TMC 21st July | বিজেপিকে কটাক্ষ করে একাধিক ইস্যুতে বার্তা তৃণমূল সুপ্রিমোর! এক নজরে দেখুন ২১সে জুলাইয়ে মমতার বার্তা!
২১ সে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে মণিপুর-সহ একাধিক ইস্যুতে কটাক্ষ মমতার। পাশাপাশি ৫ই অক্টোবর বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাওয়ের ডাক মমতা-অভিষেকের। 'খেলা হবে' কর্মসূচির পরিকল্পনা।
বঙ্গের উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম প্রায় সব জেলার তৃণমূল (TMC) নেতা কর্মীরা আজ একত্রিত হয়েছিলেন কলকাতা (Kolkata) শহরে। এই ২১ সে জুলাই ঘাসফুল শিবিরের জন্য বেশিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ এটাই ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের (2024 Lok Sabha Election) আগে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ শ্রদ্ধা দিবসের মেগা সভা। সেইমতোই ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনের সভামঞ্চ থেকেই দলের উদ্দেশ্যে, সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে একাধিক বার্তা দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ও অভিষেক বন্দোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। প্রতিবারের মতোই ২১শে জুলাইয়ের শহিদ স্মরণের মঞ্চ থেকে ফের একবার চেনা ছন্দে বিজেপি (BJP) তথা কেন্দ্রীয় সরকারকেও নিশানা করেন মমতা-অভিষেক। মণিপুর ইস্যু থেকে শুরু করে পঞ্চায়েত নির্বাচন, ১০০ দিনের কাজের টাকা, আগামীদিনে বিজেপির কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন, 'ইন্ডিয়া'র জয়োধ্বনি, একাধিক বিষয়ে মন্তব্য রাখলেন তৃণমূল শীর্ষরা। সভা শেষে দেখা গেল মুকুল রায়কেও (Mukul Roy)। এক নজরে দেখে নিন ২০২৩ সালের ২১সে জুলাইয়ে কী কী বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দোপাধ্যায়।
'ইন্ডিয়া' জোট । ‘I.N.D.I.A.’ Alliance :
২০২৪ এর লোকসভায় বিজেপিকে হারাতে জোট বেঁধেছে ২৬টি বিজেপি বিরোধী দল, তৈরী হয়েছে 'ইন্ডিয়ার' (INDIA )। ২১ সে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে জোটসঙ্গীদের বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সভা মঞ্চ থেকে তৃণমূল সুপ্রিমো বুঝিয়ে দিলেন, প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রতি আগ্রহ নেই তার, বরং মমতার বক্তব্য 'বিজেপি হারুক ইন্ডিয়া জিতুক'। ইন্ডিয়ার পাশে বিশ্বস্ত সৈনিকের মতো লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস, এমনই বার্তা দিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। রাজনৈতিক মহলের দাবি, বিরোধী জোটের নেতৃত্বে থাকবে সম্মিলিত বিরোধীরা। ফলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, সেটাও ঠিক হবে ভোটের পরই। যার ফলে এখনই কে প্রধানমন্ত্রীত্ব করতে চান তা নিয়ে সুর চড়াবেন না কোনও দলই। এদিন ২১ সে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রীর হুঙ্কার, ইন্ডিয়া লড়বে, তৃণমূল কংগ্রেস পাশে ঝান্ডা নিয়ে সৈনিকের মতো দাঁড়িয়ে থাকবে। নেত্রী বোঝালেন, চেয়ারে 'কেয়ার' নেই তার।
চেয়ারের কেয়ার করি না। কোনও চেয়ার আমাদের চাই না। আমরা চাই বিজেপি দেশ থেকে রাজনৈতিকভাবে বিদায় দিক। ইন্ডিয়া লড়বে, তৃণমূল কংগ্রেস পাশে ঝান্ডা নিয়ে সৈনিকের মতো দাঁড়িয়ে থাকবে। আমাদের একটাই চাওয়া, মোদি হারুক, ইন্ডিয়া জিতুক। আগামী ২৪-এ নতুন ইন্ডিয়ার সৃষ্টি হবে। নতুন ইন্ডিয়ার জন্ম হবে। উন্নয়নের জন্য, মানুষের জন্য, একতার জন্য, সম্প্রীতির জন্য, সংহতির জন্য।
'ইন্ডিয়া'র প্রচারের পাশাপাশি অন্য সুর শোনা গেল তৃণমূল সুপ্রিমোর গলায়। এতদিন বাম-কংগ্রেস-বিজেপিকে নিশানা করে ‘রাম-বাম-শ্যাম’ বলে খোঁচা দিতেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এই এদিন ২১ সে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে বিজেপিকে নিশানা করলেও বাম-কংগ্রেস নিয়ে কোনো তুলোধোনাই করলেন না মমতা। শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে বিক্ষিপ্ত অশান্তির অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলার সময় বুদ্ধদেব সম্পর্কিত দু-এক কথা বলে ফেললেও কংগ্রেস তথা অধীর রঞ্জন চৌধুরীকে (Adhir Ranjan Chowdhury) নিয়ে টু শব্দটুকু করলেন না তৃণমূল নেত্রী। রাজনৈতিক মহলের দাবি, 'ইন্ডিয়া'র জন্যই মঞ্চে সাবধানতা অবলম্বন করেছেন মমতা। এমনকি সভার শেষে নেত্রী দলের উদ্দেশ্যে বলেন, 'জয় বাংলা' শ্লোগানকে যেমন জনপ্রিয় করে তোলা হয়েছে, তেমনই 'জয় ইন্ডিয়া' স্লোগানকেও জনপ্রিয় করতে হবে। সব সভায় জয় বাংলার পাশাপাশি জয় ইন্ডিয়ার স্লোগানও দেওয়া হবে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের অশান্তি । Panchayat Election :
২০২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফের উড়েছে সবুজ ঝড়। তবে নির্বাচন নিয়ে অশান্তি, সংঘর্ষের খবর কেবল রাজ্য বা দেশেই নয় ছড়িয়েছে বিদেশেও। ফলে পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রথমে পঞ্চায়েতের ত্রিস্তরে বিপুল জয়ের জন্য দলকে অভিনন্দন জানিয়ে তৃণমূল নেত্রীর বার্তা, সরকারের ও নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে বোর্ড গঠন করতে হবে। পাশাপাশি পঞ্চায়েত নির্বাচনের অশান্তি নিয়ে মমতা বলেন, ৭১ হাজার বুথের মধ্যে কেবল ৩ টি তে অশান্তি হয়েছে। যার নেপথ্যে দায়ী বিরোধীরাই। এমনকি ইচ্ছা করেছে অশান্তি করে অন্য দল জিতেছে বলেও দাবি তৃণমূল সুপ্রিমোর।
৭১ হাজার বুথে নির্বাচন হল। ৩টে জায়গায় গণ্ডগোল হল। একটা ভাঙড়, ওই হাঙররা গণ্ডগোল করেছে। একটা ডোমকলে, আমার জিতিনি, আমরা হেরেছি, গণ্ডগোল করে জিতেছে। একটা গণ্ডগোল হয়েছিল ইসলামপুর বা চোপড়ার দিকে। আর কোচবিহারে মারা গিয়েছে একজন। আর তৃণমূলের ১৮ জন খুন হয়েছে।
মণিপুর ইস্যু । Manipur Issue :
সম্প্রতি মণিপুরে দুই মহিলাকে বিবস্ত্র করে রাস্তায় হাঁটানোর এবং শ্লীলতাহানি ও গণধর্ষণের অভিযোগের ঘটনায় উত্তাল গোটা দেশ। এই প্রসঙ্গে ২১ সে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে এই ঘটনার নেপথ্যে বিজেপিকে দায়ী করে কটাক্ষ করেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। নেত্রী বলেন, এভাবে মহিলাদের ‘ক্ষতি’ হতে থাকলে বিজেপির তৃতীয় মোদী সরকারের স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যাবে। পাশাপাশি বিজেপির 'বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও' স্লোগান নিয়েও এক হাত নিলেন তৃণমূল নেত্রী।
বিজেপি বেটি বাচাও স্লোগান দিয়েছিল, কোথাও গেল বেটি বাঁচাও স্লোগান? আজ মেয়েদের জ্বালান হচ্ছে, আজ মণিপুর জ্বলছে, গোটৈ দেশ জ্বলছে। যদি মহিলাদের ইজ্জত নেন, শুনে রাখুন, আসন্ন নির্বাচনে মহিলাতাই আপনাদের ভারত থেকে দূরে ছুঁড়ে ফেলবে। মহিলাদের ক্ষতি করলে, জেনে রাখুন, আগামী নির্বাচনে মহিলারাই আপনাদের ক্ষমতাচ্যুত করবে।
সূত্র মারফত খবর, মণিপুর ইস্যুতে আগামী সোমবার সংসদে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ইন্ডিয়া অর্থাৎ ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়্যান্স জোটের প্রতিনিধিরা ধর্নায় বসবেন। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে মণিপুর ইস্যুতে উত্তাপ বাড়াতেই এই সিদ্ধান্ত।
১০০ দিনের কাজ। 100 Days Work :
১০০ দিনের কাজ নিয়ে বারংবার বিজেপিকে কটাক্ষ করে আসছে ঘাসফুল শিবির। এদিন ২১ সে জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে ১০০ দিনের কাজ নিয়ে বিজেপির উদ্দেশ্যে তোপ দাগলেন তৃণমূল নেত্রী। মমতার অভিযোগ, ৭ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখেছে বিজেপি।
১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়েছে, কারণ আমরা ৫ বার পরপর প্রথম হয়েছিলাম। আমাদের পারফরম্যান্স এক নম্বরে। ৭ হাজার কোটি টাকা আটকে রেখে দিয়েছে। যারা কাজ করেছে, গরীব মানুষ, সেই টাকা তাদের টাকা দেওয়া হয়নি।
এছাড়াও তৃণমূল নেত্রী জানান, এ রাজ্যের টাকা দিয়ে ১০০ দিনের কর্মসূচি শুরু করার পরিকল্পনা করছে তৃণমূল সরকার। গরিব মানুষদের কথা ভেবেই এই উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান মমতা। এমনকি এই কর্মসূচির নাম খেলা হবে' বলেও ঘোষণা তৃণমূল সুপ্রিমোর। তৃণমূল সুপ্রিমো জানান, রাজ্য সরকার জব কার্ড হোল্ডারদের ইতিমধ্যে ২৬ দিনের কাজ দিয়েছে। রাজ্য নিজের টাকা দিয়ে ১০০ দিনের না হলেও ৪০-৫০ দিনের কাজের ব্যবস্থা করবে জব কার্ড হোল্ডারদের জন্য।
৫ই অগাস্ট কর্মসূচি । 5th August Program :
২১ সে জুলাইয়ের সভামঞ্চ থেকে বিজেপি নেতা-নেত্রীদের বাড়ি ঘেরাওয়ের ডাক দেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ৫ই অগাস্ট ৮ ঘণ্টার জন্য জেলা থেকে ব্লক স্তরে সমস্ত গেরুয়া শিবিরের নেতাদের বাড়ি ঘেরাওয়ের জন্য তৃণমূল কর্মী-সমর্থদের ডাক দিলেন তিনি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মঞ্চ থেকে এদিন দলের কর্মীদের জানান, ৫ই অগাস্ট শনিবার তৃণমূল নেত্রীর অনুমতি নিয়ে সকাল ১০ টা থেকে সন্ধে ৬ টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করা হবে। যদিও পরে তৃণমূল নেত্রী এই কর্মসূচিতে বদল এনে বুথ অনুয়ায়ী না করে ব্লক অনুযায়ী বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাওয়ের পরামর্শ দেন। অন্যদিকে, ২রা অক্টোবর গান্ধীজির জন্মদিনের দিন দিল্লি যাওয়ার কথাও বলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, ২১ সে জুলাইয়ের সভামঞ্চে দেখা গেলো মুকুল রায়কে। তাকে দেখে রীতিমতো অবাক রাজনৈতিক মহলের অনেকেই। কারণ এক সময়ে তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড থাকলেও তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেন মুকুল। তবে ফের বিজেপি থেকে তৃণমূলে এলেও তিনি 'অসুস্থ্য' বলেই জানেন সকলে। মাঝে তিনি ঠিক কোন দলে আছেন তা নিয়েও শুরু হয় তর্ক বিতর্ক। তবে এদিন ছেলে শুভ্রাংশুর সঙ্গে দেখা গেলো মুকুল রায়কে। 'বাবা তৃণমূলেই আছেন' বলেও জানান ছেলে শুভ্রাংশু।