ক্যালোরি কি ? দৈনিক কত ক্যালরি প্রয়োজন ? উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবারের তালিকা ( Everything about Calorie in Bengali )
ক্যালোরি কিসের একক ? ওজন অনুযায়ী ক্যালরি চার্ট । ক্যালোরি যুক্ত খাবার কি কি ? ক্যালোরি সম্পর্কে সমস্ত ইনফরমেশন বাংলাতে ।
ক্যালোরি কি ? ক্যালোরি কিসের একক ?
পুষ্টিবিজ্ঞানের একটি বহুল প্রচলিত শব্দ ,'ক্যালোরি' খাদ্যের শক্তির পরিমাণ প্রকাশ করার জন্য পরিমাপের একক হিসেবে ধার্য করা হয় । খাদ্য গ্রহণ বা পান করার সময় আমরা আমাদের দেহে শক্তি (ক্যালোরি) সরবরাহ করে থাকি যার পরিবর্তে দেহ নিজের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের জন্য জ্বালানি হিসাবে সেই শক্তিকে ব্যবহার করে থাকে। একটি মানবদেহ যত বেশি ক্রিয়াকলাপ সম্পাদন করে ঠিক তত বেশি শক্তি বা ক্যালোরি ব্যবহার করা হয়। অধিকাংশ মানুষই 'ক্যালরি' শব্দটি শুধু খাদ্য বা পানিয়ের সাথে সম্পর্কিত বলে মনে করে থাকেন, কিন্তু প্রকৃত অর্থে যেকোন জিনিস যা শক্তি ধারণ করতে পারে তার মধ্যেই ক্যালরি উপস্থিত।
দু প্রকারের ক্যালরি
সাধারণত ক্যালরির দুইটি একক বহুল প্রচলিত:
- "ক্ষুদ্র ক্যালরি" বা গ্রাম ক্যালরি যা 'ক্যাল' নামে পরিচিত
- "বড় ক্যালরি" বা খাদ্য ক্যালরি যা কিলোক্যালরি হিসেবে প্রসিদ্ধ । তবে পুষ্টিবিজ্ঞানে বড় ক্যালরিকে ই মূলত ' ক্যালরি' বলেই সম্বোধন করা হযে থাকে।
অপরিহার্য ক্যালোরি
ডাক্তারি ভাষায় ক্যালরি আমাদের শক্তি যোগানোর মূল উৎস। শারীরিক সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য ক্যালরি অপরিহার্য ।শর্করা, স্নেহ ও আমিষ জাতীয় খাদ্য হজম হওয়ার পর তা শরীরে তাপ উৎপাদন করে অথবা বলা যেতে পারে যে খাদ্যের মধ্যে অন্তর্নিহিত যেই পুষ্টিকর উপাদান গুলো থাকে সেগুলি যখন আমাদের দেহের অন্তর্বর্তী কোষের রক্তের সংস্রবে আসে, তখন একপ্রকার শক্তি উৎপন্ন করে।
এই খাদ্য থেকে উৎপাদিত হওয়া তাপশক্তি পরিমাপ করার পর খাদ্যের ক্যালরি মান নির্ণয় করা হয়ে থাকে। মানব শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তির চেয়ে যদি বেশি পরিমান শক্তি গ্রহণ করা হয় তাহলে ওজন বৃদ্ধি পায় আর যদি কম পরিমানে শক্তি গ্রহণ করে থাকে তাহলে ওজন হ্রাস পায় এবং সমসাময়িক ভাবে পেশী বা muscle এর শক্তি ও হ্রাস পেতে থাকে। তাই প্রত্যেক মানুষকে ই (লিঙ্গ, বয়স, আকার এবং তার কাজ-কর্মের ধরণ ভেদে) দৈনিক বিভিন্ন পরিমানে ক্যালরি খাদ্যের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হয় এবং সেই উদ্দেশ্যে প্রত্যেকেরই উচিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একটি সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যতালিকা মেনে চলা।
আরো পড়ুন: গরমে কাহিল হয়ে পড়ছে শিশু? বিশেষ কিছু বিষয়ে নজর দিলেই এই গরমেও সুস্থ্য থাকবে আপনার ছোট্ট সন্তান!
ক্যালোরির সঠিক মান নির্ণয় | দৈনিক কত ক্যালরি প্রয়োজন ?
মানব দেহের আকার-আকৃতি ও ওজন সঠিকভাবে বজায় রাখার জন্য আমাদের সবসময়ই ক্যালরি গ্রহণের মাত্রাকে স্বাস্থ্যকর রাখা উচিত। তবে খাদ্যের সাথে কতটা ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে তার পরিমাণ ও মাত্রা নির্ভর করে কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় কে ভিত্তি করে:
- ব্যক্তির সার্বিক স্বাস্থ্য
- ব্যক্তির দৈহিক কাজ-কর্মের পরিমান
- ব্যক্তিটি পুরুষ না মহিলা অর্থাৎ লিঙ্গ নির্ধারণ
- দৈহিক ওজন ও উচ্চতা
- দৈহিক আকৃতি; ইত্যাদি।
দৈনিক কত পরিমাণ ক্যালরিযুক্ত খাদ্য গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা আছে তা নিয়ে মানুষের কৌতূহলের অন্ত নেই। বিশেষজ্ঞ মহলের তথ্যের উপর ভিত্তি করে জানা যায় যে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে প্রত্যহ গড়ে ২৭০০ kcal ও একজন মহিলার ক্ষেত্রে প্রত্যহ গড়ে ২২০০ kcal দরকার পড়ে। তবে ব্যক্তিভেদে এর তারতম্য ও ঘটে থাকে। । যেমন কিছু মানুষ যাদের বিপাকীয় কার্যকলাপ বা metabolic activity অন্যদের তুলনায় বেশি, অথবা কেউ কেউ অন্যদের তুলনায় অধিক মাত্রায় কর্মমুখর, তাদের ক্ষেত্রে অন্যদের তুলনায় অধিক পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা বাঞ্ছনীয়।
নারীর ক্ষেত্রে
একজন ২৫ বা ৩০ বছর বয়সী আলসে রমণী দৈনিক ১৮০০ ক্যালরি গ্রহণ করতে পারে। অপরদিকে পঞ্চাশোর্ধ মহিলার দৈনিক ক্যালরির চাহিদা হবে প্রায় ১৬০০ ক্যালরি। তবে জীবনযাপন এবং কর্মক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে নারীদের ক্ষেত্রে ক্যালরি গ্রহণের মাত্রার ব্যাপকভাবে তারতম্য ঘটে থাকে। ২০ থেকে ৩০বছর বয়স্কা নারী দের ২৪০০ পর্যন্ত ক্যালরির প্রয়োজনীয়তা দেখা দিতে পারে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার চাহিদা হ্রাস পেতে থাকে।
পুরুষের ক্ষেত্রে
ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা পুরুষদের ক্ষেত্রে অনেকটাই আলাদা । শারীরিক গঠন ভিন্ন হওয়ার কারণেই নারীদের তুলনায় পুরুষদের ক্যালরির চাহিদার পরিমাণ অধিকতর হয়ে থাকে। ২৫ থেকে ৩০ বছরের পুরুষ যারা কিছুটা কর্মবিমুখ তাঁদের ক্ষেত্রে ক্যালরিরচাহিদা থাকে প্রায় ২৪০০। ৬০ বছর বয়সে তা এসে পৌঁছতে পারে ২০০০ ক্যালরিতে। তবে কুড়ি বছর বয়সী কর্মমুখর পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রত্যহ প্রায় তিন হাজার ক্যালরির প্রয়োজনীয়তা দেখা যায় আর বয়স যখন ৬০ এ পৌঁছে যায় তখন ক্যালরির চাহিদা নেমে ২৬০০তে চলে আসতে পারে।
আরো পড়ুন: বাংলা খবরের অ্যাপ
দৈহিক ক্যালোরি নিয়ন্ত্রক টেবিল | ওজন অনুযায়ী ক্যালরি চার্ট
পুষ্টি গ্রহণ সঠিক এবং পর্যাপ্ত কিনা তা বিচার করার জন্য একটি গাইড টেবিল প্রস্তুত করা হয়েছে যেখানে প্রতি বয়সে কত পরিমাণে ক্যালোরি প্রয়োজন তার সুপারিশ আছে:
১১ মাসের শিশুর দেহের ওজন 9 কেজি ও উচ্চতা 71 সেন্টিমিটার হলে প্রত্যহ 725 কিলোক্যালরি শক্তির প্রয়োজন। 60 কেজি ওজন এবং 168 সেমি দৈর্ঘ্যের পুরুষদের ক্ষেত্রে যাদের বয়স ঊনিশ থেকে ঊনত্রিশ প্রতিদিন 2725 কিলোক্যালরি শক্তি প্রয়োজন হয়ে থাকে।ঊনিশ থেকে ঊনত্রিশ বছরের মহিলাদের ক্ষেত্রে, শারীরিক ওজন 54 কেজি এবং উচ্চতা 159 সেন্টিমিটার হলে প্রত্যহ 2250 কিলোক্যালরি শক্তি প্রয়োজন। 80 বছরের ঊর্ধ্ব পুরুষদের 1525 কিলোক্যালরি এবং সমবয়সী মহিলাদের দৈনিক 1425 কিলোক্যালরি শক্তি প্রয়োজন। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার ত্রৈমাসিকের বয়সের উপর নির্ভর করে প্রত্যহ 180 থেকে 300 কিলোক্যালরি অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় । দুগ্ধবতী মায়েদের ক্ষেত্রে, প্রাথম ৬ মাসে বাড়তি 330 কিলোক্যালরি শক্তি এবং পরের 6 মাসে আরও 400 কিলোক্যালরি শক্তি বিশেষভাবে দরকারি।
আরো পড়ুন: news in bengali
ক্যালোরির চাহিদা গণনা দুটি উপায় | ক্যালোরি ক্যালকুলেটর
হ্যারিস-বেনেডিক্ট সূত্র : পুষ্টিবিজ্ঞানীদের বহুল ব্যবহৃত এই সূত্রটি মানুষের শারীরিক ক্রিয়াকলাপের সাথে সাথে তার বয়স, লিঙ্গ, ওজন, উচ্চতা বিবেচনা করে নির্ধারিত হয়েছে।
পুরুষ শক্তির চাহিদা গণনা করার সূত্রটি হল= 66.5 + 13.8 x (কিলোগুলিতে দেহের ভর) + 5 x (সেমিতে শরীরের দৈর্ঘ্য ) 6.8 x বয়স দিয়ে ভাগ করা । নারীদের ক্ষেত্রে = 655.1 + 9.6 এক্স (কিলোগ্রামে শরীরের ভর) + 1.9 x (সেমি দৈর্ঘ্য ) 4.7 x বয়স দিয়ে ভাগ করা। এই গণনা থেকে যে ফল প্রাপ্তি হয় সেটি সেই মানুষটির শারীরিক ক্রিয়াকলাপের গুণক দিয়ে গুণিত হযে থাকে। শারীরিক ক্রিয়াকলাপ কম হলে ১.২ দিয়ে গুণ করা হয়ে থাকে, সাধারণ শারীরিক ক্রিয়াকলাপের এ ক্ষেত্রে 1.3 দিয়ে গুণ করা হয় এবং কঠিন শারীরিক ক্রিয়াকলাপ সম্পাদনের ক্ষেত্রে 1.4 দিয়ে গুণ করা হয়ে থাকে।
WHO (ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন) সূত্র পূর্বোক্ত সূত্র থেকে সহজতর এবং এই সূত্রটি বয়স বিভাগ অনুসারে ভাগ করা হযে থাকে।
তবে উপরোক্ত এই দুই পদ্ধতির থেকে সহজতর উপায় হলো অনলাইন ক্যালকুলেটরের সাহায্যে ক্যালারি মাপা এবং প্রয়োজনে ক্যালরি বার্ন করে তাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা।
দৈনিক ক্যালরি গ্রহণ বিষয়ক তথ্য | ক্যালোরি যুক্ত খাবার কি কি
- একজন মানুষের ক্যালরির চাহিদা যেমন তার শারীরিক অবস্থা , বয়স,উচ্চতা, লিঙ্গ ও তার জীবন যাপনের উপর নির্ভর করে তেমনি পরিস্থিতি অনুযায়ী তার তারতম্য ও হতে পারে ।
- সকালের জলখাবারে ভারী খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরের ওজন ঠিক থাকে।
- খাদ্যতালিকায় সবজি আর ফলমূলের উপস্থিতি , একই পরিমাণ ক্যালরি যুক্ত স্ন্যাকস জাতীয় খাবারের তুলনায় অধিক পুষ্টিসম্পন্ন যা শরীরের খাবারের চাহিদা অনেকক্ষণ পর্যন্ত ধরে রাখতে সাহায্য করে।
- দিনে একসাথে অনেক পরিমাণ খাবার না গ্রহণ করে সারাদিনে বারে বারে স্বল্প পরিমাণে খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। দৈনিক এই নিয়ম মেনে চললে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রয়োজনীয় নিউট্রিশন যা ক্যালোরি নিয়ন্ত্রক | উচ্চ ক্যালোরি যুক্ত খাবারের তালিকা
ফল
মরসুমী ফলমূল খাবারের তালিকায় রাখা জরুরি কারণ ফলে প্রাকৃতিকভাবেই শর্করা উপস্থিত যা আমাদের শরীরের চিনির চাহিদা মেটাতে সক্ষম।
আরো পড়ুন: news in bengali
শাক-সবজি
শাকসবজিতে উপস্থিত থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন আর মিনারেলস যা শরীরকে পুষ্টি জোগায় ও অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করে । পালং শাক, ব্রকলি, বাধাকপি, ফুলকপির মত মরসুমী সবজি খাওয়া উচিত।
শস্য জাতীয় খাবার
এজাতীয় খাদ্য হল হোল-গ্রেন খাবার যেমন পাস্তা, ব্রাউন রাইস, ওটমিল, গমের আটা প্রভৃতি শস্যজাতীয় খাবার পুষ্টিগুণে ভরপুর।
প্রোটিনযুক্ত খাবার
মাংস, মাছ, বিনস ছাড়া ও বাদাম ,ওয়ালনাট, কাঠবাদাম, চিনাবাদাম প্রোটিনের এক উৎকৃষ্ট উৎস ।
আরো পড়ুন: তাপপ্রবাহে কীভাবে সুস্থ্য থাকবেন?
ডেইরি বা দুগ্ধ জাতীয় খাবার
ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম-এর চাহিদা মেটাতে দুগ্ধজাতীয় খাবার প্রয়োজনীয়।তবে এই জাতীয় খাদ্যে ফ্যাট থাকার কারণে পর্যাপ্ত পরিমাণে গ্রহণ করা উচিত। প্রয়োজনে ফ্যাট ফ্রী দুধ, দই খাওয়া ও যেতে পারে।
তেল
প্রতিদিন ব্যবহার করার জন্য ভোজ্য তেল হিসেবে রাইস ব্র্যান অয়েল, অলিভ অয়েল ব্যবহার বা যেকোনো লো ফ্যাট যুক্ত তেল ব্যবহার করলে উপকারী।
উপসংহার
পুষ্টিবিদদের মতে শুধুমাত্র ক্যালরি নিয়ন্ত্রণই শেষ কথা নয়; দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য সবথেকে প্রয়োজনীয় নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন ও সুষম খাদ্যাভ্যাস ।খাদ্য গ্রহণের সাথে সাথে প্রচুর পরিমাণে জল পান করা বা জলীয় খাবার গ্রহণ করার গুরুত্বও অপরিসীম । পরিশেষে বলা যেতে পারে যে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এবং সঠিক নিয়মানুসারে একজন মানুষ দৈনিক কত ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করবে সে বিষয়ে সচেতন থেকে যদি প্রতিদিন আহার করে তাহলে তার পক্ষে সুস্থ, সবল ও প্রাণোজ্জ্বল জীবন ধারণ করা ও দীর্ঘদিন সুস্থ থাকা সম্ভব।
প্রশ্নোত্তর - Frequently Asked Questions
ক্যালোরি কাকে বলে?
ক্যালরি হল শক্তি পরিমাপ করার একক।
খাদ্যের ক্যালরি আমরা কীভাবে প্রকাশ করি?
কিলোক্যালরির মাধ্যমে
শরীর চাহিদার বেশি ক্যালরি গ্রহণ করলে কী হতে পারে?
ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে।
ক্যালরি বার্ন করার একটি অন্যতম উপায় কি?
নিয়মিত শরীরচর্চা করা
একজন ব্যক্তি দৈনিক কতটা ক্যালরি গ্রহণ করবে তা কীসের ওপর নির্ভর করে?
মানুষটির শারীরিক অবস্থা, বয়স, উচ্চতা, লিঙ্গ ও তার জীবন যাপনের উপর নির্ভর করে।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- স্বাস্থ্য
- পেটপুজো