অন্যান্য

World Water Day | 'ভবিষ্যতে বিশ্বযুদ্ধ হবে জল নিয়ে'! বিশ্ব জল দিবসের দিন জানুন দৈনন্দিন জীবনে সামান্য পরিবর্তন করে কীভাবে বাঁচাবেন জল!

World Water Day | 'ভবিষ্যতে বিশ্বযুদ্ধ হবে জল নিয়ে'! বিশ্ব জল দিবসের দিন জানুন দৈনন্দিন জীবনে সামান্য পরিবর্তন করে কীভাবে বাঁচাবেন জল!
Key Highlights

ভারতে জল সংরক্ষণের জন্য কড়া পদ্দক্ষেপ না নিলে বেঙ্গালুরুর মতো দিল্লি-হায়দরাবাদ-সহ আরও ২০টি শহরের মাটির নীচের জল নিঃশেষ হয়ে যাবে। ফলে আজ থেকেই জল সংরক্ষণে বদ্ধ প্রতিশ্রুতি নিতে হবে সকলকে।

'জলের আরেক নাম জীবন'- এই উক্তিটি ছোট থেকে আমরা সকলেই শুনে, পড়ে আসছি। শরীরের জন্য হোক কিংবা রান্না-স্নান সব কিছুতেই অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো জল। তবে এই 'জীবন' রুপী জল নিয়ে তীব্র সংকটে ভারত। ইতিমধ্যেই জল সংকটের ভয়াবহ দৃশ্য দেখা গেছে বেঙ্গালুরুতে। তবে কেবল 'সিলিকন ভ্যালি'ই নয়, গোটা ভারতে জল সংকট (water crisis in india) পরিস্থিতি তৈরী হতে পারে শীঘ্রই। এমনকি আগামী বিশ্বযুদ্ধ জল নিয়ে হবে তও বলে গিয়েছেন বিজ্ঞানী এ পি জে আব্দুল কালামের (APJ Abdul Kalam) মতো বিজ্ঞানীও। বারবার জল বাঁচানো নিয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন নানান পরিবেশবিদরা। কিন্তু তা সত্ত্বেও তা অগ্রাহ্য করে চলেন প্রায় অধিকাংশ মানুষ। বিশ্ব জল দিবস (Water Day) এর দিন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে দৈনন্দিন জীবনে জল সংরক্ষণ করা যায় (How to Save Water in Daily Life)

বিশ্ব জল দিবস । World Water Day :

১৯৯৩ সালে, রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে বছরের একটি মাত্র দিন আমাদের জীবনে তাজা জলের সংরক্ষণ এবং তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করার জন্য নিয়োজিত করা প্রয়োজন। তাই সেই ১৯৯৩ সাল থেকে, ২২ সে মার্চ বিশ্ব জল দিবস পালিত হয় (world water day is celebrated on)। জল সভ্যতার বিকাশ, গাছপালা পরিচালনা এবং গাছপালা বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। সঠিক ভাবে জল ব্যবহারযোগ্য করে তোলার জন্য দূষণ পরীক্ষা করাও প্রয়োজন। তবে এই জল সংরক্ষণ করার দায়িত্বও আমাদের। তাই বছরের একদিন সমাজে জল সংরক্ষণ সম্পর্কে রচর করতে এবং সেই মতো পদক্ষেপ নিতে ২২সে মার্চ বিশ্ব জল দিবস পালিত হয় (world water day is celebrated on)। বিশ্ব জল দিবসের একটি মূল ফোকাস হল উন্নয়নকে আরও দৃঢ় করা। ২০৩০ সালের মধ্যে সকলের জন্য জল এবং স্যানিটেশন অর্জনকে সমর্থন করা। বিশ্ব জল দিবস একটি বার্ষিক বিশেষ দিন, যা ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। মিঠে জলের গুরুত্বের উপর নজর দিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জ এই দিনটি পালন করে। এই আন্তর্জাতিক দিবসটির লক্ষ্য জল সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে মানব জীবনে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

ভারতে জল সংকট । Water Crisis in India :

 জল ছাড়া একদিনও ভাবা যেন কল্পনাতীত। তবে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই জল সংকটের আভাস দেখা দিচ্ছে দেশে। সম্প্রতি জল সংকটে ভুগছে বেঙ্গালুরু।  সেখানে অবস্থা এমনই যে, কেউ কেউ বলছেন, এক মাসে মোটে বার পাঁচেক স্নান করতে পেরেছেন তাঁরা। পানীয় জল তো বটেই, দৈনন্দিন কাজে ব্যবহারযোগ্য জলের সংকটে ভুগছে বেঙ্গালুরু। 'সিলিকন ভ্যালি'র জনসংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ। সেখানে দৈনিক জলের চাহিদা ২৬০ কোটি থেকে ২৮০ কোটি লিটার। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রতি দিন বেঙ্গালুরুতে অন্তত ১৫০ কোটি লিটার জলের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সেই চাহিদা মেটাতে বাইরে থেকে জল কিনতে গিয়েও দামের কারণে নাভিশ্বাস উঠছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এক বালতি জল কিনতে ১০০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জল অপচয় না করার বার্তা দিয়েছে প্রশাসন। জলের জোগান দেওয়ার জন্য প্রশাসনের তরফে দু-একটি ট্যাঙ্কার আসছে শহরে, সেখান থেকেও বরাদ্দ এক পাত্র জল। বেঙ্গালুরুর মতো জল সংকট এর আগে দেখা গিয়েছিলো চেন্নাইতে। ২০১৯ সালে, চেন্নাই শহর সারা বিশ্বের সংবাদের শিরোনামে উঠে এসেছিল যখন পৌর কর্তৃপক্ষ ‘‌শূন্য দিবস’ (Day Zero) ঘোষণা করেছিল, কারণ শহরের জলের সংস্থান শূন্য হয়ে গিয়েছিলে এবং সব জলাধার শুকিয়ে গিয়েছিল।

ভারত সরকারের পরামর্শদাতা সংস্থা, নিতি (NITI) আয়োগ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছিল, যদি ভারতে জল সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি গ্রহণ না করা হলে বেঙ্গালুরু, দিল্লি এবং হায়দরাবাদ-সহ আরও ২০টি শহরের মাটির নীচের জল আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই নিঃশেষ হয়ে যাবে। এদিকে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে ২০৩০ সালের মধ্যে অনেক শহর জলহীন হয়ে পড়বে।

কীভাবে দৈনন্দিন জীবনে জল সংরক্ষণ করা যায় । How to Save Water in Daily Life :

একদিকে যেমন দেশে জল সংকটের সম্ভাবনা বেড়েই চলেছে, তেমনই বেড়ে চলেছে জলের অপচয়। পৃথিবী থেকে দ্রুত নিঃশেষিত হচ্ছে জল। এই জল বাঁচানোর জন্য কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার আমাদের সকলেই। কারণ কোনও না কোনোভাবে আমরা দৈনন্দিন জীবনে জল অপচয় করে থাকি। তবে দৈনন্দিন জীবনে কিছু ছোটখাটো পরিবর্তন করে বেশ খানিকটা জল সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

দাঁত মাজার সময় খেয়াল রাখুন :

 জল সংরক্ষণের সহজ উপায় হল দাঁত ব্রাশ করার সময় কলটি বন্ধ করা। ব্রাশ করার সময় কলটি খোলা রাখলে প্রতিদিন প্রায় ৫ গ্যালন পর্যন্ত জল অপচয় হতে পারে। আর ব্রাশ করার সময় বিনাকারণেই জলের কল খুলে রাখার অভ্যাস রয়েছে অনেকের। এই অভ্যাস পরিবর্তন করে জল বাঁচাতে পারেন আপনি।

 পুনঃব্যবহার:

বাড়িতে জল সংরক্ষণের জন্য জল পুনরায় ব্যবহার করা একটি দুর্দান্ত উপায়। উদাহরণস্বরূপ, আপনি ফল এবং সবজি ধোয়ার জন্য যে জল ব্যবহার করেন তা সংগ্রহ করতে পারেন এবং পরে তা আপনার বাগানের বা বাড়ির গাছগুলিতে জল দেওয়ার জন্য ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আপনি আপনার বাগান বা যে কোন ইনডোর গাছে জল দেওয়ার জন্য বৃষ্টির জল সংগ্রহ করতে পারেন।

থালাবাসন ধোয়ার সময় জলের ব্যবহার কম করুন:

থালা-বাসন ধোয়ার সময়, আপনি কতটা জল ব্যবহার করছেন সেদিকে খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ। হাত দিয়ে থালা-বাসন ধোয়ার সময় কল চলমান রেখে দেবেন না। পরিবর্তে, জল দিয়ে একটি বেসিন পূরণ করুন এবং থালা বাসন ধোয়ার জন্য এটি ব্যবহার করুন। আপনার যদি একটি ডিশওয়াশার থাকে তবে এটি চালানোর আগে নিশ্চিত হয়ে নিন যে এটি পূর্ণ হয়েছে কি না। একটি সম্পূর্ণ ডিশওয়াশার চালানোর জন্য একই পরিমাণ থালা-বাসন হাতে ধোয়ার চেয়ে কম জল ব্যবহার করা হয়।

স্নানের সময় জল অপচয় বন্ধ করুন :

অনেকেই স্নান করার সময় প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জল অপচয় করে থাকেন। বিনাকারণে স্নানের সময় অন্তত ৫  গ্যালন জল অপচয় হয়ে থাকে প্রতিদিন। ফলে স্নান করার ক্ষেত্রেও জলের ব্যবহার ও অপচয় সম্পর্কে খেয়াল রাখতে হবে।

 জল-নির্ভর যন্ত্রের ব্যবহার সীমিত করুন:

ওয়াশিং মেশিন, টয়লেটের মতো জল-নির্ভর যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকতে হবে। এই যন্ত্রপাতিগুলি পূর্ণ হলেই চালান এবং সম্ভব হলে আরও জল-দক্ষ মডেলে আপগ্রেড করার কথা বিবেচনা করুন।

জলের লাইনে লিক থাকলে তা ঠিক করুন :

জল সংরক্ষণের সবচেয়ে সহজ উপায়গুলির মধ্যে একটি হল জলের লাইনে লিক বা ফুটো থাকলে তা ঠিক করা। পাইপ এবং কল নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেগুলি ঠিক করা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে জল সংরক্ষণ করতে পারে।

রাষ্ট্রসংঘের তরফ থেকে নিরাপদ পৃথিবী তৈরির জন্য কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল। তবে এখনও গোটা পৃথিবীতে ২০০ কোটি মানুষ বিশুদ্ধ জল থেকে বঞ্চিত। ফলে বিশ্ব জল দিবসে এটাই লক্ষ্য থাক, বিশ্বের জলসংকটকে অতিক্রম করা। দেশ হোক কিংবা বিদেশ, কাউকেই যাতে জল সংকটের মোকাবিলা না করতে হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার দায়িত্ব হিসেবে আমার-আপনারও। তাই চলুন আজ থেকেই জল অপচয় বন্ধ করার বদ্ধ প্রতিশ্রুতি নি।