দেশ

Kargil Vijay Diwas | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কার্গিল যুদ্ধে ব্যবহার করা হয় সবথেকে বেশি গুলি! জানুন এই যুদ্ধের না জানা তথ্য!

Kargil Vijay Diwas | দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর কার্গিল যুদ্ধে ব্যবহার করা হয় সবথেকে বেশি গুলি! জানুন এই যুদ্ধের না জানা তথ্য!
Key Highlights

দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে ২৪ তম কার্গিল বিজয় দিবস। কার্গিল থেকে শুরু করে ইন্ডিয়া গেটে শহীদদের সম্মান।

আজ ২৬ শে জুলাই দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে  কার্গিল বিজয় দিবস (Kargil Vijay Diwas)। দিন কয়েক আগে থেকেই এই দিবস পালন করার জন্য শুরু হয় তোরজোর। লাদাখে (Ladakh) সাজানো হয়েছে যুদ্ধের স্মৃতিসৌধ। এদিন ২৪ তম কার্গিল বিজয় দিবসের উদযাপনের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভারতের কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং (Union Defense Minister Rajnath Singh)। এর আগে গত শনিবার জম্মু-কাশ্মীরের (Jammu and Kashmir) শিশু ও সাধারণ মানুষের কাছে বিজয় দিবসে অস্ত্র প্রদর্শন করা হয় সেনাবাহিনীর তরফ থেকে। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কার্গিলের ডেপুটি কমিশনার এবং পুলিশ সুপারসহ স্কুলের পড়ুয়ারা, বাসিন্দারা এবং আধিকারিকরা। আজ বুধবার কার্গিল যুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগ সম্পর্কে গতকাল অর্থাৎ মঙ্গলবার লামোচেন ভিউ পয়েন্টে (Lamochen View Point) ব্রিফিং দেওয়া হয়। যা আজ বুধবার কার্গিল বিজয় দিবসের দিন অডিও ভিসুয়াল প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে উপস্থাপনা করা হয়। জানা গিয়েছে, সেদিন বিশেষ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথিদের জন্য লামোচেন ভিউ পয়েন্ট থেকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিদর্শনের পাশাপাশি রাখা হয়েছে 'বিজয় ভোজ'-এর ব্যবস্থাপনাও। সঙ্গে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও 'বারখানা' (Barkhana)।

কার্গিলের ইতিহাস | History of Kargil War :

আজ থেকে ঠিক ২৪ বছর আগে এই দিনটিতেই পাকিস্তানের (Pakistan) বিরুদ্ধে কার্গিল যুদ্ধে জয়লাভ করে ভারত (India)। ১৯৯৯ সালে প্রায় দুমাস ধরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলেছিল এই যুদ্ধ। বরফ জমা ঠান্ডায় পেটের দায়ে কাজে বেরিয়েছিলেন এক মেষপালক। তারই নজরে পড়ে পাক সেনার সন্দেহভাজন গতিবিধি। এরপর তিনি সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন ভারতীয় সেনাকে (Indian Army)। ১৯৯৯ সালের ৫ই মে সেনার একটি দলকে পাহাড়ে পাঠানো সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন ভারত সরকার। কিন্তু ভারত-পাক সীমান্তে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় তাদের। এরপরে সরব হয় নর্থ ব্লক (North Block)।

জম্মু ও কাশ্মীরের কার্গিল দ্রাস সেক্টরের (Kargil Dras) শুরু হয় কার্গিল যুদ্ধ। এই যুদ্ধের মূল কারণ ছিল পাকিস্তানের কাশ্মীর (Kashmir) জয়ের চেষ্টা। কাশ্মীর দখল নিয়ে একের পর এক যুদ্ধে পরাজয়ের পর ক্ষোভে ফেটে পড়ে পাকিস্তান। সেই সময় ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী (Atal Bihari Vajpayee) প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতি বন্ধুত্ব ও সুসম্পর্ক স্থাপন করা প্রস্তাব দিলেও বারংবার আক্রমণ করে গিয়েছে পাকিস্তান। এমনকি কোনও আলোচনা না করে ১৯৯৯ সালে পায়ে হেঁটে নিয়ন্ত্রণ রেখা লঙ্ঘন করে কার্গিলে ঢুকে পড়ে পাকিস্তানের এক সশস্ত্র বাহিনী।

পাকিস্তানের এই সশস্ত্র বাহিনী 'অপারেশন বদ্রি '(Operation Badri) এর কার্গিলে প্রবেশের পরে বাড়তে থাকে চাপানউতোর।  শুরু হয় ভারত-পাক সংঘর্ষ। পরে পরিস্থিতি ক্রমশ উত্তপ্ত হলে কার্গিল সীমান্তে পৌঁছয় ২ লক্ষ  ভারতীয় সেনা। ভারতের পক্ষ থেকে এই মিশনের নাম দেওয়া হয় 'অপারেশন বিজয় ' (Operation Vijay)।

ভারত পাক দুই সেনার মধ্যেই শুরু হয় যুদ্ধ। যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ হারাতে থাকেন দুই পক্ষেরই একের পর এক সেনা। কিন্তু কোনমতেই হার মানতে নারাজ ছিল পাকিস্তান। এদিকে ভারতের বীর সেনারাও নিজের প্রাণপণ দিয়ে লড়ে চলেছিলেন। প্রায় দুমাস ধরে চলে এই যুদ্ধ। তবে অবশেষে ১৯৯৯ সালে ২৬ শে জুলাই ভারতের সেনার কাছে হার মানে পাকিস্তান। কার্গিল যুদ্ধে জয় হয় ভারতের। তবে এই যুদ্ধে শহীদ হন ভারতে ৫২৭ জন বীর সেনা জওয়ান। প্রাণ হারান পাকিস্তানের ও অসংখ্য সেনা।

কার্গিল যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য | Important Facts About Kargil War :

কার্গিল যুদ্ধের শহীদ বীরদের সম্মান জানাতে প্রতিবছরের ২৬ শে জুলাই দেশ জুড়ে পালন করা হয় কার্গিল বিজয় দিবস। কেবল ভারত বা পাকিস্তানের ইতিহাসের নয়, গোটা বিশ্বের ইতিহাস এই ছাপ ফেলেছিল কার্গিল যুদ্ধ। যুদ্ধ জয়ের পরে, নানান চলচ্চিত্র, লেখনী দ্বারা কার্গিল যুদ্ধের ইতিহাস সমাজের সামনে তুলে ধরা হলেও অনেকেই জানেন না এই যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। আজ ২৪ তম কার্গিল বিজয় দিবসের দিন দেখে নেওয়া যাক সেই সব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

১. বিশ্বের সবথেকে উচুঁ স্থানে যুদ্ধ | Battle at The Highest Place in The World : 

সরকারি সূত্রের খবর অনুযায়ী বিশ্বের সবথেকে উঁচু স্থানে হওয়া যুদ্ধ গুলির মধ্যে অন্যতম হলো কার্গিল যুদ্ধ।

২.  বিপুল সেনা মোতায়েন | Massive Army Deployment :  

প্রায় দু লক্ষ সেনার ওপর 'অপারেশন বিজয়ে'র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কার্গিলে মোতায়ন ছিলেন প্রায় ৩০ হাজার ভারতীয় সেনা জওয়ান। যুদ্ধ শেষে ভারতীয় সেনারা যখন তল্লাশি চালায় তখন প্রত্যেকের কাছ থেকে পাকিস্তানের পরিচয় পত্র পাওয়া গেছে।

৩. পাকিস্তানের হাজারো সেনার মৃত্যু | Thousands of Pakistani Soldiers Died : 

কার্গিল যুদ্ধ শেষে পাকিস্তানের দাবি কার্গিল যুদ্ধে সেই দেশের ৩৫৭ জন সৈনিকের মৃত্যু হয়। কিন্তু ভারতীয় সেনার তদন্তের তথ্য অনুযায়ী, কার্গিল যুদ্ধে প্রাণ হারান পাকিস্তানের ৩ হাজারেরও বেশি সেনা। জানা গিয়েছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন পাকিস্তানের প্যারা মিলিটারি ফোর্সের (Pakistan's paramilitary Force) জওয়ান। ১৯৯৯ সালের পর থেকেই এদের রেগুলার রেজিমেন্টের (Regular Regiment) অন্তর্ভুক্ত করা হয়। উল্লেখ্য, এক পাক সংবাদ মাধ্যম দাবি করেছিল, তৎকালীন সময়ের পাকিস্তানি প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ (Nawaz Sharif) নাকি কার্গিল যুদ্ধের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। পাশাপাশি এই যুদ্ধে ৩ হাজার পাকিস্তানি সৈনিকের মৃত্যুর খবরের সত্যতা ও স্বীকার করেছিলেন।

৪. ভারতে প্রবেশ করেছিলেন পারভেজ মুশারফ |  Pervez Musharraf Entered India : 

কার্গিল যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ১৯৯৯ সালের ২৮ শে মার্চ তৎকালীন পাক সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফ (Pervez Musharraf) নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে প্রবেশ করেছিলেন ভারতে। এমনকি সূত্রের খবর, ভারতে একরাত কাটিয়েও ছিলেন তিনি। শোনা যায় ১৯৯৮ সাল থেকেই কার্গিলে অনুপ্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী। এমনকি সেই দেশের ৫০০০ জওয়ানকে কার্গিলে প্রবেশের জন্য পাঠিয়েছিলেন মুশারফ।

৫. অপারেশন সফেদ সাগর | Operation Safed Sagar : 

কার্গিল যুদ্ধের সময় খুবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল ভারতীয় এয়ার ফোর্সের (Indian Air Force) 'সফেদ সাগর' অপারেশন। সেই সময় প্রথমবার কার্গিল যুদ্ধের জন্য ৩২ হাজার ফুট উচ্চতা থেকে যুদ্ধবিমান ব্যবহার করেছিল ভারত। এতটা উচ্চতায় যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা মোটেই সহজ কাজ নয়। এমনকি এতটাই প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যে প্রশিক্ষিত পাইলটেরও বিমানের ভেতর দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তবে ভারতের বীর সেনারা এই অপারেশনের সাফল্য লাভ করেন।

৬. পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার | Use of Nuclear Energy : 

তৎকালীন সময় ভারত এবং পাকিস্তান দেশি পারমাণবিক শক্তিধর ছিল। সূত্রের খবর, কার্গিল যুদ্ধে পিছিয়ে পড়ে ভারতের বিরুদ্ধে পারমানবিক শক্তি প্রয়োগের পরিকল্পনা করেছিল পাকিস্তান। পরামর্শ দেন তৎকালীন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান পারভেজ মুশারফ। উল্লেখ্য, কার্গিল যুদ্ধে প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার বন্দুকের গুলি ও রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (World War II) পর এটি প্রথম এমন লড়াই ছিল যেখানে একটি দেশ নিজের শত্রু দেশের উদ্দেশ্যে এত গোলাগুলির ব্যবহার করেছিল।

কার্গিল যুদ্ধ শহীদ হয়েছিলেন ভারতের ৫২৭ জন সেনা জওয়ান। আহত হয়েছিলেন হাজারেরও বেশি। এই যুদ্ধ জয়ের কাহিনী আজও স্মরণ করলে কাটা দিয়ে ওঠে গায়ে। এই বীর জওয়ানদের সম্মানের জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেক বছর ২৬ শে জুলাই ইন্ডিয়া গেটের (India Gate) সামনে 'অমর জওয়ান জ্যোতি'তে (Amar Jawan Jyoti) কার্গিল যুদ্ধের সেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। কেবল নেতা-মন্ত্রীরাই নন, গোটা ভারত জুড়ে পালন করা হয় কার্গিলে বিজয় দিবস।