Dark Pattern | অ্যামাজন, ফ্লিপকার্টের মতো ই-কমার্স কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা কেন্দ্র সরকারের!
ভারতে অ্যামাজন, ফ্লিপকার্টের মতো ই-কমার্স কোম্পানিগুলিকে এক মাসের প্রতারণা বন্ধ করার নির্দেশ। প্রতারণা বন্ধ না হলে দিতে হতে পারে জরিমানা। সঙ্গে হতে পারে কারাবাসও।
বর্তমানে ছোট থেকে বড় আসবাব কিনতে হলে অধিকাংশ মানুষই ভরসা করেন নানান ই-কমার্সের (E-Commerce) ওপর। নানা রকম ছাড় দেখে রোজ অসংখ্য ভারতীয় দেদার অর্ডার করছেন এই প্ল্যাটফর্মগুলিতে। তারওপর তো রয়েছে সেল (Sale)। তবে এই ই-কমার্স কোম্পানি যেমন রমরমিয়ে ব্যবসা করছে এমনই করছে প্রতারণাও। এমনটাই দাবি করছে কেন্দ্র সরকার (Central Government)। যার ফলে অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, গুগল-র মতো একাধিক কোম্পানিকে হুঁশিয়ারি দিলো কেন্দ্র সরকার। কেন্দ্রের তরফ থেকে বলা হয়েছে, এক মাসের মধ্যে লোক ঠকানো বন্ধ না হলে ই-কমার্স কোম্পানিগুলির বিরুদ্ধে নেওয়া হবে কড়া ব্যবস্থা। এমনকি হতে পারে জেল হেফাজতও। সঙ্গে আর্থিক দিতে হবে জরিমানা।
অনেক কেত্রেই দেখা যায়, ই-কমার্স কোম্পানিগুলিতে অর্ডার দেওয়ার সময় এক দাম দেখায়, যা বিল পেমেন্ট করার সময় আরেক দাম দেখায়। অর্থাৎ কেনাকাটার সময় একরকম দাম দেখালেও মাসের শেষে যখন বিল পেমেন্ট করার স্টেটমেন্ট আসছে, তখন দেখা যাচ্ছে টাকার অঙ্ক বেড়ে গিয়েছে। এছাড়াও কম জিনিস বা নির্দিষ্ট কিছু জিনিস কিনলেও তার সঙ্গে আরও বেশ কিছু আসবাব অর্ডার করার জন্য বলতে গেলে কিছুটা মানসিক চাপই দেওয়া হচ্ছে ই-কমার্স কোম্পানিগুলির তরফ থেকে। এছাড়াও 'এখুনি কিনুন না হলে ফুরিয়ে যাবে' বা 'এর থেকে বড় সেল আর পাবেন না' এরকমও ম্যাসেজ (Massage) বা বার্তা দিয়েও গ্রাহকদের মানসিকভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ কেন্দ্রের।
জিনিসপত্র কেনা ছাড়াও টিকিট বুক (Ticket Book) করার ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে অন্যরকম প্রতারণা। বিমান যাত্রার টিকিট কাটলে গ্রাহককে না জানিয়েই ই-কমার্স কোম্পানির তরফ থেকে কেটে নেওয়া হচ্ছে খাবারের চার্জও। এছাড়াও,অনলাইন কেনাকাটার জন্য ই-কমার্স সাইটগুলি গ্রাহকের ই-মেল অ্যাড্রেস (Email Address) পেয়ে গেলে তার পরিচিতদেরও অর্থাৎ তার কন্ট্যাক্টদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছে। কোনো প্ল্যাটফর্মের সাবস্ক্রিপশন না নিয়েও ক্রমাগত ম্যাসেজ।
উপরোক্ত এরকম নানান ঘটনার কারণেই তৎপর কেন্দ্র সরকার। দেখার অধিকাংশ মানুষই এখন এরকম প্রতারণা বা ফাঁদের শিকার। আর এই ফাঁদকেই কেন্দ্র নাম দিয়েছে ‘ডার্ক প্যাটার্ন' (Dark Pattern)। কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই ডার্ক প্যাটার্নের মাধ্যমে । অ্যামাজন (Amazon), ফ্লিপকার্ট (Flipkart), গুগল (Google),ইবে (Ebay), ওএলএক্স (OLX), আলিবাবা (Alibaba), স্ন্যাপডিল (Snapdeal), মিন্ত্রার (Myntra) মতো ই-কমার্স কোম্পানিগুলি লুটছে কোটি কোটি টাকা।
উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রকের সচিব রোহিত কুমার সিং (Rohit Kumar Singh) এই প্রসঙ্গে জানান, ভারতে ক্রমশ বাড়ছে ইন্টারনেট এবং স্মার্টফোনের ব্যবহার। ২০২২ সালে সক্রিয় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৭৫ কোটি ৯০ লক্ষ। যা আগামী দু বছরে ৯০ কোটিতে পৌঁছবে। ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে বাড়ছে অনলাইন সাইটগুলিতে কেনাকাটাও। অনুমান,২০২৪ সালে খুচরো কেনাকাটায় অনলাইন প্রায় ১০.৭ শতাংশ ভাগ বসাবে। অনলাইন লেনদেনে ২০২০ সালে ভারতে কনজিউমার ডিজিটাল ইকনমির (Digital Economy) অঙ্ক ছিল ৫৩৭.৫ বিলিয়ন ডলার। ২০৩০ সালে তা হবে ১ ট্রিলিয়ন ডলার। তবে এই অঙ্কের মধ্য থেকেই নানারকমভাবে গ্রাহকদের ঠকিয়ে লুটে চলেছে ই-কমার্স কোম্পানিগুলি।
রোহিত সিং বলেন, প্রায় সব ই-কমার্স গ্রাহকই সময় বিশেষে এই ফাঁদে পা দিচ্ছেন। অনেকে না চাইতেও ফেঁসে যাচ্ছেন এই ফাঁদে। তাই অনলাইন কেনাকাটার সময় গ্রাহককে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে। সেন্ট্রাল কনজিউমার প্রোটেকশন অথরিটির প্রধান কমিশনার নিধি খারে (Nidhi Khare) জানিয়েছেন, অনলাইনে কেনাকাটা করতে গিয়ে যদি অনিচ্ছা সত্ত্বেও টাকা কাটা বা হিডন চার্জ (Hidden Charge) যুক্ত হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে তাহলে ন্যাশনাল কনজিউমার হেলপ লাইনে (Helpline) ১৯১৫ ফোন নম্বরে অথবা হোয়াটস অ্যাপ নম্বর ৮৮০০০০১৯১৫ এ যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে গ্রাহকদের।