গরমে ঘামাচির হাত থেকে মুক্তি পান কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির সাহায্যে, Get rid of prickly heat during summer in Bengali
গরম কালে আমাদের ত্বকে একাধিক সমস্যা দেখা দেয়। সান ট্যান ও সানবার্ন এর মত সমস্যাগুলো তো একদম লেগেই আছে, এর সাথে থাকে ত্বকে জ্বালাভাব, র্যাশ, ফুসকুড়ির মত সমস্যাও। কিন্তু গরমদিনের সবচেয়ে সাধারণ একটি সমস্যা হল ঘামাচি।
ঘামাচি কি? What is prickly heat ?
গরমের দিনে আমাদের ঘর্মগ্রন্থির সক্রিয়তার উপর ভিত্তি করেই কারও বেশি ঘাম হয়, আবার কারও কম হয়। দেহের এই ঘর্মগ্রন্থিগুলোর মুখ যখনই ময়লা ও ব্যাকটেরিয়া জমে থাকার কারণে বন্ধ হয়ে যায়, তখন ঘাম বাইরে বের হতে পারে না। সুতরাং কোনোও কারণে ঘর্মনালির মুখ বন্ধ হয়ে গেলে ঘাম আমাদের ত্বকের উপর পর্যন্ত পৌছাতে পারে না।
তখন এই ঘাম নালির মধ্যেই জমতে থাকে। এইভাবে জমতে জমতে এই ঘর্মনালি ফেটে গিয়ে ত্বকে ছোট ছোট দাগের সৃষ্টি করে। এইসব দাগগুলিই ঘামাচি বলে পরিচিত। সকল বয়সের মানুষদের মধ্যে এই সমস্যা দেখা দিলেও, বিশেষত শিশু ও বালক-বালিকাদের দেহে এই ঘামাচির প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গিয়ে থাকে।
Also read :
ঘামাচির উপসর্গগুলো কি? Prickly heat Symptoms
ঘামাচিগুলো লাল দানার মতো দেখতে হয়। এগুলো আকারে প্রায় ১-২ মিমি লম্বা হয়ে থাকে। সাধারণত আমাদের মাথায়, ঘাড়ে, পিঠে এবং অনেক সময় গলার নিচের অংশে ঘামাচি হতে দেখা যায়।
ঘরোয়া কিছু উপায়ে ঘামাচির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার পদ্ধতি , Home remedies of prickly heat
শরীর থেকে ঘামাচি দূরে রাখতে হলে সবচেয়ে জরুরি কাজ হলো নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। গরমের দিনে ঘামাচির হাত থেকে রেহাই পেতে আমাদের মধ্যে অনেকেই ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু এই সকল প্রসাধনী পণ্য ব্যবহার না করেও কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে ঘামাচির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে যেতে পারেন। সুতরাং ঘাম থেকে হওয়া ঘামাচির সমস্যা দূর করতে ঘরোয়া উপায়কে বেছে নিন।
● গরমকালে ঘাম হওয়াই স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই কিছু সময় অন্তর অন্তর ঘাম মুছে ফেলুন। বেশিক্ষণ ধরে যাতে শরীরে ঘাম জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তবে, ঘাম মোছতে গিয়ে কখনই অতিরিক্ত চাপ দিয়ে মোছা ঠিক নয়, এর ফলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
● যদি সম্ভব হয় দিনে দু'বার স্নান করতে পারেন। তবে স্নান করার সময় কম ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করা উচিত এবং সেই সাবান হালকা হাতে অথবা কোন নরম লুফা ব্যবহার করে শরীরে বেশি না ঘষে অল্প অল্প স্ক্রাব করুন। এছাড়া স্ক্রাবারের ব্যবহার করা যেতে পারে।
● ঘামাচি দেখা দিলে স্নানের সময় জলে যে কোনও অ্যান্টি-সেপটিক লোশান যেমন সুথল, ব্যবহার করতে পারেন। তা ছাড়াও স্নানের জলে মিশিয়ে নিতে পারেন লেবুর রস বা নিম পাতার রস। এই উপাদানগুলো আমাদের ত্বককে ফ্রেশ রাখবে এবং ঘামাচির স্থানে জীবাণু জন্ম হতে দেবে না। ঘামাচি আক্রান্ত ত্বকের উপর নিম পাতার রস ও পাতি লেবুর রস জল ছাড়াও সোজাসুজি লাগিয়ে কয়েক মিনিট রেখে স্নান করে নিতে পারেন। এতে নিশ্চিত উপকার পাবেন।
● ঘামাচি হলে চুলকাবেন না, কারণ আমাদের নখের আঁচড় এর জন্য ক্ষতিকর হয়ে উঠতে পারে। সব থেকে ভালো হল অ্যালোভেরার জেল, যার সাথে আপনি কিছুটা জল মিশিয়ে পাতলা করে নিয়ে ঘামাচি আক্রান্ত অংশে লাগাতে পারেন। এছাড়া অ্যালোভেরা সরাসরিও ঘামাচির স্থানে হালকা ঘষে লাগাতে পারেন। তাহলে দু- তিন দিনের মধ্যেই ঘামাচি কম হয়ে যাবে।
● যতটুক সম্ভব প্রসাধনী পাউডার থেকে দূরেই থাকুন। ঘামাচি আক্রান্ত স্থানে ট্যালকম পাউডারের ব্যবহার না করাই ভালো। এতে লোমকূপের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বলে বিপরীত ফল হতে পারে।
● ঘামাচির সমস্যার মোকাবেলায় বরফ অত্যন্ত কার্যকরী। আইসব্যাগ দিয়ে ঘামাচির স্থানে ঠান্ডা সেঁক নিতে পারেন অথবা ঠান্ডা জল বা বরফ নিয়ে ঘামাচির জায়গাগুলিতে লাগিয়ে দিন এবং অন্তত ৫ থেকে ১০ মিনিটের মত সময় পর্যন্ত রাখতে পারেন। এতে করে ত্বকের জ্বালা তথা চুলকানিও কম হয়ে যাবে আর তার পাশাপাশি ঘামাচির হাত থেকেও তাড়াতাড়ি রেহাই পাওয়া যাবে। তবে যাদের ক্ষেত্রে ঠাণ্ডা লাগার ধাত রয়েছে, তাদের এই পদ্ধতি এড়িয়ে যাওয়া ভালো।
Also read :
● মুলতানি মাটি আর গোলাপ জলের প্যাক ঘামাচি তাড়ানোর ক্ষেত্রে খুবই উপকারী। মুলতানি মাটির সাথে কয়েক ফোঁটা গোলাপ জল মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করে নিয়ে সেটা ঘামাচি আক্রান্ত ত্বকের উপর ভাল ভাবে লাগিয়ে রেখে দিন। অন্তত ১৫ মিনিট মতো সময় লাগিয়ে রেখে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এইভাবে ত্বকের জ্বালা ভাব, চুলকানির সমস্যা যেমন কমে যাবে, সেই সঙ্গেই খসখসে ত্বকও মসৃণ হয়ে উঠবে।
● আরও একটি জিনিস রয়েছে যা ঘামাচির দূর করতে সাহায্য করে এবং সেটা আমাদের হাতের কাছেই পেয়ে যাবেন। সেই উপাদানের নাম হল বেসন। এক কাপ বেসনের সঙ্গে প্রয়োজন অনুসারে জল মিশিয়ে নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। এবার এই মিশ্রণটি ঘামাচি আক্রান্ত ত্বকের উপর ভাল করে লাগিয়ে নিতে হবে। ১৫ মিনিটের মতো সময় রেখে ঠান্ডা জলে তা ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি পরপর দুই থেকে তিন দিন লাগাতে পারেন এতে ঘামাচির সমস্যা হতে নিস্তার পাওয়া যেতে পারে।
● ঘামাচি দূর করতে বেকিং সোডাও ব্যবহার করা যেতে পারে। বেকিং সোডাতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে, তাই দেহের যে কোনও ইনফেকশন সারাতে হলে এটা খুব কার্যকারী একটি উপাদান। সামান্য পরিমাণ জলে দুই চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর একটা পরিষ্কার সুতির কাপড় নিয়ে ওই জলে ভিজিয়ে ঘামাচি দানার উপর আলতো হাতে বোলাতে থাকুন, কিছুক্ষণ এভাবে করার পর ঠাণ্ডা হলে ধুয়ে নিন ।
● গরম কালে যতটুক সম্ভব হালকা রঙের ঢিলে ঢালা পোশাক পরার চেষ্টা করতে হবে। বেশি গাঢ় রঙের জামাকাপড় বা টাইট-ফিট কাপড় জামা পরা এড়িয়ে চলাই ভালো। এছাড়া প্রচুর পরিমাণে জল খাওয়া উচিত এবং রসালো ফল খেতে পারেন।
উপসংহার, Conclusion
গরমকালের উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়ায় আমাদের ঘামাচি, র্যাশ, বা চুলকানির মত সমস্যা হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বাড়িতে যতক্ষণ থাকবেন দরজা-জানালা খোলা রাখার চেষ্টা করুন, যেন বাতাস চলাচল ভালোভাবে করতে পারে।
Also read :