অন্যান্য

Nyara Pora | 'আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া কাল আমাদের দোল'! জানেন এই 'ন্যাড়া পোড়া' বা 'হোলিকা দহন' কেন পালন করা হয়?

Nyara Pora | 'আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া কাল আমাদের দোল'! জানেন এই 'ন্যাড়া পোড়া' বা 'হোলিকা দহন' কেন পালন করা হয়?
Key Highlights

দোল পূর্ণিমা বা হোলি উৎসবের আগের দিনে চাঁচড়, ন্যাড়া পোড়ার এই প্রথা রয়েছে হিন্দু ধর্মে। হোলি ও দোল নিয়ে নানা মতভেদ থাকলেও দোলের আগের দিন রাতে সব জায়গায় এই হোলিকা দহন পালিত হয়। শুধু কোথাও বলে চাঁচড় পোড়া, কোথাও আবার ন্যাড়া পোড়া, আবার কোথাও হোলিকা দহন নামে পরিচিত।

রাত পোহালেই ২০২৪ সালের হোলি (holi in 2024)। প্রত্যেক বারের মতো এবারও দোলের আগের দিন পালন হবে হোলিকা দহন (holika dahan) বা ন্যাড়া পোড়া। দোলের আগে খড়কুটো, শুকনো কলার পাতা, কাঠ, ঘুঁটে দিয়ে ন্যাড়া পোড়ার অনুষ্ঠান পালিত হয়। এই উৎসব নিয়ে এক বিখ্যাত প্রবাদও রয়েছে -   ‘আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া, কাল আমাদের দোল। পূর্ণিমা তে বুড়ি মরেছে বলো হরিবোল'। এই প্রবাদ কমবেশি সকলে জানলেও অনেকেই জানেন না এই উৎসবের নেপথ্যে থাকা পৌরাণিক কাহিনী। জানেন না অনেকেই ন্যাড়া পোড়াতে কাকে পড়ানো হয়। চলুন ২০২৪ সালের হোলি (holi in 2024) এর আগে জেনে নেওয়া যাক হোলিকা দহন বা ন্যাড়া পোড়া কেন পালন করা হয়।

হোলিকা দহন বা ন্যাড়া পোড়ার পৌরাণিক কাহিনী :

দোল পূর্ণিমা বা হোলি উৎসবের আগের দিনে চাঁচড়, ন্যাড়া পোড়ার এই প্রথা রয়েছে হিন্দু ধর্মে। বাঙালির মননে জড়িয়ে রয়েছে ন্যাড়া পোড়ার নস্ট্যালজিয়া। তবে বাঙালির কাছে ন্যাড়াপোড়ার অনুষ্ঠানটি হল অন্যান্য জাতির কাছে হোলিকা দহন (holika dahan)। হোলি ও দোল নিয়ে নানা মতভেদ থাকলেও দোলের আগের দিন রাতে সব জায়গায় এই হোলিকা দহন পালিত হয়। শুধু কোথাও বলে চাঁচড় পোড়া, কোথাও আবার ন্যাড়া পোড়া, আবার কোথাও হোলিকা দহন নামে পরিচিত। তবে, এই উৎসবের পিছনে আধ্যাত্মিক ও পৌরাণিক গুরুত্বও রয়েছে। 

হিন্দু পুরাণ অনুসারে, রাক্ষস সাজা হিরণ্যকশিপু তাঁর প্রজাদের পুজো অর্চনা করা বন্ধ করে দেন। অমরত্ব লাভের জন্য তিনি ব্রহ্মার তপস্যা শুরু করেন। তাঁর তপস্যায় খুশি হয়ে ব্রহ্মা তাঁকে পাঁচটি ক্ষমতা দান করেন। ব্রহ্মার দেওয়া এই পাঁচটি বর হল - কোনও মানুষ বা কোনও প্রাণী তাঁকে মারতে পারবে না। ঘরের ভেতরে বা ঘরের বাইরে তাঁর মৃত্যু হবে না। তাঁর মৃত্যু দিনেও হবে না, রাতেও হবে না। অস্ত্র দ্বারাও হবে না, শস্ত্র্র দ্বারাও হবে না। হিরণ্যকশিপুর মৃত্যু জমিতেও হবে না, জলেও হবে না, শূন্যেও হবে না। এই বর পাওয়ার পর হিরণ্যকশিপুর অত্যাচার বাড়তেই থাকে। কিন্তু তাঁর সন্তান প্রহ্লাদ বিষ্ণুর পরম ভক্ত। তাই প্রহ্লাদকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তাঁর জন্য নিজের বোন হোলিকার সাহায্য নেন হিরণ্যকশিপু। এদিকে হোলিকা ব্রহ্মার কাছ থেকে একটি চাদর পেয়েছিলেন। এই চাদর তাঁকে সবসময় রক্ষা করবে বলে জানিয়েছিলেন ব্রহ্মা। হোলিকা বলেন তিনি প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনের মধ্যে বসবেন। ব্রহ্মা প্রদত্ত চাদর থাকায় তাঁর কিছু হবে না কিন্তু প্রহ্লাদ পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। যেই প্রহ্লাদকে নিয়ে হোলিকা আগুনে প্রবেশ করেন, তখনই গায়ের শালটি তাঁর কাছ থেকে প্রহ্লাদের গায়ে গিয়ে পড়ে। তাই প্রহ্লাদের কিছু না হলেও পুড়ে ছাই হয়ে যান হোলিকা। এরপর বিষ্ণু নরসিংহ রূপ ধরে স্তম্ভ ভেঙে বেরিয়ে হিরণ্যকশিপুকে হত্যা করেন। এই পূরণের কাহিনীতে হোলিকার মৃত্যু থেকেই শুরু হয় হোলিকা দহন প্রথা। তাই আজও দোলের আগের দিন হোলিকা দহন করে মনের সব পাপ, অশুচি, লোভ, হিংসে পুড়ে ছাই হয়ে যায় বলে মনে করা হয়। হোলিকা দহন হল অশুভ শক্তির বিনাশ। ন্যাড়া পোড়ার অর্থও একই। ন্যাড়া পোড়া হল মন্দের উপর ভালর জয়ের প্রতীক। তাই দোলের আগের দিন, ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমার সন্ধ্যায় হোলিকা দহন বা ন্যাড়া পোড়ানো হয়। এতে অশুভ শক্তি ছায়া জীবনের ওপর পড়ে না।

হোলিকা দহন ২০২৪ :

দোলের আগের দিন হোলিকা দহন বা ন্যাড়াপোড়া পালিত হয়। হোলিকা দহন ২০২৪ (holika dahan 2024)এর সময় রয়েছে ভাদ্রের ছায়া। এমনই মত জ্যোতিষবিদদের। ফলে ২৪ মার্চ, রাত ১০.২৮ মিনিটের পর হোলিকা দহন ২০২৪ (holika dahan 2024) পালন করার শুভ সময় রয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি বছর হোলিতে বিরল যোগ ঘটতে চলেছে। এবার দোল পূর্ণিমার দিনে বছরের প্রথম চন্দ্রগ্রহণ। তবে এববছর দোলের দিন রয়েছে এক বিশেষ মহাজাগতিক যোগ। যে হোলিকা দহনে এবার ভাদ্র দোষ থাকবে, তাই সন্ধ্যার পরিবর্তে রাতে হোলিকা দহন সম্ভব হবে। এবার হোলিকা দহনের সময় নক্ষত্রগুলি খুব বিশেষ হবে, যার কারণে ৯টি খুব শুভ যোগ তৈরি হবে। এমন শুভ কাকতালীয় ঘটনা গত ৭০০ বছরে দেখা যায়নি। হোলিকা দহনের সময় সর্বার্থসিদ্ধি, লক্ষ্মী, পর্বত, কেদার, জ্যৈষ্ঠ, আমলা, উভয়াচারী, সরল এবং শষ মহাপুরুষ যোগ গঠিত হয়। এই যোগে হোলি পোড়ালে সমস্যা ও রোগ দূর হবে। এই শুভ যোগ সমৃদ্ধি ও সাফল্য বয়ে আনবে। চতুর্দশী ২৪ মার্চ সকাল ৮:১৩ টা পর্যন্ত চলবে। তারপর পূর্ণিমা শুরু হবে যা চলবে ২৫ মার্চ সকাল ১১টা ৪৪ মিনিট পর্যন্ত। পূর্ণিমা দুই দিন স্থায়ী হওয়ায় বিভ্রান্তি রয়েছে। ২৪ তারিখ সন্ধ্যায় পূর্ণিমা থাকায় এই তিথিতে ভাদ্র শেষ হওয়ার পর হোলিকা দহন করতে হবে। একই সময়ে, ২৫ মার্চ সূর্যোদয়ের সময় পূর্ণিমা থাকবে৷ এই দিনে স্নান, দান এবং উপবাস করা উচিত এবং পূজা করা উচিত।

 শাস্ত্রবিদরা বলে থাকেন, হোলিকা দহনের আগুন থেকে যে শিখা উঠছে তার দিকই ঠিক করে বছরের ভবিষ্যৎ কেমন হবে। হোলিকা দহনের সময় আগুনের শিখা বা ধোঁয়া দেখে ভবিষ্যৎবাণী হয়। হোলিকা দহনের সময় বাতাসের গতিপথ ঠিক করে দেয় স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, শিক্ষা, ব্যবসা, কৃষি এবং অর্থনীতির জন্য পরবর্তী হোলি পর্যন্ত সময় কেমন হবে। ন্যাড়া পোড়া বা হোলিকা দহনের আগুন সোজা উপরে উঠলে তা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। হোলিকা দহনের শিখা যদি পূর্ব দিকে বেঁকে যায় তবে তা অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। এটি শিক্ষা, আধ্যাত্মিকতা এবং ধর্ম প্রচার করে। হোলির আগুন পশ্চিম দিকে উঠলে পশুর উপকার হয় এবং অর্থনৈতিক উন্নতি হয়। কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্ভাবনাও রয়েছে। হোলিকা দহনের সময় আগুন উত্তর দিকে থাকলে দেশ ও সমাজে সুখ-শান্তি বৃদ্ধি পায়। একই সময়ে, দক্ষিণ দিকে ঝুঁকে থাকা হোলিকার আগুনকে দেশে রোগ এবং দুর্ঘটনার ইঙ্গিত হিসাবে বিবেচনা করা হয়।