Indian Navy Day | জাতীয় নৌসেনা দিবস পালনের নেপথ্যে ভারত-পাক যুদ্ধের ইতিহাস! যুদ্ধ জাহাজের দায়িত্বে এবার প্রথম মহিলা কমান্ডিং অফিসার!
১৯৭১-এ পাক নৌসেনাকে মোক্ষম পাল্টাঘাত দেয় ভারতীয় নৌবাহিনী। এরপর থেকেই ৪থা ডিসেম্বর দেশ জুড়ে পালিত হয় জাতীয় নৌসেনা দিবস বা ভারতীয় নৌবাহিনী দিবস। জাতীয় নৌসেনা দিবস ২০২৩ উপলক্ষ্যে ভারতীয় নৌজাহাজে এই প্রথম মহিলা কমান্ডিং অফিসার দায়িত্ব পেতে চলেছেন।
দেশের একদিনে বঙ্গোপসাগর, একদিকে ভারত মহাসাগর, আর এক দিকে আরবসাগর। তিনদিকে সমুদ্র নিয়ে অবস্থিত ভারত। জলসীমা থাকলে তা যেমন ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। তেমনই দেশের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।নানান সময়ে গোটা ভারতকে তথা সকল দেশবাসিকে রক্ষা করে এসেছেন ভারতীয় নৌসেনা। সব মিলিয়ে ভারতের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে নৌবাহিনীর গুরুত্ব অপরিসীম। নৌবাহিনীর বীরত্ব এবং আত্মত্যাগকে স্মরণ করেই ভারতে প্রতি বছর ৪ঠা ডিসেম্বর জাতীয় নৌসেনা দিবস (National Navy Day) উদযাপন করা হয়। দেশের সামুদ্রিক সীমানা সুরক্ষিত রাখতে প্রতি মুহূর্তে যে নৌসেনার সতর্ক পাহারা দিচ্ছেন তাদের সম্মান জানিয়েই পালন করা হয় এই বিশেষ দিনটি। তবে এই দিনের নেপথ্যেও রয়েছে ইতিহাস, যা হয়তো অনেকেরই অজানা।
ভারতীয় নৌবাহিনী দিবসের ইতিহাস । History of Indian Navy Day :
ভারতের নৌসেনা দিবসের সূচনা হয় ১৯৭১ সালের ৪ঠা ডিসেম্বর। স্বাধীনতার পর থেকে বেশ কিছু যুদ্ধ লড়তে হয়েছে ভারতকে। যার মধ্যে অন্যতম ছিল ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। সেই বছর বাংলাদেশের সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ চলছে পাকিস্তানের। তখনও বাংলাদেশ পূর্ব পাকিস্তান। যুদ্ধের প্রশিক্ষণ না থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতা পাওয়ার জন্য ঘরের ছেলেরা নেমে আসে রণক্ষেত্রে। ফেল সীমান্ত এলাকার বাংলাদেশের যুবকদের মাসের পর মাস প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তার পরে তাঁরা ফিরে গিয়ে যুদ্ধে যোগ দেন। তবে ভারতীয় নৌসেনার অন্যতম উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল অপারেশন ট্রাইডেন্ট বা ত্রিশূল (Operation Trident or Trishul)।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের সময়েই পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল ভারত। সেই বছর ৩ রা ডিসেম্বরের সন্ধেয় ভারতীয় বিমানঘাঁটির উপর হামলা শুরু করে পাকিস্তান। তখনই করাচির দিকে তিনটি মিসাইল বোট পাঠায় ভারত। সেই তিনটি বোটের নাম ছিল নির্ঘাত (Nirghat), বীর (Veer) এবং নিপাত (Nipat)। এই তিন বোট পাকিস্তানের চারটি জাহাজকে ধ্বংস করে দেয়। এই হামলার ফলে রীতিমতো অচল হয়ে যায় পাক নৌবাহিনী। এরপর এই যুদ্ধের পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭২ সালে একটি কনফারেন্সের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে ৪ঠা ডিসেম্বর ভারতীয় নৌবাহিনী দিবস (Indian Navy Day) হিসেবে পালিত হবে। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে ভারতীয় নৌবাহিনীর বীরত্ব স্মরণে রাখাই ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য। সেই থেকেই ৪ঠা ডিসেম্বর দিনটি ভারতের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হিসেবে পালন করা হয়।
ভারতীয় নৌবাহিনী দিবস ২০২৩ । Indian Navy Day 2023 :
জাতীয় নৌবাহিনী দিবস (National Navy Day) উপলক্ষ্যে নয়া চমক ছিল ভারতীয় নৌসেনা। ভারতীয় যুদ্ধ নৌজাহাজে এই প্রথম মহিলা কমান্ডিং অফিসার (first female COD in the Indian Navy) নিয়োগ করল ভারতীয় নৌবাহিনী। নৌবাহিনী দিবসের আগেই এক সাংবাদিক সম্মেলনে যোগ দিয়ে অ্যাডমিরাল কুমার জানান, ভারতীয় নৌজাহাজের এই প্রথম মহিলা কমান্ডিং অফিসার নিয়োগ করেছে। ভবিষ্যতে যাতে নৌবাহিনী উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং প্রগতিশীল পথে থাকে, তা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের জুন মাসে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ (Union Defense Minister Rajnath Singh) চার বছরের চুক্তিতে ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। যদিও এর পরে দেশ জুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। সুপ্রিম কোর্ট এবং দিল্লি হাই কোর্টে দায়ের হয়েছিল একাধিক মামলা। এর পর নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) সরকারের অগ্নিপথ প্রকল্পকে ‘বৈধ’ বলে ঘোষণা করে সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগের প্রকল্পকে চ্যালেঞ্জ করে, যে দু’টি আবেদন জানানো হয়েছিল, তা খারিজ করে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছিল, জনস্বার্থে অগ্নিপথ প্রকল্পের বৈধতা বজায় রাখা প্রয়োজন। সেই ‘অগ্নিবীর’দের প্রথম ব্যাচ মার্চে আইএনএস চিল্কা থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করেছে। সেই প্রসঙ্গে কথা বলার সময় অ্যাডমিরাল কুমার জানান, অগ্নিবীরদের প্রথম ব্যাচে ২৭২ জন মহিলা প্রশিক্ষণার্থী রয়েছে। তৃতীয় ব্যাচে সেই সংখ্যা ১০০০ জনেরও বেশি। এর পাশাপাশি নৌবাহিনীর প্রধান আরও জানান যে, এই পরিসংখ্যান নৌবাহিনীর সমস্ত ভূমিকায় এবং পদে নারীদের নিয়োগ নিয়ে নৌবাহিনীর চিন্তাভাবনার প্রতিরূপ।
এর পাশাপাশি নতুন সার্ভে ভেসেল পেল ভারতীয় নৌবাহিনী। গার্ডেনরিচ শিপ বিল্ডার্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ার্স ভারতীয় নৌবাহিনীর হাতে তুলে দিল আন্তর্জাতিক মানের সবচেয়ে বড় সার্ভে ভেসেল "আইএনএস সন্ধ্যক" (INS Sandhya) । জাতীয় নৌসেনা দিবসে এই জাহাজ তুলে দেওয়া হয়। দেশী প্রযুক্তিতে তৈরি এই জাহাজ ভারতীয় নৌবাহিনীর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত সমুদ্রগর্ভে নানা বিষয়ে গবেষণার কাজে লাগে এই জাহাজ।