Earth Day | 'অসুস্থ্য' জগতে এখনও সুস্থ্য যারা! চিনুন বিশ্ব ও ভারতের সবচেয়ে কম দূষিত শহরগুলিকে! কীভাবে দূষণমুক্ত রাখবেন আপনার শহরকে?

Monday, April 22 2024, 10:55 am
highlightKey Highlights

গাছ কাটা থেকে জলে দূষিত পদার্থ মেশা, বায়ুতে কলকারখানার নির্গত ধোয়া থেকে নানাভাবে মাটির দূষণ, পৃথিবী দিন দিন বাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। যার ফলে মাতৃভূমি-পৃথিবীর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রতি বছর ২২সে এপ্রিল বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় পৃথিবী দিবস বা বিশ্ব পৃথিবী দিবস।


সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে চলেছে পৃথিবীর পরিবেশ, আবহাওয়া। বিগত বেশ সময় ধরেই বিশ্বের সর্বত্র পরিবেশ রক্ষা করা এবং দূষণ রোধ করার জন্য সচেতন বার্তার প্রচার করা হয়। তবে সেই বার্তা উপেক্ষা করে বেড়ে চলেছে দূষণ। গাছ কাটা থেকে জলে দূষিত পদার্থ মেশা, বায়ুতে কলকারখানার নির্গত ধোয়া থেকে নানাভাবে মাটির দূষণ, পৃথিবী দিন দিন বাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। যার ফলে মাতৃভূমি (mother earth) এর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রতি বছর ২২সে এপ্রিল বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় পৃথিবী দিবস বা বিশ্ব পৃথিবী দিবস (Earth Day)। রাষ্ট্রসংঘের তরফেই শুরু হয় এই বিশেষ দিনটি পালন। দেখে নেওয়া যাক এই দিবসের তাৎপর্য এবং বিশ্বের ও ভারতের সবচেয়ে কম দূষিত শহর (Least Polluted City in India) এর তালিকায় রয়েছে কোন শহরগুলি।

পৃথিবী দিবস । Earth Day :

প্রতি বছর ২২সে এপ্রিল পালন করা হয় বিশ্ব পৃথিবী দিবস। এই বিশেষ দিনটি পালনের একটিই উদ্দেশ্য রয়েছে। মানুষের মধ্যে মাতৃভূমির (mother earth) পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো। তাই এই দিনটি বিশেষ ভাবে পালন করা হয়। ক্রমেই দিন দিন বেড়ে চলেছে প্লাস্টিকের পরিমাণ। বাড়ছে বায়ু দূষণ থেকে শুরু করে জল দূষণ, আলো দূষণ, শব্দ দূষণ। আর সেটিই সংকটে ফেলছে পৃথিবীকে। এই অবস্থায় পৃথিবীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসার ডাক দেয় বিশ্ব পৃথিবী দিবস।

Trending Updates

পৃথিবী দিবসের ইতিহাস :

বিশ্ব ইতিহাস দিবস পালন শুরু হয় গত শতক থেকেই। পৃথিবীর প্রাকৃতিক উৎস শেষ হয়ে আসছে দিন দিন। এই অবস্থায় পৃথিবীকে বাসযোগ্য গ্রহ হিসেবে টিকিয়ে রাখতেই রাষ্ট্রসংঘ এই বিশেষ দিনটা পালন করা শুরু করে। এর আগেও নানা দেশে দূষণ কমাতে নানাভাবে আন্দোলনের উদ্যোগ হয়েছে। সেই আন্দোলনগুলিকে সংহত করতে রাষ্ট্রসংঘ এমন দিন নির্বাচন করে। দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরেকটি ইতিহাসও। ১৯৭০ সালের ২২ সে এপ্রিল ইউসকনসিনের সেনেটর গেলর্ড নেলসন (Senator Gaylord Nelson of Wisconsin) বিশ্ব পৃথিবী দিবস উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা করেন। তবে অনুষ্ঠানের পিছনে একটি বড় কারণ ছিল। ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা বারবারাতে তৈল নিষ্কাশনের ফলে প্রবল দূষণের ঘটনা তাঁকে রীতিমতো নাড়া দেয়। গেলর্ড মনে করতেন মানুষের পরিবেশ সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়া উচিত।  যার ফলে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন গেলর্ড। প্রথম বিশ্ব পৃথিবী দিবসে ভিড় হয়েছিল অবিশ্বাস্যরকমের। প্রায় ২ কোটি লোক আসেন সেখানে। সেখান থেকেই সূচনা হয় একটি ইতিহাসের। জন্ম নেয় পৃথিবী দিবস।

পৃথিবী দিবসের তাৎপর্য :

বর্তমানে ১৯০টির বেশি দেশে পালন করা হয় পৃথিবী দিবস। এই বছর ২২ এপ্রিলের ভাবনা ‘প্ল্যানেট ভার্সেস প্লাস্টিক’। অর্থাৎ প্লাস্টিক-মুক্ত পৃথিবী। আমরা সকলেই জানি, বর্তমানে দূষণ এবং জীবজগতের ক্ষতির পিছনে বড় ভূমিকা রয়েছে এই প্লাস্টিকের। আর সেটি সম্পর্কে সচেতন করতেই এই উদ্যোগ।

পৃথিবীর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রতি বছর ২২সে এপ্রিল বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় পৃথিবী দিবস 
পৃথিবীর স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য প্রতি বছর ২২সে এপ্রিল বিশ্ব জুড়ে পালন করা হয় পৃথিবী দিবস 

বিশ্বের সবচেয়ে কম দূষিত শহর । Least Polluted City in the World :

বিশ্বে উল্লেখ্যভাবে বাড়ছে বায়ু দূষণ। আর এই দূষণ বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। একটি শহরের দূষণ পরিমাণ সূক্ষ্ম কণার ঘনত্বের পরিপ্রেক্ষিতে পরিমাপ করা হয়। সূক্ষ্ম কণা পদার্থকে ২.৫ মাইক্রোমিটারের কম অ্যারোডাইনামিক ব্যাস সহ বায়ু দূষণকারী কণা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এগুলি বাতাসের ক্ষুদ্র কণা যা দৃশ্যমানতা হ্রাস করে এবং তাদের ঘনত্ব বেশি হওয়ার সাথে সাথে বাতাসকে ঝাপসা করে তোলে। গড়ে সব শহরেই বেড়ে চলেছে বায়ু দূষণ। তবে বিশ্বে এমন কিছু শহর রয়েছে যেখানে দূষণ খুবই কম। দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে কম দূষিত শহরের তালিকার মধ্যে রয়েছে কোনগুলি।

জুরিখ, সুইজারল্যান্ড । Zurich, Switzerland : জুরিখ ২০২১ সালে সবচেয়ে কম দূষিত শহর হিসেবে স্বীকৃত। এখানে যানবাহন থেকে দূষণ কমাতে পদক্ষেপ, পরিচ্ছন্ন পরিবহণের প্রচার এবং বায়ু দূষণের জন্য শহরের কঠোর নীতি রয়েছে। এখানে নাগরিকরা গাড়ি চালানোর পরিবর্তে সাইকেল, ট্রেন এবং পাতাল রেল ব্যবহার করে থাকেন। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনারও দৃঢ়।

হোবার্ট, অস্ট্রেলিয়া । Hobart, Australia : হোবার্ট শহর দুই দশক ধরে তার পরিচ্ছন্নতা এবং কম দূষণের জন্য পরিচিত। শক্তি খরচ এবং গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে হোবার্ট। শহরটি নির্গমন কমাতে, বিদ্যুতের জন্য সৌর শক্তিতে মনোনিবেশ করছে। শহরটি উন্নত জল নিষ্কাশন ব্যবস্থার জন্যও সুপরিচিত।

 রেইকজাভিক, আইসল্যান্ড ।  Reykjavik, Iceland : আইসল্যান্ডের এনভায়রনমেন্ট এজেন্সি অনুসারে, ভূমি ব্যবহার এবং বনায়ন থেকে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি বাদ দিয়ে ভারী শিল্প দেশের কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) নির্গমনের ৪৮% অবদান রাখে। আইসল্যান্ড ভারী বায়ু দূষণের শিকার হওয়া সত্ত্বেও আইসল্যান্ডের রাজধানী রেইক্যাভিক ২০২১ সালে বিশ্বের তৃতীয় সর্বনিম্ন দূষিত শহর হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

 লন্সেস্টন, অস্ট্রেলিয়া । Launceston, Australia : লন্সেস্টন (Launceston) এর ভৌগলিক অবস্থান এখানকার বায়ু আরও উষ্ণ করে তোলে। কিন্তু কমিউনিটি শিক্ষার প্রচার, পরিবেশগত বিধি প্রয়োগ এবং এরকম নানান পরিবেশ সচেতনতামূলক পদক্ষেপের জন্য লন্সেস্টন সবচেয়ে কম দূষিত শহরগুলির মধ্যে একটিতে পরিণত হয়েছে।

 হনলুলু, ইউএস । Honolulu, US : হাওয়াই বায়ু দূষণে ভুগলেও হনলুলু হাওয়াইয়ের সবচেয়ে পরিষ্কার শহর। শহরের জলবায়ু পরিস্থিতি এবং এর জনসংখ্যার ঘনত্ব বাতাসকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। তুলনামূলকভাবে কম ভারী শিল্পও কম দূষণে অবদান রাখে। তবে শহরে কঠিন বর্জ্য (সামুদ্রিক ধ্বংসাবশেষ) বাড়ছে।

জুরিখ সবচেয়ে কম দূষিত শহর হিসেবে স্বীকৃত
জুরিখ সবচেয়ে কম দূষিত শহর হিসেবে স্বীকৃত

ভারতের সবচেয়ে কম দূষিত শহর । Least Polluted City in India : 

বায়ু দূষণ ভারতে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয়। কিন্তু দেশে এমন কিছু শহর রয়েছে যেগুলি তাদের উল্লেখযোগ্যভাবে নিম্ন স্তরের বায়ু দূষণের জন্য পরিচিত। দেখে নেওয়া যাক ভারতের সবচেয়ে কম দূষিত শহরের তালিকার মধ্যে রয়েছে কোনগুলি।

ইম্ফল । Imphal : মণিপুরের রাজধানী ইম্ফল ভারতের সবচেয়ে পরিষ্কার শহর, যেখানে বায়ু দূষণ একেবারেই নেই বলা চলে। এখানে গড় PM ২.৫ মাত্রা মাত্র ১১.১৪ μg/m3।

মাদিকেরি । Madikeri : কর্ণাটকের পশ্চিম ঘাটে অবস্থিত, মাদিকেরি শুধুমাত্র তার চারিদিক সবুজ প্রকৃতির জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও এখানকার পরিষ্কার বাতাসও স্বচ্ছ, দূষণমুক্ত। PM ২.৫ মাত্রা এখানে মাত্র ১৭.০৪ μg/m3।

মাইসুরু । Mysuru : কর্ণাটকের সাংস্কৃতিক রত্ন, মাইসুরু, তার কম দূষণের মাত্রার জন্য বিখ্যাত। PM ২.৫ মাত্রা এখানে মাত্র ১৯.১০ কর্ণাটকের সাংস্কৃতিক রত্ন, মাইসুরু, তার কম দূষণের মাত্রার জন্য বিখ্যাত। PM ২.৫ মাত্রা এখানে মাত্র ১৯.১০ μg/m3। ফলে এখানকার নাগরিক বিশুদ্ধ বাতাস উপভোগ করে থাকে।

ম্যাঙ্গালোর । Mangalore : কর্ণাটকের উপকূলীয় শহর ম্যাঙ্গালোরে একটি মৃদু সমুদ্রের বাতাস এবং 20.07 μg/m3 এর PM2.5 স্তর উপভোগ করে, যা এর বাসিন্দাদের জন্য বিশুদ্ধ বাতাস নিশ্চিত করে৷

অমরাবতী । Amaravati :অন্ধ্রপ্রদেশের রাজধানী অমরাবতীর বায়ু দূষণ মাত্রা খুবই কম, ২০.৭৮ μg/m3।

হলদিয়া । Haldia : পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত, হলদিয়া দূষণ রোধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। এখানে দূষণের মাত্রা মাত্র ২৩.৪৩ μg/m3।

মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে বায়ু দূষণ একেবারেই নেই বলা চলে
মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে বায়ু দূষণ একেবারেই নেই বলা চলে

কীভাবে পৃথিবী দিবস উদযাপন করা যায়? ।  How to Celebrate Earth Day?

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পৃথিবী দিবস পালিত হয় ভিন্নভাবে। এখানে কিছু সাধারণ অভ্যাস আছে। এই দিন মূলত বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকার বা শিক্ষালয়ের তরফ থেকে পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষা এবং দূষণ রোধ করার জন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পৃথিবীকে আরও বাসযোগ্য এবং স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য এই বিশেষ দিনে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নিতে পারেন আপনিও। যেমন-

প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করা : এই বছরের থিম যেহেতু প্লাস্টিক নির্ভরতা কমানোর পক্ষে, প্লাস্টিক বর্জ্য পরিষ্কার করা অবশ্যই একটি কার্যকর উদ্যোগ হবে।

জল সংরক্ষণ অনুষ্ঠান : বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পানি সংকটের ঘটনাগুলো বেশ প্রচলিত হয়ে উঠেছে। প্রতিটি ব্যক্তির একটি ভাল ভবিষ্যতের জন্য জল সংরক্ষণ করা প্রয়োজন।

পরিবেশ বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন :পরিবেশগত সমস্যা সম্পর্কে সমাজের সকলকে শিক্ষিত করা এবং সমস্যাগুলি সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করা নেতিবাচক প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে।

বৃক্ষরোপণ : প্রতিদিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে বন উজাড় একটি প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাছ লাগানো পরিবেশের জন্য সহায়ক হয়ে উঠবে এবং পৃথিবী দিবস উদযাপনের জন্য একটি নিখুঁত ইভেন্ট হবে।

পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষা এবং দূষণ রোধ করার জন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ সকলের নেওয়া উচিত 
পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষা এবং দূষণ রোধ করার জন্য বিশেষ কিছু পদক্ষেপ সকলের নেওয়া উচিত 

প্রসঙ্গত,  শহর কলকাতা দেশের মেট্রো সিটির মধ্যে অন্যতম। ক্রমেই এই শহর আরও আধুনিক হয়ে উঠছে। আমরা প্রায়ই দেখি, যত উন্নত শহর-তত বেশি দূষণ। তবে কলকাতাকে দূষণ রোধ করার জন্য একাধিক ব্যবস্থা নিচ্ছে পুরসভা। যেমন, সম্প্রতি শহরে মেট্রো সম্প্রসারণের কাজের জন্য ময়দানে ভূগর্ভস্থ স্টেশন নির্মাণের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছিল ২৯টি পূর্ণবয়স্ক গাছের কাটা পরে। কিন্তু মেট্রো কর্তৃপক্ষ জোকা ডিপোয় ইতিমধ্যেই ওই সংখ্যার পাঁচ গুণ গাছ লাগানোও হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ২৯টি গাছের পরিপূরক হিসাবে ১৪৫টি গাছ লাগানো হয়েছে বলে খবর। এর পাশাপাশি, বন দফতরের প্রয়োজনীয় অনুমতি পাওয়া গেলে ময়দানের পূর্ণবয়স্ক গাছগুলিকে প্রতিস্থাপিত করার ব্যবস্থাও করা হবে বলে জানা গিয়েছে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File