঞ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। এই সময়েই মতিলাল নেহেরু কংগ্রেসের রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন। জওহরলাল ও তার দুই বোন বিজয়া লক্ষ্মী ও কৃষ্ণা "আনন্দ ভবন" নামক বিশাল বাড়িতে পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে বড় হয়ে ওঠেন। তৎকালীন ভারতের সবথেকে আধুনিক স্কুলে পড়ার পর প্রায় ১৫ বছর বয়সে নেহেরু ইংল্যান্ডের হ্যারোতে চলে যান। সেখানে তিনি প্রকৃতি বিজ্ঞানের উপরে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রিনিটি কলেজে শিক্ষালাভ করেন। এরপর তিনি কেমব্রিজেই ব্যারিস্টারি পড়া শুরু করেন। ইংল্যান্ডে পড়ার সময় নেহেরু ভারতীয় ছাত্র সংসদের রাজনীতিতে সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এই সময়েই তিনি সমাজতন্ত্রের প্রতিও আকৃষ্ট হন। এরপর ভারতে ফিরে এসে ১৯১৬ সালের ৮ ই ফেব্রুয়ারি জওহরলাল নেহেরু কমলা কাউলকে বিয়ে করেন। তখন তার বয়স ২৭ আর তাঁর স্ত্রীর বয়স ছিল ১৬। পরের বছরেই কমলা কাউলের গর্ভে তাদের একমাত্র কন্যা ইন্দিরা প্রিয়দর্শীনির জন্ম হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে একজন আইনজ্ঞ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন নেহেরু। তবে সেই সময় ভারতীয় রাজনীতির সঙ্গেও জড়িয়ে পড়েন তিনি। এরপর ১৯১৬ সালে লক্ষ্মৌ সম্মেলনে কংগ্রেস ভারতের স্বাধীনতার আহ্বান জানায়। সে সময় পিতার হাত ধরেই নেহেরু কংগ্রেসের রাজনীতিতে যোগ দেন।

গান্ধী চাম্পারান ও খেদাতে কৃষক ও মজুরদের ব্রিটিশ সরকারের চাপিয়ে দেওয়া ট্যাক্সের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য সংগঠিত করেন। এই চাম্পারান আন্দোলনের সময়ই নেহেরু গান্ধীর সঙ্গে পরিচিত হন এবং তাঁকে সমর্থন করা এবং তাঁর নির্দেশ মতো চলতে থাকেন। মহাত্মা গান্ধীর ভাবদর্শন, নীতি অনুসরণ করে নেহেরু পরিবার তাদের ভোগ-বিলাসের জীবন ত্যাগ করেন। তখন থেকেই নেহেরু খাদির তৈরি কাপড় পড়া শুরু করেন। ক্রমশ একজন বিশিষ্ট সংগঠক হিসেবে নেহেরু উত্তর ভারতে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেন, বিশেষ করে যুক্ত প্রদেশ, বিহার ও কেন্দ্রীয় প্রদেশগুলোতে। এরপর ১৯২০ সালে নেহেরু নিখিল ভারত শ্রমিক ইউনিয়ন কংগেসের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯২৪ সালে এলাহাবাদ মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে এই পদে দুই বছর আসীন থাকেন নেহেরু। ১৯২৮ সালে মতিলাল নেহেরুর নেহেরু রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। এতে ব্রিটিশ সরকারের কাছে ভারতের জন্য "ডোমিনিয়ন স্ট্যাটাস" দাবী করা হয়। মহাত্মা গান্ধী ঘোষণা করেন, দুই বছরের মধ্যে ভারতকে ডোমিনিয়ন স্টাটাস দেওয়া না হলে তিনি ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করবেন। এরপর ১৯২৯ সালের লাহোর সম্মেলনে গান্ধীর পরামর্শে নেহেরুকে কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত করা হয় এবং নেহেরু রাভি নদীর তীরে এক জনসভায় ভারতের স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন।

১৯৩০ সালের ২৬সে  জানুয়ারি কংগ্রেস পূর্ণ স্বরাজ আন্দোলনের ডাক দেয়। লবণের উপর করারোপ করায় নেহেরু গুজরাটসহ দেশের অন্যান্য অংশে সফর করে গণআন্দোলনের ডাক দেন। তবে এসময় গ্রেফতার হন নেহেরু। এরপর ১৯৩৫ সালে জেল থেকে মুক্ত হয়ে নেহেরু সপরিবারে ইউরোপ যান। ১৯৩৬ সালে নেহেরু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং এর লক্ষ্মৌ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের ভাইসরয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে কোন রূপ আলোচনা ছাড়াই, ভারতের পক্ষে মিত্রশক্তির বিরূদ্ধে যুদ্ধে যোগদানের ঘোষণা দেন। এর প্রতিবাদে সকল কংগ্রেসী জনপ্রতিনিধি তাদের পদ থেকে ইস্তফা দেন। যুদ্ধের পর ভারতীয়দের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রদান করা হবে এই আশায় নেহেরু ব্রিটিশদের সমর্থন দেন। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কংগ্রেস নেতাদের বিশ্বাস ভঙ্গ করলে গান্ধী ও বল্লভভাই প্যাটেল আন্দোলনের ডাক দেন। রাজাগোপালচারী এর পক্ষে ছিলেন না, অন্যদিকে নেহেরু ও মাওলানা আজাদও এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ করেন। তবে অনেক আলোচনার পরে কংগ্রেস "ভারত ছাড়" আন্দোলনের ডাক দেয়। পক্ষে না থাকলেও, দলের সিদ্ধান্তে নেহেরু "ভারত ছাড়" আন্দোলনকে জনপ্রিয় করতে ভারতের বিভিন্ন স্থানে সফর শুরু করেন। অবশেষে ব্রিটিশ সরকার ১৯৪২ সালের ৯ ইআগস্ট নেহেরু ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় কংগ্রেস নেতাকে গ্রেফতার করে। তারা প্রায় সকলেই ১৯৪৫ এর জুন মাস পর্যন্ত কারাবন্দি ছিলেন। এরপর ১৯৪৫ সালে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৪৬-এর নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন নেহেরু।

উল্লেখ্য, নির্বাচনের আগে থেকেই নিখিল ভারত মুসলিম লীগ নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র পাকিস্তানের দাবি জানাচ্ছিলেন। এক্ষেত্রে নেহেরু ভারত বিভাগকে সমর্থন করেন। অবশেষে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হয় এবং ৫ ই আগস্ট, ১৯৪৭ সালে নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।  তাঁর শাসনামলে ভারতে ব্যাপক শিল্পায়ন হয়। ২৭ মে, ১৯৬৪ পর্যন্ত তিনি ভারতে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

জওহরলাল নেহরু ও শিশু দিবস । Jawaharlal Nehru and Children's Day :

বর্তমানে ১৪ই নভেম্বর, জওহরলাল নেহরুর জন্ম তারিখ (Jawaharlal Nehru Date of Birth)এর দিন শুধু দিবস পালন করা হলেও আগে এই দিনে এই দিবস পালন করা হতো না। ১৯৫৪ সালের ২০ নভেম্বর দিনটিকে শিশু দিবস হিসেবে পালনের জন্য ঘোষণা করেছিল রাষ্ট্র সংঘ। সেই ঘোষণা অনুযায়ী ভারতেও পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ২০ নভেম্বর দিনটিকেই পালন করা হত শিশু দিবস হিসেবে। তবে ১৯৬৪ সালে ২৭সে মে জওহরলাল নেহরুর প্রয়াণের পর সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রতি বছর ১৪ই নভেম্বর দিনটিই পালিত হবে শিশু দিবস হিসেবে। 

দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেহরুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তবে রাজনৈতিক পরিচয় ছাড়াও তিনি শিশুদের কাছে ছিলেন প্রিয় মানুষ। ১৯৫৫ সালে তিনি 'চিলড্রেনস ফিল্ম অফ সোসাইটি' (Children's Film of Society) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সংগঠনটি শুধুমাত্র শিশুদের জন্য সিনেমা তৈরি করে। শিক্ষাক্ষেত্রে নানা প্রকল্প গড়ে তোলার নেপথ্যেও অবদান রয়েছে নেহরুর। তাঁর একাধিক বক্তৃতায় বারবার শিশু শিক্ষার গুরুত্ব ফুটে উঠেছে। তাঁর মতে, শিশুদের শিক্ষাই ঠিক করে দেয় আগামী দিন দেশের ভবিষ্যৎ কেমন হবে।

এরপর ১৯৫৯ সালে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে শিশুদের অধিকার নিয়ে প্রচারের কথা বলা হয়। শিশুদের প্রিয় চাচা নেহরুর জন্মদিনকেই শিশু দিবস (Children's Day) হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিশু দিবসের পটভূমি (Children's Day Background) মতো শিশুদের অধিকারকে মূলত চারটি মূল ভাগে বিভক্ত করা হয় তথা শিশুদের জীবনের অধিকার, সুরক্ষার অধিকার, অংশগ্রহণের অধিকার ও বিকাশের অধিকার। শিশুদের সুরক্ষা, অধিকার সম্পর্কে মানুষকে আরও সচেতন করার চেষ্টা করা , শিশুদের সঠিক শিক্ষা, সংস্কৃতিতে বড় হয়ে উঠতে পারে সেই সচেতনার পাঠ দেওয়া, শিশুদের সঠিক পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতনতা, সবই শিশু দিবসের পটভূমি (Children's Day Background)র গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

উল্লেখ্য, অনেক দেশে আবার ১লা জুন পালিত হয় শিশু দিবস। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে জুনের দ্বিতীয় রবিবার পালিত হয় শিশু দিবস। পাকিস্তানে শিশু দিবস উদযাপিত হয় ১লা জুলাই, চিনে শিশু দিবস পালন করা হয় ৪ঠা এপ্রিল। অন্যদিকে ব্রিটেনে ৩০সে অগাস্ট শিশু দিবস পালন করা হয়। জাপানে শিশু দিবস ৫ই মে, পশ্চিম জার্মানিতে এই দিনটি পালন করা হয় ২০ সেপ্টেম্বর। তবে সব দেশেই শিশু দিবস পালনের উদ্দেশ্য একটাই, দেশের শিশুদের অধিকার ও তাদের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করা ও সে সম্পর্কে সচেতনতার বার্তা জনসমাজে প্রচার করা।