CTM Routine | বিয়ের মরশুমে সেলিব্রিটিদের মতো চকচকে ত্বকের স্বপ্ন? সিটিএম রুটিন মেনে চললেই দিন কয়েকে বাড়বে জেল্লা!
উজ্জ্বল, স্বাস্থ্যবান ত্বকের জন্য সকাল ও রাতের ত্বকের যত্নের রুটিন হিসেবে মেনে চলুন সিটিএম রুটিন। সহজ পদ্ধতিতেই বাড়বে জেল্লা। জানুন সিটিএম রুটিন কী এবং কীভাবে মেনে চলবেন।
বিয়ের মরশুমে কনে হোক কিংবা পরিবারের সদস্য বা অতিথি, সেলেব্রিটিদের মতো জেল্লাদার ত্বক চায় সকলেই। অনেকেই ভেবে থাকেন এরকম উজ্জ্বল, মসৃন ত্বকের জন্য খরচ করতে হয় প্রচুর টাকা। করতে হয় নানারকমের ট্রিটমেন্ট। যার ফলে ত্বকের পরিচর্যার জন্য অনেকে বিউটি পার্লার এবং স্যালোঁতে গিয়ে নানা ধরনের স্কিন ট্রিটমেন্ট করিয়ে থাকেন। তবে বাড়ি বসেও কিন্তু ভালভাবেই ত্বকের পরিচর্যা করা যায়। নিখুঁত, দাগহীন ত্বক পাওয়ার জন্য বেশি খাটনিও প্রয়োজন হয় না। তবে রোজ মেনে চলতে হবে দিনের ও রাতের ত্বকের যত্নের রুটিন (Night Skin Care Routine)। এরকমই ত্বকের জন্য বেশ উপকারী স্কিন কেয়ার রুটিন হলো ctm রুটিন (ctm routine)।
CTM রুটিন কী?
ctm রুটিন (ctm routine) আসলে কিছুই নয়, ক্লিনিং, টোনিং এবং ময়শ্চারাইজিং এর ( Cleansing Toning Moisturizing) পর পর ধাপ। ত্বক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, সিটিএম রুটিন ত্বক ভালো রাখে, ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রেখে উজ্জ্বলতা এবং জেল্লা বৃদ্ধি করে। এই পদ্ধতি অনুযায়ী প্রথমে ত্বক ভালভাবে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর যেহেতু শীতের রুক্ষ, শুষ্ক আবহাওয়া তাই ভালভাবে ত্বকে ক্রিম, ময়শ্চারাইজার ইত্যাদি ম্যাসাজ করতে হবে। শীতকাল ছাড়াও অন্যান্য ঋতুতেও ত্বক ভালো রাখতে ত্বকের যত্নের ক্রিম (Skin Care Cream) মাখতে হবে। এর পাশাপাশি ত্বকের ধরন অনুসারে ব্যবহার করতে হবে টোনার। এই পদ্ধতি মেনে চললেই ত্বক উজ্জ্বল এবং মোলায়েম থাকবে।
তবে এই রুটিন দিনে অন্তত দুবার মেনে চলতে হবে। একবার সকালে ঘুম থেকে উঠে এই স্কিনকেয়ার রুটিন ফলো করতে হবে। রাতের ত্বকের যত্নের রুটিন (Night Skin Care Routine) এর মধ্যেও এই পদ্ধতি মানতে হবে, তাহলে সুন্দর ও দাগ ছোপহীন ত্বক পেতে পারেন।
ক্লিনজিং :
সুস্থ, দাগহীন ত্বক রাখার প্রথম ধাপই হল ত্বকের ক্লিনজিং (Cleansing) বা ত্বককে পরিষ্কার রাখা। ত্বকের রোমকূপে যত ধুলো-ময়লা জমে, তা নিয়মিত ক্লিনজিং করলে ত্বকের যে কোনও সমস্যা সহজে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। তাই ত্বককে দূষণমুক্ত রাখতে ক্লিনজিং অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ব্রণ, বলিরেখা, পিগমেনটেশন ইত্যাদি যে কোনও সমস্যা রোধ করতে ডিপ ক্লিনজিং জরুরি। ক্লিনজিং ত্বকের রোমকূপের গভীরে প্রবেশ করে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। তাই ক্লিনজিংকে নিয়মিত রুটিনে পরিণত করা উচিত। বাজারে চলতি বিভিন্ন ক্লিনজার পাওয়া যায়। ত্বকের ধরণ বুঝে তা ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া যদি প্রাকৃতিক ত্বক পরিচর্যার পণ্য (Natural Skin Care Products) ব্যবহার করতে চান তাহলে বাড়িতেও বানিয়ে নিতে পারেন ক্লিনজার। কীভাবে বানাবেন রইলো তার উপায়।
- অয়েলি স্কিনের জন্য -
প্রথমে হাফ কাপ গরম জলে টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা দিয়ে, তাতে জোজোবা অথবা ক্যাস্টর অয়েল এক টেবিল চামচ দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে, তুলো দিয়ে মুখে লাগিয়ে দু'মিনিট পরে তা মুছে নিতে হবে। এছাড়াও অয়েলি স্কিনে গ্লো আনতে মধু এক চামচ ও কাঁচা দুধ দু'চামচ ভাল করে মিশিয়ে হালকা হাতে মুখে ম্যাসাজ করে তারপর ঈষদুষ্ণ জলে ধুয়ে ফেলতে হবে।
- সেনসিটিভ স্কিনের জন্য -
এই ধরনের স্কিনে রোদে বের হলে মুখ লাল হয়ে যায়, চুলকানি ইত্যাদির সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেল এক টেবিল চামচ, ল্যাভেন্ডার অয়েল পাঁচ ফোঁটা, মধু কয়েক ফোঁটা মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে দু'মিনিট পরে মুখ ধুয়ে নিতে হবে।
- ড্রাই স্কিনের জন্য -
এক্ষেত্রে ঘরে পাতা টকদই দু'চামচ, অর্গানিক মধু এক চামচ ও অলিভ অয়েল এক চামচ একসঙ্গে মিশিয়ে হালকা হাতে মুখে ম্যাসাজ করে দু'মিনিট পরে ঈষদুষ্ণ জলে মুখ ধুয়ে নিতে হবে। এছাড়াও এ ধরনের স্কিনের ক্ষেত্রে ক্লিনজার হিসেবে আনারসের রস ও বেকিং সোডার মিশ্রণও বিশেষ উপকারী।
টোনিং :
ক্লিনজিং করার পরেই মুখ পরিষ্কার রাখার পরবর্তী ধাপ হল টোনার ব্যবহার। ক্লিনজিং-এর পর টোনার ব্যবহার করতে হয়। এটি স্কিনকে টানটান রাখতে সাহায্য করে। পরিষ্কার মুখেই সবসময় টোনার ব্যবহার করা উচিত। এতে ত্বক ভালো থাকে। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য টোনার খুবই উপযোগী। টোনার ত্বকের পিএইচ-র ভারসাম্য বজায় থাকে। ত্বকের নানা সমস্যাই সমাধান করতে পারে টোনার। কারণ পিএইচ ভারসাম্য নষ্ট হলেই ত্বকে একাধিক সমস্যা দেখা যায়। বর্তমানে বাজারে অন্যান্য প্রাকৃতিক ত্বক পরিচর্যার পণ্য (Natural Skin Care Products) এর মতো নানারকমের টোনার কিনতে পাওয়া যায়। তা ব্যবহার করতে পারেন নাহলে গোলাপজলও ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি ব্যবহার করলে আপনার ত্বকে একটি সুরক্ষা স্তর তৈরি হয়। এছাড়াও বাড়িতে টোনার তৈরী করতে পারেন।
- তরমুজ, শশাতে খুব বেশি জলের পরিমাণ থাকে। এই উপাদান দিয়ে টোনার তৈরী করতে হলে একটি পাত্রে জল নিয়ে সেটি গরম হয়ে ফুটে উঠলে তার মধ্যে কয়েক টুকরো তরমুজ দিয়ে ঢিমে আঁচে পাঁচ-ছ মিনিট রেখে দিতে হবে। এরপর এটি ঠান্ডা করতে হবে। পরে তরমুজের টুকরো জল থেকে তুলে নিয়ে ব্লেন্ডারে দিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে। তারপর যে জলে তরমুজ ফোটানো হয়েছে সেই জলের কিছু অংশ ব্লেন্ডারে দিয়ে তরমুজের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়ে তার মধ্যে এক চিমটে কর্পূর দিয়ে ভালো করে মিশ্রণটি নাড়িয়ে একটি স্প্রে বোতলে ফ্রিজে রেখে দিতে হবে। এটি টোনার হিসাবে ব্যবহার করলে উপকার মিলবে।
- উপরের পদ্ধতির মতো একই পদ্ধতিতে শশার টোনার বাড়িতে তৈরি করতে পারেন। শুধু শশার ক্ষেত্রে কর্পূরের বদলে একটু গোলাপজল মিশিয়ে স্প্রে বোতলে ভরে ফ্রিজে রেখে দিন। এই দু'টি টোনার ত্বকের জন্য ভাল। এটি চার-পাঁচ দিন ফ্রিজে রাখা যেতে পারে।
ময়শ্চারাইজিং :
সব ধরনের ত্বকেই ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন আছে। তাই যারা ভাবেন তৈলাক্ত ত্বকে ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন নেই, তা একদমই ভুল। তৈলাক্ত ত্বক হলে জেল বেসড ময়শ্চারাইজার বা অ্যালোভেরা জেল লাগাতে পারেন। তবে বলা বাহুল্য ত্বকের ধরণ অনুযায়ী এই ত্বকের যত্নের ক্রিম (Skin Care Cream) আপনি বাড়িতেও বানাতে পারেন। দেখে নিন উপায়।
- অয়েলি স্কিনের ক্ষেত্রে-
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য জোজোবা অয়েল অর্ধেক চা কাপ, স্যানডেলউড অয়েল পাঁচ ফোঁটা, ফ্র্যানকিনসেনস এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা মিশিয়ে বোতলে রেখে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। জোজোবা অয়েল খুব হালকা যা সহজে স্কিনে মিশে যায়। একেবারেই তেলতেলে নয়। এটি অ্যান্টিসেপটিক ও অ্যান্টব্যাকটেরিয়াল। তাই ব্রণ অ্যাকনে কমিয়ে দেয়।
- নর্মাল টু ড্রাই স্কিনের ক্ষেত্রে -
এই ধরণের ত্বকের ক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেল অর্ধেক চা চামচ, কোকোনাট অয়েল এক টেবিল চামচ, আমন্ড অয়েল এক টেবিল চামচ, জিরেনিয়াম এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা, ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা, স্যানডেলউড এসেনশিয়াল অয়েল পাঁচ ফোঁটা মিশিয়ে ব্যবহারে ত্বকে বাড়তি জৌলুস ফিরে আসে।
সুন্দর, স্বাস্থ্যবান ত্বকের জন্য সিটিএম রুটিন বেশ কার্যকর। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, ভালো ত্বক পাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম, সঠিক খাদ্যাভাস এবং হাইড্রেটেড থাকা প্রয়োজন। রাতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুম ঠিকভাবে হলে উজ্জ্বল ঝকঝকে ত্বক মিলবে। এছাড়া সঠিক খাদ্যাভাসও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে তুলবে। থাকতে হবে হাইড্রেটেড। পরিমাণ মতো জল খেলে শরীরে জমে থাকা যাবতীয় টক্সিন অর্থাৎ দূষিত পদার্থ দূর হবে বা বেরিয়ে যাবে, ত্বকে ব্রন বা অন্যান্য র্যাশ-অ্যালার্জি হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- ত্বক
- ত্বকের পরিচর্যা
- উজ্জ্বল ত্বক
- সুন্দর