Ayodhya Ram Mandir | প্রায় ৫০০ বছরের বির্তক-আইনি জটলা পেরিয়ে ঘরে ফিরলেন রামলালা! দেখুন ১৫২৮-২০২৪ সালে কীভাবে বাবরি মসজিদ থেকে তৈরী হলো রামমন্দির!

Monday, January 22 2024, 9:29 am
highlightKey Highlights

২০২৪ এর ২২সে জানুয়ারি অবশেষে অযোধ্যায় হল রাম মন্দির উদ্বোধন। জানুন রাম মন্দির বাবরি মসজিদ বিতর্ক ও কী কী আইনি জটলা পেরিয়ে অবশেষে 'ঘরে' ফিরলেন রাম।


বহু বছরের অপেক্ষার অবসান। ২২সে জানুয়ারি, সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির (Prime Minister Narendra Modi) হাত ধরে নিজ জন্মভূমিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হলো রামলালার। উদ্বোধন হলো রামমন্দিরের। ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মাধ্যমে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে অযোধ্যা রাম মন্দিরের ছবি (Ayodhya Ram Mandir Photo)। রামমন্দিরে রামলালার প্রতিমা দেখে চোখে জল অসংখ্য ভারতীয়র। দীর্ঘ আইনি লড়াই, রাজনৈতিক ঝঞ্ঝাট পেরিয়ে অবশেষে সোমবার অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন। 

রামমন্দির নির্মাণের নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘ লড়াই। মন্দির নিয়ে আইনি লড়াই শুরু হয়েছিল ১৩৯ বছর আগে। তবে এরও আগে চলেছিল দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘর্ষ। রাম মন্দির বাবরি মসজিদ (Ram Mandir Babri Masjid) বিতর্ক নাড়িয়ে দিয়েছিলো গোটা দেশকে। পাঁচ শতক ধরে চলে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ঝঞ্ঝাট। অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ তৈরি হওয়ার ৪৯১ বছর পরে শীর্ষ আদালতের বিচারকেরা জানান, হিন্দুদের বিশ্বাসের ‘রামজন্মভূমি’তে তৈরী হবে রামমন্দির। দেখে নিন অযোধ্যা রাম মন্দির (Ayodhya Ram Mandir) নির্মাণের নেপথ্যে কী কী আইনি জটলা মোকাবেলা করতে হয়েছিল।

রাম মন্দির-বাবরি মসজিদ বিতর্কের শুরু :

১৫২৮ সালে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ তৈরি করালেন মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মির বাকি। উল্লেখ্য, তার বছর দুয়েক আগেই ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন জহিরুদ্দিন মহম্মদ বাবর। এরপর মুঘল সম্রাজ্যের আধিপতন হয়ে ভারতে ব্রিটিশ রাজ সুপ্রতিষ্ঠিত। তখন ১৮৮৫ সালে ফৈজাবাদের জেলা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদের বিতর্কিত কাঠামোর বাইরে শামিয়ানা তৈরি করে রামলালার মূর্তি স্থাপনের আবেদন জানান মহন্ত রঘুবীর দাস। তবে সেই আবেদন খারিজ করে ব্রিটিশ আদালত। 

ব্রিটিশ শাসনকালে সেভাবে আর বিতর্কের সৃষ্টি না হলেও ভারত স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে হঠাৎই বিতর্কিত কাঠামোর মূল গম্বুজের নীচে রামলালার মূর্তি স্থাপিত হয়। মন্দিরপন্থীরা দাবি করলেন, ‘রামলালা প্রকট হয়েছেন’। এই ঘটনার পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৫০ সালে গোপাল সিমলা এবং মহন্ত রামচন্দ্র দাস ফৈজাবাদ আদালতে আলাদা আলাদা মামলা করে বিতর্কিত স্থানে রামলালার পুজোর অনুমতি আবেদন করেন।

অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের আইনি জটলা:

১৯৫৯ সালে অযোধ্যার বিতর্কিত জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করে নির্মোহী আখড়া। এরপর বেশ কিছু বছর পর যখন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদে আসেন বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ তখন বিতর্কিত জমির মালিকানা দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হয় উত্তরপ্রদেশ সেন্ট্রাল সুন্নি ওয়াক্‌ফ বোর্ড। এরপর ১৯৮৬ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি বিতর্কিত কাঠামোর দরজা হিন্দুদের উপাসনার জন্য খুলে দিতে বলে ফৈজাবাদের আদালত। ১৯৮৯ সালে ১৪ই অগস্ট বিতর্কিত জমিতে স্থিতাবস্থা বহাল রাখার নির্দেশ দেয় ইলাহাবাদ হাইকোর্ট।

'ধূলিসাৎ'  বাবরি মসজিদ ও জমি ভাগ :

 স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত তারিখগুলোর মধ্যে অন্যতম ৬ ই ডিসেম্বর, ১৯৯২। এদিন করসেবকদের হামলায় ধূলিসাৎ হয় বাবরি মসজিদ। এরপর ১৯৯৩ সালের ৩রা এপ্রিল সংসদে আইন পাশ করিয়ে অযোধ্যার বিতর্কিত জমির দখল নেয় কেন্দ্র সরকার। ১৯৯৪ সালে ২৪ সে অক্টোবর ইতিহাসবিদ ইসমাইল ফারুকির মামলায় ভারতের সর্বোচ্চ আদালত জানায়, কোনও একটা মসজিদকে ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে ধরা হবে না। এরপর পেরিয়ে যায় ১৬টা বছর। ২০১০ সালের ৩০সে সেপ্টেম্বর,  রাম মন্দির বাবরি মসজিদ (Ram Mandir Babri Masjid) বিতর্কিত মামলায় ইলাহাবাদ হাইকোর্ট তিন বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ওপর ভিত্তি করে  রায় দিয়ে জানায়, বিতর্কিত জমি তিন ভাগে ভাগ করে দেওয়া হবে  সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রামলালা বিরাজমানের মধ্যে।

রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে বড় রায় :

২০১১সালের ৯ই মে  ইলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। এরপর ২০১৭ সালে দেশের প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর আদালতের বাইরেই এই বিতর্ক নিয়ে মীমাংসা করার পরামর্শ দেন। সেই বছরই  অযোধ্যা মামলার শুনানির জন্য তিন বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করে শীর্ষ আদালত। এরপর ২০১৭ সালের ২০ই নভেম্বর উত্তরপ্রদেশ শিয়া সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড জানায়,অযোধ্যায় রাম মন্দির (Ayodhya Ram Mandir) বানালে আপত্তি নেই। তবে পরিবর্তে লখনউতে মসজিদ বানিয়ে দেওয়া হোক। এরপর সেই বছর ৫ই ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি অশোক ভূষণ এবং বিচারপতি এস আবদুল নাজিরের বেঞ্চে নতুন করে শুরু হয় অযোধ্যা মামলার শুনানি।

২০১৮ সালের ২৯ সে অক্টোবর, নয়া প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে আবারও এই মামলায় নতুন করে তিন বিচরপতির বেঞ্চ গঠিত হয়। পরের বছর  প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে তৈরী হয় পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ। এরপর মধ্যস্থতা প্যানেলের জন্য বিচারপতি এফএম কলিফুল্লা, আধ্যাত্মিক গুরু শ্রী শ্রী রবিশঙ্কর এবং আইনজীবী শ্রীরাম পঞ্চুকে বেছে নেয় সুপ্রিম কোর্ট। যদিও মধ্যস্থতার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। যার ফলে ২০১৯ সালের ৬ই অগস্ট থেকে অযোধ্যা মামলার রোজ শুনানি শুরু হয়। এরপর অবশেষে ২০১৯ এর ৯ই নভেম্বর সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয়, অযোধ্যায় বিতর্কিত জমিতে হিন্দুদের মন্দির তৈরি করা হবে। তবে বিকল্প পাঁচ একর জমি দেওয়া হবে মুসলিম সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে। ২০১৯ সালের ১২ই ডিসেম্বর অযোধ্যায় জমি বিবাদ মামলার রায় নিয়ে একাধিক আবেদন খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট।

রামমন্দিরের ভূমিপূজা ও উদ্বোধন :

২০২০ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি, শ্রীরাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট গঠনে কেন্দ্রীয় ক্যাবিনেটের অনুমোদন করা হয়। রামমন্দির নির্মাণে তদারকি করে ওই ট্রাস্ট। এরপর লোকসভায় অনুমোদনের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই বছরেই ২৪ সে ফেব্রুয়ারি অযোধ্যার সোহাওয়াল তহশিলে পাঁচ একর জমিতে মসজিদ গড়ার জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকার প্রদত্ত জমি গ্রহণ করে উত্তরপ্রদেশ সুন্নি সেন্ট্রাল ওয়াকফ বোর্ড। ২০২০ সালেই ৫ই অগস্ট অযোধ্যায় রামমন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আগে ভূমিপূজা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর পর রুপোর ইট দিয়ে হয় রামমন্দিরের আনুষ্ঠানিক শিলান্যাস। 

অবশেষে বহু বিতর্ক এবং আইনি লড়াইয়ের পর ২০২৪ সালের ২২সে জানুয়ারি হলো রাম মন্দির উদ্বোধন (Ram Mandir inauguration)। মন্দিরের উদ্বোধন উপলক্ষে অযোধ্যায় হাজির লক্ষ লক্ষ মানুষ। প্রায়  ৫০০ বছর পর ঘরে ফিরলেন রাম। মন্দির উদ্বোধনের দিন অযোধ্যায় পৌঁছে পুজো সামগ্রী নিয়ে গর্ভগৃহে পৌঁছন মোদি। প্রায় ১ ঘণ্টা ১৮ মিনিট ধরে চলে পূজার্চনা। নানা ধর্মীয় প্রক্রিয়ার পর অভিজিৎ মুহূর্তে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণে প্রাণ পায় রামলালা। প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর প্রদীপ, চামর দিয়ে বিশেষ আরতি করেন মোদি। পাশাপাশি, ১১ দিন পর রামমন্দিরের মহারাজ গোবিন্দ দেব গিরির হাত থেকে চরণামৃত খেয়ে উপবাস ভাঙেন মোদি। অন্যদিকে, রামমন্দির উদ্বোধনের দিনই ইন্দো ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন জানিয়ে দিল কবে শুরু হবে অযোধ্যায় মসজিদ নির্মাণ।  ইন্দো ইসলামিক কালচারাল ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, চলতি বছরের মে মাসে শুরু হচ্ছে অযোধ্যায় মসজিদ নির্মাণের কাজ। এই সংগঠনই দেখভাল করছে মসজিদ নির্মাণের নানান কর্মকাণ্ড। মসজিদ নির্মাণে কীভাবে টাকা তোলা হবে, তারও দেখভাল করছে সংগঠন। সংগঠন জানাচ্ছে, ক্রাউ ফান্ডিং বা সমবেত অনুদান থেকে রাজকীয় মসজিদ অযোধ্যায় নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। মসজিদ নির্মাণের জন্য ক্রাউডফান্ডিংয়ের জেরে একটি ওয়েবসাইট খুব শিগগির খোলা হবে বলেও জানানো হয়েছে। এই মসজিদের নাম ‘মসজিদ মহম্মদ বিন আবদুল্লাহ’ রাখা হবে।  




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File