GI Tagged Sweets | বাংলার ঝুলিতে আরেক GI ট্যাগ! গুপ্তিপাড়ার গুপো সন্দেশ পাবে বিশেষ তকমা! দেশের আর কোন বিখ্যাত মিষ্টির আছে এই ট্যাগ?

Monday, June 3 2024, 11:46 am
highlightKey Highlights

কেবল রসোগোল্লাই নয়, বাংলার অসংখ্য মিষ্টি রয়েছে যা জগৎ বিখ্যাত। সেইসব মিষ্টি আবার পেয়েছে নানান তকমাও। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্য হলো জিআই তকমা। এবার নতুন করে এই তকমা পেতে চলেছে গুপো সন্দেশ! জি আই তকমা হয়তো খুব দূরে নয়, এমনটাই মনে করছেন গুপ্তিপাড়ার মানুষ।


বাংলা ভাষাকে বলা হয় বিশ্বের সবচেয়ে মিষ্টি ভাষা। হবে নাই বা কেন, যে ভাষাভাষীর মানুষের সব কাজেই, সব পদেই জড়িয়েছে রয়েছে মিষ্টি, তাদের বলা ভাষা তো মিষ্টি হবেই। কেবল রসোগোল্লাই নয়, বাংলার অসংখ্য মিষ্টি রয়েছে যা জগৎ বিখ্যাত। সেইসব মিষ্টি আবার পেয়েছে নানান তকমাও। যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখ্য হলো জিআই তকমা। এবার নতুন করে এই তকমা পেতে চলেছে গুপো সন্দেশ! জি আই তকমা হয়তো খুব দূরে নয়, এমনটাই মনে করছেন গুপ্তিপাড়ার মানুষ। দিন সাতেকের মধ্যেই জিআই-এর জন্য আবেদন করা হবে বলে খবর।  

জিয়ার তকমা পেতে চলেছে গুপো সন্দেশ! 

দীর্ঘদিন ধরে হুগলির গুপ্তিপাড়ার বিখ্যাত গুপো সন্দেশের জিআই (Geographical Indication) তকমার দাবি উঠছিল। এ ব্যাপারে প্রথামাফিক আবেদনের জন্য ৪৮ জন বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে গুপ্তিপাড়া ২ পঞ্চায়েতের উদ্যোগে সম্প্রতি তৈরি হয় ‘গুপ্তিপাড়া গুপো সন্দেশ উন্নয়ন সমিতি’। সংগঠনের রেজিস্ট্রেশনের জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করা হয়। এবার রেজিস্ট্রেশন এল সমিতির হাতে। এর ফলে ওই সন্দেশের জিআই স্বীকৃতির জন্য আবেদন করতে আর বাধা রইল না। জনশ্রুতি অনুযায়ী, এই মিষ্টি তৈরির কারবারিদের বাস ছিল বেহুলা এলাকায়। তাঁদের হাতেই তৈরি হয় মাখা সন্দেশ। কিন্তু মাখা সন্দেশ তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। তাই এতে পাক দিয়ে তৈরি হয় গুপো সন্দেশ। দু’টি সন্দেশ জুড়ে তৈরি হয় বলে অনেকে একে জোড়া সন্দেশও বলেন। এই সন্দেশের জিআই স্বীকৃতির জন্য গবেষণায় সহযোগিতা করছেন স্থানীয় ইতিহাস চর্চাকারী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

Trending Updates
গুপ্তিপাড়ার গুপো সন্দেশ পাবে বিশেষ জিআই তকমা
গুপ্তিপাড়ার গুপো সন্দেশ পাবে বিশেষ জিআই তকমা

জিআই তকমা পাওয়া ভারতের বিখ্যাত মিষ্টি । India's Famous Sweet with GI Label :

ইতিহাস বলে, সিন্ধু সভ্যতার ৮,০০০ বছর আগে, যখন আখ থেকে চিনি আহরণের প্রযুক্তি তৈরি হয়েছিল তখন থেকেই ভারতের সঙ্গে মিষ্টির মধুর সম্পর্কের শুরু। কেবল বাংলা বা বাঙালিরই নয়, গোটা ভারতের বিভিন্ন অংশের মিষ্টিই বিশ্বে খ্যাতনামা। আর এদের স্বাদ নিয়ে যত বলা হয় ততই যেন কম। ভারতীয় মিষ্টির তালিকা বিশাল। এর মধ্যে রয়েছে রসগোল্লা, রসমালাই, বাল মিঠাই, মালপোয়া, মহীশূর পাক, সন্দেশ, লাড্ডু, ক্ষীর, কুলফি, জিলিপিএবং আরও অনেক কিছু। প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব অনন্য মিষ্টি রয়েছে যা এমন উপকরণ দিয়ে উত্পাদিত হয় যা কাছাকাছি সহজেই পাওয়া যায়। ভারতীয় মিষ্টি প্রধানত তৈরি করা হয় দুধ, ময়দা, ডাল, চাল এবং অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি অসংখ্য ধরনের চিনি ও গুড় দিয়ে। দেখে নেওয়া যাক জিআই তকমা পাওয়া ভারতের বিখ্যাত মিষ্টির তালিকায় রয়েছে কোন কোন মিষ্টি!

 রসগোল্লা । Rasgolla :

বাংলা তথা ভারতের অন্যতম সেরা মিষ্টির মধ্যে প্রধান হলো রসগোল্লা। বাঙালির শুভ কাজ হোক কিংবা কোনো অনুষ্ঠান, রসগোল্লা সবেই রয়েছে। নরম তুলতুলে সাদা এক বল। মুখের পুরলেই মিষ্টি রসের সাগর। জিভের গোড়ায় সে স্বাদ যেন স্বর্গ সুখের সমতুল্য। তবে বাঙালির অন্যতম পরিচয় এই রসগোল্লার ভাগ নিয়ে বেঁধেছিল এক মহাযুদ্ধ। বাঙালির সাধের রসে টইটুম্বুর শ্বেত গোলকে ভাগ বসাতে চেয়েছিল ওডিশা। রসগোল্লার সৃষ্টির কৃতিত্ব নিতে ভীষণ লড়াই চলে দুই রাজ্যের। শেষ পর্যন্ত সমস্ত তথ্য প্রমাণ পেশ করে কঠিন যুদ্ধ জিতে নেয় বাংলাই। ২০১৭ সালে ১৪ নভেম্বর ওড়িশাকে হারিয়ে রসগোল্লা বাংলার জিআই ট্যাগ তালিকা (GI tag list) এর মধ্যে স্থান পায়। 

 মিহিদানা । Mihidana :

এই ভারতীয় মিষ্টির উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে। মিহিদানা (Mihidana)২০১৭  সালে জিআই ট্যাগ পেয়েছে। গোবিন্দভোগ, কামিনীভোগ, এবং বাসমতি চাল গুঁড়ো করে ভুনা হয়, তারপর রঙের জন্য জাফরান এবং বেসন অল্প পরিমাণে যোগ করা হয়। তারপর তা মিশ্রিত করা হয়। মিশ্রণটি ছোট ছিদ্র দিয়ে ঢেলে ভেজে চিনির সিরাপে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

ধারওয়াদ প্যারা । Dharwad Peda : 

ধারওয়াদ প্যারা(Dharwad Peda) মিষ্টিটির নামকরণ কর্ণাটকের ধারওয়াড় থেকে এসেছে। এই মিষ্টির তিনটি প্রধান উপাদান হল ধারওয়াড়ি মহিষের দুধ, চিনি এবং দুধ। উত্তর প্রদেশের ঠাকুররা ১৯শতকের গোড়ার দিকে ধারওয়াদে চলে আসেন এবং রাম রতন সিং ঠাকুর স্থানীয় অঞ্চলে এই প্যারা উৎপাদন ও বিপণন শুরু করেন। তাদের ব্যবসা ধীরে ধীরে কর্ণাটকের অন্যান্য অঞ্চলে প্রসারিত হয়।

ধারওয়াদ প্যারা মিষ্টিটির নামকরণ কর্ণাটকের ধারওয়াড় থেকে এসেছে
ধারওয়াদ প্যারা মিষ্টিটির নামকরণ কর্ণাটকের ধারওয়াড় থেকে এসেছে

সিলাও খাজা । Silao Khaja :

বিহারের সিলাও খাজা ২০১৮ সালে জিআই ট্যাগ পেয়েছে। এটি ১২থেকে ১৬টি পাতলা ময়দার আস্তরণ নিয়ে গঠিত যা একটির উপরে অন্যটি স্তুপীকৃতভাবে থাকে। এর উপাদানগুলি হল গমের আটা, এলাচ, মৌরি, ময়দা, ঘি এবং চিনি এবং এটির রঙ ফ্যাকাশে হলুদ হয়। কিংবদন্তি অনুসারে, বুদ্ধ যখন রাজগীর থেকে নালন্দা ভ্রমণ করেছিলেন তখন নাকি তাঁকে সিলাও খাজা দেওয়া হয়েছিল।

সীতাভোগ । Sitabhog :

পশ্চিমবঙ্গের সীতাভোগ (Sitabhog) মিহিদানার সঙ্গেই জিআই ট্যাগ তালিকা (GI tag list) এর মধ্যে স্থান পেয়েছে। এটি বর্ধমান শহরের আরেক বিখ্যাত মিষ্টি। বর্ধমানের মহারাজ মেহতাব চাঁদ বাহাদুরের রষকে পরিবেশনের জন্য এই সীতাভোগ 

 ও মিহিদানা মিষ্টান্ন তৈরি করছিলেন বর্ধমান শহরের এক ময়রা ক্ষেত্রনাথ নাগ। লর্ড কার্জন যখন ১৯০৪ সালে এই বর্ধমান শহরে এসেছিলেন তখন তাকেও এই দুটি মিষ্টান্ন পরিবেশন করা হয়েছিলো।  ২০১৭ সালে এ দুটি মিষ্টান্ন জিআই  ট্যাগ পেয়েছে।

 তিরুপতি লাড্ডু । Tirupati Laddu :

এই লাড্ডুগুলি অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতিতে ভগবান বালাজির মন্দিরে তৈরি করা হয়।  পুরো প্রস্তুতির জন্য শুধুমাত্র খাঁটি গরুর ঘি ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য, তিরুপতির মন্দিরে প্রতিদিন প্রায় ১.২৫ লক্ষ তিরুপথি লাড্ডু প্রস্তুত করা হয়। প্রায় ১৩০ লাড্ডু শ্রমিক প্রতিদিন লক্ষাধিক লাড্ডু উৎপাদন করেন। 

জয়নগরের মোয়া । Joynagar Moa : 

 বাংলার অন্যতম মিষ্টান্ন জয়নগরের মোয়া (Joynagar Moa) এর জিআই শংসাপত্র ৪৯ জন মোয়ার কারিগরের হাতে জিআই তুলে দেওয়া হয়। এই মিষ্টি জিআই ট্যাগ পেতেই মোয়া তৈরি করে স্বনির্ভর হচ্ছেন জয়নগর, বহড়ুর গৃহবধূরা। ঘরের হেঁসেল সামলে সকালেই চলে আসেন বিভিন্ন কারখানা ও দোকানে।

জয়নগরের মোয়ার জিআই শংসাপত্র ৪৯ জন মোয়ার কারিগরের হাতে জিআই তুলে দেওয়া হয়
জয়নগরের মোয়ার জিআই শংসাপত্র ৪৯ জন মোয়ার কারিগরের হাতে জিআই তুলে দেওয়া হয়

কোনও মিষ্টির জিআই ট্যাগ নির্দেশ করে যে ওই মিষ্টি যে উপাদান এবং প্রক্রিয়া ব্যবহার করে তৈরী হয়েছে তা অনন্য। বেশিরভাগই, স্থানীয় মিষ্টি প্রস্তুতকারক সমিতিগুলি জিআই ট্যাগগুলির ব্যবহারকে সুরক্ষিত করে। ট্যাগ নিশ্চিত করে যে অনুমোদিত ব্যবহারকারী হিসাবে নিবন্ধিত ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ জনপ্রিয় পণ্যের নাম ব্যবহার করতে যাতে না পারে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File