Daily Sugar Intake | প্রয়োজনের চেয়েও বেশি চিনি খাচ্ছেন না তো? উত্তর জানান দেবে শরীরের এই লক্ষণগুলি!
কেক, বিস্কুট,চা, কফি-সবেই চিনি দিয়ে দেদার খাওয়াপিনা আনতে পারে বড় বিপদ। অতিরিক্ত চিনি খেলে বড় রোগ হওয়ার আগেই শরীরে দেখা দেয় বিশেষ কিছু লক্ষণ।
শরীর চর্চা ও সুস্বাস্থ্যের জন্য বর্তমানে অনেকেই ডায়েটিং করে থাকেন। কেউ খাদ্যাভাস থেকে বাদ দেন তৈলাক্ত খাবার আবার কেউ একেবারেই স্যালাড-ফলের ওপর নির্ভর করে থাকেন। অন্যান্য খাবার কোনো মতে না খেয়ে থাকতে পারলেও ডায়েট থেকে একটি জিনিস বাদ দেওয়া হয়ে পরে কঠিন কাজ। এটি হলো চিনি! কেক, পায়েস, পেস্ট্রি, নতুন গুড়ের মিষ্টি, মোয়া-সব খাবারেই রয়েছে চিনি। অনেকেই ভেবে থাকেন আলাদা করে খাবারে চিনি না দিয়ে খেলেই শরীরে চিনি কম যাচ্ছে, তবে তা কিন্তু নয়। বাইরের খাবার তো বটেই সাধারণ বাড়ির খাবারেও যথেষ্ট পরিমাণ চিনি থাকে। আর শরীরে চিনির পরিমাণ বেশি থাকলে কেবল ডায়াবেটিসই (diabetes) নয় হতে পারে আরও অন্যান্য রোগও।
অতিরিক্ত চিনি খেলে কী কী রোগ হতে পারে?
কোনো কাজের জেকোননো মিষ্টিকে শুভ বলে মনে করা হলেও এই মিষ্টি বা চিনিই হতে পারে বড় বিপদ। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রায় সব খাবারের মধ্যেই অ্যাডেড সুগার রয়েছে, তা জলখাবের সিরিয়াল হোক কি পাউরুটি, প্যাকেটের ফলের রস হোক কিংবা সস, কেচাপ, কুকিস, ক্যান্ডি, মেয়োনিজ ও অন্যান্য স্যালাড ড্রেসিং, ঠান্ডা পানীয়। আর এই অ্যাডেড সুগারের জন্যই ডায়াবেটিস ছাড়াও হতে পারে একাধিক রোগ, কী কী দেখে নিন-
দৃষ্টিশক্তি ক্ষয় :
রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা শরীরের প্রতিটি রক্তনালীকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। রক্তে উচ্চ শর্করার মাত্রা শরীরের কারণে ঝাপসা দৃষ্টি, ছানি, গ্লুকোমা এবং রেটিনোপ্যাথির মতো সমস্যা হতে পারে। আর এই কারণেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে দৃষ্টিশক্তির সমস্যা দেখা দেয়।
মানসিক রোগ :
চিনি মস্তিষ্কের কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে। চিনির অতিরিক্ত পরিমাণে সেবনের ফলে ব্রেন ফগ, স্ট্রেস, মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে অতিরিক্ত চিনি খেলে স্মৃতিশক্তি হ্রাস, এমনকি অ্যালঝাইমার্সও হতে পারে।
ত্বকে প্রদাহ :
বেশি চিনি খেলে, ব্রণ, রোসেসিয়া, সোরিয়াসিস এবং একজিমার মতো রোগকে আরও খারাপ করে তোলে। চিনি কোলাজেন ভেঙ্গে বলিরেখা সৃষ্টি করে।
হার্ট দুর্বল :
অত্যধিক চিনি ধমনী শক্ত করে এবং হার্টের টিস্যুর ক্ষতি করে। চিনি ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজকে হ্রাস করে, যা হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। যেহেতু চিনি ইনসুলিন প্রতিরোধের সঙ্গে যুক্ত তাই এটি উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবিটিস, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
ফ্যাটি লিভার :
অতিরিক্ত চিনি লিভারে ফ্যাট বাড়াতে কাজ করে। চিনি লিভারে অ্যালকোহলের মতো প্রভাব ফেলে। এমন পরিস্থিতিতে বেশি পরিমাণে চিনি খেলে ফ্যাটি লিভারের মতো রোগ ও স্থূলতার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চিনি খাওয়া হচ্ছে কি না কীভাবে বুঝবেন?
খাবারে অ্যাডেড সুগার হোক কিংবা পানীয়তে চিনির কিউব (Sugar cubes), শরীরে চিনির পরিমাণ অতিরিক্ত হলেই একাধিক লক্ষণ দেখা দিতে থাকে। দেখে নিন কীভাবে বুঝবেন প্রয়োজনের চেয়ে বেশি চিনি খাওয়া হচ্ছে কি না-
হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি :
কোনও কারণ ছাড়াই যদি হঠাৎ যদি ওজন বাড়তে থাকে, তা হলে বুঝতে হবে চিনি খাওয়ার পরিমাণ বাড়ছে। সরাসরি চিনি না খেলেও এমন খাবার খাওয়া একেবারেই বন্ধ করতে হবে, যেগুলির মধ্যে কৃত্রিম চিনি থাকে। বাইরের যে কোনো খাবারেই চিনি যুক্ত থাকে। পাশাপাশি বাড়ির খাবারেও চিনির পরিমাণ কমাতে হবে। তবে সবসময় হঠাৎ ওজন বৃদ্ধির কারণ চিনিই হবে এমন নয়। অন্য রোগও হতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া শ্রেয়।
ত্বকে র্যাশ, ব্রণ :
শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে চিনি থাকলে ত্বকে ব্রণ হতে পারে। এই লক্ষণ যে কোনো বয়সীদেরই হতে পারে। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত চিনি ত্বকে প্রদাহের পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। যা ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য খুব খারাপ। ফলে হঠাৎ ত্বকে র্যাশ, ব্রণ বেড়ে গেলে বুঝতে হবে চিনি খাওয়া বেশী হচ্ছে।
আরও মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা :
রাত-বিরেতে হঠাৎ যদি মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতাকে যদি প্রশ্রয় দেন, তা হলেও কিন্তু ভারী বিপদ। বার বার মিষ্টি খাওয়ার ঝোঁক বুঝিয়ে দেয় শরীরে চিনির মাত্রা বাড়ছে। শরীরে চিনির পরিমাণ বেশি থাকলে বারে বারে আরও চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতে ইচ্ছা করবে।
অতিরিক্ত ক্লান্তি :
হঠাৎ ক্লান্ত লাগলে মিষ্টি খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেকেই। তৎক্ষণাৎ চনমনে ভাব ফিরে এলেও তা বেশি ক্ষণ স্থায়ী হয় না। ডায়াবিটিস থাকলে হঠাৎ শর্করা বেড়ে বা কমে যাওয়াও ঠিক নয়। উল্টে সারা ক্ষণ মাথা ঝিমঝিম করতে পারে, ঘুম পায়।
বার বার অসুস্থ হয়ে পড়া :
অতিরিক্ত চিনি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে বার বার সংক্রমণজনিত সমস্যা হলে বা সুস্থ হতে অতিরিক্ত সময় লাগে।
দিনে কত পরিমাণ চিনি খাবেন?
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি রিপোর্ট বলছে, প্রতি দিন গড়ে প্রায় ২২ চামচ করে চিনি খান সারা বিশ্বের মানুষ। কিন্তু তা একে বারেই স্বাস্থ্যকর নয়। বাইরের খাবারে এমনই চিনি যুক্ত থাকে। তারওপর চলতে ফিরতে খাবার বা পানীয়তে আরও চিনি বা চিনির কিউব (Sugar cubes) মিশিয়ে নেওয়ার অভ্যাস রয়েছে অনেকেরই। এই প্রসঙ্গে হার্ট.ওআরজি জানাচ্ছে, কোনও সুস্থ-সবল পুরুষ মানুষ দিনে ৯ চামচ চিনি (৩৬ গ্রাম বা ১৫০ ক্যালোরি) খেতে পারেন। অপরদিকে মহিলারা দিনে ৬ চামচ চিনি (২৫ বা ১০০ ক্যালোরি) সেবন করলে সুস্থ থাকতে পারবেন।
আরও পড়ুন : চিনিযুক্ত পানীয় ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় ১৮ শতাংশ! চিনির বিকল্প হিসেবে কী কী খেতে পারেন দেখুন!
প্রসঙ্গত, অনেকেই সুস্থ্য থাকার জন্য বা ডায়েটের জন্য চিনির বিকল্প হিসেবে চিনি মুক্ত ট্যাবলেট (Sugar Free Tablets) বা সুগার ফ্রি (Sugar Free) উপাদান খেয়ে থাকেন। তবে বহু সময় এই চিনি মুক্ত ট্যাবলেট (Sugar Free Tablets) বা সুগার ফ্রি (Sugar Free) উপাদান শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক হয়। ফলে এক্ষেত্রে চিনির বিকল্প হিসেবে খাওয়া যেতে পারে মধু, খেজুর, স্টেভিয়া,আখের রস প্রভৃতি।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- স্বাস্থ্য
- খাদ্য
- চিনি
- ডায়াবেটিস