World Population Day | জনসংখ্যার নিরিখে বিশ্বে শীর্ষে ভারত! অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে বাড়ছে স্বাস্থ্য সমস্যা!
আজ 'বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস'। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, ২০৫০ সালে প্রায় ৯.৭ বিলিয়নে পৌঁছবে বিশ্বের জনসংখ্যা। ভারতে ক্রমাগত বাড়তে থাকা জনসংখ্যায় মাথাচাড়া দিচ্ছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাও।
গোটা দেশ তথা বিশ্বে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও জনসংখ্যা সংক্রান্ত সমস্যা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতি বছর আজকের তারিখে অর্থাৎ ১১ই জুলাই বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় 'বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস' (World Population Day)। আমরা প্রায় সকলেই জানি, অতিরিক্ত জনসংখ্যা গোটা দেশে এমনকি বিশ্বে প্রভাব ফেলে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা থেকে শুরু করে, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, পরিবেশ, খাদ্য, শিক্ষা ব্যবস্থা এমন প্রত্যেক ছোট থেকে বড় বিষয়েই প্রভাব ফেলে জনসংখ্যা। যার ফলে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের ইতিহাস । History of World Population Day :
১৯৮৭ সালে বিশ্ব জনসংখ্যা ৫ বিলিয়নে পৌঁছানোয় ১১ই জুলাই জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচীর পরিচালনা পরিষদ (United Nations Development Program) বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস প্রতিষ্ঠা করে। এরপর ১৯৯০ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ, রেজোলিউশন ৪৫/২১৬ (Resolution 45/216) দ্বারা জনসংখ্যা সম্পর্কিত সমস্যা ও গুরুত্ব নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে প্রতি বছর বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯০ সালে ১১ই জুলাই গোটা বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশে এই দিবস পালন করা হয়। সেই থেকেই, বহু সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA), দেশের কার্যালয়গুলি, সরকার এবং সুশীল সমাজের সঙ্গে অংশীদারিত্বে, জনসংখ্যা-সম্পর্কিত উদ্বেগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করে আসছে।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের তাৎপর্য । Significance of World Population Day :
বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ক্রমাগত বেড়েই চলেছে বিশ্বের জনসংখ্যা। যা আপাতভাবে সমস্যা না মনে হলেও এই বিষয় দেশ তথা বিশ্বের প্রত্যেকটা জিনিসের ওপরেই প্রভাব ফেলে। বিশ্ব জনসখ্যা দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘ একটি বিবৃতি মারফত জানিয়েছে, বিশ্বের জনসংখ্যা ১ বিলিয়নে বৃদ্ধি পেতে কয়েক হাজার বছর লেগেছে। তারপরে আরও ২০০ বছর বা তারও বেশি সময়ে তা সাতগুণ বেড়েছে। ২০১১ সালে, বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা ৭ বিলিয়নে পৌঁছেছে। যা ২০২১ সালে প্রায় ৭.৯ বিলিয়ন হয়েছে। এই পরিসংখানের নিরিখে ক্রমাগত বাড়তে থাকা জনসংখ্যার ওপর ভিত্তি করে অনুমান করা হচ্ছে যে, ২০২৩ সালে বিশ্ব জনসংখ্যা প্রায় ৮.৫ বিলিয়ন, ২০৫০ সালে ৯.৭ এবং ২১০০ সালে ১০.৯ বিলিয়ন। এতো পরিমাণ বিশ্বের জনসংখ্যা গোটা বিশ্বে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। যার ফলে এখন থেকেই বেশ চিন্তিত গোটা বিশ্ব। যার ফলে বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস পালন করে সাধারণ মানুষের মধ্যে জনসংখ্যা নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়।
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২৩ এর থিম । Theme of World Population Day 2023 :
বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২৩ এর প্রতিপাদ্য বা থিম হলো - লিঙ্গ সমতার শক্তি উন্মোচন: বিশ্বের অসীম সম্ভাবনা উন্মুক্ত করা এবং নারী ও মেয়েদের কণ্ঠস্বরকে উত্থাপন করা (Unleash the Power of Gender Equality: Unlocking the World's Infinite Possibilities and Elevating the Voices of Women and Girls)। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস (UN Secretary-General Antonio Guterres) এই থিম সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, লিঙ্গ-ভিত্তিক বৈষম্য নারী, মেয়ে, পুরুষ এবং ছেলে সকলের ক্ষতি করে।
ভারতে অতিরিক্ত জনসংখ্যার প্রভাব । Effects of Overpopulation in India :
জনসংখ্যার নিরিখে এতদিন গোটা বিশ্বে শীর্ষে ছিল চিন (China)। তবে চলতি বছরে নাগরিক সংখ্যার নিরিখে চিনকে টেক্কা দিয়ে প্রথম স্থান দখল করেছে ভারত (India)। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে রাষ্ট্র সংঘের রিপোর্ট অনুসারে, ভারতে বর্তমান জনসংখ্যা ১,৪২.৫৮ কোটি। বিগত কয়েক বছরে ক্রমাগত বেড়েছে ভারতের জনসংখ্যার গ্রাফ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ২০৫০ সালে জনসংখ্যার এই পরিসংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
অন্য সময়ে কোনও বিষয়ে গোটা পৃথিবীতে শীর্ষস্থানে থাকলে তা বেশ আনন্দের বিষয় হয় যে কোনো দেশের কাছেই। তবে এক্ষেত্রে কিন্তু খুশির চেয়ে বেড়েছে চিন্তা। কারণ অতিরিক্ত জনসংখ্যা জীবনযাত্রার মান কমিয়ে দেয় এবং অন্যান্য সামাজিক ও পরিবেশগত সমস্যাগুলিকেও প্রভাবিত করে। অপুষ্টি, দূষণ, জনাকীর্ণ জীবনযাপনের পরিস্থিতি এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার অভাব সবই অতিরিক্ত জনসংখ্যার পরিণতি এবং এগুলি সবই একটি সম্প্রদায়ে সংক্রামক রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
ভারতে অতিরিক্ত জনসংখ্যা হওয়ায় স্বাস্থ্যে যেসব ঝুঁকি বেড়েছে । Effects of Overpopulation on Human Health :
দেশের প্রায় সকলেই জানেন অতিরিক্ত জনসংখ্যার ফলে অর্থনৈতিক, খাদ্য সংক্রান্ত, বসবাস সংক্রান্ত, শিক্ষা সংক্রান্ত, চাকরি সংক্রান্ত নানান সমস্যা হয়। তবে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। কেবল চিকিৎসা ব্যবস্থাই নয়, নানান সংক্রমণের নেপথ্যেও দায়ী এই জনসংখ্যা। অতিরিক্ত সংক্রমণের জন্য স্বাস্থ্য, সংক্রমণ সম্পর্কিত যে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা কিছুটা নিম্নরূপ -
- যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, কলেরা, ডেঙ্গু, জ্বরের মতো একাধিক রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে।
- জনাকীর্ণ এলাকায় জল-দূষিত রোগ বা ভাইরাসগুলি আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
- শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা, হাঁপানি, ফুসফুসের ক্যান্সার, বুকে ব্যথা, কনজেশন, গলার প্রদাহ, কার্ডিওভাসকুলার রোগের মতো একাধিক সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
- বিভিন্ন অন্যান্য রোগ যেমন, ক্যান্সার, স্নায়বিক অবস্থা, জন্মগত বিকৃতি ইত্যাদি বৃদ্ধি পেয়েছে।
অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পর্কে সচেতনতা । Awareness About Overpopulation :
অতিরিক্ত জনসংখ্যার চ্যালেঞ্জ প্রতিরোধ ও মোকাবিলা করতে ভারত-সহ প্রত্যেক দেশকেই বেশ কিছু বিষয়ে অবগত থাকা উচিত এবং জনসংখ্যার পরিসংখ্যান ঠিক রাখতে সাধারণ মানুষকে এই সম্পর্কে সচেতন করার পাশাপাশি শিক্ষাও দিতে হবে।
- ১. পরিবার পরিকল্পনা এবং প্রজনন স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে।সাধারণ মানুষের কাছে গর্ভনিরোধক এবং প্রজনন স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলি সম্পর্কে প্রচার করতে হবে। যাতে একজন ব্যক্তি তার পরিবারের আকার সম্পর্কে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
- ২. শিক্ষা এবং ক্ষমতায়ন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি। সকলকে শিক্ষা প্রদান করা, বিশেষত মেয়েদের শিক্ষা প্রদান করার ওপর জোর দেওয়া দরকার। যাতে স্বাস্থ্য সম্পর্কে সবার নূন্যতম জ্ঞান থাকে।
- ৩. সাধারণ জনগণের মধ্যে ছোট, পরিকল্পিত পরিবারের আকারকে উৎসাহিত করার জন্য সরকার দ্বারা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে কর বিরতি, ভর্তুকি বা পুরস্কারের মতো প্রণোদনা প্রবর্তন করার মতোও ব্যবস্থা নেওয়া।
- ৪. দক্ষ নগর পরিকল্পনা অবকাঠামো নির্মাণ, এবং সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন, এবং সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার ওপর নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
- ৫. বড় শহরগুলিতে জনসংখ্যার ঘনত্ব কমাতে আঞ্চলিক উন্নয়ন উৎসাহ দিতে পারে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি একটি উল্লেখযোগ্য বৈশ্বিক উদ্বেগ। যা অর্থিনী থেকে শুরু করে বাসস্থান, শিক্ষা, খাদ্য, চাকরি সব কিছুর ওপরই প্রভাব ফেলে। তবে সব থেকে বেহি প্রভাব ফেলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর।ফলে অতিরিক্ত জনসংখ্যা সম্পর্কে সচেতন এবং এই সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
- Related topics -
- লাইফস্টাইল
- ভারত
- চীন
- জনসংখ্যা
- স্বাস্থ্য