Coronal Hole | সূর্যের গায়ে দৈত্যাকার গর্ত! এই 'করোনাল হোলে'ই ঢুকে যাবে ৬০টি পৃথিবী! সূর্যের গর্ত নিয়ে দুশ্চিন্তায় মহাকাশ বিজ্ঞানীরা!

সূর্যের গায়ে তৈরী হয়েছে বিশালাকার এক গর্ত। করোনাল হোল নাম পরিচিত এই গর্ত এতটাই বড়, যে এর মধ্যে ঢুকে যাবে ৬০টি পৃথিবী। কীভাবে এই গর্ত ক্ষতি করতে পারে আমাদের?
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রসারিত হচ্ছে মানুষের জানার সীমা। ২০২৩ সালেই মহাকাশ বিজ্ঞান সম্পর্কে একাধিক নতুন আবিষ্কার করেছে মানব বিজ্ঞান। বছরের শেষেও মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে নয়া-আশ্চর্যজনক তথ্য আবিষ্কার করলেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। সম্প্রতি সূর্যের মধ্যে এক গর্ত খেয়াল করেছেন বিজ্ঞানীরা। সূর্যের ভেতর তৈরী হওয়া এই অতিকায় গর্ত ছবিতে ক্ষুদ্র লাগলেও আসলে এই সূর্যের গর্ত (Hole in the Sun) এতটাই বড় যে এর মধ্যে ধরে যাবে ৬০টা পৃথিবী! আশ্চর্যের সঙ্গে এই তথ্য নিয়ে তৈরী হয়েছে দুশ্চিন্তাও। কারণ এই গর্তের মুখগুলো পৃথিবীর দিকেই!

জানা গিয়েছে, এই সূর্যের গর্ত (Hole in the Sun) এর পোশাকি নাম 'করোনাল হোল (Coronal Hole)। বিজ্ঞানীরা যতটুকু পরীক্ষা করতে পেরেছেন, তার ভিত্তিতে তাঁরা বলেছেন, সূর্যের গায়ের এই গর্তের মুখ পৃথিবীর দিকেই ফেরানো। গর্তের আকার এতটাই বড় যে অনায়াসে ৬০টি পৃথিবী ঢুকে যেতে পারবে। যদিও এর তল কতটা গভীর তা অনুমান করা কঠিন। এমন নয় যে, এই ধরনের গর্ত সূর্যের গায়ে হয় না। তবে এবার যে পরিমাপের গর্ত তৈরী হয়েছে, সেটাই সকলকে বিস্মিত করছে। তবে করোনাল হোল (Coronal Hole) কী ?
এই হোল বা গর্তটি স্থির নয়, চলমান। এই ধরনের গর্ত তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ হল 'সোলার উইন্ড' (solar wind)। এই সোলার উইন্ডের গতি ৫০০-৮০০ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড। এই গর্ত তৈরির কারণ হিসাবে বিজ্ঞানীরা ১১ বছরের এক ব্রিটিশ সাইকেলকে ধরেন। অর্থাৎ এই এগারো বছরে সূর্যের একটি পরিবর্তন হয়। বদলে যায় সূর্যের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র। সূর্যের এই চৌম্বকীয় ক্ষেত্র পরিবর্তনের প্রধান কারণ হিসাবে সৌর ঝড়কে বর্ণনা করা হয়। এর গতিও মাথা ঘুরিয়ে দিতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে বিজ্ঞানীরা বেশ কিছু মাঝারি থেকে শক্তিশালী সৌরশিখা সনাক্ত করেছে। পাশাপাশি পৃথিবীতে এই সৌরশিখার প্রভাবের বিষয়ে সতর্ক করেছে। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, এই ধরনের শিখার মাধ্যমে চরম অতিবেগুনি রশ্মি বিকিরিত হয় এবং এতে এক্সরে রশ্মি থাকে যা পৃথিবীর অয়ন মন্ডলের সংস্পর্শে এসে রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলতে পারে। মূলত সৌরশিখা হল সূর্যের বায়ুমন্ডলের ইলেকট্রোম্যাগনেটি বিকিরনের একটি তীব্র বিস্ফোরণ। সূর্যের সক্রিয় অঞ্চলে এই বিস্ফোরণ প্রায় সময়ই হয়। যা আলোর গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এগুলো অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়, তাই খালি চোখে সহজে দেখা যায়। সৌরশিখা উৎপন্ন হওয়ার পেছনে রয়েছে সেখানকার চৌম্বকীয় ক্ষেত্র।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এমন গর্ত নিতান্তই সাময়িক। খুব বিরল কিছুই নয়। সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্র আচমকাই চারপাশের প্লাজমার তুলনায় অনেক শীতল ও অনেক কম ঘন গর্ত সৃষ্টি করে। আর সেই গর্তের মাধ্যমে সৌরপৃষ্ঠের তেজস্ক্রিয় সৌর ঝড় মহাশূন্যে ছড়িয়ে যায়। চৌম্বক ক্ষেত্রের রেখাগুলি এত শক্তিশালী যে তা মহাকাশে যেতে পারেনা। ফলে সেখানে শীতল ও অন্ধকার অঞ্চল সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের লাইনগুলি হঠাৎ করে পরিবর্তন হয়ে যায়। তখন সৌরশিখা এবং অন্যান্য পদার্থের বিস্ফোরণ সৃষ্টি হয়। তখন সেই স্পট গুলিকে সক্রিয় সৌরঅঞ্চল হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

সৌরশিখাকে শক্তি অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভাগ করা হয়। সবচেয়ে দুর্বল সোলার ফ্লেয়ারকে বলা হয় এ ক্লাস ফ্লেয়ার (A class flares)। সবথেকে শক্তিশালীকে বলা হয় এক্স প্লাস ফ্লেয়ার (X Plus Flare)। এগুলি পৃথিবীর অনেক ক্ষতি করতে পারে। সৌরশিখা সরাসরি মানুষের ওপর ইতিবাচক প্রভাব না ফেললেও চৌম্বকীয় শক্তির কারণে দৈনন্দিন দিনে ব্যবহৃত প্রযুক্তির ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। তবে জানা যায় সৌর অগ্নিশিখা কখনো যদি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে তবে তা পাওয়ার গ্রিড সহ রেডিও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এছাড়া সৌর ঝড় জিপিএস নেভিগেশন, মোবাইল সিগন্যালিং এবং স্যাটেলাইট টিভিতে প্রভাব ফেলতে পারে।
সম্প্রতি সূর্যের ওই গর্তের ছবি প্রকাশ করেছে নাসা (NASA)। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সূর্যের উজ্জ্বল আগুনে চেহারার মাঝেই কালো রঙের গর্তটিকে। জানা গিয়েছে, ওই ‘করোনাল হোল’গুলি সূর্যের বাকি অংশের তুলনায় অনেক ঠান্ডা ও কম ঘন। এই গর্ত গত ২রা ডিসেম্বর এটি সৃষ্টি হওয়ার পর দ্রুত তা বড় হতে থাকে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ লক্ষ কিমি চওড়া হয়ে ওঠে গর্তটি। ৬০টি পৃথিবীর সমান অন্ধকার সেই গর্তের ম্যাপ ৪, ৯৭, ০০০ মাইল! সূর্যের গায়ের এই গর্তর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা ধরেন '১১ ইয়ার অ্যাকটিভিটি সাইকেল'কে (11 year activity cycle)। এর অর্থ এগারো বছর অন্তর সূর্যের গায়ে এই গর্ত দেখা যায়। সেই হিসেবে এই হোল বা গর্ত তার ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছবে ২০২৪ সালে।

প্রসঙ্গত, সারা পৃথিবীর বিজ্ঞানীরা সূর্য নিয়ে নানামুখী গবেষণায় মেতেছেন। ভারতও রয়েছে এই দলে। সফলভাবে পরিকল্পনা মাফিক চলছে আদিত্য এল১ মিশন (Aditya L1 Mission)। কিছুদিন আগেই সূর্যের প্রথম ছবি পাঠায় ইসরোর (ISRO) প্রথম সূর্যযান আদিত্য এল ১। এখনও গন্তব্যে না পৌঁছালেও সূর্য এবং মহাকাশ সম্পর্কে নানান তথ্য জানা যাচ্ছে আদিত্য এল১ মিশন (Aditya L1 Mission) দ্বারা।
- Related topics -
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
- বিজ্ঞান
- বিজ্ঞানী
- মহাকাশচারী
- মহাকাশ
- মহাকাশযান
- আদিত্য এল ১
- সূর্য
- ইসরো
- নাসা