অন্যান্য

World Homeopathy Day | সারতে দেরি লাগলেও স্থায়ী সমাধান মেলে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায়! বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবসের দিন জানুন কীভাবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠলো!

World Homeopathy Day | সারতে দেরি লাগলেও স্থায়ী সমাধান মেলে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায়! বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবসের দিন জানুন কীভাবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠলো!
Key Highlights

ভারতে, অ্যালোপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদের পরে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার তৃতীয় জনপ্রিয় পদ্ধতি। বর্তমানে ২০০০,০০০ এরও বেশি নিবন্ধিত হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার রয়েছে।

গোটা বিশ্বে, বিশেষত ভারতে হোমিওপ্যাথিকে একটি নিরাপদ এবং অত্যন্ত কার্যকর বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সারতে দেরি লাগলেও স্থায়ী সমাধান মিলবে এমন ধারনা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাকে ঘিরে আজও মানুষের মনে বিরাজ করে। যদিও এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তিও রয়েছে। তবে এই চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে এবং হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে আরও ভালো বোঝাপড়া তৈরী করার জন্য ও এই চিকিৎসা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী ও আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টাকে উন্নত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ১০ই এপ্রিল বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস (World Homeopathy Day) পালন করা হয়। মূলত এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে হোমিওপ্যাথির জনক (father of homeopathy) ডঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (Dr. Samuel Hahnemann) এর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে। এছাড়াও এই দিনটির রয়েছে একাধিক গুরুত্ব।

বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস । World Homeopathy Day  :

হোমিওপ্যাথি ওষুধ সম্পর্কে মানুষের বোঝাপড়া বাড়ানো, সাধারণ মানুষের কাছে এর প্রচার সহজতর করার প্রচেষ্টা করা, এই সম্পর্কে তাদের ভ্রান্ত ধারণা দূর করা এবং বিশ্বব্যাপী এই বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতির ব্যবহার প্রচারের লক্ষ্যে, প্রতি বছর ১০ এপ্রিল বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস (homeopathy day) পালিত হয়। এছাড়াও এদিন হোমিওপ্যাথির প্রতিষ্ঠাতা ডঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (Dr. Samuel Hahnemann) এর জন্মবার্ষিকীও। মূলত এই দিন পালন করার লক্ষ্য হলো হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো। বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবসের লক্ষ্য হল সারা বিশ্ব থেকে অনুশীলনকারীদের, উত্সাহী এবং সমর্থকদের একত্রিত করে হোমিওপ্যাথি সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। এটি আমাদের শিক্ষার মানের দিকে মনোনিবেশ করতে দেয়, সাধারণ হোমিওপ্যাথিক অনুশীলনকারীদের সাফল্যের হার উন্নত করে, তাই হোমিওপ্যাথি প্রতিটি বাড়িতে পছন্দের চিকিত্সার বিকল্প হতে পারে।

ভারতে বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস (homeopathy day) আয়ুষ মন্ত্রকের অধীনে, সরকারের অধীনে পালিত হয়। এই দিবস প্রতি বছর ভিন্ন ভিন্ন থিমকে কেন্দ্র করে পালিত হয়। ২০২৪ সালের বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবসের থিম বা প্রতিপাদ্য হল “হোমিওপ্যাথি: এক স্বাস্থ্য, এক পরিবার (Homeopathy: One Health, One Family)।

হোমিওপ্যাথির ইতিহাস । History of Homeopathy :

হোমিওপ্যাথি ওষুধ বা সার্জারি ব্যবহার করে না। এটি এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে যে প্রত্যেকরই ব্যক্তিভেদে ভিন্ন উপসর্গ রয়েছে এবং সেই অনুযায়ী চিকিত্সা করা উচিত। হোমিওপ্যাথির জনক (father of homeopathy) ডঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান এর প্রতিষ্ঠা করেন। বলা হয় জার্মান চিকিত্সক এবং রসায়নবিদ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান (১৭৫৫-১৮৪৩) এর আগে খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দীতে হোমিওপ্যাথির উৎপত্তি করেন হিপোক্রেটিস। বলা হয় যে হিপোক্রেটিস বুকে ব্যথার কারণ এবং এটি আমাদের শরীরকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা বুঝতে পেরেছিলেন। আর এভাবেই তার আবিষ্কারগুলি হোমিওপ্যাথিক হয়ে উঠেছিল। হিপোক্রেটিসের পরে হ্যানিম্যান এটিকে পুনরুদ্ধার না করা পর্যন্ত হোমিওপ্যাথি মূলত অবহেলিত ছিল।

হ্যানিম্যান ক্লিনিক্যাল মেডিসিনকে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। তিনি ওষুধ ও রসায়নের উপর কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন। হ্যানিম্যান ১৮০৫ সালে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা চালু করেন। ১৮১০ সালে চিকিৎসা নিয়মাবলী সংক্রান্ত গ্রন্থ ‘অর্গানন অব রেসনাল হেলিং আর্ট’ (Organon of Rational Healing Art) জার্মানি ভাষায় প্রকাশ করেন। যা পরবর্তীকালে ‘অর্গানন অব মেডিসিন’ (Organon of Medicine) নামে প্রকাশিত হয়। স্যামুয়েল হ্যানিম্যান দাবি করেছিলেন যে কুইনাইন এর একটি বড় ডোজ, যা ম্যালেরিয়ার সফল চিকিত্সার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। এইভাবে স্যামুয়েল বিভিন্ন ধরনের ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করেন। হ্যানিম্যান বিশ্বাস করতেন যে ওষুধের বড় ডোজ অসুস্থতা বাড়ায়। ডঃ স্যামুয়েল হ্যানিম্যান পরবর্তীতে ১৮১২ থেকে ১৮২১ সাল পর্যন্ত লিপজিগ বিশ্ববিদ্যালয়ে হোমিওপ্যাথি বিষয়ে শিক্ষা দান করেন। ১৮৩৫ সালের জুন মাসে জার্মানি ছেড়ে প্যারিসে বসবাস শুরু করেন। সেখানেই ১৮৪৩ সালের ২ জুলাই প্যারিসেই মৃত্যুবরণ করেন।

ভারতে হোমিওপ্যাথি :

১৯ শতকের গোড়ার দিকে ভারতে হোমিওপ্যাথি চালু হয়েছিল। এটি প্রথমে বাংলায় প্রসার লাভ করে এবং পরে সমগ্র ভারতে ছড়িয়ে পড়ে। শুরুতে, বেসামরিক এবং সামরিক পরিষেবা এবং অন্যান্যদের মধ্যে অপেশাদারদের দ্বারা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যাপকভাবে অনুশীলন করা হয়েছিল। মহেন্দ্র লাল সরকার প্রথম ভারতীয় যিনি একজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক হয়েছিলেন। এরপর সরকারের নেতৃত্বে অনেক অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসক হোমিওপ্যাথিক অনুশীলন শুরু করেন। 'ক্যালকাটা হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ' (Calcutta Homoeopathic Medical College), প্রথম হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ১৮৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানটি ভারতে হোমিওপ্যাথিকে জনপ্রিয় করার ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা নিয়েছিল। ১৯৭৩ সালে, ভারত সরকার হোমিওপ্যাথিকে একটি জাতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে স্বীকৃতি দেয় এবং এর শিক্ষা ও অনুশীলনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সেন্ট্রাল কাউন্সিল অফ হোমিওপ্যাথি (CCH) স্থাপন করে। এখন, শুধুমাত্র যোগ্য নিবন্ধিত হোমিওপ্যাথরাই ভারতে হোমিওপ্যাথি অনুশীলন করতে পারেন। বর্তমানে, ভারতে, অ্যালোপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদের পরে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার তৃতীয় জনপ্রিয় পদ্ধতি। বর্তমানে ২০০০,০০০ এরও বেশি নিবন্ধিত হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার রয়েছে।

হোমিওপ্যাথি একটি চিকিৎসা ব্যবস্থা যা বিশ্বাস করে যে শরীর নিজেই নিরাময় করতে পারে। হোমিওপ্যাথির অনুশীলনকারীরা উদ্ভিদ এবং খনিজগুলির মতো প্রাকৃতিক পদার্থের সামান্য পরিমাণ ব্যবহার করেন। তারা বিশ্বাস করে যে এইগুলি নিরাময় প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে। হোমিওপ্যাথকে চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শরীর নিজেই নিরাময় করতে পারে এবং রোগকে তার শিকড় থেকে নির্মূল করা যায় এই ধারণার উপর ভিত্তি করে তৈরি ৷ এটি সব বয়সের মানুষের চিকিৎসা করতে পারে ও এর খুব কম বা কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। আর এই চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেই ১০ই এপ্রিল বিশ্ব হোমিওপ্যাথি দিবস পালিত হয়।