Bankim Chandra and Vande Mataram | বঙ্কিমচন্দ্রের সৃষ্ট 'বন্দেমাতরম' গানের 'রাগ' বদল করেন রবীন্দ্রনাথ!

Monday, June 26 2023, 9:54 am
highlightKey Highlights

১৮৮২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র সৃষ্টি করেছিলেন ‍‍`আনন্দমঠ‍‍` উপন‍্যাস। এই 'আনন্দমঠে'র মধ্যেই রয়েছে 'বন্দেমাতরম' গানটি। জানুন কবে, কোন প্রেক্ষাপটে তৈরী হয় 'বন্দেমাতরম'।


সাহিত্য জগতে ভারতের ইতিহাসে বাঙালিদের অবদান অনস্বীকার্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (Rabindranath Tagore),কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) প্রমুখদের মতো বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের (Bankim Chandra Chattopadhyay ) অবদানও আজও উজ্জ্বল।  উনিশ শতকের বিশিষ্ট এই বাঙালি ঔপন্যাসিক, বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তাঁর অসীম অবদানের জন্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন।

বাঙালি ঔপন্যাসিক, বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে বঙ্কিমচন্দ্রের অসীম অবদান
বাঙালি ঔপন্যাসিক, বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে বঙ্কিমচন্দ্রের অসীম অবদান

শিশুকাল থেকেই অসামান্য মেধার পরিচয় দিয়েছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র। তাঁর এতটাই মেধা ছিল যে, বঙ্কিমের কনিষ্ঠ সহোদর পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (Purnachandra Chattopadhyay) লিখেছিলেন, গ্রামের পাঠশালায় না গিয়েই ছোট্ট বঙ্কিম বাংলা বর্ণমালা আয়ত্ত করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই সাহিত্যের প্রতি এক টান ছিল বঙ্কিমের।  ‘দুর্গেশনন্দিনী’, ‘বিষবৃক্ষ’, ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, ‘কপালকুণ্ডলা’, ‘দেবী চৌধুরাণী’, ‘আনন্দমঠ’-সহ ১৪টি উপন্যাস রচনা করেন বঙ্কিম। এর বাইরে লিখেছেন গদ্য, গীতার ব্যাখ্যাও। সাহিত্য সমালোচকের ভূমিকাও পালন করেছেন 'সাহিত্য সম্রাট'। 

Trending Updates
অসংখ্য উপন্যাস ছাড়াও রচনা করেছেন গদ্য, গীতার ব্যাখ্যাও
অসংখ্য উপন্যাস ছাড়াও রচনা করেছেন গদ্য, গীতার ব্যাখ্যাও

বঙ্কিমচন্দ্র ও 'বন্দেমাতরম' । Bankimchandra and 'Vande Mataram' :

কেবল সাহিত্যেই নয়, কলমের প্রভাব পড়েছিল দেশ স্বাধীনতাতেও। 'সুজলাং সুফলাং মলয়জশীতলম্ শস্যশ্যামলাং মাতরম্, বন্দে মাতরম্' ৷ বঙ্কিমচন্দ্রের এই গানটি ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বীজমন্ত্র। এই গানের এক অস্বাভাবিক শক্তিতে নিজেদের আবদ্ধ করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন অসংখ্য স্বাধীনতা সংগ্রামী। আজও এই গানের কথা প্রত্যেক ভারতীয়দের মনে ও শরীরে জাগায় শিহরণ। যোগায় এক অদ্ভুত শক্তি, মনোবল।

বঙ্কিমচন্দ্রের 'বন্দেমাতরম' গানটি ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বীজমন্ত্র
বঙ্কিমচন্দ্রের 'বন্দেমাতরম' গানটি ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বীজমন্ত্র

শহরের এক নামী কলেজ থেকে পাশ করে ব্রিটিশ আধিপত‍্যে হুগলী (Hooghly) জেলার ডেপুটি ম‍্যাজিস্ট্রেট (Deputy Magistrate) হয়ে জেলা সদরে বঙ্কিম ফিরে আসেন। যাতায়াতের অসুবিধার দরুন সেই সময় তিনি থাকতেন গঙ্গাপাড়ের আঢ‍্য বাড়িতে । আর এই বাড়িতে বসেই ১৮৮২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র সৃষ্টি করেছিলেন তৎকালীন ভারতের সামাজিক অবস্থার পটভূমিতে ‍‍`আনন্দমঠ‍‍` (Anandamath) উপন‍্যাস। এই 'আনন্দমঠে'র মধ্যেই রয়েছে 'বন্দেমাতরম'  (Vande Mataram) গানটি।  সংস্কৃত ও বাংলা দুই ভাষার সমন্বয়ে রচিত এই গানটি আসলে দেবী ভারত মাতার বন্দনা গীতি এবং বাংলা মা বা বঙ্গদেশের জাতীয় মূর্তিকল্প। এই গানটিকে বঙ্গদেশের জাতীয় সঙ্গীত বলে উল্লেখ করা হয়। তবে পরে স্বাধীন ভারতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'জনগণমন অধিনায়ক' (Jana Gana Mana) গানটিকে জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা দেওয়া হয় এবং 'বন্দেমাতরম' গানটি মর্যাদা পায় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বন্দে মাতরম-এর স্বরলিপি প্রকাশ করেন  ‘দেশ’ রাগে
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বন্দে মাতরম-এর স্বরলিপি প্রকাশ করেন  ‘দেশ’ রাগে

 'বন্দেমাতরম'-র সুরকথা । Music History of ‘Vande Mataram’ : 

১৮৮২ সালে 'আনন্দমঠ' প্রথমবার প্রকাশ হওয়ার পর  'বন্দেমাতরম'  গানের নিচে লেখা ছিল ‘মল্লার রাগ। কাওয়ালি তাল।’ তখন সুর দিয়েছিলেন যদুভট্ট। যদিও পরে তরুণ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বন্দে মাতরম-এর স্বরলিপি প্রকাশ করলেন ‘দেশ’ রাগে। যা বেশ পছন্দ হয় সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের মনেও। ফলে  'আনন্দমঠ' উপন্যাসের পরের সংস্করণেই লেখা হলো 'দেশ রাগ'। তবে সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরে ১৮৯৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের (National Congress) অধিবেশনে 'বন্দেমাতরম' গানটি প্রথম গাওয়া হয়। সেই অধিবেশনে 'দেশ রাগে' গানটি গেয়ে শোনান রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

 ১৮৯৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে 'বন্দেমাতরম' গানটি প্রথম গাওয়া হয়
 ১৮৯৬ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে 'বন্দেমাতরম' গানটি প্রথম গাওয়া হয়

স্বাধীনতায় 'বন্দেমাতরম' । 'Vandemataram' in Independence :

স্বদেশী আন্দোলনের সময় ময়মনসিংহের (Mymensingh) সুহৃদ সমিতি মিছিলের বক্তৃতামঞ্চে উঠে সরলাদেবী (Saraladevi) স্লোগান তোলেন 'বন্দেমাতরম'! এরপর থেকে এই স্লোগানেই এক জোট হতে শুরু করে ভারতীয়রা, স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। ১৯০৫ সালে 'বঙ্গভঙ্গ' (Banga Vanga) আন্দোলনের সময় মঞ্চে উঠে পুরো গানটা গান সরলাদেবী ও লেডি অবলা বসু (Lady Abala Bose)।

 'বন্দেমাতরম' স্লোগান তোলেন সরলাদেবী
 'বন্দেমাতরম' স্লোগান তোলেন সরলাদেবী

এরপর একে একে মদনলাল ধিংড়া (Madanlal Dhingra), প্রফুল্ল চাকি (Prafulla Chaki), খুদিরাম বসু (Khudiram Bose), মাস্টারদা সূর্য সেন (Masterda Surya Sen) সহ বহু বিপ্লবীর  ফাঁসির মঞ্চে শেষ উচ্চারণ ছিল, 'বন্দে মাতরম'। ব্রিটিশ পুলিশের হাতে মৃত্যুবরণের সময় মাতঙ্গিনী হাজরাও (Matangini Hazra) শেষ স্লোগান দিয়েছিলেন 'বন্দে মাতরম'। এই স্লোগানের ফলে ভারতীয়দের মনোবল দেখে রীতিমতো ভয় পেয়ে যায় ইংরেজরা। ফলে 'বন্দেমাতরম' ধ্বনি দেওয়ার অপরাধে বহু স্বাধীনতা সংগ্রামীকেই গ্রেফতার করে ব্রিটিশ সরকার।

'বন্দেমাতরম' গানটি মর্যাদা পায় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে
'বন্দেমাতরম' গানটি মর্যাদা পায় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে

এরপর ১৯৩৭ সালে রবীন্দ্রনাথের পরামর্শেই এই গানের প্রথম দুটি স্তবককে ‘জাতীয় সঙ্গীত’ বলে উল্লেখ করে  কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি (Congress Working Committee)। যদিও মুসলিম লিগ ( Muslim League) এই গানটি গাইতে অস্বীকার করলে শুরু হয় বিস্তর বিতর্ক-বিবাদ।পরবর্তীকালে ১৯৫০ সালে ২৪ জানুয়ারি সংবিধানে 'বন্দে মাতরম'-কে ভারতের জাতীয় গান হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। প্রতিবছর ভারতের স্বাধীনতা দিবস হোক কিংবা প্রজাতন্ত্র দিবস, 'বন্দেমাতরম' গানটি যখনই কোথাও বেজে উঠে তখনই ফের সজাগ হয়ে ওঠে স্বাধীনতা পর্বের সেই স্মৃতি, বঙ্কিমচন্দ্রের অবদান।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File