Dengue | রাজ্যে ৫ হাজার উর্দ্ধে ডেঙ্গু আক্রান্ত! রোগ প্রতিরোধ করতে ল্যাবে তৈরী হচ্ছে বিশেষ মশা!
৩রা অগাস্ট পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সহ্য ছাড়িয়েছে ৫ হাজার, মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১০ জনের। মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধ করতে ল্যাবে তৈরী হচ্ছে বিশেষ মশা। যা কামড়ালে হবে না কোনও রোগ। কমাবে অন্য মশার ব্যাকটেরিয়াও।
বর্ষাকালে ঘরে ঘরে ডেঙ্গু (Dengue) আতঙ্ক। বর্ষা আসতে না আসতেই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে মশাবাহিত এই রোগ। স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, ৩ রা অগাস্ট পর্যন্ত রাজ্যে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ৭৫১। বেসরকারি হিসেবে এ বছর এখনও পর্যন্ত ১০ জন ডেঙ্গি আক্রান্তের মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। ফলে স্বাস্থ্যভবন থেকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, জ্বর হলেই তা ফেলে না রেখে দ্রুত চিকিৎসা করানোর জন্য।
প্রতি বছরই বর্ষাকাল আসতেই বাড়ে মশার প্রকোপ। চারিদিকে জমা জলের ফলে বৃদ্ধি পায় এডিস ইজিপ্টাই-এর (Aedes Aegypti) সংসার। একেই বৃষ্টির জন্য ঠান্ডা লাগা খুবই সাধারণ বর্ষার মরশুমে। তারওপর মশার কারণে এখন ঘরে ঘরে জ্বর। স্বাস্থ্যভবন জানিয়েছে, ৩রা অগাস্ট শেষ হওয়া সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৩৫০ জন। ২৭সে জুলাই শেষ হওয়া সপ্তাহে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৩৫। উল্লেখযোগ্যভাবে কলকাতায় (Kolkata) এলাকায় এলাকায় দেখা যাচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত। তবে কলকাতা বাদ দিয়েও জেলাতেও বাসা বেঁধেছে ডেঙ্গি।
স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, চলতি সপ্তাহে সব থেকে বেশি ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা উত্তর ২৪ পরগনায় (North 24 Parganas)। সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৪০০ জন। নদিয়ায় (Nadia) ৩৫০ এবং হুগলিতে (Hooghly) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৯৫ জন। স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে ২৫০ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। যার মধ্যে ১০ থেকে ১৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গত বছর রাজ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন প্রায় ৬৭ হাজারের বেশি মানুষ। সরকারি হিসেবে মশাবাহিত রোগে মারা গিয়েছিলেন ৩০ জন। তবে বেসরকারি মতে, সেই সংখ্যা ছিল ১০৫। চলতি বছর এখনও পর্যন্ত ১০ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। যার মধ্যে ৫জনই নদিয়ার।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেমন জ্বর এলেই চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হবে, তেমনই বেঁচে থাকতে হবে মশার কামড় থেকেও। মশারি টাঙানো, মশা দূর করার ধুপ ব্যবহার করতে হবে। কারণ এমন মশা নেই যে কামড়াবে কিন্তু রোগব্যাধি হবে না। ফলে মশা থেকে খুব সাবধান থাকতে হবে সকলকে। চিকিৎসা, সতর্কতা দিয়ে মশাবাহিত রোগ যুগ যুগ ধরে ঠেকিয়ে আসছে ভারত। তবে এবার পরিবেশে নতুন ধরণের মশা এনে ভবিষ্যৎ বদল করতে চলেছে দেশ। ভারতের ল্যাবরেটরিতে।তৈরী হচ্ছে এমন মশা যে কামড়ালে কোনও রকম রোগই হবে না। বলা যেতে পারে এ ‘গান্ধীবাদী’ মশা।
ডেঙ্গুর ঘরোয়া প্রতিকার ও ডেঙ্গুর আফ্টার এফেক্ট সম্পর্কে আরও পড়ুন : ডেঙ্গুর মিউটেশনের আশঙ্কা! জ্বর বা প্লেটলেটেই সীমাবদ্ধ নয়! প্রভাব পড়ছে হার্ট, কিডনির মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্গানেও!
জানা গিয়েছে, এই মশা পরিবেশে ছাড়া হলেই শুরু হবে এক বিশেষ জৈব-বিবর্তন। যা বদলে দিতে পারে মশার বিষাক্ত কামড়ের এবং মশাবাহিত রজার ভবিষ্যৎ। বর্তমানে উদ্বেগ ছড়ানো ডেঙ্গু, জিকা-চিকনগুনিয়ার (Zika-Chikungunya ) মতো রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে দেশের জনগণ। ‘ওলবাচিয়া’ (Wolbachia) নামের এই ব্যাকটেরিয়া ডেঙ্গু, জিকার মতো রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। ওলবাচিয়া মেথড (Wolbachia Method) এর সাহায্যেই মশাবাহিত রোগের নাশ করতে চলেছে ভারত।
আরও পড়ুন : জানুন ডেঙ্গুর লক্ষণ ও চিকিৎসা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্ত্রী এডিস মশা (Aedes Mosquito) প্রজননের প্রয়োজনেই আমাদের দেহ থেকে রক্ত খায়। তখনই মশার দেহে থাকা ডেঙ্গু, জিকা, চিকনগুনিয়া রোগের ভাইরাস মানুষের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ ভাইরাস শরীরে ধরে রাখে মশা। এই জায়গাতেই বাঁধ দিয়েছে বিজ্ঞান। ল্যাবরেটরিতে তৈরি হয়েছে একগুচ্ছ পুরুষ মশা। মূলত মশার ডিম থেকেই তা তৈরি করা হয়েছে। আর তার আগে ডিমের উপরে প্রয়োগ করা হয়েছে ওলবাচিয়া মেথড। অর্থাৎ পরিকল্পিতভাবে ওই মশাগুলির শরীরে প্রবেশ করানো হয়েছে ওলবাচিয়ার কিছু বিশেষ প্রজাতি। পরবর্তীকালে, ল্যাবে তৈরী সেই মশাদের সঙ্গে বাইরের পরিবেশে থাকা স্ত্রী মশার সংসর্গ ঘটানো হয়েছে। তাতে দেখা গিয়েছে, এর থেকে উৎপাদিত ডিমে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়ার মতো ভাইরাসের দাপট অনেকাংশে কম। তাছাড়াও মেয়ে মশার দেহের ব্যাকটেরিয়াও কমে আসবে অনেকটা।
এই প্রক্রিয়ায় মশার রক্ত শোষণ করার স্বভাব বদলানো না গেলেও এর দ্বারা মশার কামড়ে রোগ ব্যাধি ছড়াবে না বলেই আশা বিজ্ঞানীদের। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই ব্রাজিল (Brazil), ভিয়েতনাম (Vietnam), অস্ট্রেলিয়া (Australia), মেক্সিকো (Mexico) সহ নানা দেশে ল্যাবরেটরিতে তৈরি মশা পরিবেশে ছেড়ে পরীক্ষা হয়েছে। যার সুফল পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই প্রসঙ্গে ভারতের ভেক্টর কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের ডিরেক্টর ডাঃ অশ্বিনী কুমার (Director of India's Vector Control and Research Center, Dr. Ashwini Kumar) বলেন, ওলবাচিয়া ব্যাকটেরিয়াযুক্ত মশা নিয়ে পরীক্ষা শেষ। ওটা ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া প্রতিরোধে একটি কার্যকরী হাতিয়ার হতে পারে। পরিবেশে তার প্রয়োগের অনুমোদনের জন্য একটি হাই পাওয়ার কমিটির কাছে প্রস্তাব করা হয়েছে। ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া মূলত ভাইরাসঘটিত রোগ। তবে এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসের নির্দিষ্ট কোনও চিকিৎসা নেই। তবে এবার ব্যাকটেরিয়া মুক্ত ল্যাবে তৈরী মশার কারণে এই রোগ গুলি থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া যেতে পারে বলে আশা।