Amit Shah in Dharmatala | ২৩ মিনিটের বক্তৃতায় 'ঘাসফুল'কে পর পর নিশানা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর! 'শাহি' সভায় কী বললেন অমিত দেখুন এক নজরে!
হাইকোর্টের অনুমতি পাওয়ার পর ধর্মতলায় জনসভার আয়োজন করলো বিজেপি। প্রধানবক্তা অমিত শাহ জনসভার মঞ্চ থেকে একাধিক তোপ দাগলেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
লোকসভা নির্বাচনের আগে বঙ্গে বিজেপি জোটের জোর আরও শক্তিশালী করতে ২৯সে নভেম্বর, বুধবার ধর্মতলা (Dharmatala)এ জনসভার আয়োজন করলো গেরুয়া শিবির। জনসভায় বিশেষ এবং প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Home Minister Amit Shah)। এদিন ধর্মতলা এসপ্ল্যানেড (Dharmatala Esplanade) এ আয়োজিত জনসভায় এসে বিরোধী দল তথা পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাধিক ইস্যুতে সুর চড়ালেন অমিত শাহ। কী কী বিষয়ে অমিত শাহ তোপ দাগেন দেখে নিন এক নজরে।
পার্থ, অনুব্রত, জ্যোতিপ্রিয়কে সাসপেন্ড করার হুঙ্কার :
ধর্মতলা এসপ্ল্যানেড (Dharmatala Esplanade)এ মঞ্চে উঠে বিধানসভা থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে শাহ বলেন, দিদি এই নিয়ে দ্বিতীয়বার শুভেন্দুকে বরখাস্ত করলেন। উনি শুভেন্দুকে বার করতে পারেন, কিন্তু জনতাকে চুপ করাতে পারবেন না। এর পরেই অমিত শাহ টানেন গ্রেফতার হওয়ার বাংলার শাসকদলের মন্ত্রী, বিধায়ক এবং নেতাদের নাম। মঞ্চ থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) সরাসরি শাহ প্রশ্ন করেন, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অনুব্রত মণ্ডলকে এখনও দল থেকে সাসপেন্ড করা হয়নি কেন? নাম না করেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে উদ্দেশ্য করে এই নেতাদের সাসপেন্ড করে দেখানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন অমিত শাহ। তিনি আরও বলেন, মমতা বন্দোপাধ্যায় নাকি রোজ দুর্গার স্তব করছেন। এই তিন জন যেন ভাইপোর নাম না বলে দেয়। অর্থাৎ দুর্নীতির দায়ে যে সমস্ত তৃণমূল নেতা সংশোধনাগারে রয়েছেন তাঁদের অবিলম্বে সাসপেনশনের দাবি তুলে রাজ্য শাসক দলকে বেকায়দায় ফেলতে চেয়েছেন এই রাজনীতিবিদ।
বাংলার দুর্নীতি নিয়ে তোপ শাহের :
এদিন অমিত শাহ বাংলায় দুর্নীতি সম্পর্কেও সুর চড়ান। তিনি বলেন, কোনও নেতার বাড়ি থেকে এত নোট উদ্ধারের ঘটনা তিনি আগে দেখেন নি। অর্থাৎ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের টালিগঞ্জ এবং বেলঘরিয়ার বাড়ি থেকে নোট উদ্ধারের ঘটনাকেই যে টেনেছেন শাহ, তা একপ্রকার দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।
ভোট হিংসা নিয়ে চড়া সুর :
বাংলায় ভোট চলাকালীন এবং ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়েও মন্তব্য করেন অমিত শাহ। ধর্মতলা (Dharmatala)র মঞ্চ থেকে এদিন অমিত শাহ বলেন, দেশে সবথেকে বেশি রাজনৈতিক হিংসা হয় বাংলায়। এখানে অনুপ্রবেশ এখনও শেষ হয়নি। আগে মমতা অনুপ্রবেশের ইস্যুতে সংসদ চলতে দিতেন না। এখন তাঁর সময়কালে এই হচ্ছে। আগে যেখানে বাংলায় সকাল সকাল রবীন্দ্রসঙ্গীত শোনা যেত, এখন সেখানে বোম বিস্ফোরণের আওয়াজ কানে আসে যায় বলে মন্তব্য করেছেন শাহ।
সিএএ নিয়ে বক্তব্য :
বিজেপির জনসভার মঞ্চ থেকে সিএএ নিয়ে বড় মন্তব্য করেন অমিত শাহ। অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গ তুলে অমিত শাহ দাবি করেন, দেশে শীঘ্রই সিএএ কার্যকর করা হবে। শাহ বলেন, যেখানে এত অনুপ্রবেশ, সেখানে উন্নয়ন হতে পারে না। এরপর তিনি অসমের তুলনা টেনে আনেন। পাশাপাশি তিনি অনুপ্রবেশের ‘হিসাব’ নিয়ে এসেছেন বলেও দাবি করেন। নয় বছরে ছয় লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা নরেন্দ্র মোদী সরকার দিয়েছে বলেও দাবি করেন অমিত শাহ।
তৃণমূল সুপ্রিমোকে কটাক্ষ :
একদিকে কেন্দ্রের প্রকল্পের নামবদল নিয়ে তরজা। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ। কেন্দ্রের দিকে বারবার অভিযোগের আঙুল তুলেছে ঘাসফুল শিবির তথা তৃণমূল। একাধিকবার এই নিয়ে রাজ্য-কেন্দ্র বচসা হয়েছে। তবে এদিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, মোদিজির কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বাংলার উন্নয়ন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মোদিজিকে উন্নয়ন করতে দিচ্ছেন না। বাংলার উন্নয়ন না হ্যোয়ার কারণ হিসেবে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতাকেই দায়ী করেন শাহ।
মোদি নেতৃত্বের বাহবা :
অমিত শাহের ভাষণে উঠে এল মোদীর নেতৃত্বে দেশের একের পর এক সাফল্যের কথা। কাশ্মীর, করোনা, চন্দ্রযান ৩, এমনকি, রাম মন্দিরের কথাও বললেন শাহ। এদিন অমিত শাহ বলেন, জম্মু ও কাশ্মীরে লাগু ৩৭০ ধারাকে সরানোর জন্যেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রাণ দিয়েছিলেন। মোদিজি সেই ৩৭০ ধারা বাতিল করেছেন। পাশাপাশি অযোধ্যায় রামমন্দির নিয়েও তৃণমূলকে তোপ দাগেন শাহ। তিনি বলেন, এই কংগ্রেস ও তৃণমূল মিলে রামমন্দিরের কাজ আটকে রেখেছিল। এরপরই অমিত শাহ বলেন, ভোট দিয়ে কীভাবে বদলা নেওয়া যায়, সেটা ২০২৬ সালে বিজেপিকে ভোট দিয়ে বাংলার মানুষ দেখিয়ে দেবে।
উল্লেখ্য, এদিন জনসভায় মাত্র ২৩ মিনিটের জন্য বক্তৃতা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিনের কর্মসূচি অনুযায়ী, । দুপুর ১ টা ১৫ মিনিট নাগাদ কলকাতা বিমানবন্দর (Kolkata Airport)-এ এসে পৌঁছানোর কথা ছিলকেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। তারপর সেখান থেকে বায়ুসেনার বিশেষ হেলিকপ্টারে করে রেসকোর্স ময়দানে এসে পচানোর পরিকল্পনা ছিল দুপুর ১:৩৫ মিনিট নাগাদ। রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছে তারপর সড়কপথে ধর্মতলার জনসভা স্থলে দুপুর ১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ পৌঁছে সেখানে ৩ টে ১৫ মিনিট পর্যন্ত থেকে তারপর দুপুর ৩টে ২০ মিনিট নাগাদ রেসকোর্স ময়দান থেকে হেলিকপ্টারে করে কলকাতা বিমানবন্দর (Kolkata Airport)র উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা অমিত শাহর। এই কর্মসূচি অনুযায়ীই ২৩ মিনিটের জন্য মঞ্চে ভাষণ দেন অমিত শাহ।
এদিকে কলকাতায় অমিত শাহ পৌঁছনোর আগেই পাল্টা চাল চালে তৃণমূল। বিজেপির সভার পালটা পোস্টার ব্যানারে শহর ছয়লাপ করে দিল শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের আইটি সেল (IT Cell)। এই ব্যানারে দেখা যায় লেখা রয়েছে, ‘মোটা ভাই ভোট নাই’। এখানে 'মোটা ভাই' মানে অমিত শাহকে বোঝানো হয়েছে বলে দাবি অনেকের। তৃণমূল কংগ্রেসের আইটি সেল (IT Cell) এর তরফ থেকে অমিত শাহকে নিশানা করেই এই পোস্টার লাগিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পাশাপাশি দিন বিজেপির সভা নিয়ে এক্স হ্যান্ডেলে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের আইটি সেলের প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্য। তৃণমূলের আইটি সেলের এক নেতার জানান, ভোটের মানুষের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করার জন্য এখানে আসছেন ‘মোটা ভাই’ অমিত শাহ। তবে সেই ভোট বিজেপির জন্য নেই বলে তিনি জানান। অন্যদিকে, বিধানসভা চত্বরে তৃণমূল ও বিজেপির ধরনা ও পালটা ধরনা ঘিরে উত্তেজনার মধ্যেই মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূলের ধরনা শেষে বললেন, তাঁকে অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদি দেখিয়ে লাভ নেই। এদিন বিজেপিকে ডাকাত লুঠেরা বলে আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, এদিন শহরে অমিত শাহের আসার ঘটনায় বিধানসভায় তৃণমূল সুপ্রিমো-সহ সব তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক–মন্ত্রীরা কালো জামা পরে আসেন। অর্থাৎ কিছু না বলেই বুঝিয়ে দিলেন, হাইকোর্ট বিজেপিকে জনসভা করার অনুমতি দিলেও এই ঘটনায় একেবারেই খুশি নয় তৃণমূল।