লাইফস্টাইল

Diabetes | বিশেষ কিছু কারণে এই মানুষদের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি! এই তালিকায় আপনি নেই তো? সঙ্গে জানুন কীভাবে নেবেন ইনসুলিন?

Diabetes | বিশেষ কিছু কারণে এই মানুষদের ডায়াবেটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি! এই তালিকায় আপনি নেই তো? সঙ্গে জানুন কীভাবে নেবেন ইনসুলিন?
Key Highlights

ডায়াবিটিস আয়ু কমিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাই সময় থাকতে থাকতেএই বিষয়ে সতর্ক হওয়া দরকার। বিশেষত, অন্য সকলের তুলনায় বিশেষ কিছু মানুষের এই রোগের থেকে দূরে থাকার জন্য আরও বেশি করে সচেষ্ট হতে হবে।

বর্তমানে ঘরে ঘরে ডায়াবেটিস আক্রান্ত। জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে অনিয়ম বা অন্যান্য কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। একটি অন্তঃস্রাব মূলক রোগ ডায়াবেটিস, পুরুষ- মহিলা নির্বিশেষে যেকোনো মানুষের যেকোনো বয়সেই হতে পারে।  হরমোন সংশ্লিষ্ট এই রোগটি বহুমূত্র রোগ, মধুমেহ বা  ইংরেজিতে ডায়াবেটিস মেলিটাস হিসেবে পরিচিত। মূলত রক্তে শর্করা বা চিনির মাত্রা অত্যধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেলে বা অসামঞ্জস্যতা দেখা দিলে যে পরিস্থিতিগুলি তৈরী হয় তাকেই এক কথায় আমরা ডায়বেটিস বলে থাকি। বিভিন্ন ধরনের ডায়বেটিসের মধ্যে প্রধানত 'টাইপ ওয়ান' (type 2 diabetes) এবং 'টাইপ টু' (type 1 diabetes) ডায়াবেটিসের প্রকোপ মানুষের মধ্যে বেশি লক্ষ্য করা যায়। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে পৃথিবীর ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে অধিকাংশ শতাংশই  টাইপ টু ডায়াবেটিস ভুক্ত রোগী। টাইপ ২ ডায়াবিটিসের মতো একটি জটিল অসুখের ফাঁদে পড়লে কিডনি, চোখ, হার্ট, নার্ভ সহ দেহের একাধিক অঙ্গের ক্ষতি হয়। 

ডায়াবেটিসের লক্ষণ | Symptoms of Diabetes : 

মানব শরীরে ডায়াবেটিস বা মধুমেহ সংক্রমণ হয়েছে কিনা তার সংকেত  কিছু শারীরিক লক্ষণ  এবং উপসর্গের মাধ্যমে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। যেমন -

  • আকস্মিক তীব্র ক্ষুধা ও সর্বদা তৃষ্ণার্ত থাকা 
  • বিনা কারণবশত ওজন কমে যাওয়া 
  • স্বাভাবিকের থেকে বেশি প্রস্রাবের বেগ এবং তা  বিশেষ করে রাতের বেলায় বৃদ্ধি পাওয়া
  • সহজেই ক্লান্তি বোধ ও দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা 
  • ক্ষত উপশম হতে প্রয়োজনের থেকে বেশি সময় লাগা
  • মেজাজের তারতম্য ঘটা বা খিটখিটে মেজাজ হয়ে যাওয়া
  • হাতের তালুতে বা পায়ের পাতায় জ্বালা ধরা
  • অতিশয় দুর্বল বোধ করা

কাদের ডায়াবিটিসের বেশি ঝুঁকি থাকে? । Who is at Greater Risk of Diabetes?

মূলত রক্তে শর্করা বা চিনির মাত্রা অত্যধিক পরিমাণে বৃদ্ধি পেলে বা অসামঞ্জস্যতা দেখা দিলে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। বর্তমানে এই রোগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আগের থেকেই সতর্ক হওয়া শ্রেয়। এর জন্য চিকিত্সকরা নিয়মিত চিকিৎসার পাশাপাশি ডায়াবেটিসের জন্য আসন (asanas for diabetes), খাদ্যাভাস ঠিক করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ সাধারণ ব্যক্তির তুলনায় বিশেষ কিছু  ব্যক্তির হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

যাদের  হাই ব্লাড প্রেশার​ রয়েছে :

উচ্চ রক্তচাপ একটি জটিল সমস্যা। এই রোগের ফাঁদে পড়লে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ থেকে শুরু করে হার্ট ডিজিজ সহ একাধিক জটিল অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এমনকী ডায়াবিটিসের মতো একটি জটিল রোগও হতে পারে। তাই হাই ব্লাড প্রেশারের মতো অসুখ থাকলে প্রতিবছর সুগার টেস্ট করা প্রয়োজন।

ওজন বাড়লে :

ওজন বেশি থাকা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো বিষয় নয়। বরং এর জন্য পিছু নিতে পারে একাধিক রোগ। আর এই তালিকায় ডায়াবিটিসের মতো ঘাতক অসুখের নামও রয়েছে। প্রসঙ্গত, দেহে মেদের বহর বাড়লে ইনসুলিন সেনসিটিভিটি কমে। আর ইনসুলিন হরমোন ঠিক মতো কাজ না করলে যে অচিরেই টাইপ ২ ডায়াবিটিসের আশঙ্কা বাড়ে। উল্লেখ্য, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ডায়াবেটিসের জন্য আসন (asanas for diabetes) বা যোগব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এবার আপনার যদি ডায়াবেটিস না হয়ে থাকে কিন্তু হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে তাহলেও যোগাসন সুস্থ্য থাকতে ভালো কাজ দেবে।

পরিবারে ডায়াবিটিসের ইতিহাস থাকলে :

টাইপ ২ ডায়াবিটিসের নেপথ্যে রয়েছে জিন গত কারণও। তাই আপনার মা-বাবা, ভাই-বোনের মধ্যে এই রোগ থাকলে আপনাকেও সাবধান হতে হবে। কারণ পরিবারের অন্দরে এই রোগ থাকলে আপনার ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৬ গুণ বেড়ে যায়। তাই এমন পরিস্থিতিতে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

​ফাস্টফুড, মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাস থাকলে :

নিয়মিত ফাস্টফুড বা মিষ্টি খেলে দেহে  ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমে। আর সেই সুবাদে টাইপ ২ ডায়াবিটিসের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে। ফলে সুস্থ্য থাকতে হলে খাদ্যাভাস ঠিক করা দরকার। উল্লেখ্য, ডায়াবেটিস হলে চিকিৎসকরা ডায়েটে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভারতীয় খাদ্য তালিকা (Indian diet chart for diabetic patient) এর মধ্যে বেশি করে গোটা শস্য, আঁশযুক্ত সবজি, বাদাম,  ডাল এবং চর্বিহীন মাংস রাখার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। 

আলস্যতা :

সারাদিন শুয়ে বসে কাটালেও ডায়াবিটিসের ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা বাড়ে। তাই সময় নষ্ট না করে আজ থেকেই নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। আর ব্যায়ামে অনীহা থাকলে প্রতিদিন মাত্র ৩০ মিনিট হাঁটতে হবে।

ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ও ইনসুলিন । Diabetes Treatment and Insulin :

ডায়াবেটিসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম যা করণীয় তা হল রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ বা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় রাখা। ডায়াবেটিসজনিত কোনো জটিলতা পরিলক্ষিত হয়ে থাকলে তার যথোপযুক্ত চিকিৎসা করা দরকার। তবে রোগের তীব্রতা অনুযায়ী  ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য চিকিৎসা পদ্ধতির তারতম্য হতে পারে। কিন্তু সকল ডায়াবেটিক রোগীর জন্য মূলনীতি প্রায় একই রকম। এক্ষেত্রে নিয়মিত শরীর চর্চা, সঠিক খাদ্যাভাস ও চিকিৎসার প্রয়োজন। ডায়াবেটিস হলে বেশিরভাগ ব্যক্তিই ডায়াবেটিস ক্যাপসুল (diabetes capsule) বা ওষুধ খেয়ে থাকেন তবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত অনেক রোগীকেই সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ইনসুলিন নিতে হয়। কিন্তু সঠিক পদ্ধতি জানা না থাকার ফলে অনেকেই শরীরের ভুল স্থানে ভুলভাবে ইনসুলিন নিয়ে ফেলেন। ফলে দেখে নিন কোথায়, কীভাবে ইনসুলিন-

কোথায় ইনসুলিন নেবেন?

ইনসুলিন নেওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হল শরীরের চর্বিযুক্ত স্থান। বেশিরভাগ ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা পেটের চামড়ার নীচে ইনসুলিন নিয়ে থাকেন। ইনসুলিন নেওয়ার আগে প্রথমেই হাত ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হয়। পেটের নাভির উপরে ও নীচে ২ ইঞ্চি দূরে ভূমির সমান্তরাল ইনসুলিন সিরিঞ্জ (insulin syringes)প্রয়োগের জন্য আদর্শ। এছাড়াও ঊর্ধ্ব-বাহু এবং ঊরুর বাইরের দিকের মাঝের এক-তৃতীয়াংশে এটি প্রয়োগ করা যায়। তাছাড়া ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে নিতম্বে ইনসুলিন দেওয়া যেতে পারে বলা বাহুল্য, ইনসুলিনের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। ইনসুলিন ইনজেকশন নেওয়ার জন্য সিরিঞ্জ অথবা পেন- যেকোনো একটি ব্যবহার করা যায়। বিশেষ ইনসুলিন সিরিঞ্জ (insulin syringes) গুলো বিভিন্ন সাইজের হতে পারে। ইনসুলিনের ধরনভেদে নির্দিষ্ট সাইজের সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হয়। প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী সিরিঞ্জে ইনসুলিন নিয়ে এরপরে ইনজেকশনটি করতে হয়। ইনজেকশন নেওয়ার পর সিরিঞ্জ ক্যাপের ভিতর ঢুকিয়ে রাখতে হবে। এটি যাতে অন্য কিছুর সংস্পর্শে না লাগে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উল্লেখ্য, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক ইনসুলিনটি বেছে নিন। ইনসুলিন ব্যবহারের পূর্বে সাধারণত বোতল বা ভায়াল ঝাঁকিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। 

কীভাবে রাখবেন ইনসুলিন?

ইনসুলিন অত্যধিক উষ্ণ কিংবা নিম্ন তাপমাত্রায় নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও এটি সরাসরি রোদের সংস্পর্শে কিংবা ডিপ ফ্রিজে রাখলে এটি কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। এটি সংরক্ষণ করতে হবে সাধারণ ফ্রিজে, ডিপ ফ্রিজে নয়।

প্রসঙ্গত, ইনসুলিনের মেয়াদ আছে কি না সেটি বোতলের গায়ে লেখা তারিখ থেকে জেনে নেওয়া দরকার। শুধু তাই নয় ইনসুলিন ঘোলাটে হয়ে গেলে, রং বদলে গেলে কিংবা অধক্ষেপ পড়ে থাকলে তা ব্যবহারের অযোগ্য হয়। এছাড়া নতুন কোনো ভায়াল কিংবা কলম ব্যবহারের জন্য খুললে তারিখ লিখে রাখতে হবে। ৪ সপ্তাহ পর ভায়াল আর ব্যবহার করবেন না। কারণ ভায়াল খুলে ফেলার পর ইনসুলিনের গাঠনিক কাঠামো বদলে যেতে পারে। তবে বারবার ইনসুলিন প্রয়োগের ফলে ত্বকের পুরুত্ব বেড়ে যায়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এটাকে বলে, লিপো-হাইপারট্রফি (lipo-hypertrophy)। এছাড়াও ওজন বৃদ্ধি, চামড়ার পুরুত্ব হ্রাস-বৃদ্ধি, প্রয়োগ স্থলে প্রদাহ, অ্যালার্জি এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়ার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।