Education | বেসরকারি স্কুলেও বাধ্যতামূলক বাংলা ভাষা! শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর বিশেষ নজর দেবে শিক্ষা কমিশন!
বেসরকারি স্কুলগুলিতে দ্বিতীয় ভাষায় হিসেবে রাখতেই হবে বাংলা ভাষা। স্কুলের ফি বাবদ বিষয়ে বিশেষ নজরদারি রাখবে স্বাস্থ্য কমিশনের ধাঁচে তৈরী শিক্ষা কমিশন। টাকা দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার ৪ শিক্ষক।
এবার বেসরকারি স্কুলেও বাধ্যতামূলক বাংলা ভাষা (Bengali Language)। বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলগুলিতেও বাধ্যতামূলকভাবে পড়াতে হবে বাংলা ভাষা, এদিন সোমবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমনটাই অনুমোদন করা হয়। পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বা স্কুলের ফি সংক্রান্ত বা অন্যান্য বিষয়ে বিশেষ নজর রাখতে তৈরী করা হচ্ছে স্বাস্থ্য কমিশনের মতো শিক্ষা কমিশনও। অন্যদিকে, টাকা দিয়ে চাকরি নেওয়ার জন্য চারজন শিক্ষককে গ্রেফতারির নির্দেশ আদালতের।
নবান্ন (Nabanna) সূত্রে খবর, এবার থেকে প্রথম ভাষা ও দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে বাংলা ও ইংরেজি নিতেই হবে। রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে আজ রাজ্যের শিক্ষানীতি অনুমোদিত হয়। সেই শিক্ষানীতিতেই স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় বাংলা এবং ইংরেজি ভাষা পড়ুয়াদের পড়তেই হবে। শুধু তাই নয়, তৃতীয় ভাষা হিসেবে যে অঞ্চলে যে ভাষার প্রয়োগ বেশি বা কার্যকরিতা বেশি, সেই অনুযায়ী সেই অঞ্চলে ওই ভাষা পড়া যাবে। এই ভাষা হিন্দিও হতে পারে, সাঁওতালিও হতে পারে।
উল্লেখ্য, রাজ্যের একাধিক বেসরকারি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে বাংলা পড়ানো হয় না বলে বারংবার অভিযোগ উঠেছে। প্রথম ভাষা হিসেবে বাধ্যতামূলকভাবে থাকে ইংরেজি। তবে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাংলা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও বহু ক্ষেত্রে অনেকে হিন্দি বা অন্য ভাষা নেয়। ফলে স্কুল জীবনে বাংলাটা পড়া হয় না যার প্রভাব থেকে যায় আজীবন। পাশাপাশি, ইংরেজি শিক্ষার চাপে বাংলা ভাষার প্রতি নতুন প্রজন্মের আগ্রহ হারাচ্ছিল বলেও একাধিকবার অভিযোগ, বিতর্কের ঝড় দেখা গিয়েছে। এমনকী, সম্প্রতি এক নামী কলেজের ভরতির বিজ্ঞাপ্তি ঘিরেও দানা বেঁধেছিল বিতর্ক। সেই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ইংরেজি মিডিয়ামের পড়ুয়া না হলে সেই কলেজে ভরতি হওয়া যাবে না। পরে অবশ্য চাপে মুখে বিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহার করা হয় কলেজ থেকে।
এরকম নানাবিধ ঘটনার ফলে রাজ্যের সব মাধ্যমের স্কুলগুলিতে বাংলা পড়ানোয় আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বিশেষ উদ্যোগী হল রাজ্য মন্ত্রিসভা। এদিন মন্ত্রিসভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বেসরকারি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলিতে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে বাধ্যতামূলক করতে হবে বাংলা ভাষা। তৃতীয় ভাষা হিসেবে সাঁওতালি, উর্দু বা অন্য কোনও ভাষার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ইংরেজি মিডিয়াম ছাড়া এই নিয়ম অন্য কোনও মিডিয়ামের ক্ষেত্রে এই প্রযোজ্য হবে না।
অন্যদিকে, রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার ওপর নজর রাখার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) সরকার গঠন করেছিল স্বাস্থ্য কমিশন। এরপর সেই ধাঁচে রাজ্যে শিক্ষা কমিশন (Education Commission) তৈরির ভাবনাচিন্তা শুরু হয় গত কয়েক মাস আগে থেকেই। মূলত রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলিকে (Private Schools) নিয়ন্ত্রণ করতেই এই কমিশন তৈরির পরিকল্পনা করতে শুরু করে শিক্ষা দফতর। অবশেষে আজ, ৭ই অগাস্ট, সোমবার এই পরিকল্পনার প্রস্তাব পাশ হয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে। জানা গিয়েছে, এই নবগঠিত কমিশনের মাথায় থাকবেন, কোনও এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।
শিক্ষামহলের অনেকের মতে, রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলি মাঝের মধ্যেই আকাশ ছোঁয়া পরিমাণে ফি বৃদ্ধি করে থাকে। এমনকি কোভিড পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষার সময়ে বেসরকারি স্কুলের ফি দেওয়া নিয়েও আদালতে বেশ উত্তাপ বজায় ছিল। এপ্রিল মাসে রাজ্যের সব দফতরের মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও (Education Minister Bratya Basu) মুখ্যমন্ত্রীকে বেসরকারি স্কুলগুলির সম্পর্কে অভিযোগ জানান। শিক্ষামন্ত্রীর অভিযোগ, রাজ্য সরকারের অনেক নির্দেশ মানছে না বেসরকারি স্কুলগুলির একাংশ। এরপরেই মূলত মুখ্যমন্ত্রী মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, বাংলায় শিক্ষা কমিশন গঠন করা যায় কিনা সেই বিষয়টা খতিয়ে দেখার জন্য। অনেকের মতে, যাতে শিক্ষার মাধ্যমে বেসরকারি স্কুলগুলি লাগামহীন মুনাফা না করতে পারে, সেই ব্যাপারেই নজর চালাবে এই কমিশন। কেউ কেউ এও বলছেন, বেসরকারি স্কুলের অভিভাবকদের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সেতুবন্ধনও করে দেবে এই শিক্ষা কমিশন।
প্রসঙ্গত, দিন কয়েক আগেই বেসরকারি স্কুলের বেলাগাম বেতনের মামলায় বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু রাজ্য সরকারকে কার্যত তুলোধনা করেছিলেন। ৩১ সে জুলাই কলকাতা হাইকোর্টে (Calcutta High Court) স্কুলের বেতন নিয়ে একটি মামলার শুনানি চলছিল। স্কুল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও টিউশন ফি-র বাইরে কেন টাকা নেওয়া হচ্ছে, সেই বিষয়েই মূলত মামলা চলছিল। এই মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করে বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, বেসরকারি স্কুলগুলি কত ফি বাড়াবে, কখন বাড়াবে, সে সব দিকে কেন নজর নেই রাজ্য সরকারের। তাঁর আরও বক্তব্য, অন্য রাজ্যে ফি সংক্রান্ত নীতি নিয়ে রাজ্যের নিজ্বস্ব আইন আছে। তবে এ রাজ্যে এই সংক্রান্ত কোনও আইন নেই বলে বেতনের ব্যাপারে এরকম একটা গাইডলাইন তৈরী করারও পরামর্শ দেন তিনি।
অন্যদিকে, এতদিন নিয়োগ দুর্নীতি মামলার সঙ্গে জড়িতদের চাকতি বাতিল, বেতন বন্ধ হওয়ার মতো শাস্তি দেওয়া হতো আদালতের তরফ থেকে। এমনকি যারা টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছেন তাদের জেল হেফাজতের ঘটনাও দেখা গিয়েছে। কিন্তু এবার কড়া পদক্ষেপ নিলো আইন। এবার টাকা দিয়ে যারা চাকরি নিয়েছেন এরকম চারজন শিক্ষককে গ্রেফতারির নির্দেশ দিলো আদালত। জানা গিয়েছে, ধৃত চার শিক্ষকের নাম সাইগার হুসেন, সমীর হুসেন, জাহিরউদ্দিন শেখ ও সৌগত মণ্ডল। এই চারজনেরই বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
বেআইনিভাবে নিয়োগের অভিযোগে চাকরি যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে, বেতন বন্ধ হওয়ার নির্দেশও মিলেছে। তবে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় শিক্ষকদের জেলে যাওয়ার ঘটনা এই প্রথম। যাঁরা টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে জেলে রয়েছেন। এবার জেলে গেলেন এমন চারজন, যাঁরা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ। নিয়োগ দুর্নীতি (Recruitment Scam) মামলায় গত এক বছরে অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। এবার প্রথম গ্রেফতার হলেন চার শিক্ষক। প্রাথমিক স্কুলে ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা টাকা দিয়ে বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছিলেন। সোমবার বিশেষ সিবিআই আদালত সেই চারজনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। ওই চার শিক্ষক হাজিরা দিলে, বিচারক হাজিরা প্রশ্ন তোলেন। তাঁর বক্তব্য, কেন এই শিক্ষকদের জামিন দেওয়া হবে। এই শিক্ষকদের জন্য বহু মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। এর ফলে সিবিআই (CBI) আদালত মামলার শুনানি শেষে এই চার 'শিক্ষক'কে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয়।