লাইফস্টাইল

Kesarbai Kerkar | ভিনগ্রহীদের জন্য বেজে চলেছে ভারতীয় গান! মহাকাশে না গিয়েও এখনও ছাপ রয়েছে কেশরবাঈ কেরকারের!

Kesarbai Kerkar | ভিনগ্রহীদের জন্য বেজে চলেছে ভারতীয় গান! মহাকাশে না গিয়েও এখনও ছাপ রয়েছে কেশরবাঈ কেরকারের!
Key Highlights

মহাশূন্যে প্রথম ভারতীয় পদার্পণ করার আগেই দেশের ছাপ ফেলেছিলেন কিংবদন্তি 'সুরশ্রী' কেশরবাঈ কেরকার। গোল্ডেন ডিস্ক 'দ্য সাউন্ডস অব আর্থ'এ রয়েছে তাঁর কণ্ঠের ভৈরবী রাগের গান।

 ২০২৩ এর ২৩সে অগাস্ট মহাকাশ সম্পর্কিত 'নতুনে'র খোঁজে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পাড়ি দিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization) বা ইসরোর চন্দ্রযান-৩ (ISRO Chandrayaan-3)। এরপর আবার একই বছর ২রা সেপ্টেম্বর সূর্যের কাছে পৌঁছবে 'আদিত্য এল-১'('Aditya L-1)। মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করতে এবং মহাকাশে নিজের ছাপ ফেলতে একের পর এক মিশন চালাচ্ছে ইসরো। ১৯৬২ সালে জওহরলাল নেহরুর (Jawaharlal Nehru) অধীনে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কমিটি বা ইনকোসপার (INCOSPAR) প্রতিষ্ঠিত হয়। ইনকোসপারের মধ্যে ১৯৬৯ সালে পারমাণবিক শক্তি বিভাগের মধ্যে বড় হয়ে ওঠে ইসরো। ১৯৭২ সালে, ভারত সরকার একটি মহাকাশ কমিশন এবং ডিওএস গঠন করে, ইসরো-কে এর অধীনে নিয়ে আসে। এরপর ১৯৭৫ সালে ইসরো ভারতের প্রথম স্যাটেলাইট, 'আর্যভট্ট' (Aryabhatta) সোভিয়েত মহাকাশ সংস্থা 'ইন্টারকোসমস' (Intercosmos) দ্বারা উৎক্ষেপণ করে। এরপর ধীরে ধীরে মহাকাশের মানচিত্র নিয়ে নানান পরীক্ষা শুরু করে ইসরো। ১৯৮৪ সালে, সোভিয়েত রকেট সয়ুজ টি-১১ (Soyuz T-11) চড়ে রাকেশ শর্মা (Rakesh Sharma) প্রথম ভারতীয় নাগরিক হিসেবে মহাকাশে পারি দিয়ে তৈরী করেন দেশের ইতিহাস। তবে মহাকাশে কিন্তু রাকেশ শর্মার আগেও আরেক ভারতীয় ফেলেছিলেন দেশের ছাপ, যা এখনো রয়েছে মহাকাশেই। বলা যেতে পারে, মহাকাশে সশরীরে না গিয়েও তাঁর কণ্ঠ রয়েছে সেখানেই। ইনি কেশরবাঈ কেরকার (Kesarbai Kerkar)।

কেশরবাঈ কেরকারের প্রাথমিক জীবন এবং প্রশিক্ষণ । Early Life and Training of Kesarbai Kerkar :

১৮৯০ সালে তৎকালীন সময়ের পর্তুগিজ উপনিবেশ গোয়ার (Goa) পোন্ডা তালুকের (Ponda Taluka) একটি ছোট্ট গ্রাম কেরিতে জন্মগ্রহণ করেন কেশরবাঈ কেরকার।  মাত্র ৪ বছর বয়স থেকে কোলহাপুরে ওস্তাদ আব্দুল করিম খানের কাছে সংগীত প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন কেশরবাঈ। যদিও ১৬ বছর বয়সে তাঁকে মায়ের সঙ্গে বোম্বেতে চলে আস্তে হয়। ফলে প্রশিক্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তাঁকে একজন ধনী স্থানীয় ব্যবসায়ী শেঠ বিঠলদাস দ্বারকাদাস, সেতার বাদক এবং দরবারি সঙ্গীতশিল্পী বরকত উল্লাহ খানের অধীনে প্রশিক্ষণ নিয়ে সাহায্য করেছিলেন। ভাস্করবুওয়া বাখালে (Bhaskarbuwa Bakhale) এবং রামকৃষ্ণবুওয়া ওয়াজের (Ramakrishna Buwa Wsj) অধীনেও অল্প সময়ের জন্য প্রশিক্ষণ নেন কেশরবাঈ অবশেষে ১৯২১ সালে শুরু হওয়া জয়পুর-আত্রৌলি ঘরানার প্রতিষ্ঠাতা ওস্তাদ আল্লাদিয়া খানের (Ustad Alladiya Khan) শিষ্য হিসেবে সংগীত প্রশিক্ষণ সমাপ্ত করেন। এরপর ১৯৩০ সাল থেকে পেশাদারভাবে গান গাইতে শুরু করেছিলেন কেশরবাঈ।

কেশরবাঈ কেরকারের সংগীত-জীবন । Music life of Kesarbai Kerkar :

সংগীত প্রশিক্ষণ শেষে কেরকার অভিজাত দর্শকদের জন্য নিয়মিত অভিনয় করে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করতে থাকেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, কেরকার তার প্রজন্মের একজন দক্ষ গায়ক হয়ে ওঠেন। কেশরবাঈ-র সুমধুর কণ্ঠ ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পরে গোটা দেশে। ১৯৫৩ সালে তিনি সঙ্গীত নাটক আকাদেমি পুরস্কারে (Sangeet Natak Akademi Award) সম্মানিত হন। ১৯৬৯ সালে মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার তাকে "রাজ্য গায়িকা" উপাধিতে ভূষিত করে।

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও (Rabindranath Tagore) কেশরবাঈ কেরকারের কণ্ঠে গান শুনতে খুব পছন্দ করতেন। এমনকি এর ফলে রবি ঠাকুর তাঁকে "সুরশ্রী" হিসেবেও আখ্যা দিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে কলকাতার সঙ্গীত প্রবীণ সঙ্গীতানুরাগী সৃজন সম্মান সমিতি (Sangeet Praveen Sangeet Anuragi Srijan Samman Samiti) পুরস্কৃত করে। ১৯৬৯ সালে পদ্মভূষণ পুরষ্কারও পান তিনি।

 ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ডে কেশরবাঈ কেরকার ।  Kesarbai Kerkar in Voyager Golden Record :

ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের খ্যাতি জগত জুড়ে। পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তের অন্য কোনও সঙ্গীতের ঘরানার থেকে ভারতীয় ক্লাসিকাল সঙ্গীত আলাদা। সুর, স্বর, বাদ্যযন্ত্র ও ঝঙ্কারের সংমিশ্রনে শ্রোতাকে এক অন্য জগতে নিয়ে যায় ভারতের শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। শ্রোতাকে আচ্ছন্ন করে এক নৈস্বর্গিক ও আধ্যাত্মিক অনুভূতি। এই অনুভূতি কেবল বিশ্বকে নয়, গোটা মহাকাশ, ভিনগ্রহীদের সঙ্গেও ভাগ করে নিয়েছেন কেশরবাঈ কেরকার। ভিনগ্রহীদের শোনার জন্য, ব্রহ্মাণ্ডের শেষ সীমানা ছোঁয়ার জন্য একটি রেকর্ডে রাখা হয়েছে কেশরবাঈ কেরকারের গলায় ভৈরবী রাগের গান!

১৯৭৭ সালে আমেরিকান সংস্থা নাসা (NASA) মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে ভয়েজার-১ (Voyager-1) নামের একটি যান। এই ভয়েজারই হল মানুষ নির্মীত প্রথম বস্তু যা ইন্টারস্টেলার স্পেসে (Interstellar Space) গিয়েছে। সেই যানেই বেজে চলেছে একটি সোনালি রেকর্ড (Golden Record)। ১২ ইঞ্চি লম্বা সোনালি সেই অ্যালবামের নাম রাখা হয়েছে ‘দ্য সাউন্ডস অফ আর্থ’ (The Sounds of Earth)। যাতে বিঠোভেন (Beethoven) থেকে মোজার্ট (Mozart), এমন অনেক কিংবদন্তি শিল্পীদের গান বেছে নিয়ে পাঠিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ভিনগ্রহী কোনও প্রাণের অস্তিত্ব যদি মহাশূন্যের কোথাও থেকে থাকে তাহলে পৃথিবীর সংস্কৃতি কেমন ছিল তা বোঝানোর জন্যই এই গোল্ডেন রেকর্ড। সেই সোনালি রেকর্ডেই জায়গা রয়েছে 'সুরশ্রী'র গাওয়া সেই ঠুমরির।

 ১৯৩৬ সালে সুরশ্রী কেশরবাঈ কেরকারের গলায় রেকর্ড করা হয় ৩.৩০ মিনিটের ভৈরবী রাগের গান, ‘যাত কাঁহা হো আকেলি, গোরি’। নৃতাত্ত্বিক সঙ্গীতবিদ রবার্ট ই. ব্রাউন (Robert E Brown) দ্বারা ভয়েজার ডিস্কে অন্তর্ভুক্তির জন্য রেকর্ডিংটি সুপারিশ করা হয়েছিল। তিনি কেরকারের কণ্ঠে এই রাগকে ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সেরা রেকর্ডকৃতর উদাহরণ বলে বিশ্বাস করেছিলেন। যদিও দুর্ভাগ্য বশত যেই বছর ভয়েজার মহাশূন্যে পাড়ি দেয়, সেই বছরই অমৃতলোকের উদ্দেশে যাত্রা করেন 'সুরশ্রী'। তবে কিংবদন্তির সুর, কণ্ঠ আজও অমর মহাকাশে। মহাশূন্যে আজও বেজে চলেছে সুরশ্রী কেশরবাঈ কেরকারের সেই গান।