Nolen Gurer Rosogolla | দোকানের মতো সুস্বাদু নলেন গুড়ের রসগোল্লা বানান বাড়িতেই! সঙ্গে জানুন নলেন গুড়ের নাম কেন 'নলেন'?

Friday, December 22 2023, 8:00 am
highlightKey Highlights

শীত আসতেই নলেন গুড়ের রসগোল্লা খেতে ইচ্ছা করছে? বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন গুড় দিয়ে তৈরী এই রসগোল্লা। রইলো নলেন গুড়ের রসগোল্লা তৈরী রেসিপি। সঙ্গে জানুন কীভাবে নলেন গুড়ের 'নলেন' নাম এলো।


শীতকাল আসতে না আসতেই বাঙালি চেয়ে থাকে খেজুরের গুড় (Palm Jaggery) এর দিকে। খেজুরের গুড় (Date Jaggery) বা নলেন গুড়ের স্বাদ যেন হার মানায় সব মিষ্টিকেই। বর্তমানে বাজারে নানারকমের গুড়ের মিষ্টি (Jaggery Sweet) পাওয়া যায়। তবে সবথেকে সেরার স্থানে চিরকালই থাকবে নলেন গুড়ের রসগোল্লা (Nolen Gurer Rosogolla)!

নলেন গুড়ের রসগোল্লা খেতে দোকানের অপেক্ষায় নয়,বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন
নলেন গুড়ের রসগোল্লা খেতে দোকানের অপেক্ষায় নয়,বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন

 শীতের মরশুমে গুড়ের মিষ্টি (Jaggery Sweet),খেজুরের রস ও নলেন গুড় দিয়ে পায়েস বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন পিঠা, তালের পিঠা, খেজুর গুড়ের জিলাপি ইত্যাদি তৈরি হয়ে থাকে। স্বাদ আর মানভেদে খেজুরের গুড় (Palm Jaggery) পাটালি, নলেন গুড়, হাজারী গুড় নামে পরিচিত। আগেকার দিনে শীতকালে নলেন গুড় দিয়ে নানারকম পদ তৈরি হয়। তবে এখন সেই পদের তালিকা কম হলেও এই বিশেষ গুড়ের কদর কিন্তু কমেনি। শীতকাল এলেই কম বেশি সকলেই মিষ্টির দোকানে ভিড় করে থাকেন নলেন গুড়ের রসগোল্লার জন্য। কিন্তু সব জায়গায় এই বিশেষ রসগোল্লা পাওয়া যায়না। তবে মন খারাপ করবেন না! নলেন গুড়ের রসগোল্লা আপনি বানাতে পারবেন বাড়িতে অতিসহজে। কীভাবে?  নলেন গুড়ের রসগোল্লার রেসিপি থাকলো আপনার জন্য-

 নলেন গুড়ের রসগোল্লা বানানোর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ :

রসগোল্লা বানানোর জন্য প্রয়োজন - ১ লিটার দুধ,  ১ টি লেবুর রস, ২ টেবিল চামচ জল, ১ টেবিল চামচ চিনি, ১/২ চা চামচ এলাচ গুঁড়ো। নলেন গুড়ের রস তৈরি করতে প্রয়োজন-  ৬ কাপ জল,  ২০০ গ্ৰাম নলেন গুড়।

 নলেন গুড়ের রসগোল্লা বানানোর পদ্ধতি :

নলেন গুড়ের রসগোল্লা (Nolen Gurer Rosogolla) বানানোর জন্য প্রথমে দুধ জাল দিতে হবে। দুধ ফুটে উঠলে তাতে লেবুর রসের সঙ্গে জল মিশিয়ে তা দুধের মধ্যে দিয়ে ছানা বানিয়ে নিতে হবে। এবার ছাকনির উপর কাপড় রেখে ছানাটা ঢেলে সঙ্গে সঙ্গে ছানার উপর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। ছানা এমনভাবে ছেঁকে নিতে হবে যাতে লেবুর টকভাব না থাকে। এবার আধঘণ্টা মত ছানাটা কাপড়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখতে হবে, যাতে সব জল ঝড়ে যায়।

 সহজেই বাড়িতে বানিয়ে খান দোকানের মতো সুস্বাদু নলেন গুড়ের রসগোল্লা
 সহজেই বাড়িতে বানিয়ে খান দোকানের মতো সুস্বাদু নলেন গুড়ের রসগোল্লা

এরপর জল ঝড়ানো ছানা, এলাচ গুঁড়ো, চিনি একটি থালায় নিয়ে হাতের তালুর সাহায্যে দশ মিনিট মেখে মসৃণ মন্ড তৈরি করে নিতে হবে। এবার ছানার মন্ড অল্প অল্প নিয়ে ছোট ছোট বল বানিয়ে রসগোল্লার আকারে তৈরি করে নিতে হবে। অন্যদিকে ওভেনে একটা পাত্রে জল ও নলেন গুড় দিয়ে হাই ফ্রেমে ফুটিয়ে নলেন গুড়ের রস তৈরি করতে হবে। রস ফুটে উঠলে তাতে ছানার বল গুলো দিতে হবে। এরপর ৩০ মিনিট হাই ফ্রেমে ঢাকা দিয়ে ফোটাতে হবে। ছানার বলগুলো ফুটে উঠলে গ্যাস বন্ধ করে দিন। এবার ঠাণ্ডা হলে পরিবেশন করুন বাড়ির তৈরী সুস্বাদু নলেন গুড়ের রসগোল্লা।

নলেন গুড়ের নাম কেন 'নলেন'?

 নলেন গুড়ের রসগোল্লা তো বানালেন। তবে এই রসগোল্লা তৈরির সবথেকে প্রধান উপকরণ নলেন গুড়ের নাম 'নলেন' কেন বলতে পারবেন? সোনালি রঙের পাতলা গুড়, যেমন স্বাদ তার তেমনি সুমধুর গন্ধ। কিন্তু এই নলেন শব্দটি কোথা থেকে এসেছে এই নিয়ে নানা মুনির নানা মত।

 নলেন গুড় আসলে এক ধরনের খেজুরের গুড় (Date Jaggery) যা খেজুরের রস থেকে তৈরি করা হয়। বাংলা অগ্রহায়ণ মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ করা হয়। অনেকে বলে থাকেন যেহেতু এই গুড় জানুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে অর্থাৎ বছরের শুরুতে এই গুড় পাওয়া যায় বলে একে অনেকে একে পয়লা গুড় বা নতুন গুড় বলে থাকেন। নতুন গুড়ের ‘নতুন’ শব্দটি অপভ্রংশ হয়ে নলেন শব্দটির জন্ম হয়েছে। আবার অনেকে বলেন, খেজুর গাছের গায়ে নলি কেটে এই গুড় সংগ্রহ করা হয় বলে একে নলেন গুড় বলা হয় বলে বলেন কেউ কেউ। এটা ঠিক হলেও হতে পারে, কারণ দক্ষিণ ভারতে ‘নরকু’ বলে একটি শব্দ প্রচলিত আছে। যার আক্ষরিক অর্থ হল কাটা বা ছেদন করা। এই রাজ্যে এক সময় নলেন গুড়ের বড় হাট বসত। এখন আর সেসব কিছু হয়না। নলেন গুড় থেকে তৈরি হত লালচে বাদামি রঙের চিনি। তাই একে লালি গুড়ও বলা হত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অবশ্য এতটুকু ম্লান হয়নি নলেন গুড়ের মহিমা।

বাংলা অগ্রহায়ণ মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ করে তৈরী করা হয় খেজুরের গুড় 
বাংলা অগ্রহায়ণ মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত খেজুরের রস সংগ্রহ করে তৈরী করা হয় খেজুরের গুড় 

উল্লেখ্য, গুড় সংগ্রহের জন্য বিকেলের পর বিভিন্ন খেজুর গাছের গা চেঁছে ফেলে ফুটো করে রাখা হয়। তারপর ফাঁকা হাঁড়িগুলো ঝুলিয়ে দিয়ে আসা হয়। সারারাত ধরে টুপ টুপ করে রস পড়ে হাঁড়িতে। আর পরদিন সকালে রস ভর্তি হাঁড়িগুলো নিয়ে আসা হয়। সেই রস নামিয়ে এনে বিভিন্ন হাঁড়ি থেকে ঢালা হয় একটা বড় পাত্রে। এরপর রস ফুটিয়ে ফুটিয়ে জাল দিয়ে সেই রস থেকে তৈরী করা হয় গুড়। গরম গুড়কে এরপর ঠান্ডা করে নির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করে তৈরি করে ফেলা হয় খেজুর ও পাটালি গুড়।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File