আদার কার্যকারিতা ও আদা খাওয়ার উপকারিতা, Benefits of eating ginger in bengali
আদা সারা বিশ্বে জাদুকরী মশলা হিসেবে পরিচিত। যখনই সর্দি কাশি বা মাথা ব্যথার সমস্যা দেখা দেয় তখন আদার রসযুক্ত চা খাওয়ার উপদেশ দেওয়া হয় আমাদের, তাতে কাজও দেয় ঠিকই। তাছাড়াও গলায় খুসখুস ভাব বা কফের সমস্যায় আদা ফোটানো জল খাওয়া তথা সেই জল দিয়ে গারগল করার মাধ্যমে যথেষ্ট আরাম পাওয়া যায়। আদার উপকারী গুণাবলী আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকেও রক্ষা করে।
আদার বিভিন্ন গুণাবলী, Beneficial qualities of ginger
আদার মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে। এছাড়াও এতে প্রোটিন, শ্বেতসার , জল, আঁশ , খনিজ পদার্থ ইত্যাদি উপাদান বিদ্যমান। তবে মূলত জিনজেরোল নামক একটি কম্পাউন্ড আদার উপকারীতা আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছে।
আদা আমাদের হজম ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে। রোজ যদি একটু করে আদা খাওয়ার অভ্যাস করা যায় তবে কিছুদিনের মধ্যেই আমাদের হজম ক্ষমতা অনেকটাই উন্নত হয়ে যাবে। তাছাড়াও প্রতিদিন একটু করে আদা খেলে গ্যাস ও অম্বলের সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।
Read also :
এক কথায় বলতে গেলে একটুকরো কাঁচা আদা আমাদের দেহের হাজারো রোগ-ব্যাধির মুক্তিদাতা। যেমন জ্বর, সর্দি, কাশি তথা খাওয়ার অনিচ্ছা থেকে শুরু করে হাত ও পায়ের জয়েন্টে ব্যথা, এরূপ সব সমস্যা থেকেই মুক্তি দিতে পারে কাঁচা আদা, কারণ আদা আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আদার ভূমিকা, Ginger in building up immune system
আদার মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্য আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে তোলে। মূলত আদা এবং মধুর মিশ্রণ শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে, কারণ এই মিশ্রন আমাদের রক্তে শ্বেতরক্ত কণিকার সংখ্যা বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকভাবেই বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সমাধানে আদার কার্যকারিতা, Ginger is a remedy to various physical illness
১) সর্দি কাশি থেকে মুক্তি পেতে আদার ব্যবহার
আদার মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে। এটি বিভিন্ন ক্ষতিকর ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে আমাদের রক্ষা করে। আদা খেলে সর্দি, কাশি, গলাব্যথা ইত্যাদি সমস্যা থেকে সহজেই আরাম পাওয়া যায়। তাই আমাদের বাড়িতে কারোর সর্দি কাশি হলে মা-ঠাকুমারা আদা দেওয়া চা খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
Read also :
২) হজমের সমস্যায় আদার উপকারিতা
আমাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘকালীন বদহজমের সমস্যায় ভোগেন; যার কারণে পেটের উপরিঅংশে ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য ভাব, মুখে টক ভাব, এইসকল লক্ষণ প্রকাশ পায়। আদা আমাদের পেটের অম্বলজনিত সমস্যা কমায়, ফলে প্রদাহ কমে। তাছাড়া আদা খাবার হজম করার উৎসেচকগুলির নিঃসরণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, ফলে বদহজমের সমস্যা দূর হয়। রান্নায় আদার ব্যবহার বিশেষভাবে স্বাদ বৃদ্ধি করে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হজমেও সহায়তা করে।
3) মাসিকের বেদনায় আদার ব্যবহার
পিরিয়ড বা মাসিক চলাকালীন অনেক মেয়েদেরই তলপেটে অসহ্য ব্যথা ভোগ করতে হয়। এই যন্ত্রণার কারণে সাধারণ স্বাভাবিক জীবনযাপনে বিঘ্ন ঘটে। এক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণ আদা এই যন্ত্রণা থেকে অনেকাংশে মুক্তি দিতে পারে। এমন সময় আদা চা পান করলে একটু আরাম পাওয়া যায়। তাছাড়াও কয়েক টুকরো আদা যদি গরম জলে ফুটিয়ে নিয়ে, সেই জলে মধু মিশিয়ে খাওয়া হয়,তবেও ভালো ফল পাওয়া যাবে।
৪) আদা বমি ভাব কম করতে সহায়ক
অনেকেরই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কেমন একটা বমি বমি ভাব লাগে। যাকে আমরা 'মর্নিং সিকনেস' বলি। তাছাড়াও অপারেশন অথবা কেমোথেরাপির পর কিছু কিছু মানুষ বমির ভাবের মত কিছু অস্বস্তিকর লক্ষণে ভোগেন। এই সমস্যা দূর করার জন্য আদা খেলে উপকারিতা পাওয়া যেতে পারে। সামান্য পরিমাণে আদার রস খেলে, উপরিউক্ত সমস্যাগুলির হাত থেকে অনেকাংশেই আরাম পাওয়া যায়। একইভাবে কোথাও যাওয়ার সময় বাসে উঠলে যাদের বমি পায়, তাদের মুখে ছোট এক টুকরো আদা ভরে দেখতে পারেন, এই সমস্যা দূর হবে।
৫) অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ব্যাথায় উপশম দেয় আদা
অস্টিওআর্থ্রাইটিস রোগে আমাদের শরীরে দুটি হাড়ের মধ্যে থাকা জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর কারণে জয়েন্টে ভীষণ রকম ব্যথা অনুভূত হয়। সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই অস্টিওআর্থ্রাইটিস নামক রোগটি হয়ে থাকে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন কাঁচা আদা খাওয়া ব্যক্তির অস্টিওআর্থ্রাইটিসের বেদনা, অন্য রোগীদের তুলনায় অনেকাংশে কম।
৬) ওজন কমাতে আদার ভূমিকা
BMI অর্থাৎ বডি মাস ইনডেক্স একটি ওজন পরিমাপকারী মার্কার। একজন সুস্থ মানুষের নর্মাল BMI-এর মান ১৮.৫ থেকে ২৫ এর মধ্যে হওয়া স্বাভাবিক। আদা এই BMI এর মান স্বাভাবিক রাখে এবং এরফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে। আদায় প্রচুর শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ওজন কম করতে সাহায্য করে। আবার এক গবেষণা অনুযায়ী, যে সকল স্থূলকায় মানুষ নিয়মিত আদা খান, তাঁদের পেট ভর্তি আছে বলে মনে হয়, ফলে ক্যালোরি ইনটেকও কম হয় যা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৭) হৃদরোগ কমাতে আদার উপকারিতা
আমাদের শরীরে LDL অর্থাৎ Low Density Lipoprotein নামক এক ক্ষতিকর কোলেস্টেরল থাকে, যার পরিমাণ বেড়ে গেলে আমাদের করোনারি আর্টারিতে অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস নামক সমস্যার সৃষ্টি হয়। আদা উক্ত ক্ষতিকর LDL এর পরিমান কমায় যার ফলস্বরূপ হৃদরোগের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়।
৯) ক্যানসার রোধে আদা কার্যকরী
কাঁচা আদায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও জিনজেরল নামক এক উপাদান প্রচুর পরিমাণে বর্তমান। এই জিনজেরল ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যানসার রোধে সহায়তা করে। আদা খাওয়ার ফলে প্রধানত গ্যাস্ট্রো ইনটেস্টাইনাল ক্যান্সার প্রতিরোধ করা সম্ভব।
Read also :
১০) মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে আদা
আদা অ্যালঝেইমার্স রোগ প্রতিরোধে আমাদের সাহায্য করে। অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ আমাদের বার্ধক্য প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে, যার ফলে আমাদের বার্ধক্যজনিত অ্যালঝাইমার্স রোগের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অন্যান্য প্রাণীর উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে যে মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত কারণে স্মৃতিহ্রাসে আদার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং বায়োঅ্যাক্টিভ যৌগগুলি বাধা দেয়। তাছাড়াও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রেও আদা বিশেষ কার্যকরী ভূমিকা নেয়।
আদা বিশ্বে জাদুকরী বহু গুণের জন্য পরিচিত। রান্নার ক্ষেত্রেও মশলার মধ্যে অন্যতম উপকরণ হলো আদা। খাবার-দাবারে বিভিন্নভাবে এই আদার ব্যবহার করা হয়। আদা খাদ্যে, পানীয় তৈরীতে, আচার তৈরীতে, ঔষধ তথা সুগন্ধি তৈরীতেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
- Related topics -
- আদার গুনাগুন
- স্বাস্থ্য
- পেটপুজো