রক্তাল্পতা একটি মারাত্মক সমস্যা! জেনে নিন ঘরোয়া উপায়ে কীভাবে এই রোগের প্রতিকার করবেন
অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা। রক্তে পর্যাপ্ত লোহিত রক্তকণিকা বা হিমোগ্লোবিন না থাকার ফলে রক্তাল্পতা দেখা দেয়। আপাত দৃষ্টিতে রক্তাল্পতাকে খুব বড় কোনও রোগ বলে মনে না হলেও, এই রক্তাল্পতা থেকেই যে কোন কঠিন অসুখের সৃষ্টি হতে পারে
শরীরে আয়রনের অভাব থেকেই মূলত রক্তাল্পতা দেখা যায়। একজন পূর্ণবয়স্ক মহিলার জন্য রক্তে হিমোগ্লোবিন ১২.১ থেকে ১৫.১ গ্রাম/ডেসিলিটার, পুরুষের রক্তে ১৩.৮ থেকে ১৭.২ গ্রাম/ডেসিলিটার, শিশুদের রক্তে ১১ থেকে ১৬ গ্রাম/ডেসিলিটার থাকা স্বাভাবিক। কারও রক্তে হিমোগ্লোবিন এর চেয়ে কমে গেলে তিনি রক্তাল্পতায় আক্রান্ত বলেই মনে করা হয়।
মানুষের শরীরে কী কী কারণে রক্তাল্পতা দেখা দেয় তা জেনে নিন
রক্তাল্পতা মূলত তিনটি কারণে হয়। সেগুলি হল রক্তক্ষয়, লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন কমে যাওয়া এবং লোহিত রক্তকণিকা নষ্ট হয়ে যাওয়া। এই তিন কারণে রক্তের মধ্যে আয়রণের পরিমাণ কমে যায়। খাদ্যে পুষ্টির অভাবে রক্তাল্পতা হয়। যে মহিলাদের ঋতুস্রাবের পরিমাণ অতিরিক্ত হয় তাদের ক্ষেত্রে অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা খুব বেশি।
রক্তাল্পতার সমস্যা দূর করতে কী কী করনীয়, জেনে নিন
রক্তাল্পতার সমস্যা দূর করতে শরীরে আয়রনের পরিমাণ বা ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত প্রয়োজন। আর এর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত। আসুন জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু সহজলভ্য খাবার সম্পর্কে যা আপনাকে রক্তাল্পতার হাত থেকে রক্ষা করবে।
১) চীনাবাদাম:
রক্তাল্পতার হাত থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রতিদিন চীনাবাদাম খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। চীনাবাদামে থাকা আয়রন আপনাকে রক্তাল্পতার সমস্যাকে দূর করতে সাহায্য করবে।
২) ডিম:
দিনে মাত্র একটি ডিম খাওয়া অভ্যাস করলে শরীরে আয়রনের ঘাটতি বা রক্তাল্পতার সমস্যা থেকে দূরে থাকা যাবে সহজেই। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ডিমের মতো সহজলভ্য, পুষ্টিকর খাবার রাখুন।
৩) খেজুর:
খেজুরের পুষ্টিগুণ অতুলনীয়। খেজুরে রয়েছে ভরপুর আয়রন। তাই রক্তাল্পতার সমস্যা দূর করতে নিয়মিত খাদ্যতালিকায় খেজুর রাখতে পারেন। উপকার পাবেন।
৪) টমেটো:
টমেটো খুবই সহজলভ্য একটি সবজি যা রক্তাল্পতা দূর করতে খুবই কার্যকরী। টমেটোয় থাকা আয়রন, ভিটামিন সি এবং লাইকোপেন রক্তাল্পতা-সহ নানা রোগের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করতে সক্ষম। তাই নিয়মিত খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন টমেটো। এড়ানো যাবে রক্তাল্পতার সমস্যা।
৫) মধু:
মধু একটি উচ্চ ঔষধি গুণসম্পন্ন ভেষজ তরল। এই মধু রক্তাল্পতার সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। চিনির পরিবর্তে নানা খাবারে মধু যোগ করতে পারেন। এতে চিনির ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও বাঁচা যাবে, এর সঙ্গেই রক্তাল্পতার সমস্যাও দূর হবে।
যেসব অভ্যাস বদলাতে হবে
- খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা আগে–পরে চা, কফি, কোনো কোমল পানীয় খেলে খাবারের আয়রন শরীরে ঠিকভাবে শোষিত হতে পারে না। তাই অভ্যাস বদলে ফেলুন।
- খালিপেটে ফল খাবেন না। ফলের ভিটামিন সি খাবারের আয়রনকে শোষিত হতে সাহায্য করে।
- ইসবগুল খান খাবার খাওয়ার ঘণ্টা দুয়েক আগে বা পরে। না হলে ফাইবারের ছাঁকনিতে পুষ্টির বেশ কিছুটা আটকে যেতে পারে।
- জাঙ্ক ফুড মুখরোচক খাবার হলেও কোনো পুষ্টিগুণ নেই। এছাড়া বেশি খেয়ে পেটের গোলমাল হলে আরেক সমস্যা।
- মাছ, মাংস ও ডিম খাওয়ার পর দুধের খাবার খাওয়া ঠিক নয়।
- রেড মিট, মাছ বিশেষ করে কুচো চিংড়ি, ডিম, মেটে ইত্যাদিতে আছে হিম–আয়রন। যা সহজে শরীরের কাজে লাগে। আর দুধ ও দুধে তৈরি খাবার, সবুজ শাক-সব্জি, মুসুর ও অন্যান্য ডাল, বিন, পাস্তা, ফল, বাদাম, ফর্টিফায়েড ব্রেকফাস্ট সিরিয়ালে থাকে নন–হিম আয়রন যা সহজে শোষিত হতে পারে না।
রক্তাল্পতা মারাত্মক পর্যায়ে না পৌঁছানো পর্যন্ত একে তেমন ক্ষতিকর কোনও সমস্যা বলে মনে করেন না অনেকেই। কিন্তু বাস্তবে এই অবহেলার ফল হয় মারাত্মক। তাই শুরু থেকেই রক্তাল্পতাকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- স্বাস্থ্য
- রক্তাল্পতা
- অ্যানিমিয়া