Diwali Crackers | সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে দেদার বাজি ফাটল রাজধানীতে! ফের ভয়াবহ দিল্লির বায়ু দূষণ! পাল্লা দিয়ে বাজি ফাটালো কলকাতাও!
দীপাবলি ২০২৩ এ বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে দীপাবলির বাজি ফাটানোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল শীর্ষ আদালত। সেই নিষেধাজ্ঞা না মেনেই দেদার বাজি ফাটলো দিল্লি - কলকাতায়। ফের ভয়াবহ দিল্লির বায়ুর গুণগত মান। আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি বঙ্গেও!
কালীপুজো কিংবা দীপাবলি মানেই আলো আর বাজি। দীপাবলি আসতে না আসতেই বাজারে দীপাবলির বাজি (Diwali Crackers) বিক্রি শুরু হয়ে যায়। তবে দেশে বায়ু ও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে বিগত কয়েক বছরের মতো দীপাবলি ২০২৩ (Diwali 2023) এও বাজি ফাটানোর উপর সুপ্রিম কোর্টের (Supreme Court) নিষেধাজ্ঞা ছিল। দিন কয়েক ধরেই দিল্লির দূষণের খবর (Delhi Pollution News) শিরোনামে। আর ক্রমশ বাড়তে থাকা দিল্লির দূষণের পরিমান কমাতেই বাজি নিষিদ্ধ করার মন্তব্য করেছিল শীর্ষ আদালত। তবে আদালতের নিষেধাজ্ঞা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেদার বাজি ফাটল রাজধানী দিল্লিতে। ফলে বাতাসের গুণগত মানের যতটা উন্নতি হয়েছিল তা ফের ঠেকল তলানিতে। ফের দিল্লিতে আজ বায়ু দূষণ (Air pollution in Delhi today) ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এদিকে শহর কলকাতাতেও ফাটলো শব্দ বাজি ও নিষিদ্ধ বাজি।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাতাস বিষিয়ে উঠেছে রাজধানী দিল্লিতে। দিল্লিতে বায়ু দূষণের পরিমাণ এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছিলো যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত নিয়ে আলোচনা করে প্রশাসন। পরে প্রাকৃতিক বৃষ্টিতেই কিছুটা হলেও স্বস্তি মেলে। কিন্তু তাতেও পুরোপুরি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে না, ফলে দিল্লিতে এমনকি দীপাবলি ২০২৩ (Diwali 2023)র রাতে গোটা দেশেই বাজি ফাটানোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। তবে সব নির্দেশ অমান্য করে ফাটানো হয় দীপাবলির বাজি (Diwali Crackers)। সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ড (Central Pollution Control Board) জানিয়েছে, সোমবার অর্থাৎ দিল্লিতে আজ বায়ু দূষণ (Air pollution in Delhi today) এর মাত্রা খুবই খারাপ। বিশেষত আনন্দ বিহারে বাতাসের গুণগত মান খুবই খারাপ। সকাল ৬টায় আনন্দ বিহারে একিউআই ছিল ২৯৬ কিন্তু সকাল ৭টার মধ্যে তা বেড়ে পৌঁছেছে ৩০১-এ। শহরের বেশির ভাগ এলাকায় বায়ুর গুণমান 'খারাপ'। সকাল ৬টা ৫৫-র দিকে নয়াদিল্লি এলাকায় বাতাসের একিউআই ছিল ৫৮৯। যদিও রবিবার বিকেল ৪টার পর বাজি পোড়ানোর তীব্রতা বাড়লেও গত বছররের তুলনায় তা কম ছিল।
দীপাবলিতে কেবল দিল্লির দূষণের খবর (Delhi Pollution News) এক নয়, শিরোনামে কলকাতার দূষণের খবরও। কালীপুজোর রাত যত বেড়েছে তত বেড়েছে বাজির দাপটও। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট অনুযায়ী, কালীপুজোর রাতে ১১টা পর্যন্ত কলকাতার মধ্যে সবথেকে খারাপ অবস্থা ছিল বালিগঞ্জে। জানা গিয়েছে, পিএম ২.৫-এর মান মাইক্রোগ্রাম প্রতি ঘনমিটারে রাত ৮টায় ছিল ১৫০। রাত ৯টায় তা বেড়ে ৩৮০ হয়, রাত ১০টায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩২-এ। এরপর রাত ১১টায় ৪৩৮। তবে জেলার ক্ষেত্রে হাওড়ার ঘুষুড়ির ছবিটা আরও খারাপ। রাত ৮টায় যা ৩১৭ ছিল, রাত ১১টায় বড়সড় লাফ মেরে ৫০০ ছুঁয়ে ফেলেছে। বেলুড়েরও একই দৃশ্য। রাত ৮টায় ১৬০ ছিল, রাত ১১টায় তা ৫০০ হয়েছে।
২৩ এর কালীপুজোয় রাজ্যে শব্দবাজির মাত্রা বৃদ্ধি করেছে সরকার। এতদিন বাজির শব্দের মাত্রা ছিল ৯০ ডেসিবেল তবে তা এখন বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১২৫ ডেসিবেল। কালীপুজোর বিকেলের পর থেকেই ১২৫ ডেসিবেল এমনকি তার থেকেও বেশি ডেসিবেলের বাজি ফাটতে থাকে। রীতিমত কান ঝালাপালা হয়ে যায় বেশ কিছু এলাকায়।
উল্লেখ্য, দীপাবলিতে নিষিদ্ধ বাজি ফাটানো বিশেষত শব্দবাজি ফাটানো বন্ধ করতে কোমর বেধে নাম কলকাতা পুলিশ (Kolkata Police)। এমনকি আলোর উৎসবে নিয়ম ভাঙার জন্য কালীপুজোর দিন মোট ৪৪৪ জনকে গ্রেফতারও করা হয়। লালবাজার সূত্রে দাবি, অভিযোগ পেতেই পদক্ষেপ নিয়েছে পুলিশ। কালীপুজোয় শহর জুড়ে নিষিদ্ধ বাজি ও শব্দ বাজি ফাটানোর জন্য চলে ধরপাকড়। লালবাজার জানিয়েছে, রাত বারোটা পর্যন্ত বেআইনি বাজি ফাটানো ও বিক্রির জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে মোট ৪৪৪ জন। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৪১৪ কেজি বেআইনি বাজি। কালীপুজোর বিকেল থেকেই নিউটাউন থেকে সল্টলেক, টালি থেকে টালিগঞ্জে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে শব্দদূষণ। কসবা, উল্টোডাঙা, ফুলবাগান, বেলগাছিয়া, কাশীপুর, হরিদেবপুর এবং বেহালা থেকেও দেদার শব্দবাজি ফাটানোর অভিযোগ আসে। উপরন্তু বাজির দাপটে ধোঁয়াশায় ভরে যায় শহরের রাতের আকাশ। গত বছর থেকেই বাজি পোড়ানোর জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে শীর্ষ আদালত। এবছরও লাগু ছিল সেই নির্দেশিকা। কিন্তু সেই নির্দেশিকাকে না মেনেই চলল জমিয়ে বাজি ফাটানো। কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, শনিবার রাতেই মাত্রা ছাড়িয়ে ছিল শহরের বিভিন্ন জায়গায় শব্দের ডেসিবেল। রবিবার রাতে তা একেবারে হিসেবের বাইরে চলে যাওয়ার জোগাড় হয়। জানা গিয়েছে, বহু জায়গায় 'সাইলেন্ট জোন' লেখা থাকলেও সেখানে চলে দেদার বাজি ফাটানো, বিশেষত আবাসনগুলিতে।
কলকাতা, হাওড়া, শিলিগুড়ি, দুর্গাপুর, আসানসোলের মতো শহরে বেশিরভাগ জায়গায় বাতাসের মান খুব খারাপ জায়গায় চলে যায় এই বাজির জেরে। ‘রেড জোনে’ প্রায় সব শহর। বাতাসের ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ সহ্যসীমার অনেক উপরে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই দূষণ কমার আশা কম। কারণ একদিকে, বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প ঢুকছে। অন্যদিকে বাতাসের গতিবেগ বেশ ধীর। এই ধরনের পরিস্থিতিতে দূষণ এমনিতেই বাড়ে। তার সঙ্গে বাজির ধোঁয়া যোগ হয়েছে আরও বিপদ বাড়িয়েছে। তবে সপ্তাহের শেষে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে রাজ্যে। পরিবেশবিদরা বলছেন বৃষ্টি না নামা পর্যন্ত দূষণ দাপট বজায় থাকবে।