শবাসন কি? শবাসন করার নিয়ম, পদ্ধতি ও উপকারিতা, A detailed explanation of Shavasana in Bengali
আমরা সকলেই জানি যে শরীর, মন সুস্থ ও সবল রাখতে তথা রোগ নিরাময়ের সহায়ক রূপে যোগাসনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। যোগশাস্ত্রে বর্ণিত একটি বিশেষ আসন হল শবাসন। শবের বা মৃতদেহের ভঙ্গিমায় এই আসনটি করা হয় বলে এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।
শবাসন কি? Definition of Shavasan
শবাসন হল অত্যন্ত উপকারী একটি আসন। সংস্কৃত ভাষায় শব কথার অর্থ মৃতদেহ, এই আসনটি করার সময় মৃতের মতো স্থির ভাবে শুয়ে থাকতে হয়। শরীরকে সম্পূর্ণভাবে শিথিল করে এবং নিরুদ্বেগ মন নিয়ে চুপচাপ শুয়ে থাকার ভঙ্গিমার নামই হল "শবাসন"। এই আসন সমস্ত চিন্তা-ভাবনা থেকে মনকে কিছুক্ষণের জন্য দূরে রেখে করতে হয়।
শবাসনের উপকারিতা ও কার্যকারিতা, Benefits of Shavasan
দেহে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল~
দেহে রক্ত চলাচলের উপর এই আসনের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে। শবাসন রক্ত চলাচলের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে কার্যকরী। কোনো আসন করার সময় আমাদের শরীরের বিশেষ কতগুলি অংশে রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়; অথচ শবাসনের মাধ্যমে বিশ্রাম নেবার সময় শরীরের সেই সমস্ত অংশে রক্ত চলাচল সমান ভাবে হয়ে থাকে। তাই বলা যায় যে এই আসন আমাদের শরীরকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন:
মানব শরীরের রক্তকণিকাগুলো ধমনী ও শিরা -উপশিরার মধ্যে দিয়ে যাতায়াতের মাধ্যমে সমস্ত শরীরে বয়ে চলছে; কখনও দূষিত রক্তকে শুদ্ধ করছে আবার কখনও বিশুদ্ধ রক্তকণিকা সারা শরীরে সঞ্চালন করছে। কোনো আসন করার শেষে আপনি যখন শবাসন করেন তখন রক্তস্রোত স্বাভাবিক থেকে কিছুটা জোরে প্রবাহিত হতে শুরু করে, ফলে আংশিক ভাবে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে থাকা স্থানগুলিকে পরিস্কার করে পুনরায় সুস্থ ও স্বাভাবিক করে তোলে।
উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য উপকারী~
যখন আমরা কোথাও দাঁড়িয়ে থাকি বা বসে থাকি, তখন আমাদের পা থেকে মাথার দিকে রক্তস্রোত প্রসারিত করার জন্য হৃৎপিণ্ডকে মধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করতে হয়। শবাসন করতে সময় মধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব আমাদের শরীরের সমস্ত অংশের উপর সমান ভাবে বর্তমান থাকে বলে রক্ত চলাচল সঠিকভাবে হয়; ফলে হৃৎপিণ্ডকে অধিক পরিশ্রম না করিয়েও শরীরের সমস্ত অংশে পর্যাপ্ত পরিমানে রক্তস্রোত প্রসারিত হয়। সুতরাং যারা উচ্চ রক্তচাপের ভুগছেন, তাঁরা নিয়ম করে ২০ থেকে ৩০ মিনিট শবাসন করলে অনেক উপকার পাবেন।
দেহের নার্ভগুলো ভালো ভাবে কাজ করে~
শবাসন করার ফলস্বরূপ আমাদের শরীরের সকল নার্ভ ভালো ভাবে কাজ করে, এর ফলে ভবিষ্যতে আমাদের নার্ভ সংক্রান্ত সমস্যা হবার সম্ভাবনা কম হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
ত্বক ও চুল ভালো থাকে~
শবাসনে দেহে সঠিক ভাবে রক্ত চলাচল হয় বলে আমাদের ত্বকও ভালো থাকে এবং চামড়া সুন্দর তথা উজ্জ্বল দেখায়। তাছাড়া শবাসন করলে আমাদের মাথায় ভালো ভাবে রক্ত চলাচল হওয়ায় আমাদের মাথার বিভিন্ন রোগ যেমন- মাথা ব্যাথা, চুল পড়া ইত্যাদি কম হয় এবং মাথার চুল ঘন ,কালো ও সুন্দর থাকে।
শবাসনের নিয়ম, Process :-
শবাসন দুটি পদ্ধতিতে করা যায়। তবে দুটো পদ্ধতিই সঠিক ভাবে করা জরুরি।
প্রথম ক্ষেত্রে~
প্রথমে আপনি চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন আর পা দুটিকে লম্বা করে ছড়িয়ে দিন এবং আপনার হাত দুটি শরীরের দুপাশে মাটিতে রাখুন, এবার চোখ দুটো বন্ধ করে নিয়ে মৃতের ন্যায় শুয়ে থাকুন; এই সময় হাত-পা ও আপনার শরীরের সমস্ত অঙ্গপ্রতঙ্গ অনড় থাকবে।
দ্বিতীয় ক্ষেত্রে~
এই প্রকার শবাসনের ক্ষেত্রে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়তে হয় এবং হাত দুটিকে শরীরের দুপাশে রেখে দিয়ে মাটিতে বাম অথবা ডান দিকের গাল ও কান পেতে দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকতে হয়।
যে সব আসন করার জন্য চিৎ হয়ে শুয়ে আসনের ভঙ্গি শুরু করতে হয় সেই আসন করার পর চিৎ হয়ে শুয়ে শবাসন করতে হবে। আবার যে সব আসন করার সময় উপুড় হয়ে আসনের ভঙ্গি শুরু করতে হয় সেগুলি করার পর উপুড় হয়ে শুয়ে শবাসন করতে হবে।
আরও পড়ুন :
দৈনন্দিন ব্যায়াম শুরুর আগে এবং শেষে কয়েক মিনিট শবাসন করে বিশ্রাম নিতে হয়, তা না হলে কোনো আসনেরই উপকারিতা পাওয়া যায় না। অন্য যেকোনো আসন যতক্ষণ সময় নিয়ে করবেন, শবাসনের মাধ্যমে ততটা সময় বিশ্রাম নিতে হবে। শবাসন করার পর অন্য কোনো আসন করা উচিত নয়। এই আসন আপনার প্রতিটি যোগ অনুশীলনের শেষে করা উচিত।
শবাসন যোগের জন্য কিছু সতর্কতা, Be cautious
শবাসন যোগ করার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ –
● পিঠের ব্যথায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিয়ে এরপর এই আসনটি করা উচিত।
● গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন এরূপ যোগব্যায়াম করার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে একবার পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
● শবাসন করার সময়ে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দেওয়ার পাশাপাশি ঘুম যাতে না এসে যায় সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
● শবাসন যোগটি সর্বদা কোনো শান্ত জায়গায় করতে হবে।
উপংহার , Conclusion
শবাসন করার সময় শরীর ও মন মুক্ত রাখতে হবে এবং সমস্ত রকম চিন্তা থেকে দূরে থাকতে হবে। কারণ এই আসনে আপনার সারাদিনের চিন্তাচ্ছন্ন স্নায়ুগুলি তখন পরিপূর্ণ বিশ্রাম পাবে , উত্তেজনা প্রশমিত হবে , শৈথিল্যের পরিবর্তে বিশ্রাম পাবে মাংস পেশিগুলো। আপনার সারাদিনের কাজকর্মের ক্লান্তি ও অবসন্নতার বদলে এক অসীম আনন্দ পাবেন ।
- Related topics -
- স্বাস্থ্য
- শবাসন
- শারীরিক সমস্যার প্রতিরোধ