Green Crackers | 'সেলিব্রেশনে' ইডেনে ফাঁটানো বাজির কারণে মৃত্যু কলকাতা পুলিশের ঘোড়ার! প্রাণ ও পরিবেশ বাঁচাতে বেছে নিন গ্রিন ক্র্যাকার্স!

Tuesday, November 7 2023, 7:50 am
highlightKey Highlights

দীপাবলি ২০২৩ উপলক্ষ্যে গ্রিন ক্র্যাকার্স বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।


কয়েকটা দিন বাদেই দীপাবলি ২০২৩ (Diwali 2023)। ইতিমধ্যেই আলোকসজ্জাতে সেজে উঠেছে গোটা দেশ। সপ্তাহ শেষেই দিওয়ালিতে মেতে উঠবে সকলে। দীপাবলি মানেই ছোটদের মধ্যে বাজি ফাটানোর উত্তেজনা। কেবল ছোটরাই নয়, বাজি ফাটিয়ে থাকেন বড়রাও। কমবেশি সকলেরই বাজি ফাটাতে ভালো লাগে। তবে এই ক্ষণিকের 'ভালো লাগা'র জন্য ক্ষতি হতে পারে অন্যের, এমনকি আপনারও। সুন্দর আলোর খেলা, শব্দ বেশ ভালো লাগলেও, এই বাজি থেকে নির্গত হয় বিষাক্ত ধোয়া। যা পরিবেশে মিশে ক্রমশ বসবাস অনুপযুক্ত করে তুলছে।

রীতিমতো গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে রাজধানী দিল্লি
রীতিমতো গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে রাজধানী দিল্লি

সম্প্রতি,  বেশ চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে বায়ুদূষণ। এর জেরে রীতিমতো গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয়েছে রাজধানী দিল্লি। দিল্লির বায়ু এতটাই দূষিত হয়ে পড়েছে যে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্তে মেয়াদ বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেজরিওয়াল সরকার। সরকারি কর্মীদের পাশাপাশি বেসরকারি কর্মীরা যাতে বাড়ি থেকে কাজ করতে পারে, কর্তৃপক্ষের কাছে তারও আবেদন জানিয়েছেন কেজরিওয়াল। সূত্রের খবর, সোমবার দিল্লিতে বায়ু দূষণের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। রবিবার সকালে দিল্লির বাতাসের গুণগত মান ছিল (AQI) ৪৬০, যা সোমবার সকালে পৌঁছায়  ৪৮৮-এ। প্রশাসন সূত্রে খবর, সব থেকে খারাপ পরিস্থিতি দিল্লির আরকে পুরম (বাতাসের গুণগত মান ৪৬৬), পতপরগঞ্জ (বাতাসের গুণগত মান ৪৭১) এবং নিউ মোতি বাগ (বাতাসের গুণগত মান ৪৮৮) এলাকায়। টানা পাঁচ দিন ধরে দিল্লির বাতাসের গুণগত মান ‘অত্যন্ত ভয়ানক’ পর্যায়ে রয়েছে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালার মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে দিল্লিবাসীদের। ফলে বাইরে তো অবশ্যই, ঘরেও সম্ভব হলে পলিউশান  মাস্ক (Pollution Mask) পড়তে বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। অন্যদিকে,  পরিবেশবিদেরা বলছেন, দিল্লিতে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তাতে শুধু মানুষের উপরই প্রভাব পড়ছে না, পশুপাখিদের উপর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শহরের এক পশু চিকিৎসক জানিয়েছেন, শ্বাসকষ্টের উপসর্গ ধরা পড়েছে এমন ১০টি পাখিকে চিকিৎসা করেছেন তিনি। উল্লেখ্য, একিউআই ৪৫০ ছাড়ালে তখন দূষণের মাত্রা ‘অতি ভয়ানক’ বলে ধরা হয়।  সেখানে সেই মাত্রা অতিক্রম করে গিয়েছে দিল্লির বায়ু।

 ইতিমধ্যেই দিল্লি পুরনিগম জানিয়েছে, দূষণ পরিস্থিতি সামলাতে ৫১৭টি নজরদারি দল গঠন করা হয়েছে। ১,১১৯ জন আধিকারিককে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে। রাস্তায় জল ছেটানো হচ্ছে। স্মগ গান দিয়ে ধোঁয়াশা কাটানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। দূষণ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে এমন এলাকাগুলিতে জল ছেটানো হচ্ছে। পলিউশান  মাস্ক (Pollution Mask) বিলি এবং তা ব্যবহার করার জন্য প্রচার চালানো হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপ পর্যায় এমনকি অত্যন্ত ভয়ানক পর্যায় গিয়ে ঠেকেছে। যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও। তারওপর সামনেই দীপাবলি ২০২৩ (Diwali 2023)। এর মধ্যে আবার ভারতে চলছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ ২০২৩ (Cricket World Cup 2023)। দীপাবলি এবং বিশ্বকাপ মানে বাজি ফাটানো, পরিবেশ দূষণ। যদিও দিল্লির বায়ু দূষণের পরিমাণ যাতে আর না বৃদ্ধি পায় তার জন্য দিল্লিতে আয়োজিত বিশ্বকাপের ম্যাচে আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে কেবল রাজধানী দিল্লি একাই বিপদে নেই। দূষণের প্রকোপে বিপদে রয়েছে মুম্বই, নয়ডা এমনকি তিলোত্তমাও। বিশ্বে যে ৫ সবচেয়ে বেশি দূষিত শহরের তালিকায় রয়েছে শহর কলকাতা। তবে 'সিটি অব জয়ে'র ক্ষেত্রে দীপাবলিতে বা বিশ্বকাপের জন্য আতশবাজি নিষিদ্ধ করা হয় নি। অনেকেই ভাববেন এই খবর তো ভালো খবর। তা কিন্তু নয়! আকাশের দিকে 'হা' করে তাকিয়ে আতশবাজি ফাটা দেখতে যতটা সুন্দর দেখতে লাগে, সকলের অজান্তেই সেই 'সুন্দর' আতশবাজি কেড়ে নিতে পারে প্রাণও!

বিশ্বে যে ৫ সবচেয়ে বেশি দূষিত শহরের তালিকায় রয়েছে শহর কলকাতা
বিশ্বে যে ৫ সবচেয়ে বেশি দূষিত শহরের তালিকায় রয়েছে শহর কলকাতা

৫ই নভেম্বর, রবিবার ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়াম (Eden Gardens Stadium) এ বিশ্বকাপের টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা। দুর্দান্ত পারফর্ম করে 'বিরাট' ব্যবধানে জয় লাভ করে টিম ইন্ডিয়া। পাশাপাশি সেদিন বিরাট কোহলির ৩৫তম জন্মদিনে ৪৯তম সেঞ্চুরি করে রেকর্ডও গড়েন 'কিং কোহলি'। ফলে দর্শকদের উন্মাদনা খুবই স্বাভাবিক। সেক্ষত্রে যারা ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়াম (Eden Gardens Stadium) এ গিয়ে খেলা দেখেছেন তাদের ক্ষেত্রে এই উন্মাদনার আরও বেশি হওয়ার কথা। সেই মতো দর্শকদের সঙ্গে 'সেলিব্রেশন' করে সিএবি। পর পর ফাটতে থাকে সেল। আকাশে নানা রঙের খেলা দেখতে ভালো লাগেও স্টেডিয়ামের বাইরে সৃষ্টি হয় হুলুস্থূল পরিস্থিতি।  

ইডেনে খেলা হওয়ার শেষে শুরু হয় আতশবাজির প্রদর্শনী। পরিবেশ বান্ধব বাজি ফাটানোর কথা ছিল সিএবি-র তরফে। কিন্তু ১০০টা সেল ফাটানো হয় বলে অভিযোগ। যার ফলে রীতিমতো বীভৎস শব্দ হয় তাতে। আর এই শব্দের জেরে কলকাতা পুলিশের ঘোড়াগুলি লাফাতে শুরু করে। আর তখনই ঘোড়ায় বসে থাকা পুলিশ পড়ে আহত হন। খেলা দেখতে আসা এক মহিলার পা ভেঙে গিয়েছে বলেও খবর। অন্যদিকে, লাফাতে থাকা কলকাতা পুলিশের সেই ঘোড়ার হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়। মৃত ঘোড়াটির নাম ছিল ভয়েস অফ রিজন। চার মাস আগে ঘোড়াটি রেস কোর্সের তরফ থেকে মাউন্টেন পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল। খুব চনমনে ছিল ঘোড়াটি। কিন্তু 'সেলিব্রেশনের' জন্য মৃত্যু হয় তার। অন্যদিকে আহত পুলিশদের আলিপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ও আহত দুই দর্শককে এসএসকেএম-এর ট্রমা কেয়ার সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়। গোটা ঘটনা প্রসঙ্গে সিএবি সচিব নরেশ ওঝা (CAB Secretary Naresh Ojha) অবশ্য বলেন, আতশবাজির অনুমতি তাদের কাছে ছিল। পলিউশনের অনুমতিও ছিল। আইপিএল-এর সময় এই ধরনের বাজিই  ফাটানো হয় । পাশাপাশি সিএবি কর্তাদের দাবি ইডেনের ভেতরে বাজি ফাটানো যায় না, মাঠের বাইরে বাজি ফাটানো হয়। তবে সূত্রের খবর, ঘোড়া পুলিশের কাছে নাকি খবর ছিল না আতশবাজি প্রদর্শনী হবে। তাই ঘোড়াগুলি ছাড়া ছিল।

ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়ামে  আতশবাজি প্রদর্শনের জেরে কলকাতা পুলিশের ঘোড়ার মৃত্যু ও আহত ২ পুলিশ কর্মী-সহ একাধিক
ইডেন গার্ডেন স্টেডিয়ামে আতশবাজি প্রদর্শনের জেরে কলকাতা পুলিশের ঘোড়ার মৃত্যু ও আহত ২ পুলিশ কর্মী-সহ একাধিক

পরিবেশ দূষণ-হতাহত সব কিছুর বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে বরাবরই গ্রিন ক্র্যাকার্স (Green Crackers) বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যেই এই সবুজ বাজি কেনার চাহিদা বেড়েছে।  তবে কোনটা সবুজ বাজি আর কোনটা নয়, সে ক্ষেত্রে জ্ঞান থাকা দরকার। এই সবুজ বাজি বা গ্রিন ক্র্যাকার্স (Green Crackers) হলো সিআইএসআর-নিরি বা ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট-র (CISR-NIRI or National Environmental Engineering and Research Institute) দীর্ঘ গবেষণার ফল। এই বাজিতে বেরিয়াম যৌগ ব্যবহার করা হয় না। সাধারণ বাজিতে ব্যবহৃত বেরিয়াম মোনোক্লোরাইড, বেরিয়াম নাইট্রেট ও বেরিয়াম ক্লোরেট আদতে সবচেয়ে বেশি শব্দদূষণ আর বায়ুদূষণের কারণ হয়ে ওঠে। তবে এই বাজি পোড়ালে বাষ্প বেরিয়ে আসে, তাই খুব বেশি ছাই, ধূলো উৎপন্ন হয় না। এই বাজি ফাটালে ১১০ থেকে ১২৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দও উৎপন্ন হয় না। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, সাধারণ বাজির তুলনায় এই বাজিতে ৩০ শতাংশ দূষণ কম হয়।

পরিবেশ সুস্থ্য রাখতে ও প্রাণ বাঁচাতে দীপাবলি ২০২৩ -এ বেছে নিন গ্রিন  ক্র্যাকার্স
পরিবেশ সুস্থ্য রাখতে ও প্রাণ বাঁচাতে দীপাবলি ২০২৩ -এ বেছে নিন গ্রিন  ক্র্যাকার্স

এই সবুজ বাজি কেনার সময়ে আসল ও নকলের মধ্যে পার্থক্য জেনে রাখা দরকার। ‘নিরি’ (ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট)-র কিউআর কোড অন্যান্য বাজি থেকে সবুজ বাজিকে পৃথক করে। অনেক ব্যবসায়ী ভুয়ো কিউআর কোড দেখিয়ে বাজি বিক্রি করছে। সেক্ষত্রে সচেতন থাকতে হবে। সবুজ বাজি মূলত পরিবেশবান্ধব যা কম দূষণকারী কাঁচা মাল ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এই বাজিতে যে একদম দূষণ হয় না সেটাও বলা যায় না। মোট ৩ ধরনের সবুজ বাজি বাজারে রয়েছে, সোয়াস বা সেফ ওয়াটার রিলিজার, যা থেকে জলীয় বাষ্প নির্গত হয়। ফলে ৩০ শতাংশ কম ধূলিকণা বাতাসে মেশে। এতে সালফার বা পটাশিয়াম নাইট্রেট থাকে না। স্টার বা সেফ থার্মাইট ক্র্যাকার, যা থেকে পটাশিয়াম নাইট্রেট বা সালফার থাকে না। কম কণা নির্গত করে এবং শব্দের তীব্রতাও অন্যান্য বাজির তুলনায় কম এবং সফল যাতে  কম মাত্রায় অ্যালুমিনিয়াম এবং বেশি ম্যাগনেশিয়াম থাকে। এতেও শব্দদূষণের মাত্রা কম হয়।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File