Sujay Krishna Bhadra Arrested | প্রায় ১২ ঘন্টা জেরার পর গ্রেফতার 'কালীঘাটের কাকু'!
দীর্ঘ জেরার পর গ্রেফতার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। ইডির প্রশ্নের উত্তরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম তুললেন 'কালীঘাটের কাকু'। অন্য তৃণমূল নেতার মোবাইলে পাওয়া তথ্য দেখিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ।
বহু জল্পনা শেষে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (Enforcement Directorate) হাতে গ্রেফতার সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র (Sujay Krishna Bhadra) ওরফে 'কালীঘাটের কাকু'। ৩০ সে মে, মঙ্গলবার দীর্ঘ ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হয় সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রকে। তদন্তে অসহযোগিতা, বয়ানে অসঙ্গতি, তথ্য গোপনের চেষ্টা, তদন্তকারী আধিকারিকদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় ইডি (ED)। তবে গ্রেফতারির আগেই 'কালীঘাটের কাকু'র মুখে শোনা গেলো পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের (Partha Chatterjee) নাম।
ইডি সূত্রে খবর, সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রকে জেরা করার সময় যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয় ইডির তরফ থেকে। এমনকি ইডির সন্তু গাঙ্গুলির ২৭ কোটি টাকা নেওয়ার প্রশ্নের উত্তরে পার্থ চ্যাটার্জির নাম নিয়ে তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার অথবা তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন ‘কালিঘাটের কাকু’। ফলে ইডি বুঝতে পারে সন্তু-কান্ড নিয়ে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করে কোনও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আড়াল করার চেষ্টা করছেন তিনি। এরপর ইডির বেশ কিছু প্রমাণ সামনে রাখতেই সন্তু গাঙ্গুলির সঙ্গে নিজের যোগাযোগ নিয়েও কোনও উত্তর দেন না সুজয়।
উল্লেখ্য, চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে গোপাল দলপতির মুখে প্রথমবার শোনা যায় 'কালীঘাটের কাকু' বা সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের নাম। এরপর নিয়োগ দুর্নীতি-কাণ্ডে ধৃত তাপস মন্ডলের মুখেও একই নাম ওঠে। সময়ের সঙ্গে রাজ্যে দুর্নীতি কাণ্ডের সঙ্গে নাম জড়িয়ে যায় 'কালীঘাটের কাকু'র। একাধিক মোড়েই বারংবার উঠে এসেছে তার নাম। যার ফলে গত ২০ মে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Abhishek Banerjee) সিবিআই (CBI) জিজ্ঞাসাবাদের দিনই 'কাকু'র বাড়িতে হানা দেয় ইডি। সেইদিন অভিষেককে কুন্তল ঘোষের (Kuntal Ghosh) চিঠির প্রেক্ষিতে ৯ ঘণ্টা ৪০ মিনিট জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিবিআই জেরা করার দিন 'কালীঘাটের কাকু'র বেহালার (Behala) বাড়ি-অফিসে ১৫ ঘণ্টার চিরুনি তল্লাশি চালিয়ে তিনটি কোম্পানির নথি উদ্ধার করে ইডির আধিকারিকরা। তদন্তকারী দলের দাবি, যে কোম্পানিগুলির অ্যাকাউন্ট দ্বারা প্রচুর কালো টাকা সাদা করা হয়েছে তারই নথি ছিল সেগুলো। এর আগেও গত ৪ মে, 'কালীঘাটের কাকু'র বাড়ি-ফ্ল্যাটে চলে সিবিআই তল্লাশি। সেদিন তার বাড়ি থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় ২টি ফোন ও টাকা।
'কালীঘাটের কাকু' অর্থাৎ সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র পেশায় ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসের কর্মচারী। অবশ্য নিজাম প্যালেসে (Nizam Palace) অভিষেকের সিবিআই জেরার সময় তাঁর সঙ্গে 'কাকু'র কোনোরকম সম্পর্ক নেই বলে জানান। অভিষেক সিবিআই আধিকারিকদের বলেন, কালীঘাটের কাকুকে চেনেন না তিনি। এদিকে গোটা সংবাদমাধ্যমকে সুজয় কৃষ্ণ ভদ্র জানিয়েছিলেন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তার সাহেব এবং তিনি তাঁর কর্মচারী। এছাড়াও 'কালীঘাটের কাকু'র বক্তব্য ছিল, তার সাহেব অর্থাৎ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেউ ছুঁতে পারবেনা, যার ফলেই তাকে টার্গেট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ।
কালীঘাটের কাকুর নিজের মোবাইলের তথ্য তার গ্রেফতারির জন্য যথেষ্ট ছিল না। অন্য এক তৃণমূল (TMC) নেতার মোবাইলে পাওয়া তথ্য দেখিয়ে মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কালীঘাটের কাকুকে। জেরা চলাকালীন মোবাইলের তথ্য সামনে তুলে ধরার পরেও, তথ্য গোপন করছিলেন 'কালীঘাটের কাকু'। তিনি ইডি অফিসারদের উপরে কার্যত চোটপাট করতে শুরু করেন বলেও জানা যায়। এরপরেই তাকে নিজেদের হেফাজতে নেয় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ইডির সন্দেহ, নিয়োগ দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত সুজয়কৃষ্ণ। এমনকি তিনটি সংস্থার মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির কোটি কোটি কালো টাকা সাদা করা হয়েছে বলে ধারণা ইডির।