Article 370 Verdict | ৩৭০ বাতিল বৈধ! ৩৭০ ধারা রদ মামলায় রায় সুপ্রিম কোর্টের! জম্মু-কাশ্মীরে ২০২৪ এই বিধানসভা ভোট করানোর নির্দেশ!
৩৭০ ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট শুনানিতে জানায়, অনুচ্ছেদ ৩৭০ অসাংবিধানিক নয়। ৩৭০ বাতিল বৈধ জানিয়ে, জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ শীর্ষ আদালতের।
৩৭০ ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট (Article 370 Supreme Court) বড় ঘোষণা করলো! কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল আজ, ১১ই ডিসেম্বর, সোমবার রায় দিলো সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। এদিন ৩৭০ ধারার রায় (Article 370 Verdict) নিয়ে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল অসাংবিধানিক নয়। রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত বৈধ! অর্থাৎ ধারা ৩৭০ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি (Article 370 Supreme Court Hearing)তের রায়, জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি, জম্মু কাশ্মীরে ২০২৪ এর সেপ্টেম্বরের মধ্যে ম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা ভোট করানোর নির্দেশও দেওয়া হয় শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে।
৩৭০ ধারা :
২০১৯ সালের ৫ ই অগাস্ট কাশ্মীর নিয়ে বড় ঘোষণা করে মোদি সরকার। বাতিল করা হয় ভূস্বর্গের বিশেষ মর্যাদা। কেন্দ্রীয় সরকার এই ৩৭০ ধারার অধীনে প্রদত্ত জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করার এবং এই অঞ্চলটিকে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করার ঘোষণা করে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ এবং ৩৫-এ নম্বর অনুচ্ছেদ রদ করার ঘোষণা করে কেন্দ্র। জম্মু-কাশ্মীরকে ভেঙে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হয়। ৩৭০ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, ২০১৯ সালের অগস্ট মাসের আগে পর্যন্ত প্রতিরক্ষা, বিদেশ, অর্থ এবং যোগাযোগ ছাড়া অন্য কোনও বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে হস্তক্ষেপের অধিকার ছিল না কেন্দ্রের। জম্মু ও কাশ্মীরে কোনও আইন প্রণয়নের অধিকার ছিল না সংসদেরও। আইন প্রণয়ন করতে হলে রাজ্যের সম্মতি নিতে হত। তা ছাড়া আলাদা পতাকাও ছিল জম্মু ও কাশ্মীরের। এ ছাড়াও ৩৫-এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছিল, রাজ্যের কে স্থায়ী বাসিন্দা, আর কে নন, তা স্থির করতে পারত জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা। স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া কেউ কাশ্মীরে জমি কিনতে পারতেন না। এমনকি স্থায়ী বাসিন্দা ছাড়া কেউ ওই রাজ্যে চাকরির আবেদন করতে পারতেন না। দিতে পারতেন না ভোটও। রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা কোনও মহিলা বাইরের কাউকে বিয়ে করলে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হতেন।
কেন্দ্রের বক্তব্য, দেশের সংবিধান সভা জম্মু ও কাশ্মীরকে ৩৭০ অনুচ্ছেদে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল। কিন্তু স্বাধীন দেশে সংবিধান প্রণয়নের পর ১৯৫৭ সালে সংবিধান সভা ভেঙে দেওয়া হয়। সরকারপক্ষের যুক্তি ছিল, ১৯৫০ সালে সংবিধান প্রণয়নের সময় ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হলেও সেই মর্যাদা স্থায়ী ছিল না, বরং ছিল ‘অস্থায়ী সংস্থান’। ওই অনুচ্ছেদের ৩ নম্বর উপধারায় বলা হয়, রাষ্ট্রপতি ইচ্ছে করলে ওই ‘বিশেষ মর্যাদা’ তুলে নিতে পারেন। রাষ্ট্রপতির ওই ক্ষমতাকে ব্যবহার করেই ২০১৯ সালে ‘বিশেষ মর্যাদা’ প্রত্যাহার করে মোদি সরকার। তবে এই ঘটনার চার বছর কেটে গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতাতেই একাধিক মামলা দায়ের হয়েছিল শীর্ষ আদালতে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় একাধিক পিটিশনে।
৩৭০ ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি :
১৬ দিন যুক্তিতর্ক ধারা ৩৭০ এর শুনানি (Article 370 Hearing) তে ৫ই সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট রায় সংরক্ষণ করে। সোমবার ৩৭০ ধারার রায় (Article 370 Verdict) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে শীর্ষ আদালতের বেঞ্চে তিনরকম রায় এসেছে। প্রধান বিচারপতির এই রায়ের পক্ষে সম্মতি দেন বিচারপতি গাভাই ও বিচারপতি সূর্য কান্ত। ভিন্ন তবে সমান্তরাল রায় দেন বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কৌল। দুইপক্ষেই রায় দিয়েছেন বিচারপতি সঞ্জীব খান্না। এ দিন শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়, জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দিতে হবে।
ধারা ৩৭০ এর শুনানি (Article 370 Hearing) তে দেশের শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, ৩৭০-এ জম্মু ও কাশ্মীরকে যে বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছিল, তা সাময়িক, অস্থায়ী। কাশ্মীরের গণপরিষদ বাতিল হয়ে যাওয়ার পরেও রাষ্ট্রপতির ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করার অধিকার ছিল। ফলে ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক নয়। পাশাপাশি, নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়া হয়, আগামী ২০২৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভা ভোট করানোর জন্য।
৩৭০ ধারা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট (Article 370 Supreme Court) এর শুনানিতে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ তৈরী হয়। এতে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কউল, বিচারপতি সঞ্জীব খন্না, বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি সূর্য কান্ত। অন্যদিকে, ধারা ৩৭০ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে শুনানি (Article 370 Supreme Court Hearing) এর সময় যে কোনও রকম অশান্তি এড়াতে জম্মু কাশ্মীরজুড়ে আঁটোসাঁটো করা হয় নিরাপত্তা।
২০১৯-এ দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসেই ৩৭০ ধারা রদ করে মোদি সরকার। আলাদা করে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করে দেওয়া হয় জম্মু ও কাশ্মীরকে। পূর্ণ রাজ্যের তকমা তুলে দিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয় কাশ্মীরকে। লাদাখকেও আলাদা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা হয়। জঙ্গি-হানায় বিধ্বস্ত কাশ্মীরবাসীকে এক নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তারপরেও একদিকে সন্ত্রাসহানার শিকার হয়েছে কাশ্মীর। অন্যদিকে কাশ্মীরেই হয়েছিল জি ২০ -এর ট্যুরিজম ওয়ার্কিং গ্রুপের মিটিং। বিভিন্ন বিরোধী দলগুলি ৩৭০ ধারা বাতিলের বিরোধিতা করে। সুপ্রিম কোর্টে একের পর এক মামলা দায়ের হয়। সেই সমস্ত মামলার একত্রে শুনানির পর, আজ সুপ্রিম কোর্ট জানায়, জম্মু-কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থাকবে লাদাখ। কারণ ৩ অনুচ্ছেদ ৩ রাজ্যের একটি অংশকে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে তৈরি করার অনুমতি দেয়। পাশাপাশি ২০২৪ এর সেপ্টেম্বরের মধ্যে এখানে বিধানসভার নির্বাচন করারও নির্দেশ দেওয়া হয় শীর্ষ আদালতের পক্ষ থেকে।
- Related topics -
- দেশ
- ভারত
- জম্মু-কাশ্মীর
- নরেন্দ্র মোদি
- আইন
- রাজনৈতিক
- সুপ্রিম কোর্ট