লাইফস্টাইল

উপাদেয় ও উপযোগী মটরশুঁটি, মটরশুঁটির বিভিন্ন উপকারিতা | Health Benefits of Peas explained in Bangla

উপাদেয় ও উপযোগী মটরশুঁটি, মটরশুঁটির বিভিন্ন উপকারিতা | Health Benefits of Peas explained in Bangla
Key Highlights

বৈজ্ঞানিক নাম Pisum Sativum ,মটরশুঁটি বা কড়াইশুঁটি হল লেগিউম জাতীয় উদ্ভিদ ।এটি একটি গোলাকার বীজ এবং প্রত্যেকটি মটরশুঁটির ভেতরে এই ধরনের বেশ কয়েকটি বীজ বর্তমান । এটি একধরনের ফল তবে সাধারণভাবে মটরশুঁটি সবজি হিসেবে রান্নায় ব্যবহার করা হয় । মটরশুঁটি উপকারিতা, মটরশুঁটি english মিনিং, Health Benefits of Peas

নিরামিষ হোক বা আমিষ, যেকোনো রান্নার পদের স্বাদ বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে কড়াইশুঁটির জুড়ি মেলা ভার । কেবলমাত্র স্বাদেই অতুলনীয় নয়, মটরশুঁটির রয়েছে অগণিত ভেষজ গুণ যা বহু জটিল রোগ- নিরাময় ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

সম্প্রতি এক গবেষণায়  নির্ধারিত হয়েছে যে কড়াইশুঁটি কাঁচা অবস্থায়   কিংবা রান্নায় দিয়ে নির্ধারিত পরিমাণে যদি নিয়মিত খাওয়া যায় তাহলে নানান উপকার মেলে এবং শরীরকে রোগমুক্ত মুক্ত রাখতে কড়াইশুঁটির বিকল্প সত্যি ই কম । প্রতি ১০০ গ্রাম মটরশুটি তে থাকে প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোক্যালোরি শক্তি,   ১৪.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট , ০.৫ গ্রাম ফ্যাট ও  ৫.৪ গ্রাম প্রোটিন । এসব অতি প্রয়োজনীয় উপাদান ছাড়াও  ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড, বিটাক্যারোটিন, ভিটামিন এ, ফসফরাস, জিঙ্ক, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সে  সমৃদ্ধ মটরশুটি প্রকৃতই একটি পুষ্টিকর খাদ্য।

 কড়াইশুঁটি স্বাস্থ্যোপযোগিতা | Health Benefits of Peas

একাধিক ভেষজ গুণ সম্বলিত, উপকারী ও স্বাস্থ্য কর এই আনাজের উপযোগিতা ও গুণাবলির অন্ত নেই,

ওজন হ্রাসে সহায়ক 

খাদ্য হিসেবে মটরশুঁটিকে গ্রহণ করলে এটি মানুষের অযাচিত ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে। মটরশুঁটিতে পর্যাপ্ত ফাইবার, প্রোটিন এবং মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট  থাকার দরুণ যেমন পুষ্টির ঘাটতি দূর করে তেমনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে পেট ভরাতে সক্ষম করে। এটি খুবই কম ক্যালরিযুক্ত হয় যা কিনা ওজন হ্রাসে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে।  

ক্যান্সার প্রতিরোধক

আধুনিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে কড়াইশুটি  স্টমাক ক্যানসারের প্রকোপ কমাতে  সক্ষম। মটরশুঁটির মধ্যে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের সাথে একটি বিশেষ পুষ্টিগুণ উপস্থিত যা ক্যানসার উপশমে সহায়ক। এই সবজিতে একধরনের পলিফেনল থাকে যা ক্যান্সার উপশমের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে ।

বলা হয় যে এক কাপ কড়াইশুঁটিতে কমপক্ষে  দশ মিলিগ্রাম পলিফেনল উপস্থিত। তাই পরিমিত পরিমাণে কড়াইশুঁটি গ্রহণ করলে স্টমাক ক্যান্সারের সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা থেকে মানুষ চিন্তামুক্ত হতে পারে।

রোগ প্রতিরোধ করার উন্নতি সাধন করে

বিশেষজ্ঞদের মতে মটরশুঁটিতে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম ,ক্যাটাচিন, এপি ক্যাটাচিন, ক্যারোটিনয়েড ফেনোলিক অ্যাসিড এবং পলিফেনোলের মতো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট  মানুষের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং শরীরকে রোগমুক্ত করতে সাহায্য করে।  কড়াইশুঁটির অন্যসব স্বাস্থ্যোপযোগীতার মধ্যে একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অ্যালজাইমার প্রতিরোধক ও মস্তিষ্কের শক্তিকে (Brain Power)  বৃদ্ধি করতে সহায়ক

মটরশুঁটির মধ্যে  যে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদানসমূহ  আছে তা মস্তিষ্কের ভেতরে প্রদাহ সৃষ্টি করতে রোধ করে।   বৈজ্ঞানিকদের মতে কড়াইশুঁটিতে  উপস্থিত পলিমায়োএথেলেনামাইড (পিইএ) নামক  বিশেষ উপাদানটিতে( যা ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি প্রকার)  অ্যান্টি ইনফ্লেমাটারি (নিউরো) বা প্রদাহনাশক এবং অ্যানালজেসিক পরিলক্ষিত করা যায়  যা অ্যালজাইমার রোগ সংক্রান্ত যাবতীয় ঝুঁকির সম্ভবনা কম করতে সক্ষম। এর ফলে ব্রেইন সেল ড্যামেজের আশঙ্কা থেকে মানুষ নিষ্কৃতি পেতে পারে।

 হার্ট কে সুস্থ রাখে

মটরশুঁটিতে পুষ্টিগুণ থাকার সাথে সাথে হার্টের  পরিশুদ্ধতা বজায় রাখার একটি বিশেষ উপাদান ও উপস্থিত। রক্ত পরিশুদ্ধ করার একটি বিশেষ গুণ থাকার দরুণ কড়াইশুঁটি মানুষের হার্ট সম্পর্কীয় যেকোনো সমস্যার নিরাময় করতে সক্ষম।  প্রসঙ্গত বলা যায়  যে সবজিটির ভেতরে থাকা ভিটামিন ই ,ডি এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের কার্যকারিতা ও ক্ষমতা বাড়াতে সক্ষম এবং ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ও বয়স কমাতেও একটি কার্যকরী ভূমিকা নেয়।  

আর্থারাইটিসের প্রকোপ হ্রাস করে 

প্রাত্যহিক আহারের তালিকায় কড়াইশুঁটিকে যদি অন্তর্ভুক্ত করা যায় তাহলে মানুষের শরীরে ভিটামিন কে এর পরিমাণ বৃদ্ধি হয় যার ফলে হাড় শক্তিশালী হয়। প্রতিদিন কম করে এক কাপ কড়াইশুঁটি  বিশেষত চল্লিশোর্ধ মহিলাদের জয়েন্ট পেন বা আর্থ্রাইটিসের মতো মারাত্মক রোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।

এছাড়া বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে কড়াইশুঁটিতে সেলেনিয়াম নামক যে বিশেষ উপাদানটি আছে তা আর্থ্রাইটিস ,বাতজ বেদনা এবং গাঁটের ব্যথা মতন যন্ত্রণা নিরাময় করতে প্রভূত সক্ষম।  কড়াইশুঁটিতে উপস্থিত পৌষ্টিক উপাদান হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে, এবং হাড় কে ক্ষয় রোগের হাত থেকে বাঁচায়।

 মধুমেহ বা BLOOD SUGAR রোগ প্রতিরোধক

বিশেষজ্ঞদের মতে কড়াইশুঁটিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণাবলীর সাথে সাথে অ্যান্টি হাইপার গ্লাইসেমিকের ( রক্তে শর্করা পরিমাণ নিয়ন্ত্রক) গুণাবলি  ও রয়েছে। তাছাড়া এর মধ্যে উপস্থিত থাকা ফাইবার এবং প্রোটিন শরীরে শর্করার শোষণের মাত্রা কমাতে সহায়ক। কড়াইশুঁটিতে   উপস্থিত অ্যান্টি অক্সিডেন্টগুলি ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় এবং স্বাভাবিকভাবেই শরীরে শর্করার শোষণের মাত্রা বহুলাংশে হ্রাস পায়।

কোষ্ঠকাঠিন্যের প্রকোপ কমায়

মটরশুঁটিতে উপস্থিত পর্যাপ্ত ফাইবার শরীরে প্রবেশ করার পর বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করে  যার ফলস্বরূপ কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীভূত  হয়।

পরিপাক ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়

মটরশুঁটিতে , ডায়েটারি ফাইবার বর্তমান যা শরীরে প্রবেশ করে শরীরে পাচক রসের ক্ষরণ বৃদ্ধি করে যার ফলস্বরূপ মানুষের হজম ক্ষমতার প্রভূত উন্নতি ঘটে এবং মেটাবলিজম রেট ও বৃদ্ধি পায়। এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ ইত্যাদি বিভিন্ন উপদান সমূহের   উপস্থিতি পেটের সমস্যা দূর করে। সমানভাবে  কড়াইশুঁটিতে আলিগোস্কারাইড উপস্থিত থাকার কারণে  হজম শক্তির ও উন্নতি হয়।

শরীরে টক্সিক উপাদানের মাত্রা কমাতে সহায়ক

 মটরশুঁটিতে পর্যাপ্ত মাত্রায় ভিটামিন সি ,ভিটামিন বি সিক্স এবং ফলেট উপস্থিত থাকার কারণে  রক্তে উপস্থিত টক্সিক উপাদানগুলি শরীর থেকে বহির্ভূত হয় । এর ফলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।

 কোলেস্টেরল  কে প্রতিরোধ করে

কড়াইশুঁটিতে এমন কিছু পৌষ্টিক উপাদান উপস্থিত আছে যা হাইপার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রন করতে সাহায্য করে। অতএব, কড়াইশুঁটি খাদ্যে ব্যবহারের ফলে শরীরে উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে আসে।

বলিরেখা এবং অস্টিওপোরেসিস প্রতিরোধক

একাধিক ভিটামিন সমৃদ্ধ কড়াইশুঁটিতে উপস্থিত ভিটামিন সি বিভিন্নরকম চর্মরোগ দূর করে। এর পাশাপাশি  এটি ত্বকের ঊজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও বলিরেখা দূর করে।  ত্বকের শুষ্কতা নিরাময় করে ত্বককে আর্দ্র রাখে ।

চোখের দৃষ্টিশক্তির উন্নতি সাধন

 ল্যুটেইন এবং জাক্সনন্থিন নামক দুটি বিশেষ উপাদানে সমৃদ্ধ মটরশুঁটি  চোখের সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি এবং চোখ সম্পর্কিত যাবতীয় সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে কড়াইশুঁটি গ্রহণ করা উপকারী এবং প্রয়োজনীয়।

ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করতে সহায়ক

একাধিক পৌষ্টিক উপাদানে সমৃদ্ধ হওয়ায় কড়াইশুঁটি ত্বকের সুস্বাস্থ্য ও ঔজ্জ্বল্য  রক্ষার জন্য খুবই কার্যকরী।ত্বকের ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করতে ভিটামিন সি, গোড়ালির চামড়া ফেটে যাওয়া প্রতিরোধ করতে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই র গুণাবলি সমৃদ্ধ আনাজ হল কড়াইশুঁটি। তাই ত্বককে প্রাণবন্ত রাখার অন্যতম চাবিকাঠি হল কড়াইশুঁটি।  

চুলের স্বাস্থ্যের যত্ন নেয়

কড়াইশুঁটিতে  উপস্থিত ফলেট এবং ভিটামিন সি র মতো পৌষ্টিক উপাদান চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুলের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে। কড়াইশুঁটিতে  ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি এবং  জিঙ্ক ও আয়রন উপস্থিত থাকার কারণে চুল  ঝরে পরার প্রবণতা কম হয়।

গর্ভাবস্থায় উপযোগী

 একজন গর্ভবতী মহিলার জন্য আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড সহ একাধিক ভিটামিন উপকারী বলে বিবেচিত করা হয়।কড়াইশুঁটিতে এই সকল খাদ্যগুণ ও উপাদান বিদ্যমান । তাই গর্ভবতী মহিলাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য কড়াইশুঁটির অবদান অনস্বীকার্য ।

উপসংহার

বিভিন্ন স্বাস্থ্যোপযগিতায় সমৃদ্ধ কড়াইশুঁটি   বা মটরশুঁটি যে একটি বিশেষ পুষ্টিকর খাদ্য তাঁর দ্বিমত নেই । খাদ্যতালিকায় এটিকে পর্যাপ্ত  এবং  সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করলে নিশ্চিত রূপে যথাযথ উপকারীতা পাওয়া যাবে। তবে ক্রনিক রোগ আক্রান্ত ব্যক্তিদের কড়াইশুঁটি খাদ্য হিসেবে গ্রহণের আগে আবশ্যিকভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ  নিয়ে নেওয়া উচিৎ। তবে এই সত্য আজ চিকিৎসকরাও স্বীকার  করেছে যে  প্রত্যহ  ২ পিস মাছ বা ৩ পিস মাংসের পরিবর্তে  একবাটি মটরশুঁটি  স্বাস্থ্যের পক্ষে অনেক বেশি পুষ্টিকর।

প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions

কড়াইশুঁটি আনাজ নাকি এটি একটি ফল ?

কড়াইশুঁটি একাধারে একটি আনাজ এবং অন্য দিক থেকে এটিকে একপ্রকার দানাশস্য হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে ।

কড়াইশুঁটির খোসা কি খাদ্য উপযোগী?

না, কড়াইশুঁটির খোসা খাদ্যের উপযোগী নয়।

কাঁচা কড়াইশুঁটি কী খাওয়া যেতে পারে?

ভাল করে জলে ধুয়ে পরিষ্কার করার পরেই তা খাওয়া যেতে পারে ।

কড়াইশুঁটির বিজ্ঞানসম্মত নাম কী?

Pisum Sativum

কড়াইশুঁটির মধ্যে থাকা কোন উপাদানটি ক্যান্সার রোধ করতে সহায়ক?

কড়াইশুঁটির মধ্যে একধরনের পলিফেনল থাকে যা ক্যান্সার উপশমের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে ।