দেশ

Archaeological Sites in India | ২৬০০ বছরের পুরনো ধ্বংসস্তূপ আবিষ্কার বিহারে ! জানুন ভারতের অন্যতম কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান সম্পর্কে!

Archaeological Sites in India | ২৬০০ বছরের পুরনো ধ্বংসস্তূপ আবিষ্কার বিহারে ! জানুন ভারতের অন্যতম কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান সম্পর্কে!
Key Highlights

বাঁকা বিহারের ভাদরিয়া গ্রামে সম্প্রতি আবিষ্কার হয়েছে ২৬০০ বছরের পুরোনো কাঠামোর অবশিষ্টাংশ। এই স্থান নিয়ে পর্যবেক্ষণ করার অনুমতি দিলো এএসআই। এছাড়াও জানুন ভারতের অন্যতম কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান সম্পর্কে।

ভারতের শিল্প, স্থাপত্য বিশ্বখ্যাত। এই তালিকায় রয়েছে একাধিক ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান (Archaeological sites in India)ও। এই স্থানগুলি নানান অজানা তথ্য, ইতিহাস বলে দেয়। সম্প্রতি এরকমই এক স্থানের খোঁজ পাওয়া গেল বিহারে! বাঁকা বিহার (Banka Bihar) ২৬০০ বছরের পুরনো একটি কাঠামোর অবশিষ্টাংশ উদ্ধার হয়েছে।  জানা গিয়েছে, খুব শীঘ্রই সেই অবশিষ্টাংশ এবং চিনের পরিব্রাজক হিউয়েন সাংয়ের (Hiuen Tsang) পরিদর্শন করা বৌদ্ধস্তূপগুলিতে গবেষণার কাজ শুরু করতে চলেছে বিহার সরকার।

 এএসআই বা এএসআই-র পূর্ণ রূপ (Asi full form) আর্কিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া সম্প্রতি সে রাজ্যের শিল্প, সংস্কৃতি ও যুব মন্ত্রকের শাখা ‘বিহার হেরিটেজ ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (BHDS)’-কে এই দু’টি জায়গা খতিয়ে দেখার অনুমতি দিয়েছে।  এএসআই বা এএসআই-র পূর্ণ রূপ (Asi full form) আর্কিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া জানিয়েছে, বাঁকা জেলার ভাদরিয়া গ্রামে এই খননকাজ চলবে। উল্লেখ্য, ভাদরিয়া (Bhadariya) গ্রামটি চন্দন নদীর তীরে অবস্থিত। মূলত এরপরেই ওই দুই জায়গায় গবেষণা চালাতে তৎপর হয়ে উঠেছে বিহার সরকার। সম্প্রতি, বাঁকা বিহার (Banka Bihar) এ অমরপুর ব্লকের ভাদরিয়া (Bhadariya) গ্রামে চন্দন নদীর কাছে ২৬০০ যুগের ওই কাঠামোটি আবিষ্কৃত হয়েছে। জানা গিয়েছে, স্থানীয়েরা ছটপুজো করতে গিয়ে ওই কাঠামোটি খুঁজে পান। জানা গিয়েছে, বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই বাঁকা এবং আশপাশের অঞ্চলগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই এলাকাগুলিতে মাটির নীচে আর কোনও প্রাচীন কাঠামো রয়েছে কি না, তা-ও খুঁজে বার করতে তৎপর হয়েছে সরকার।

 ইতিহাসের বহু বইয়ে বিহারের এই গ্রামের উল্লেখ রয়েছে। এমনকি হিন্দু পুরাণে বাঁকার মন্দার পর্বতের অনেক উল্লেখ রয়েছে। এই প্রসঙ্গে বিএইচডিএসের এগজ়িকিউটিভ ডিরেক্টর বিজয়কুমার চৌধুরি বলেন, পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, সমুদ্রমন্থনের সময় অমৃত আহরণের জন্য মন্দার পর্বত ব্যবহার করা হয়েছিল। এছাড়াও, প্রাচীন বৌদ্ধ সাহিত্যেও ভাদরিয়াকে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসাবে উল্লেখ করা হয়। প্রাচীন বৌদ্ধ সাহিত্য অনুযায়ী এই গ্রামে এসেছিলেন স্বয়ং বুদ্ধ। তাঁর প্রধান অনুগামীদের মধ্যে বিশাখা নামে এক শিষ্যা পরবর্তী কালে নাকি এই গ্রামেই থেকে গিয়েছিলেন। বিএইচডিএস এ-ও জানিয়েছে, প্রায় হাজার বছর আগে হিউয়েন বিহারের এখন যেখানে বৈশালী জেলা, সেখানে এসেছিলেন। বেশ কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখেন তিনি। হিউয়েন সাং পরিচিত ছিলেন জুয়ানজাং নামেও। তিনি চিন থেকে রাজা হর্ষবর্ধনের শাসনকালে ভারতে এসেছিলেন। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলি অনুযায়ী, ৬২৯ এবং ৬৪৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতে এসেছিলেন হিউয়েন। তার মধ্যে ৬৩০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ৬৪২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে তিনি বৈশালী এবং বিহারের অন্যান্য এলাকাগুলি পরিদর্শন করেন। বিএইচডিএসের বিজয়কুমারের কথায়, জুয়ানজাংয়ের ভ্রমণকাহিনি ১৮৬০ থেকে ’৭০ সালের মধ্যে ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক আলেকজান্ডার কানিংহামকে নালন্দা এবং বৈশালীর মতো বিখ্যাত এলাকাগুলি খুঁজে পেতে সাহায্য করেছিল। বিজয়কুমার এ-ও জানান হিউয়েনের ঘুরে দেখা জায়গাগুলি নিয়ে এর আগে কোনও পদ্ধতিগত কাজ হয়নি। কিন্তু এখন ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের অনুমতি পাওয়ার পর সরকার সেই কাজে হাত দিতে চলেছে।

রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার ৬৫০ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান আবিষ্কার হয়েছে ভারতে। এর মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম নিওলিথিক সাইট মঙ্গর বাণী ভারতের প্রাচীনতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এই এলাকা থেকে পাওয়া পাথরের সরঞ্জামগুলি ১০০,০০০ বছর আগের এবং গুহাচিত্রগুলি প্রায় ২০,০০০-৪০,০০০ বছরেরও আগের বলে জানা গিয়েছে। এরকম ভারতে আরও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান রয়েছে যেখানে পাওয়া গিয়েছে বহু প্রাচীন আসবাব। জানা গিয়েছে নানান অজানা ইতিহাস। এরকমই কিছু ভারতের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান (Archaeological sites in India) এর খোঁজ রইলো আপনার জন্য।

 লোথাল, আহমেদাবাদ । Lothal, Ahmedabad :

গুজরাটের লোথাল, আহমেদাবাদ, ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, যা হরপ্পা সভ্যতার ইতিহাস তুলে ধরে। এই স্থানটি ১৯৫৪ সালে আবিষ্কৃত হয়। পরে উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা এই স্থানে খনন করা হয়। এখানে সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতা সম্পর্কে নানান তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি প্রাচীন যুগের শহরের বিন্যাস, এর ডকইয়ার্ড, গুদামঘর এবং আবাসিক এলাকা সহ, সেই সময়ে মানুষরা কীভাবে বাস করত তার অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। সামগ্রিকভাবে, লোথাল একটি অপরিহার্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান যা প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় । Nalanda University :

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা গোটা বিশ্বের প্রায় সকলেই জানেন। এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি ভারতের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ। সাইটটি একসময় বৌদ্ধ শিক্ষার একটি সমৃদ্ধ কেন্দ্র ছিল এবং বিশ্বব্যাপী পণ্ডিতদের আকর্ষণীয় স্থান ছিল। এখানে বড় বড় লাইব্রেরি, শিক্ষা কক্ষ-সহ বহু ঐতিহাসিক আসবাব পাওয়া যায়। তবে এই স্থানের বেশ কিছু অংশ পুনরুদ্ধার করা গেলেও অনেক কিছুই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অনেক কিছুই বেহাল দশায় রয়ে গেছে।

কালিবঙ্গন, রাজস্থানের হনুমানগড় জেলা । Kalibangan, Hanumangarh district of Rajasthan :

কালিবঙ্গন রাজস্থানের হনুমানগড় জেলায় অবস্থিত একটি উল্লেখযোগ্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি ভারতের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হরপ্পা সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম। এক সময়ে এটি একটি পরিশীলিত নিষ্কাশন ব্যবস্থা, শস্যভাণ্ডার এবং স্নানাগার-সহ একটি সুপরিকল্পিত শহর ছিল। এখন থেকে আবিষ্কৃত নানান আসবাব দিয়ে তখনকার মানুষের জীবন পরিচালনা সম্পর্কে জানা যায়। যেমন, অগ্নি বেদীর আবিষ্কার থেকে বোঝা যায় যে বাসিন্দারা অগ্নি উপাসনা করতেন। সাইটটি মেসোপটেমিয়া এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশের সাথে বাণিজ্য সম্পর্কের প্রমাণও প্রদান করে।

ধোলাভিরা, কাচ্ছ জেলা । Dholavira, Kachchh District :

ধোলাভিরা, গুজরাটের কচ্ছ জেলায় অবস্থিত, একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান যা প্রাচীন সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার আভাস দেয়। সাইটটি ১৯৬৭ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। এখানে উন্নত নিকাশি ব্যবস্থাপনা, বিল্ডিং এবং উন্নত স্থাপত্য-সহ একটি সুপরিকল্পিত শহরের খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। অন্যান্য সভ্যতার সাথে ধোলাভিরার একটি চিত্তাকর্ষক বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল, যা মেসোপটেমিয়া এবং মিশর থেকে নিদর্শনগুলির আবিষ্কার দ্বারা প্রমাণিত হয়।

ভীমবেটকা রক শেল্টার, মধ্যপ্রদেশ । Bhimbetka rock shelters, Madhya Pradesh :

ভারতের মধ্য প্রদেশের ভীমবেটকা রক শেল্টার হল একটি আকর্ষণীয় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান যা প্রাগৈতিহাসিক মানুষের জীবন ধারার বর্ণনা দেয়। রক শেল্টারগুলিতে বিশ্বের প্রাচীনতম পরিচিত গুহা চিত্রগুলির কিছু চিত্র প্যালিওলিথিক যুগের। এখানে আদিম যুগের মানুষের বসবাস এবং তাদের ব্যবহৃত নানান আসবাব পাওয়া গিয়েছে। যদিও এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের আরও রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংরক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।

দাইমাবাদ, মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলা । Daimabad, Ahmednagar district in Maharashtra :

মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার দাইমাবাদ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি ভারতের প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস তুলে ধরে নিখুঁতভাবে। সাইটটি চ্যালকোলিথিক যুগের এবং এই অঞ্চলের কৃষি ও নগরায়নের প্রাথমিক বিকাশের মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে। খনন দ্বারা এখানে মৃৎশিল্প, সরঞ্জাম এবং গহনা সহ বিভিন্ন প্রত্নবস্তু পাওয়া গিয়েছে। দাইমাবাদে যে সমাজ একসময় সমৃদ্ধ হয়েছিল তার বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে এই স্থান।

ভারতের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের এক বিশাল বৈচিত্র্য রয়েছে, যার আভাস পাওয়া যায় প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলিতে। বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ স্থাপত্যের আশ্চর্যের আবাসস্থল, প্রাচীন শিলা-কাটা গুহা থেকে ব্রোঞ্জ যুগের সভ্যতা, বিভিন্ন রাজ্য এবং সাম্রাজ্যের দুর্দান্ত বিশ্ববিদ্যালয় ভবন বা দুর্গ দেখতে পাওয়া যায় ভারতে।