West Bengal Weather | কলকাতার তাপমাত্রা ছোঁবে ৪২ ডিগ্রি! দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলাতেই তাপপ্রবাহর লাল সতর্কতা! কেন কালবৈশাখীর দেখা নেই জানালেন আবহাওয়াবিদরা!

Friday, April 26 2024, 6:08 am
highlightKey Highlights

গোটা এপ্রিল মাসে দক্ষিণবঙ্গে মেলেনি কালবৈশাখীর দেখা। আবহবিদদের একাংশের কথায়, এর নেপথ্যে অন্যতম কারণ পশ্চিম দিক থেকে আসা গরম হাওয়া। এর সঙ্গে পশ্চিমী ঝঞ্ঝাও সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে।


৫০ বছরের রেকর্ড ফেল! একটানা তীব্র তাপদাহের জেরে নাজেহাল অবস্থা গোটা বঙ্গে। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানাচ্ছে আরও সাতদিন দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় চলবে তাপপ্রবাহ। পরিস্থিতিতে বাদ যাবে না উত্তরবঙ্গও। পার্বত্য দুই জেলা ছাড়া আর কোথাও বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। এমনটাই জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর ৷ এদিকে তাপপ্রবাহের মধ্যেই কলকাতার তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের পারদ ছুঁতে পারে বলে জানিয়েছে আলিপুর। এই অবস্থায় সকলেরই প্রশ্ন, কবে হবে বৃষ্টি? কবে কমবে তাপমাত্রা?

কলকাতার আবহাওয়া :

 ১৯৮০ সালের রেকর্ড তাপমাত্রার দুয়ারে কলকাতা। সেই বছর কলকাতায় এপ্রিল মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিকে পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া রিপোর্ট (West Bengal Weather Report) অনুযায়ী গতকাল, বৃহস্পতিবার কলকাতার তাপমাত্রা ওঠে ৪১.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আজ, অর্থাৎ শুক্রবার দিনভর রোদ ঝলমলে পরিষ্কার আকাশ। হাওয়া অফিস আবার তীব্র থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহর সতর্কতা (moderate heatwave warning) জারি করেছে। পাশাপাশি  তবে রবিবার সেই নজির ভেঙে দিতে পারে কলকাতা। রবিবার কলকাতার তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। এমনকি রবিবারের পরেও এই তাপমাত্রা কয়েক দিন বজায় থাকতে পারে। শুকনো গরম ও অস্বস্তি চরমে থাকবে বলে পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়ার খবর (West Bengal Weather News)। বাড়বে তাপমাত্রাও। বেলা বাড়লে গরম হাওয়ার দাপট অব্যাহত থাকবে।

কলকাতার তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছতে পারে
কলকাতার তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছতে পারে

দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া :

পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়া রিপোর্ট (West Bengal Weather Report) অনুযায়ী,সপ্তাহান্তে তীব্র তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস। দক্ষিণবঙ্গে দুই থেকে চার ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়বে তাপমাত্রার পারদ। কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলাতেই তীব্র থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহর সতর্কতা (moderate heatwave warning) জারি করা হয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম বর্ধমান এবং বাঁকুড়া এই পাঁচ জেলায় চরম তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা রয়েছে। একাধিক জেলায় কমলা সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। শুক্রবার এবং শনিবার দক্ষিণবঙ্গের পাঁচ জেলায় তাপপ্রবাহের কারণে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, পশ্চিম বর্ধমান, ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়া জেলায় জারি করা হয়েছে লাল সতর্কতা। দক্ষিণের অন্যান্য জেলায় মঙ্গলবার পর্যন্ত তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গ আবহাওয়ার খবর (West Bengal Weather News)। সেই কারণে জেলাগুলিতে জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতাও। তাপপ্রবাহের পাশাপাশি দক্ষিণের সমস্ত জেলায় বজায় থাকবে গরম এবং অস্বস্তিকর আবহাওয়াও।

দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলাতেই তীব্র থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহর সতর্কতা জারি করা হয়েছে
দক্ষিণবঙ্গের সমস্ত জেলাতেই তীব্র থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহর সতর্কতা জারি করা হয়েছে

উত্তরবঙ্গের আবহাওয়া :

এপ্রিলের বীভৎস পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া (West Bengal Weather)। দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গেরও একই অবস্থা। উত্তরবঙ্গের নীচের দিকের জেলাগুলিতে রয়েছে তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা। গরম ও অস্বস্তিকর আবহাওয়া থাকবে আরও তিন জেলায়। এক থেকে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়বে বলে পশ্চিমবঙ্গের আবহাওয়া (West Bengal Weather) এর আপডেট। নীচের দিকের তিন জেলাতে গরম ও অস্বস্তি বাড়বে। মালদা, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাতে রয়েছে তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা।

  প্রসঙ্গত, গোটা এপ্রিল মাসে দক্ষিণবঙ্গে মেলেনি কালবৈশাখীর দেখা। আবহবিদদের একাংশের কথায়, এর নেপথ্যে অন্যতম কারণ পশ্চিম দিক থেকে আসা গরম হাওয়া। এর সঙ্গে পশ্চিমী ঝঞ্ঝাও সম্পর্কযুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। গরমে তাপের সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতার বাড়াবাড়ি দক্ষিণবঙ্গবাসীর চেনা। সেই আর্দ্রতার ফলেই বিকেলের দিকে কালো মেঘ তৈরি হয়ে ঝড়বৃষ্টি হত। আবহবিজ্ঞানের ভাষায়, কালবৈশাখীর কিছু নির্দিষ্ট চরিত্র থাকলেও আমজনতা গরমের ঝড়বৃষ্টিকে ‘কালবৈশাখী’ বলেই চেনে। কিন্তু এ বার সেই চেনা ছবিটাই বদলে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল বলছেন, গরমকালে দক্ষিণবঙ্গে জলীয় বাষ্পের জোগান দেয় বঙ্গোপসাগরের বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত বা উচ্চচাপ বলয়। এ বার সেই উচ্চচাপ বলয় জমাট বাঁধতে পারছে না। তার ফলেই বায়ুমণ্ডলের নীচের স্তরে আর্দ্রতা অনেক কম, ঝড়বৃষ্টির মেঘ তৈরি হতে পারছে না। উল্টে শুকনো, গরম বাতাস ঢুকছে।

পশ্চিম দিক থেকে আসা গরম হাওয়ার কারণে দেখা মিলছে না কালবৈশাখীর 
পশ্চিম দিক থেকে আসা গরম হাওয়ার কারণে দেখা মিলছে না কালবৈশাখীর 

 এদিকে কেন বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয় জমাট বাঁধতে পারছে না, সে ব্যাপারে চটজলদি কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছনো সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের শীর্ষ কর্তা। তবে, ক্রান্তীয় অঞ্চলের বায়ুর যে ঘূর্ণন, তার প্রভাবের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম থেকে বয়ে আসা গরম বাতাসের সম্পর্ক আছে। আবহবিদের কথায়, উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে শীতকালে দক্ষিণবঙ্গে বাতাস ঢোকে। কিন্তু এ বার গ্রীষ্মেও তা ঢুকছে। এ বার একের পর এক শক্তিশালী ঝঞ্ঝা ঢুকছে। তার প্রভাবেই উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বয়ে আসা বায়ু শক্তিশালী হয়েছে। তার ধাক্কায় বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয় উপকূলের ধারেকাছেও আসতে পারছে না। উপকূলের কাছে উচ্চচাপ বলয় না এলে জলীয় বাষ্প ঢুকবে না, কালবৈশাখীও মিলবে না। সার্বিক ভাবে যে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু বদলের কথা বলা হচ্ছে তার সঙ্গে ঝঞ্ঝার চরিত্র বদলের সম্পর্ক থাকতে পারে। এখানেই শেষ নয়, আবহবিদদের একাংশের কথায়, মে মাসেও ঠিক কবে ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে তা এখন থেকে বলা সম্ভব নয়। এই অবস্থায় আবহাওয়া দফতরের সতর্কবার্তা, প্রয়োজন ছাড়া সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত রোদে যাতে না যায় সাধারণ মানুষ।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File