কতটা পথ পেরিয়ে হয়ে উঠেছেন বলিউডের বাদশা! জানুন অভিনেতা শাহরুখ খানের অনুপ্রেরণামূলক জীবন কাহিনী
বর্তমানে বিশ্বের ধনী অভিনেতাদের মধ্যে তিনি একজন। আসুন জেনে নিন কীভাবে একটি সাধারণ ছেলে তার আবেগ এবং দক্ষতার ভিত্তিতে আজ কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করছে।
সফলতার শিখরে পৌঁছানো সহজ ছিল না। অভিনেতা শাহরুখ খানও ভয় পেয়েছিলেন ;একসময় অসহায় ও বোধ করেছিলেন। ঠিক যেমনটা আমরাও কঠিন সময়ে অনুভব করে থাকি। তবে বার বারই ভয়কে জয় করে নিজের স্বপ্নের দিকে এগিয়ে গিয়েছেন কিং খান। একবার তিনি বলেছিলেন, "নিজের ভয়কে নিয়ে বাঁচতে শিখলে, তোমার সঙ্গে হওয়া খারাপগুলোর সঙ্গেই খারাপ হবে।"
শাহরুখ খানের দীর্ঘ অভিনয় কেরিয়ারে তাঁর এতো বৃহৎ সংখ্যক ব্লকবাস্টার ছবি রয়েছে তাতে চাপা পড়ে গিয়েছে তাঁর ফ্লপ ছবিগুলি। কিন্তু সাফল্যকে 'ভাল শিক্ষক' বলতে নারাজ অভিনেতা। তিনি মনে করেন, ব্যর্থতাতেই লুকিয়ে আছে জীবনে এগিয়ে চলার রসদ। তাঁর কথায়, "ব্যর্থতাই একজন ব্যক্তিকে নম্র ও ভদ্র তৈরি করে।"
জীবনে বহু ওঠা-নামা দেখেছেন কিং খান, আর তা থেকে প্রত্যেকবার কীভাবে নিজেকে সামলেছেন তা জেনে নেওয়া যাক
জীবনের প্রথম অধ্যায়
শুরুটা হয়েছিল ১৯৬৫ সালের ২রা নভেম্বর। শাহরুখ খান দিল্লির একটি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবার নাম মীর তাজ মোহাম্মদ ( তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধাও ছিলেন ) এবং মাতার নাম লতিফ ফাতেমা। শাহরুখ তাঁর শৈশব দিল্লির রাজেন্দ্র অঞ্চলে কাটিয়েছিলেন। শাহরুখ খান তার প্রাথমিক পড়াশোনা শুরু করেছিলেন সেন্ট কলম্বাস স্কুলে যেখান থেকে তিনি স্কুলের বৃহত্তম পুরষ্কার সোর্ড অফ অনার জিতেছিলেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তিনি তাঁর বাবাকে হারান। তবে এত কম বয়সে বাবাকে হারানোর পরেও শাহরুখের মনে লড়াই করার চেতনা কখনও শেষ হয়নি।
১৯৫০ সালে তিনি হনসরাজ কলেজে ভর্তি হন, সেখানে তিনি একটি দলে যোগ দিয়েছিলেন এবং সেই দলে থাকাকালীন তিনি ব্যারি জনের অধীনে অভিনয় শিখেছিলেন। এরই মধ্যে তিনি ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামায়ও ভর্তি হন।
অভিনয় জগতে আগমন
শাহরুখ খানের প্রথম অভিনীত টিভি সিরিজ ছিল দিল দরিয়া কিন্তু কিছু প্রডাকশনের সমস্যার কারণে এই টিভি সিরিজটি এক বছর পর সম্প্রচারিত হয়েছিল। এরই মধ্যে শাহরুখ খান ফৌজি নামে একটি সিরিয়ালে কাজ করেছিলেন। এইভাবে টেলিভিশনে তাঁর প্রথম আগমন ঘটেছিল ফৌজি নামে একটি টিভি সিরিয়াল থেকে, সেই সময় তিনি সার্কাস, ওয়াগল কি দুনিয়া, ইডিয়ট এবং উম্মিদ এর মতো আরও অনেক টিভি সিরিজে কাজ করেছিলেন।
বৈবাহিক জীবন
শাহরুখ খানের সঙ্গে বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল গৌরী খানের। সেইসময় অনেক বাধা এবং সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাদের। তবে তাদের সম্পর্কের মাঝে আসা সব বাধা কাটিয়ে তারা পুনরায় মিলিত হতে সক্ষম হয়েছিল। ১৯৯১ সালে তিনি তার বান্ধবী গৌরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
মুম্বাইয়ে পাড়ি
১৯৯১ সালেই তিনি তাঁর মাকে হারান। জীবনের সেই কঠিন মুহূর্তে শাহরুখ খান তার অভিনয় জীবন শুরু করেন। দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে তিনি মুম্বাই চলে গিয়েছিলেন এবং নিজেকে পুরোপুরি অভিনয়ের দিকে ঠেলে দেন।
- ১৯৯২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত “দিওয়ানা” চলচ্চিত্রটি ছিল শাহরুখ খানের প্রথম ছবি। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ারের “সেরা পুরুষ আত্মপ্রকাশ পুরষ্কার” পেয়েছিলেন।
- ১৯৯২ সালে, তিনি আরও তিনটি চলচ্চিত্র মিরাকল, দিল আশনা হ্যায় এবং “রাজু বান গয়া জেন্তাল্মেন্ট” এ কাজ করেছিলেন।
- ১৯৯৩ সালে, তাঁর দুটি ছবি “ডর” এবং “বাজিগর” মুক্তি পায় যেখানে তাকে নায়কের পরিবর্তে ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল।
- ১৯৯৫ সালে, শাহরুখ খান ৪ থেকে ৭ টি ছবিতে অভিনয় করেছিলেন, যার মধ্যে তার সফল চলচ্চিত্রগুলি ছিল “করণ অর্জুন” এবং “দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে”।
- ১৯৯৮ সালে নির্মিত চলচ্চিত্র “কভি খুশি কভি গাম” তে অভিনয়ের জন্য তিনি ফিল্মফেয়ার সেরা অভিনেতার পুরষ্কার জিতেছিলেন ।
১৯৯৯ সালে, শাহরুখ খান অভিনেত্রী জুহি চাওলার সাথে একটি প্রোডাকশন হাউজস খোলেন। প্রযোজক হিসেবে তাঁর প্রথম ছবি ‘ফির ভি দিল হ্যায় হিন্দুস্তানি’ বক্স অফিসে ব্যর্থতার মুখ দেখে। এর পরে, ২০০১ সালে, শাহরুখ খানের প্রোডাকশন হাউজের দ্বিতীয় ছবি “অশোকা“ ও প্রযোজক হিসাবে বক্স অফিসে খারাপভাবে ব্যর্থ হয়েছিল তবে অভিনেতা হিসাবে শাহরুখ খান খুব সফল হয়়েছিলেন।
২০০১ সালে তিনি "মহাব্বতাইন", “কভি খুশি কাবি গাম”, এবং দেবদাস” এর মতো একাধিক হিট ছবিতে অভিনয় করেছিলেন এবং তারপরে তিনি স্বদেশ, বীর-জারা, পাহেলি, ডন, চক দে ইন্ডিয়া, মাই নেম ইজ খান, ইত্যাদি ছবিতে নিজের অভিনয়ের দক্ষতা প্রকাশ করেন। এছাড়াও তিনি কুছ কুছ হোতা হ্যায়, দিল তো পাগল হ্যায়, চেন্নাই এক্সপ্রেস, হ্যাপি নিউ ইয়ার এবং রইস এর মতো অনেক হিট মুভিতে অভিনয় করেছিলেন এবং তার বলিষ্ঠ অভিনয়ের জন্য প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন।।
বর্তমানে শাহরুখ খান প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা সম্পত্তির অধিকারী, যা তাকে বিশ্বের অন্যতম ধনী অভিনেতার খেতাব এনে দিয়েছে।
আশা করি বলিউডের বাদশা শাহরুখ খানের জীবনে সাফল্যের কাহিনী জানতে পেরে আপনারাও নিজেদের কঠিন পরিস্থিতির মোকাবিলা করার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।
- Related topics -
- সেলিব্রিটি
- শাহরুখ খান
- অভিনেতা
- জীবন কাহিনি