Ganga | আড়াই হাজার বছর আগের জোরাল ভূমিকম্পের কারণেই বদলে যায় গঙ্গার গতিপথ! গবেষণার রিপোর্ট নিয়ে বিস্মিত বিজ্ঞানীরাও!
হিমালয়ের গঙ্গোত্রী (Gangotri) হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে গিয়ে গঙ্গা মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। দীর্ঘ ২৫২৫ কিমি পথ অতিক্রম করে বিশ্বের দীর্ঘতম নদীগুলির অন্যতম এই নদী। এই দীর্ঘ গতিপথে গঙ্গায় এসে মিশেষে বহু উপনদী। তবে এক সময়ে এটি ছিল না গঙ্গার গতিপথ। সম্প্রতি এই গঙ্গা নদীর মানচিত্র (ganga river map) নিয়ে আশ্চর্যজনক এক তথ্য সামনে এসেছে। জানা যাচ্ছে, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এক ভয়ানক ভূমিকম্পের কারণে বদলে গিয়েছিল গঙ্গার গতিপথ!
হিমালয়ের গঙ্গোত্রী (Gangotri) হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে গিয়ে গঙ্গা মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। দীর্ঘ ২৫২৫ কিমি পথ অতিক্রম করে বিশ্বের দীর্ঘতম নদীগুলির অন্যতম এই নদী। এই দীর্ঘ গতিপথে গঙ্গায় এসে মিশেষে বহু উপনদী। বাংলাদেশে এটির সঙ্গে মিশেছে মেঘনা এবং অসমে ব্রহ্মপুত্র নদীও। যার ফলে একটি বড় ব-দ্বীপেরও সৃষ্টি হয়েছে। তবে এক সময়ে এটি ছিল না গঙ্গার গতিপথ। সম্প্রতি এই গঙ্গা নদীর মানচিত্র (ganga river map) নিয়ে আশ্চর্যজনক এক তথ্য সামনে এসেছে। জানা যাচ্ছে, প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে এক ভয়ানক ভূমিকম্পের কারণে বদলে গিয়েছিল গঙ্গা নদীর গতিপথ!
কীভাবে ভূমিকম্প বদলে দেয় গঙ্গা নদীর গতিপথ?
গবেষণার রিপোর্ট অনুযায়ী, এক ভয়াবহ ভূমিকম্পের বদলে দক্ষিণ দিকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে গঙ্গা নদীর পুরনো গতিপথ বদলে গিয়েছিল। যা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলেছে দীর্ঘকাল। আর সেই পরীক্ষার ফল হিসেবে দেখা গিয়েছে, সেখানকার মাটি দু'ভাগ। পলি এবং বালির রেখা থেকেও নানা প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। যার জন্য গবেষকরা বলছেন, ভূমিকম্পের ফলে এমনটা ঘটেছে। গত ১৭ জুন নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে গবেষণা রিপোর্টটি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, ৭.৫ কিংবা ৮ মাত্রার এই ভূমিকম্পটির উৎসস্থল ছিল বর্তমান বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহর। রিসার্চ অনুযায়ী, ভূমিকম্পের জেরে গঙ্গা নদীর মানচিত্র (ganga river map) এর ১৮০ কিলোমিটার গতিপথ সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছিল। এই ভূকম্প দক্ষিণ এশিয়াকে নাড়িয়ে দিয়েছিল বলে জানান গবেষকরা। এই গবেষণার দলের অন্যতম সদস্য নেদারল্যান্ডসের ওয়াইজনেনজিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওক্রোনোলজিস্ট লিজ চেম্বারলিন বলেন, আগেও প্রমাণিত হয়েছিল ব-দ্বীপ এলাকায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে জোরাল ভূমিকম্পের কারণেই হিমালয়ের গঙ্গোত্রী (Gangotri) হিমবাহের গোমুখ গুহা থেকে উৎপন্ন গঙ্গার মতো বড় নদীও এই ঘটনার শিকার। এছাড়াও উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমেও প্রমাণিত হয়েছে গঙ্গা নদীর গতিপথ বদলে গিয়েছিল। রাসায়নির পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানা গিয়েছে, তীব্র মাত্রার ভূমিকম্পটি প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে হয়েছিল।
এই গবেষণার গবেষকরা মনে করছেন, দু'টি কারণের জন্য জোরাল এই ভূমিকম্পটি হয়ে থাকতে পারে। প্রথমত, উত্তর পূর্ব ভারতের পর্বত থেকে এই ভূমিকম্পের উৎস। যার জেরে ভারতীয় টেকটনিক প্লেট ইউরেশিয়ান প্লেটের উপর উঠে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং উত্তর পূর্ব ভারতের নীচে ভারত মহাসাগরের অন্দর থেকে সেটি তৈরি হয়েছিল। এই দু'টি এলাকাই চিহ্নিত করা ভূমিকম্পস্থল থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, অদূর ভবিষ্যতে এই এলাকা থেকেই ফের একবার ৮ মাত্রার ভূমিকম্প তৈরি হতে পারে। যার ফলে ভয়ংকর বন্যার সম্ভাবনা দেখা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, প্রত্যেক নদীর মতো গঙ্গাও নিজের গতিপথ বদলেছে। ২০০৮ সালে বিহারের কোনও একটি নদীতে বন্যা হয়েছিল। যেটি গঙ্গা নদীরই একটি শাখা। বন্যার সময় নদীর ১২০ কিলোমিটার গতিপথ পরিবর্তন করে ফেলেছিল। ৩০ লাখ মানুষকে রাতারাতি বসতি বদলে ফেলতে হয়েছিল। ২৫০ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আচমকা কোনও নদী গতিপথ পরিবর্তন ঘটলে সে অবস্থাকে বলা হয় অ্যাভালশনস (avulsions)। অর্থাৎ বলপূর্বক বিচ্ছিন্নকরণ। নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া ক্লাইমেট স্কুলের ল্যামেন্ট-ডোহর্টি অর্থ অবজারভেটরির জিওফিজিসিস্ট মাইক স্টেকলর বলেন, ভূমিকম্পের কারণে নদীর গতিপথ বদলে যাওয়ার ঘটনা বিরল। তবে এমন নয় এই ঘটনা প্রথম। এর আগে আমেরিকার নিউ ম্যাড্রিড সিসমিক জোনের কারণে বহু নদী গতিপথ বদলে ফেলেছে। এ ছাড়া গুজরাটের কচ্ছের রণেও ভূমিকম্পের ফলে সংলগ্ন নদীর গতিপথ বদলে গিয়েছিল।