জীবন ও জীবনী

বাংলাদেশী জিনবিজ্ঞানী  আবেদ চৌধুরীর জীবনী, Biography of scientist Abed Chaudhury in Bengali

বাংলাদেশী জিনবিজ্ঞানী  আবেদ চৌধুরীর জীবনী, Biography of scientist Abed Chaudhury in Bengali
Key Highlights

আবেদ চৌধুরী একজন বাংলাদেশি জিনবিজ্ঞানী।  বিজ্ঞান ছাড়াও সহজবোধ্য ভাষায় বাংলা ও ইংরেজিতে বিজ্ঞান ভিত্তিক অনেক নিবন্ধ, কবিতা ইত্যাদি লিখেছেন তিনি। অষ্ট্রেলিয়ার "ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল"- এর যেসকল গবেষকের নাম নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের জন্য তালিকায় উঠেছে তাদের মধ্যে ড. আবেদ চৌধুরীও একজন।

জন্ম ও পরিবার পরিচিতি, Birth and Family members  

আবেদ চৌধুরীর জন্ম হয় ১৯৫৬ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি। বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত কানিহাটি গ্রামের একটি বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর বাবার নাম ছিল আব্দুল মন্নান চৌধুরী এবং মাতার নাম হাফিজা খাতুন। 

শিক্ষা অর্জন এবং গবেষণার মাধ্যমে নতুন আবিষ্কার, New discoveries through learning and research

আবেদ চৌধুরী বর্তমানে আধুনিক জীববিজ্ঞানের প্রথম সারির গবেষকদের একজন। তিনি বাংলাদেশের মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন এবং নটর ডেম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে এই জিনবিজ্ঞানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

অতঃপর যুক্তরাষ্ট্রের 'অরিগন স্টেট ইনিস্টিটিউট অফ মলিকুলার বায়োলজি' থেকে পিএইচডি ডিগ্রি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ' এবং 'ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজিতে ' পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা করেন।

Read also :

১৯৮৩ সালে পিএইচ.ডি গবেষণারত থাকাকালীন তিনি "রেকডি" নামক জেনেটিক রিকম্বিনেশনের একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেছিলেন, যা নিয়ে আশির দশকে আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক চর্চা ও গবেষণা করা হয়। পরবর্তীতে আবেদ চৌধুরী অযৌন বীজ উৎপাদন (এফআইএস) সংক্রান্ত তিনটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন, যার মাধ্যমে এই জিন কোন বিশিষ্ট মিউটেন্ট নিষেক ছাড়াই আংশিক বীজ উৎপাদনে সক্ষম হয়।

তাঁর এই আবিষ্কারের ফলে এপোমিক্সিসের সূচনা হয় যার মাধ্যমে পিতৃবিহীন বীজ উৎপাদন সম্ভব হয়েছিল।

কর্মজীবনের বিভিন্ন কার্যকলাপের বিবরণ, Details of various career activities

জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী কর্মজীবনের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের 'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ', 'ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি' এবং ফ্রান্সের 'ইকোল নরমাল সুপিরিয়র' - এর মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষকতা ও গবেষণার কাজ করেছেন। 

তিনি অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিজ্ঞান সংস্থায় একদল বিজ্ঞানীর সমন্বয়ে গঠিত হওয়া এক গবেষকদলকে নেতৃত্ব দেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণার কাজ হয়েছে। তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক LoamBio-এর বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের প্রধান। আবেদ চৌধুরী জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং জলবায়ু-সম্মত ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকের নেতৃত্বে একটি নতুন উদ্ভাবন প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন।  

লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ, Abed Chaudhury as a writer

আবেদ চৌধুরীর বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে লেখা বেশ কিছু প্রবন্ধ সংকলন অনেক পেশাদারি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি অসংখ্য বৈজ্ঞানিক প্রকাশনার পাশাপাশি নন-ফিকশন বই এবং বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় বেশ কিছু কবিতার বইও লিখেছেন। ১৯৯১ সালে 'শৈবাল ও অন্তরীক্ষ' গ্রন্থটির প্রকাশনার মধ্য দিয়ে তাঁর কবি হিসাবে আত্মপ্রকাশ হয়।

প্রকাশিত বই

● মানুষের জিন, জিনের মানুষ

● অণুভবের নীলনকশা

● শৈবাল ও অন্তরীক্ষ (কবিতা সংকলন)

● দুর্বাশিশির ও পর্বতমালা

● Paradigm Shift (ইংরেজিতে লেখা প্রবন্ধগুচ্ছ)

● নির্বাচিত কবিতা

● স্বপ্ন সত্তা নদী ও অন্যান্য কবিতা

● Anguished Rivers and Other Designs

কলাম

● দুর্বাশিশির ও পর্বতমালা

আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত 'পঞ্চব্রীহি' ধান, 'Panchabrihi' rice invented by Abed Chaudhury

কানিহাটি গ্রামের সন্তান আবেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি বিষয়ক উচ্চশিক্ষা লাভ করে চাকরির জন্য অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান । সেখানকার জাতীয় গবেষণা সংস্থার অধীনে প্রধান ধান বিজ্ঞানী হিসেবে ধানের জিন নিয়ে ২০ বছর ধরে গবেষণা করেন; এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩০০ রকমের নতুন ধানের উদ্ভাবন করেছেন। পেশাগত কাজের কারণে বিদেশের মাটিতে গবেষণা চালিয়ে গেলেও দেশে নিজ গ্রাম কানিহাটিতে গড়ে তুলেছেন একটি খামার। আবেদ চৌধুরী বলেছিলেন,

''আম-কাঁঠালের মতো বছরের পর বছর টিকে থাকার সৌভাগ্য ধান গাছের হয় না- এটা কোনোভাবেই মানতে পারছিলাম না। তাই নেমে পড়ি গবেষণায়।"

ধান গাছের দ্বিতীয় জন্ম নিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন আবেদ চৌধুরী। ২০১০ সালের ডিসেম্বর মাসে কানিহাটি গ্রামের ২৫ বর্গমিটারের মাপের একটি ক্ষেতে ২০ জাতের ধান নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি, এই ২০ রকমের  মধ্যে চীন, ফিলিপাইন সহ বিভিন্ন দেশের তথা স্থানীয় ধানের জাতও ছিল।

read also :

যেসব জাতের ধান পাকার পর কেটে নিলে আবার নতুন ধানের শীষ বের হয়, তিনি প্রথমে সেগুলো আলাদা করেন; এভাবে ১২ জাতের ধান বের করেন। তিন বছর ধরে উক্ত ১২ রকম ধানের জাতগুলো চাষ করে পর্যবেক্ষণ করেন তিনি; যাতে দেখা যায় যে নিয়মিতভাবে দ্বিতীয়বার ফলন দিচ্ছে এই ধানগুলো।

অতঃপর তিনি একই গাছে তৃতীয়বার ফলনের গবেষণা শুরু করেন এবং তাতেও সফল হন; কিন্তু সেগুলোর মধ্যে চারটি জাত ছাড়া অন্যগুলো চতুর্থবার ফলনের পর ধ্বংস হয়ে যায়। উক্ত চার জাতের ধানের ওপর ১০ বছর ধরে গবেষণা চালান বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী ।

দুটি পদ্ধতির মাধ্যমে এই চার জাতের ধানগুলো চাষ করা হয়। একটি পদ্ধতি হল স্থানীয় জাতের সঙ্গে বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের সংকরায়ণ এবং দ্বিতীয় পদ্ধতিতে স্থানীয় জাতের সঙ্গে স্থানীয় হাইব্রিড জাতের সংকরায়ন ঘটানো হয়। দীর্ঘ প্রচেষ্টায় কানিহাটির কৃষকদের সমন্বয়ে আবেদ চৌধুরীর উদ্ভাবিত ধান বোরা, আউশ ও আমন তিন মৌসুম বা বলা যায় যে পুরো বছর ধরেই ফসল দিয়েছে; এই ধানগুলির ক্ষেত্রে একই গাছের শরীর থেকে পাঁচবার ধানের ফলন ঘটে; ফলে আবেদ চৌধুরী এই ধানের নাম দেন 'পঞ্চব্রীহি'। 

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রঙিন ভুট্টার উদ্ভাবন, Invention of colorful corn in a scientific way

সাধারণত হলুদ বা সোনালী রঙের ভুট্টা দেখেই অভ্যস্ত আমরা সকলে। রংধনুর মতো বিভিন্ন রঙের ভুট্টাও যে জন্মায় সে বিষয়টি অনেকেরই অজানা। জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরীর মতে, ধান ও গমের চেয়ে ভুট্টার পুষ্টিমাণ খুবই বেশি, একে নিউ নিউট্রেশন বলা যায়। ভুট্টায় কেরোটিন থাকার ফলে মূলত এর রং হলুদ হয়; সেজন্য তিনি রঙিন ভুট্টার ক্লোন উদ্ভাবন করেছিলেন।

একত্রে সকল রঙের ভুট্টা সহ আলাদা আলাদা রঙের ভুট্টাও উদ্ভাবন করেন তিনি। রঙিন ভুট্টা ক্যান্সার প্রতিরোধক বলে ড. আবেদ চৌধুরী এর চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংবাদ মাধ্যমে আহ্বানও জানিয়েছিলেন। বিশেষ করে শিশুদের শারীরিক পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্যে এই ভুট্টা খুব কার্যকরী। শিশুরা রঙিন ভুট্টা খেলে দেহের পুষ্টির চাহিদা অনায়াসেই পুরণ হবে।

বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরীর নব উদ্ভাবিত রঙিন ভুট্টা সারা বছরে ৪ বার চাষ করা সম্ভব। সাধারণ ভুট্টার সাথে জিনগত পরিবর্তন করে বিভিন্ন ধরণের রং মেশানোর মাধ্যমে এই ভুট্টাকে রঙিন করা হয়েছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে জেনিটিক্যালি মডিফাইড করে এ ধরণের ভুট্টা তৈরি করা হয়। বর্তমানে আমেরিকার অ্যারিজোনার ‘নেটিভ সিডস’ নামক এক সংস্থা উক্ত রঙিন ভুট্টার বীজ বিক্রি করছে। 

উপসংহার, Conclusion 

জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বংশগতি বিষয়ক গবেষক। তাঁর আবিস্কারের তালিকায় ইন্ডিপেনডেন্ট সিড, পঞ্চব্রীহি চাল এবং রঙিন ভুট্টার মত জনপ্রিয় উদ্ভাবন রয়েছে। তাছাড়াও তিনি তাঁর বিজ্ঞান ভিত্তিক লেখার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান প্রদানেও সক্ষম হয়েছেন। 

প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions

আবেদ চৌধুরী কে?

আবেদ চৌধুরী একজন বাংলাদেশি জিনবিজ্ঞানী।

আবেদ চৌধুরী কবে জন্মগ্রহণ করেন?

১৯৫৬ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি।

আবেদ চৌধুরী কি কি আবিস্কার করেন?

ইন্ডিপেনডেন্ট সিড, পঞ্চব্রীহি চাল এবং রঙিন ভুট্টার।

আবেদ চৌধুরীর লেখা প্রথম গ্রন্থ কোনটি?

'শৈবাল ও অন্তরীক্ষ' নামক কাব্যগ্রন্থ।