পুজো ও উৎসব

Kojagari Laxmi Puja | কেন দুর্গাপুজোর পরই পূজিত হন সুখ, সম্পত্তি ও ঐশ্বর্যের প্রতীক দেবী লক্ষ্মী? জানুন কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর মাহাত্ম্য

Kojagari Laxmi Puja | কেন দুর্গাপুজোর পরই পূজিত হন সুখ, সম্পত্তি ও ঐশ্বর্যের প্রতীক দেবী লক্ষ্মী? জানুন কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর মাহাত্ম্য
Key Highlights

দুর্গাপুজোর পরই পূজিত হন দেবী লক্ষ্মী। বাংলায় শারদীয়া দুর্গোৎসবের ঠিক চার দিন পরেই ঘরে ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো (Kojagari Lakshmi Puja) এর আরাধনা করা হয়। আশ্বিন মাসের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে বাঙালির ঘরে লক্ষ্মীপুজো যেন চিরন্তন প্রার্থনা। মা লক্ষ্মী সুখ, সমৃ্ধি, সম্পত্তি ও ঐশ্বর্যের প্রতীক। আবার তিনি চঞ্চলাও। যেখানেই অহংকার, অনিয়মের বাস সেই স্থান, ত্যাগ করেন দেবী। জেনে নিন কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর ইতিহাস ও তাৎপর্য।

দুর্গাপুজোর পরই পূজিত হন দেবী লক্ষ্মী।  বাংলায় শারদীয়া দুর্গোৎসবের ঠিক চার দিন পরেই ঘরে ঘরে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো (Kojagari Lakshmi Puja) এর আরাধনা করা হয়। আশ্বিন মাসের শেষ পূর্ণিমা তিথিতে বাঙালির ঘরে লক্ষ্মীপুজো যেন চিরন্তন প্রার্থনা। মা লক্ষ্মী সুখ, সমৃ্ধি, সম্পত্তি ও ঐশ্বর্যের প্রতীক। আবার তিনি চঞ্চলাও। যেখানেই অহংকার, অনিয়মের বাস সেই স্থান, ত্যাগ করেন দেবী। তবে লক্ষ্মীপুজোর ইতিহাস কী জানেন? মায়ের সঙ্গে দুর্গাপুজোর সময় মর্ত্তে আসেন দেবী। কেন তাহলে আবার দশমির পরেই আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে পূজিত হন  দেবী লক্ষ্মী? জেনে নিন কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর ইতিহাস ও তাৎপর্য।

কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর ইতিহাস :

সাধারণত গৃহস্থ বাঙালি বাড়িতে প্রতি বৃহস্পতিবার লক্ষ্মীপুজোর আয়োজন করা হয়। কিন্তু কোজাগরী পূর্ণিমা তিথি একটি বিশেষ তিথি। সেই সময় মহা ধূমধাম করে বাঙালি ফলমূল, পদ্ম, নারকেল, নাড়ু, বড়ি, খই, দই, মিষ্টি সহকারে লক্ষ্মী আরাধনায় মেতে ওঠেন প্রায় সকল বাঙালি। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো (Kojagari Lakshmi Puja) এর সময় প্রদোষকাল অর্থাৎ সন্ধ্যা বেলা। সূর্যাস্ত হওয়ার পরে গৃহস্থের ঘরে যে সন্ধ্যা নামে, ঠিক তখন থেকে মাঝরাত পর্যন্ত লক্ষ্মীপুজোর আদর্শ সময়কাল হিসেবে ধরা হয়। কোজাগরী শব্দের অর্থ হল ‘কে জাগে?’ বলা হয় রাত বাড়লে মা তাঁর বাহন পেঁচার পিঠে চেপে মর্ত্তে আসেন। যাঁরা ধুপ, ধুনো জ্বেলে, আলপনা দিয়ে মায়ের জন্য অপেক্ষা করেন, দিন সেই বাড়িতেই অধিষ্ঠান করেন দেবী।

পুরাণ অনুযায়ী, লক্ষ্মী দেবসেনা রূপে জন্ম নিয়ে কার্তিকেয়র পত্নী হন। আবার কিছু পুরাণ মতে, তিনি গণেশ পত্নী। পরে লক্ষ্মী এবং সরস্বতী একই রূপে গণ্য হয়। সেই সময় থেকে শস্য ও সম্পদের দেবী হিসেবে গণ্য করা হয় লক্ষ্মীকে। পুরাণে এমন ইতিহাস রয়েছে যেখানে দূর্বাশা মুনির অভিশাপে লক্ষ্মীকে ত্রিলোক ছাড়তে হয়েছিল। দূর্বাশা মুনি একটি পারিজাত ফুলের মালা উপহার দিয়েছিলেন ইন্দ্রকে। ইন্দ্র যখন রম্ভা ও সম্ভোগে মত্ত, ঠিক তখন ওই মালার কদর বোঝেননি এবং এক ঐরাবতীর গলায় ছুড়ে দেন। রেগে ক্ষুব্ধ হয়ে দূর্বাশা মুনি দেবরাজ ইন্দ্রকে অভিশাপ দিলেন, ‘‘তোমার ত্রিলোক এখন লক্ষ্মীছাড়া হবে। অর্থাৎ লক্ষ্মীর নির্বাসন।’’ অভিশাপে লক্ষ্মী প্রবেশ করলেন পাতালে। এরপর সমুদ্রমন্থনের পর রত্নাকর থেকে উত্থিত হলেন যিনি, তাঁর নাম শ্রী। তিনি লক্ষ্মী নন। শ্রী ও লক্ষ্মী দুই পৃথক দেবী ছিলেন। কিন্তু তাঁরা পরে মিলে এক হয়ে গিয়েছেন। লক্ষ্মী ছিলেন ভৃগুর কন্যা, মায়ের নাম খ্যাতি। এক হাতে পদ্ম আর এক হাতে অমৃতের কলস। তাঁর রূপে গুণে মুগ্ধ হয়ে দেব দানবের মধ্যে যুদ্ধ লেগে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ছলে বলে কৌশলে বিষ্ণুদাকে প্রত্ন রূপে গ্রহণ করেন। শ্রী ও লক্ষ্মী একাকার হয়ে বিষ্ণুর পত্নী হন। তিনি পদ্মাসনা আর তাঁর বাহন শ্বেত পেঁচা। কথিত আছে লক্ষ্মী একবার তুলসী, একবার ঘোটকী হয়েও জন্মান। জ্যোৎস্না প্লাবিত এই পৃথিবীর হেমন্তে দেবী লক্ষ্মী আসেন শুধু একটি রাতের অতিথি হয়ে।

কেন দুর্গাপুজোর পরেই লক্ষ্মীপুজো হয়?

কথিত আছে, দুর্গাপুজোর শেষে মহিষাসুরকে বধ করে জয়ী হয়েছিলেন দেবী দুর্গা। তাই দশমীর দিন আমরা বিজয়া দশমী বলে থাকি, কিন্তু এই জয়ের আনন্দে যাতে কেউ ভেসে না যায়, জয় যেন আমাদের মধ্যে অহংকারের জন্ম দিতে না পারে, কোনও আলস্য বা মত্ততা যাতে আমাদের গ্রাস না করতে পারে তাই হয় লক্ষ্মীপুজো। একাগ্র চিত্তে আরাধনা না করলে, দেবী অধিষ্ঠান করেন না। তাই মন দিয়ে দেবীর আরাধনা করলে অহংকার, জন নিতে পারে না।

কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো ২০২৪ :

জ্যোতিষশাস্ত্র মতে  ২০২৪ সালে কোজাগরী পূর্ণিমা ১৬ অক্টোবর রাত থেকেই পড়ছে। বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রমতে কোজাগরী পূর্ণিমায় রবি যোগ রয়েছে। এই দিন তৈরি হচ্ছে শুভ রবি যোগ। শারদ পূর্ণিমার দিন ভোর ৬ টা ২৩ মিনিট থেকে এই রবি যোগ পড়ছে। আর যোগ রাত ৭ টা ১৮ মিনিট পর্যন্ত থাকবে। গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন পূর্ণিমা তিথি পড়ছে ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যা ৭ টা ৪২ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডে। আর ১৭ অক্টোবর পূর্ণিমা তিথি শেষ হচ্ছে, বিকেল ৫ টা ১৭ ৩৬ মিনিটে। আবার বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকামতে বুধবার রাত ৮ টা ৪১ মিনিটে পূর্ণিমা তিথি পড়ছে, আর বৃহস্পতিবার বিকেল ৪ টে ৫৬ মিনিটে তা শেষ হচ্ছে।