Tan Removal Pack | ট্যান দূর না করলে ত্বক পুড়ে কালো তো হবেই, সঙ্গে হতে পারে ত্বকের নানা সমস্যাও! দেখুন বাড়িতে কীভাবে বানাবেন ট্যান রিমুভ্যাল প্যাক!

Wednesday, April 24 2024, 11:42 am
highlightKey Highlights

সূর্যের রোদ লেগে ত্বক তার স্বাভাবিক রং হারায় ও ত্বকের স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়। ত্বকে অতিরিক্ত রোদ লাগালে বলিরেখার সমস্যা দেখা যায়, এমনকি স্কিন ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।


প্রচন্ড গরমে যেমন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রোদের তেজ, তেমনি চলছে তাপপ্রবাহ। এই পরিস্থিতিতে যেমন শরীর কাহিল হয়ে পড়ছে, সেরকমভাবে ত্বকের ওপরও প্রভাব পড়ছে। বাইরে চড়া রোদ থেকে রক্ষা পেতে সানগ্লাস, টুপি, ছাতা সঙ্গে থাকলেও ত্বকে সূর্যের রশ্মি লেগে পড়ছে ট্যান। চর্ম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ত্বক থেকে ট্যান দূর না করলে ত্বক পুড়ে কালো তো হবেই তার সঙ্গে হতে পারে ত্বকের নানান সমস্যা। ট্যান সবথেকে বেশি পরে মুখে। তবে হাত, পা-র মতো শরীরের অন্যান্য অঙ্গেও কিন্তু ট্যান পড়ে।

ট্যানিং । Tanning : 

ট্যানিং হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সূর্যের সংস্পর্শে আসার পরে ত্বকের রঙ্গক (মেলানিন) বৃদ্ধি পায় যা একটি ত্বককে কালো করে তোলে। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এলে এটি আমাদের শরীরের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়া চলে। এটি ত্বককে ঢালের মতো সূর্যের রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। যখন ত্বকের কোষগুলি সূর্যের UV রশ্মির সংস্পর্শে আসে তখন মেলানোসাইট থেকে মেলানিন কেরাটিনোসাইটগুলিতে স্থানান্তরিত হয়, যা পৃষ্ঠের ত্বকের কোষ। একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রক্রিয়া হিসাবে, মেলানিন রঙ্গক আরও কোষের ক্ষতি থেকে UV বিকিরণকে ব্লক করে। মেলানিন একটি ছাতার মতো কোষের নিউক্লিয়াসের উপরে স্তূপ করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি সূর্যের সংস্পর্শে আসা সমস্ত ত্বকের কোষে ঘটে। তাই শরীরের উন্মুক্ত অংশে ট্যানিং দেখা যায়।

Trending Updates

ত্বক ট্যান হওয়া একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। যা ত্বক আল্ট্রাভায়োলেট (ultraviolet) রশ্মির সংস্পর্শে এসে কালচে হয়ে যায়। ত্বকে মেলানিন (melanin) তৈরি বৃদ্ধি পাওয়া, মেলানিন অক্সিডেশন (oxidation) বা মেলানোসাইটের (melanocyte) সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ত্বকের রং ক্রমাগত কালো হয়ে যায়। চর্ম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্যানিংয়ের জন ত্বক কালো হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি জ্বালাভাব-সহ বেশ কিছু চর্ম রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। ত্বক তার স্বাভাবিক রং হারায় ও ত্বকের স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়। ত্বকে অতিরিক্ত রোদ লাগালে বলিরেখার সমস্যা দেখা যায়, এমনকি স্কিন ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।

ট্যানিং হল এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সূর্যের সংস্পর্শে আসার পরে ত্বকের রঙ্গক বৃদ্ধি পায় ও ত্বককে কালো করে তোলে
ট্যানিং হল এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সূর্যের সংস্পর্শে আসার পরে ত্বকের রঙ্গক বৃদ্ধি পায় ও ত্বককে কালো করে তোলে

ট্যান রিমুভ্যাল প্যাক । Tan Removal Pack :

সান ট্যান তোলার জন্য বাজারে একাধিক ট্যান রিমুভ্যাল ফেস প্যাক (tan removal face pack) বা এরকম পণ্য পাওয়া যায়। তবে বেশির ভাগ মানুষই প্রাকৃতিক উপাদানকে বেশি প্রাধান্য দেন এবং ঘরোয়া প্রতিকার বেছে নেন ট্যান তোলার জন্য। এরকম ঘরোয়া কিছু ট্যান রিমুভ্যাল প্যাক (tan removal pack)  কী করে বানানো যায় তা দেখে নেওয়া যাক।

হলুদ-মধু-দুধের ট্যান রিমুভ্যাল প্যাক :

হলুদ-মধু-দুধ তিনটি উপকরণ একটি পাত্রের মধ্যে মিশিয়ে তৈরী করা যায় ডি ট্যান ফেস প্যাক (de tan face pack)। এই তিনটি উপাদান মিশিয়ে পেস্টটি ঘাড়, মুখ, হাত ও পায়ে যেখানে যেখানে পোড়া দাগ রয়েছে,সেখানে সঠিকভাবে প্রয়োগ করুন। কিছুক্ষণ রাখার পর ভাল করে স্ক্রাব করুন। এরপর গোলাপ জলের স্প্রে ব্যবহার করে মুখ-হাত-পা ধুয়ে ফেলুন। এরপর ভাল ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করে ত্বকের উজ্জ্বল ভাব বজায় রাখুন।

শসার রস :

গরমকালে শরীর এবং ত্বক সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে শসা। শরীর তো বটেই ত্বককেও ঠান্ডা রাখে শসা। গরমের জেরে ত্বকে যে সমস্যা হয়, দূর করতে পারে তাও। এর জন্য শসা কুরে রস বের করে নিন, তার পর তুলো দিয়ে লাগান পোড়া আংশে। সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে নিন। লেবু প্রাকৃতি ব্লিচ হিসেবে কাজ করে। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন।

টমেটোর রস :

টম্যাটোতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন C, যা ত্বক ভাল রাখার অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান। পোড়া দাগ তুলে ত্বকের স্বাভাবিক রঙ ফিরিয়ে আনতেই সাহায্য করবে তা নয়, টমেটোর রস ত্বকের জেল্লা ফিরিয়ে আনতেও সাহায্য করে। ট্যান দূর করতে এই রস প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে মোক্ষম দাওয়াই। টমেটোর রস নিয়ে ত্বকের উপর ব্যবহার করুন। শুকিয়ে গেলে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

আবার তৈরী করে নিতে পারেন টক দই আর টোম্যাটোর ট্যান রিমুভ্যাল ফেস প্যাক (tan removal face pack)। টক দইয়ের ল্যাকটিক অ্যাসিড ত্বককে কোমল করে। অন্যদিকে টম্যাটোর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ভালো রাখে। এই দুইয়ের মিশ্রণ ২০ মিনিট লাগিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

টম্যাটোতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন C, যা ত্বক ভাল রাখার অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান
টম্যাটোতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন C, যা ত্বক ভাল রাখার অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান

অ্যালোভেরা :

ত্বকের উজ্জ্বলভাব আনতেই নয়, ত্বকের পোড়া দাগ নিরাময় করতে ও আরামবোধ করাতে অ্যালোভেরার জুড়ি নেই। অনেকেই ভাবেন, অ্যালোভেরা আসলে ব্রনর সম্ভাবনা কমিয়ে তোলে। ত্বকের কালো দাগ-ছোপ দূর করতে, ট্যান কাটাতেও অ্যালোভেরা জুড়ি মেলা ভার। এর জন্য প্রথমে অ্যালোভেরা জেল বের করে নিন, তারপর শরীরের ট্যান পড়া অংশে আলতো হাতে মাখুন। একটু সময় নিয়ে অ্যালোভেরা জেল ত্বক একদম শুষে নেয়, সেই হিসেবে ম্যাসাজ করবেন যাতে । কয়েক ঘণ্টা পর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

বেসন :

বেসন দিয়ে খুব ভালো ট্যান রিমুভ্যাল ফেস প্যাক (tan removal face pack) বানানো যায়। এর জন্য একটা ছোট বাটিতে বেসন নিন, তার মধ্যে মেশান কাঁচা হলুদবাটা, দুধ আর গোলাপ জল। থকথকে করে গুলে নিয়ে স্নানের আগে সারা গায়ে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে চক্রাকারে হাত ঘুরিয়ে তুলে স্নান সেরে নিন। যাঁদের ত্বক শুষ্ক, তাঁরা এই মিশ্রণে খানিকটা মধুও মেশাতে পারেন। দুধে অ্যালার্জি থাকলে দই ব্যবহার করুন।

টকদই :

 রোদে পোড়া ট্যান তুলতে টকদইয়ের বিকল্প নেই। এতে ল্যাকটিক অ্যাসিড রয়েছে যা ট্যান তুলতে দারুণ সাহায্য করে। এ ছাড়া টকদই খুব ভালো স্ক্রাব হিসেবেও কাজ করে। প্রাকৃতিক এক্সফ্লয়েটর হিসেবে এর জুড়ি নেই। ফলে ট্যান তুলতেই টকদই দিয়ে বানানো ট্যান রিমুভ্যাল ফেস প্যাক (tan removal face pack) ব্যবহার করতেই পারেন। এর জন্য টকদইয়ের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। ত্বকের ট্যান ও দাগছোপ তুলতে দুর্দান্ত কাজ করে এই ফেস প্যাক। একটি পাত্রে টকদই নিন, তাতে লেবুর রস মিশিয়ে প্যাকটি তৈরি করে নিন।

এ ছাড়া ব্যবহার করতে পারেন টকদই ও গোলাপ জলের ফেস প্যাক। ত্বককে ভিতর থেকে উজ্জ্বল করে তোলে এই ফেস প্যাকটি। এটি বানাতে একটি পাত্রে টকদই নিন, তাতে কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল মিশিয়ে নিলেই কাজ শেষ। টকদইয়ের সঙ্গে বেসন ও মধু মিশিয়ে মাখলেও ফল পাবেন। এই প্যাকটি ত্বককে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। সপ্তাহে দু' থেকে তিন দিন এই প্যাকটি ব্যবহার করতে পারেন। আর ব্যবহার করে দেখতে পারেন টকদই ও হলুদের ফেস প্য়াক। হলুদে রয়েছে কারকিউমিন, যা ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। টকদইয়ের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে মাখলেই হবে।

কফি :

 কফির মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। কফি ট্যান দূর করার পাশাপাশি ত্বককে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে। কফির মধ্যে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড রয়েছে, যা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান হিসেবে কাজ করে। এতে ত্বককে ফ্রি র‍্যাডিকেল, বলিরেখা, দাগছোপ থেকে দূরে রাখা যায়। বাজার থেকে দামি প্রসাধনী না কিনে ১০টাকার কফির প্যাক কিনে ট্যান দু’মিনিটে দূর করতে পারবেন।

কফি দিয়ে ডি ট্যান ফেস প্যাক (de tan face pack) বানিয়ে পারেন নানান উপায়ে। যেমন - কফি ও মধুর মাস্ক। এর জন্য ১ চামচ কফি গুঁড়োর সঙ্গে ১ চামচ মধু মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটা ভাল করে মুখে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন। এছাড়া সমপরিমাণ কফি ও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে বানাতে পারেন কফি ও অ্যালোভেরার মাস্ক। এটি ত্বকে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রেখে ঠান্ডা জল দিয়ে মুখে ধুয়ে ফেলুন। বানাতে পারেন কফি, চিনি ও নারকেল তেল দিয়ে ফেস প্যাক। এর জন্য অর্ধেক কাপ কফি নিন। এর সঙ্গে অর্ধেক কাপ চিনি ও ১/৩ কাপ নারকেল তেল ও ২ চামচ জল মিশিয়ে নিন। এটা হল বডি স্ক্রাব। এই বডি স্ক্রাব নিয়ে হালকা হাতে ত্বকের উপর ঘষুন। ২-৩ মিনিট ঘষার পর ঠান্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই বডি স্ক্রাব আপনি সপ্তাহে একদিন করে ব্যবহার করতে পারেন। এতেই সমস্ত ট্যান উধাও হয়ে যাবে।

ট্যানের জন্য   ত্বকের স্বাভাবিক রং হারায় ও ত্বকের স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়
ট্যানের জন্য  ত্বকের স্বাভাবিক রং হারায় ও ত্বকের স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়

গরমকাল মানেই ত্বকের সমস্যা। রোদে বেরোলে ট্যান পড়বেই। এক্ষেত্রে সানস্ক্রিন ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মির থেকে বাঁচলেও ট্যান থেকে বাঁচতে গেলে মুখ, হাত-পা ঢেকে বেরোতে হবে। কিন্তু গরমে সেটাও সবসময় সম্ভব নয়।  প্রধানত ত্বকে মেলানোসাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি বা মেলানিন অক্সিডেশন। এতে ত্বকের কোনও ক্ষতি না হলেও ত্বক তার স্বাভাবিক রং হারায় ও ত্বকের স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা নষ্ট হয়ে যায়। ত্বকে অতিরিক্ত রোদ লাগালে বলিরেখার সমস্যা দেখা যায়, এমনকি স্কিন ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। যার ফলে উন্মুক্ত ত্বকে পরে ট্যান। কিন্তু এই ট্যান দূর করাও দরকার।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File