ISRO Chandrayaan 3 Live | প্রজ্ঞানের পর ঘুমিয়ে পড়লো বিক্রম! রোভার-ল্যান্ডারের 'ঘুম' ভাঙাতে সাহায্য নাসার!
চাঁদে সূর্যাস্তের ফলে নিস্তেজ হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো রোভার প্রজ্ঞান ও ল্যান্ডার বিক্রম। ২২ সে সেপ্টেম্বর ফের সূর্যোদয় চাঁদে। সেই সময় রোভার, ল্যান্ডারের ঘুম ভাঙবে কি না সেদিকেই নজর ইসরো, নাসার।
ঘুমের দেশে আগেই চলে গিয়েছে রোভার 'প্রজ্ঞান' (Pragyan), এবার চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রমকেও (Vikram) ঘুম পাড়িয়ে দিলো ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (Indian Space Research Organization) অর্থাৎ ইসরো (ISRO)। এরপর ইসরোর বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি গোটা দেশবাসী অপেক্ষায় ২২ সে সেপ্টেম্বরের জন্য। কারণ সেদিনই বড়ো পরীক্ষা চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3) এর। আবার ঘুম থেকে উঠবে কি না প্রজ্ঞান-বিক্রম জানা যাবে সেইদিনই।
ইসরো ও আদিত্য এল ১ সম্পর্কে আরও পড়ুন : শনিবার রাতে 'আদিত্য'র বড় পরীক্ষা! সূর্যের আরও কাছে এগোবে ইসরোর প্রথম সৌরযান 'আদিত্য এল ১'!
ইসরো ও আদিত্য এল-১ সম্পর্কে পড়ুন : সূর্যের দিকে ক্রমশ এগিয়ে চলেছে আদিত্য এল-১! সফলভাবে পৌঁছেছে দ্বিতীয় কক্ষপথে!
২৩সে অগাস্ট প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে চন্দ্রযান-৩, ল্যান্ডার বিক্রম। এরপর বিক্রমের মধ্যে থেকে গুটি গুটি পায়ে বেরিয়ে আসে রোভার প্রজ্ঞান। ১১ দিনেই চাঁদে নতুন ‘মাইলফলক’ ছুঁয়ে ফেলে ইসরোর রোভার প্রজ্ঞান। গুটিগুটি পায়ে অতিক্রম করে ১০০ মিটার দূরত্ব। ইসরো চন্দ্রযান ৩ লাইভ (ISRO Chandrayaan 3 Live) আপডেট, প্রজ্ঞানের কাজ, বিক্রমের নজরদারি, সব কিছুরই আপডেট দিতে থাকে ইসরো। সেই মতোই ইসরো জানায়, এবার কাজ শেষে ঘুমাতে যাওয়ার পালা প্রজ্ঞান-বিক্রমের।
ইসরো এবং মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে আরও পড়ুন : সূর্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিল 'আদিত্য এল ১'! গন্তব্যে কীভাবে পৌঁছবে 'আদিত্য’?
চাঁদে ১৪ দিনের জীবনকাল দিয়েই ইসরো পাঠিয়েছিল বিক্রম এবং প্রজ্ঞানকে। তাদের মধ্যে যে সমস্ত যন্ত্রপাতি আছে, যেগুলির সাহায্যে চাঁদের মাটিতে তারা এ ক’দিন পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছে, সংগ্রহ করেছে বহু তথ্য, সেই সব যন্ত্র চলে সৌরশক্তিতে। ফলে চাঁদে যতক্ষণ সূর্যের আলো থাকবে ততক্ষণই প্রাণ থাকবে তাদের। ১৪ দিন পর চাঁদে সূর্যাস্ত হলে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়বে বিক্রম এবং প্রজ্ঞান। নিস্তেজ হয়ে পড়বে তাদের ভিতরে থাকা সমস্ত যন্ত্রপাতিও। সেভাবেই ইতিমধ্যে এর আগে নিস্তেজ হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে প্রজ্ঞান। এবার আজই ঘুমিয়ে পড়লো ল্যান্ডার বিক্রমও। ইসরো চন্দ্রযান ৩ লাইভ (ISRO Chandrayaan 3 Live) আপডেট দেওয়ার সময় জানানো হয়, সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ ল্যান্ডার বিক্রমকে পাঠানো হয়েছে 'স্লিপ মোডে'।
আদিত্য এল-১ সম্পর্কে আরও পড়ুন : সেলফি পাঠালো 'আদিত্য এল ১'! পৃথিবী ও চাঁদের ছবি ভিডিও আকারে প্রকাশ ইসরোর ! চাঁদের লক্ষ্যে এবার চন্দ্রযান পাঠালো জাপান!
তবে ঘুমিয়ে পড়ার আগেও নিজের দায়িত্ব ভোলেনি বিক্রম। ইসরো চন্দ্রযান ৩ লাইভ (ISRO Chandrayaan 3 Live) আপডেট দেওয়ার সময় জানানো হয়, চাঁদে রাট নামার আগে, বিকেল-সন্ধের সময়ে শেষ কাজ সম্পন্ন করে বিক্রম। ইসরোর তরফে জানানো হয়, চাঁদের মাটি থেকে শূন্যে ওড়ানো হয়েছে বিক্রমকে। বিক্রমে থাকা ইঞ্জিনকে চালু করা হয়েছে। ল্য়ান্ডারকে প্রায় ৪০ সেন্টিমিয়ার উচ্চতায় উঠিয়ে লাফ দিয়ে আগের জায়গা থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার দূরে সফল অবতরণ করানো হয় বিক্রমকে। এই পরীক্ষাটি 'হপ এক্সপেরিমেন্ট' (Hop Experiment) নাম দিয়েছে ইসরো। তবে কেন গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষা? ইসরোর তরফে আরও জানানো হয়েছে, এই পরীক্ষাটি থেকে ভবিষ্যতে চাঁদে মানব অভিযান চালানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। তাছাড়াও এরপর যদি চাঁদে মহাকাশযান পাঠিয়ে কিছুদিন বাদে তা ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হয়, তার জন্যও এই পরীক্ষাটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
তবে এখন সকলেরই প্রশ্ন, ২২সে সেপ্টেম্বর কি জাগবে প্রজ্ঞান ও বিক্রম? ইসরো চেয়ারম্যান এস সোমনাথ (ISRO Chairman S. Somnath) জানিয়েছেন, ২২ তারিখ অর্থাৎ চাঁদে সূর্যোদয়ের পরে বিক্রম ও প্রজ্ঞানকে জাগানোর চেষ্টা করতে হবে, আর এই বিশেষ প্রক্রিয়া ইসরোকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বন্ধু আমেরিকা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, নাসার (NASA) বক্তব্য, বিক্রম ল্যান্ডারের এলআরএ (LRA) পেলোডটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটিতে রয়েছে ১.২৭ সেন্টিমিটার গোলাকৃতির আটটি কর্নার টিউব রিফ্লেকটর। যা একটি ৫.১১ সেন্টিমিটার ডায়ামিটার এবং ১.৬৫ সেন্টিমিটার হেমিস্ফেরিক্যাল সোনার প্ল্যাটফর্মের উপর বসানো। প্রত্যেকটি রিফ্লেক্টর এক একটি দিকে তাক করা হয়েছে। প্রত্যেকটি এমন অ্যাঙ্গেলে রয়েছে যেখানে +-২০ ডিগ্রি পর্যন্ত সূর্যালোক গ্রহণ করার ক্ষমতা রয়েছে। ২০ গ্রাম ওজনের এই পেলোডের চালু থাকতে কোনও আলোর প্রয়োজন হয় না। ফলে রোভার-ল্যান্ডারের বাকি পেলোডগুলি স্যুইচ অফ করা হলেও এটি সক্রিয় থাকবে।
নাসার বিজ্ঞানীদের অনুমান এই এলআরএ (Laer Retroreflector Array) পেলোড আগামী ২২সে সেপ্টেম্বর সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে আলো গ্রহণ করতে সক্ষম হবে। উল্লেখ্য, ইসরোকে এই বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন পেলোড তৈরি করতে সাহায্য করেছে নাসা। নাসার গোদার্দ স্পেস ফ্লাইটে তৈরি করা এই লেসার রেট্রোরিফ্লেক্টর অ্যারে পেলোডটি বিক্রম ল্যান্ডারের চতুর্থ পেলোড। বাকি তিনটি পেলোড হল, রেডিয়ো অ্যানাটমি অফ মুন বাউন্ড হাইপারসেনসিটিভ আয়ওনোস্ফিয়ার অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ার (RAMBHA), চন্দ্রস সারফেস থারমো ফিজিক্যাল এক্সপেরিমেন্ট (ChaSTE) এবং ইনস্ট্রুমেন্ট ফর লুনার সেসমিক অ্যাক্টিভিটি (ILSA)।
বিক্রম ও প্রজ্ঞানের জেগে ওঠার প্রসঙ্গে নাসার স্পেস সায়েন্স ডেটা কোর্ডিনেটেড অ্যার্কাইভের প্রধান আর উইলিয়ামসের (R. Williams, head of NASA's Space Science Data Coordinated Archive) বক্তব্য, চন্দ্রযান-৩ যতক্ষণ না পর্যন্ত কাজ করা বন্ধ করবে ততক্ষণ এলআরএ পেলোড অপারেট করা সম্ভব নয়। বর্তমানে ভারতের চন্দ্রযানের দিকে কড়া নজর ইসরো, নাসার। সময় মতো ইসরো চন্দ্রযান ৩ লাইভ (ISRO Chandrayaan 3 Live) আপডেট সম্পর্কে দেশবাসীকে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। তবে বিক্রম ও প্রজ্ঞান চিরনিদ্রায় চলে যাবে কিনা তা সবই জানা যাবে ২২ তারিখই।
- Related topics -
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- ভারত
- মহাকাশ
- মহাকাশযান
- চন্দ্র
- চন্দ্রাভিযান
- নাসা
- ইসরো