Bhai Dooj 2023 | ভাইফোঁটা নিয়ে প্রচলিত একাধিক পৌরাণিক কাহিনী! জানুন কীভাবে শুরু হল এই উৎসব? কখনই বা ভাই-দাদাকে দেবেন ফোঁটা?
যম-যমুনার কাহিনী ছাড়াও ভাইফোঁটা বা ভাইদুজের সঙ্গে জড়িয়ে আরও পৌরাণিক কাহিনী। জানুন ভাইফোঁটার বিভিন্ন কাহিনী এবং ভাইদুজ ২০২৩ এর তারিখ ও সময়।
রাত পোহালেই ভাইফোঁটা বা ভাইদুজ (Bhai Dooj)। প্রত্যেক বছরের মতো এবছরেও ভাইফোঁটার আগের দিন জমজমাট বাজার। ভাইদের ফোঁটা দেওয়ার সঙ্গে ভাইদের পছন্দ মতো খাবার, মিষ্টি কিনতে রীতিমত দোকানে দোকানে ভিড় জমিয়েছেন বোনেরা। দীপাবলির ৫ দিনের উৎসবের শেষ দিনে পালন করা হয় ভাইফোঁটা বা ভাইদুজ (Bhai Dooj)। হিন্দুদের গুরুত্বপূর্ণ উৎসবের মধ্যে ভাইফোঁটা একটি। এদিন সময়, রীতি, নিয়ম মেনে বোন-দিদিরা তাদের ভাই বা দাদার কপালে ফোঁটা দিয়ে থাকেন। মানা হয় এই রীতি ভাই-দাদাদের সকল বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করে।
ভাইদুজ ২০২৩ এর তারিখ । Bhai Dooj 2023 Date :
কালীপুজো এবং দীপাবলির পর সকলেই অপেক্ষা করে থাকেন ভাইফোঁটার জন্য। মহালয়ার পর থেকে যে শারদোৎসব শুরু হয়, তার শেষ লগ্নের সূচনা এই ভ্রাতৃদ্বিতীয়াতেই। অধিকাংশ বাড়িতে কার্তিক মাসের শুক্লাপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা হলেও কিছু পরিবারে ভাইয়ের কপালে বোনের ফোঁটা পড়ে প্রতিপদে। দৃক পঞ্চাঙ্গ পঞ্জিকা অনুযায়ী ভাইদুজ ২০২৩ এর তারিখ (Bhai Dooj 2023 Date) ১৪ই নভেম্বর। উল্লেখ্য, প্রতিপদ৷ তিথি অনুযায়ী ভাইফোঁটা পালন করলে তা ১৩ই নভেম্বর।
ভাইদুজ ২০২৩ এর তিথি । Bhai Dooj 2023 Tithi :
দৃক পঞ্চাঙ্গ পঞ্জিকা অনুযায়ী এ বছর ভাইফোঁটার প্রতিপদ তিথি ১৩ই নভেম্বর দুপুর ২.৫৬ মিনিটে শুরু হয়। অন্য পঞ্জিকা মতে সোমবার দুপুর ২.৩২ মিনিট থেকে ১৪ই নভেম্বর দুপুর ২.৩৬ মিনিট পর্যন্ত। এছাড়া দৃক পঞ্চাঙ্গ পঞ্জিকা অনুযায়ী ভাইফোঁটা বা ভাইদুজ ২০২৩ (Bhai Dooj 2023) এর দ্বিতীয়া তিথি শুরু ১৪ই নভেম্বর দুপুর ২.৩৬ মিনিটে এবং ভ্রাতৃদ্বিতীয়া তিথি থাকবে ১৫ই নভেম্বর দুপুর ১.৪৭ মিনিট পর্যন্ত। উল্লেখ্য, অধিকাংশ পরিবারেই ১৫ই নভেম্বর পালিত হবে ভাইফোঁটা (Bhai Phota)।
ভ্রাতৃদ্বিতীয়া উৎসবের রয়েছে একাধিক নাম। বাঙালির ঘরে ঘরে ভাই-বোনদের এই মিষ্টি রীতিকে বলা হয় ভাইফোঁটা (Bhai Phota) । এই উৎসবই আবার মহারাষ্ট্র, গুজরাতের মতো পশ্চিম ভারতে পরিচিত ভাইদুজ নামে। আবার কর্ণাটক, গোয়ায় ভাইফোঁটাকে বলে ভাইবিজ। উত্তরবঙ্গেইভাইফোঁটাকে বলা হয় ভাইটিকা। দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে অবশ্য বিজয়া দশমীর পরেই ভাইটিকা উৎসব পালিত হয়ে থাকে। উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি পড়শি দেশ নেপালেও ভাইটিকা উৎসব পালন করা হয়।
ভাইফোঁটা নিয়ে নানান পৌরাণিক কাহিনি প্রচলিত রয়েছে। কথিত আছে, সূর্য ও তাঁর স্ত্রী সংজ্ঞার যমুনা ও যম নামে এক কন্যা ও পুত্র যমজ সন্তান ছিল। তবে পুত্র ও কন্যা সন্তানের জন্মদানের পর সূর্যের উত্তাপ স্ত্রী সহ্য করতে না পেরে সন্তানদের প্রতিলিপি ছায়ার কাছে রেখে চলে যান। সংজ্ঞার প্রতিরূপ হওয়ায় কেউ ছায়াকে চিনতে পারে না। ছায়ার কাছে ওই দুই সন্তান কখনও মায়ের মমতা, ভালবাসা পায়নি। দিনের পর দিন ধরে অত্যাচার করতে থাকে। অন্যদিকে, সংজ্ঞার প্রতিলিপি ছায়াকে বুঝতে না পেরে সূর্যদেবও কোনও দিন কিছু বলেননি। ছায়ার ছলে স্বর্গরাজ্য থেকে বিতাড়িত হন যমুনা। এক সময় যমুনার বিয়েও হয়। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর যমের থেকে দূরত্ব বাড়ে যমুনার। ফলে দীর্ঘ কাল ধরে দিদিকে দেখতে না পেয়ে দুঃখী হয়ে পড়েন যম। দিদিকে দেখতে এবং মন শান্ত করতে এক দিন দিদির বাড়ি চলে যান যমরাজ। প্রিয় ভাইয়ের আগমনে বেশ খুশি হন যমুনা। দিদির আতিথেয়তা ও স্নেহে মুগ্ধ হয়ে ফেরত যাওয়ার সময় যম একটি বর চাইতে বলেন যমুনাকে। তখন যমুনা বলেছিলেন, এই দিনটি ভাইদের মঙ্গল কামনা চেয়ে প্রত্যেক বোন যেন ভ্রাতৃদ্বিতীয়া হিসেবে পালন করে। সেই বর দান করে যম পিতৃগৃহে চলে যান। যমের মঙ্গল কামনায় এ দিনটি পালন করায় যমরাজ অমরত্ব লাভ করেন।
আবার অন্য পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী, এক সময় বালির হাতে পাতালে বন্দি ছিলেন ভগবান বিষ্ণু। যার ফলে চরম বিপদের মুখে পড়েন স্বর্গের সব দেবতারা। যখন কোনও ভাবেই যখন বিষ্ণুকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না, তখন লক্ষ্মীর কাছে সকলে শরণাপন্ন হন। নারায়ণকে উদ্ধার করার জন্য লক্ষ্মী ভাই পাতিয়ে ফেলেন বালিকে। এমনকি তাঁকে ফোঁটাও দেন লক্ষ্মী। সেই দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথি। ফোঁটা পেয়ে লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চাইলে লক্ষ্মী তখন বিষ্ণু তথা নারায়ণের মুক্তি চেয়ে নেন।
আবার ভাইফোঁটা নিয়ে কৃষ্ণ ও সুভদ্রার পৌরাণিক কাহিনিও শোনা যায়। কথিত আছে, ধনত্রয়োদশীর পরের দিন চতুর্দশী তিথিতে নরকাসুরকে বধ করেন কৃষ্ণ। তারপর দ্বারকায় ফিরে এলে বোন সুভদ্রার আনন্দে দিশাহারা হয়ে পড়েন। কৃষ্ণকে অনেক দিন পর দেখতে পেয়ে তাঁর কপালে বিজয় তিলক পরিয়ে দেন সুভদ্রা। কপালে ফোঁটা দিয়ে দাদাকে মিষ্টিও খেতে দেন। সেই থেকে নাকি ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে ভাইফোঁটা উৎসব পালন করা হয়। আবার এও বলা হয়, চতুর্দশ শতাব্দীর পুথি অনুসারে, জৈন ধর্মের অন্যতম প্রচারক মহাবীর বর্ধমানের মহাপ্রয়াণের পরে তাঁর অন্যতম সঙ্গী রাজা নন্দীবর্ধন মানসিক এবং শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন। সে সময় তাঁর বোন অনসূয়া নিজের বাড়িতে নন্দীবর্ধনকে নিয়ে যান কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে। সেখানে অনেক প্রার্থনার পরে নন্দীবর্ধন বোনের হাতে খেয়ে নিজের অনশন ভঙ্গ করেন। এই কাহিনি সত্য হলে ভাইফোঁটা উৎসবের বয়স আড়াই হাজার বছরেরও বেশি।
ভাইফোঁটা নিয়ে নানান কাহিনী প্রচলতি থাকলেও বিশেষত যম-যমুনার কাহিনীই বিশ্বাস করা হয় বেশি। ভাই-দাদাদের ফোঁটা দেওয়ার সময় একটি বিশেষ মন্ত্র বলে থাকেব দিদি-বোনরা। এই মন্ত্র হলো - ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা। যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥ যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর। আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর
- Related topics -
- পুজো ও উৎসব
- লাইফস্টাইল
- ভাইফোঁটা
- বাঙালি
- যমুনা
- ভারত
- রাজ্য