Indoor Plant For Home Decor | কম যত্ন ও খরচে ঘরকে সুন্দর করে তুলুন ইনডোর প্লান্ট দিয়ে!

Friday, June 16 2023, 7:32 am
highlightKey Highlights

খুব কম সময় ব্যয় করেই নানান ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে সাজানো যায় ঘর। দেখুন কোন ইনডোর গাছ ঘর সাজানোর জন্য সব থেকে ভালো।


বর্তমানে ইনডোর প্ল্যান্ট (Indoor Plant) দিয়ে ঘর সাজানো হয়েছে উঠেছে এক প্রকার ট্রেন্ড (Trend)। তবে সত্যিই তো, কম খরচে ঘর, বাড়ি সাজাতে ইনডোর প্লান্টের জুড়ি মেলা ভার। যেমনই আসবাব থাকুক, যতই বড় বা ছোট ঘর হোক না কেন, ঘরের এক কোণে কোথাও গাছ থাকলে যেমন শোভাও বাড়ে তেমনই মনও ভালো থাকে।

কম খরচে ঘর, বাড়ি সাজাতে ইনডোর প্লান্টের জুড়ি মেলা ভার
কম খরচে ঘর, বাড়ি সাজাতে ইনডোর প্লান্টের জুড়ি মেলা ভার

বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমাদের চোখের সামনে সবুজ অর্থাৎ গাছ থাকলে তা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। বিশেষত যারা শহরে ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে প্রকৃতির সবুজের সঙ্গে থাকা অনেক সময়ই সম্ভব হয়ে ওঠেনা। চারিদিকে আকাশ ছোঁয়া বিল্ডিং, সর্বক্ষণ গাড়ির হর্ণের আওয়াজে দম বন্ধ পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এমত অবস্থায় ঘরে গাছ থাকলে তা অনেকটা শান্তি দিতে পারে।

চোখের সামনে সবুজ অর্থাৎ গাছ থাকলে তা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো
চোখের সামনে সবুজ অর্থাৎ গাছ থাকলে তা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো

অনেকের বাড়িতে গাছ দিয়ে ঘর সাজানোর ইচ্ছা থাকলেও, তাদের ধারণা এটি প্রচুর খাটনির কাজ। তবে তা কিন্তু একদমই নয়। এমন কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট রয়েছে যার ডাল কেটে পুঁতলেই সেখান থেকে গাছ উৎপন্ন হয়। যত্নেরও বেশি দরকার হয়না এইসব গাছের। ফলে দেখে নিন কম খাটনি ও যত্নতে কোন ইনডোর প্ল্যান্টগুলি আপনি রাখতে পারবেন আপনার ঘরে।

এমন কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট রয়েছে যার ডাল কেটে পুঁতলেই সেখান থেকে গাছ উৎপন্ন হয়
এমন কিছু ইনডোর প্ল্যান্ট রয়েছে যার ডাল কেটে পুঁতলেই সেখান থেকে গাছ উৎপন্ন হয়

১. মানি প্ল্যান্ট | Money Plant :

ইনডোর প্ল্যান্টের মধ্যে মানিপ্লান্ট হলো সবথেকে জনপ্রিয়। খুব কম যত্নেই বেড়ে ওঠে এই গাছ। এরপর যদি আপনি মানি প্ল্যান্টের বেশি যত্ন নেন, তাহলে এই গাছের সৌন্দর্য অনেক দামি গাছকেও হার মানাবে। এই গাছ দিয়ে বিভিন্নভাবে আপনি ঘর সাজাতে পারবেন। আপনার বাড়ির বারান্দায় ছোটো টবে হাঙ্গিং প্ল্যান্ট (Hanging Plant) হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন এই গাছকে। আবার ঘরের কোনো কোণায় বড় টবের মাঝে একটি লাঠি পুতেও রাখতে পারেন, সেটি বেয়ে বেয়ে মানিপ্লান্ট বাড়বে। আবার ছোট বাহারি টবে রেখেও ঘর সাজাতে পারেন। মানি প্ল্যান্ট দিয়ে অনেক রকম ভাবে ঘর সাজানো যায়। এর আরও সৌন্দর্য বাড়াতে মাঝে মাঝে পাতা ছেটে দেবেন।

ইনডোর প্ল্যান্টের মধ্যে মানিপ্লান্ট হলো সবথেকে জনপ্রিয়
ইনডোর প্ল্যান্টের মধ্যে মানিপ্লান্ট হলো সবথেকে জনপ্রিয়

২. এরিকা পাম | Erica Palm :

ভারতে যদি সবচেয়ে জনপ্রিয় ইনডোর প্লান্টের তালিকা করা হয়, তার মধ্যে প্রথম দশেই রয়েছে এরিকা পাম। এই গাছ আপনি যে কোনও নার্সারিতেই (Nursery)  পাবেন। এর দামও খুব বেশি নয় আর খুব বেশি যত্নেরও প্রয়োজন নেই। কেবল গাছের টবে জল না বসলেই হল। তবে অন্যান্য গাছের তুলনায় এই গাছের একটু আলো বেশি দরকার। তাই জানলার ধারে বা বারান্দায় এই গাছ  রাখলে সবচেয়ে ভাল হয়। এই গাছটি যেহেতু একটু লম্বা, তাই খাট বা সোফার পাশে অথবা ঘরের এক কোণে সাজিয়ে রাখলে বেশ চমৎকার দেখতে লাগে।

র খুব বেশি যত্নেরও প্রয়োজন নেই এরিকা পাম প্লান্টের
র খুব বেশি যত্নেরও প্রয়োজন নেই এরিকা পাম প্লান্টের

৩. ড্রাসিনা | Dracena :

কেবল ডাল কেটে মাটিতে পুতে দিলেই বেড়ে উঠবে এই গাছ। গাছটি দিয়ে অনেকেই বাগানে করেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে মাটি শুকিয়ে না যায়সেদিকে নজর রাখবেন। মাটি শুকিয়ে গেলেই পাতা ঝড়ে যায় এই গাছের। জল দিলে অবশ্য সতেজ হয়ে ওঠে ড্রাসিনা।  

 ডাল কেটে মাটিতে পুতে দিলেই বেড়ে উঠবে এই গাছ
 ডাল কেটে মাটিতে পুতে দিলেই বেড়ে উঠবে এই গাছ

৪.  সানসাভেরিয়া | Sansevieria :

ইদানিং ইন্টিরিয়র ডেকরেশনের (Interior Decoration) বাজারে খুব জনপ্রিয় এই গাছ, সানসাভেরিয়া। এই গাছ আবার ' মাদার ইন লো' স টাং '( Mother-in-Law's Tongue) নামেও পরিচিত। এক সপ্তাহ জল দিতে ভুলে গেলেও কোনও সমস্যা নেই। খুব কম যত্নেই বেড়ে ওঠে এই অন্যরকম দেখতে গাছ। বিভিন্ন জাতের সানসাভেরিয়া হয়। হলুদ বর্ডার, কালচে সবুজ পাতার গাছটি সাদা বা লাল টবে খুব সুন্দর দেখায়। এই গাছের গোড়া থেকে চারা বের হয়। সেটা তুলে টবে বসালেই গাছ হয়ে যায়। অনেক সময় গাছের গোটা পাতা কেটেও বসান, তাতেও গাছ হয় তবে এই পদ্ধতি অনেক সময় সাপেক্ষ । 

ইন্টিরিয়র ডেকরেশনের খুব জনপ্রিয় সানসাভেরিয়া গাছ
ইন্টিরিয়র ডেকরেশনের খুব জনপ্রিয় সানসাভেরিয়া গাছ

৫. ক্যাকটাস | Cactus :

ক্যাকটাস গাছ দিয়েও সুন্দর ভাবে ঘর সাজানো যায়। এই গাছ বিভিন্ন রঙ, আকার এবং আকারে পাওয়া যায়। অনেক সময় এই গাছে উজ্জ্বল রঙের ফুলও ফোটে, যা বাড়িয়ে দেয় এর সৌন্দর্য। খুবই কম যত্নে এই গাছ বেড়ে ওঠে এবং এই গাছ জায়গাও কম নেয়।

বিভিন্ন রঙ, আকার এবং আকারে পাওয়া যায় ক্যাকটাস
বিভিন্ন রঙ, আকার এবং আকারে পাওয়া যায় ক্যাকটাস

৬.  মনস্টেরা | Monstera :

 বড় বড় পাতার এই গাছ এখন ইন্টিরিয়ার ডিজাইনারদের (Interior Designer) প্রথম পছন্দ। মানি প্লান্টের মতো ডাল কেটে বসালেই এই গাছ হয়। মনস্টেরা বড় হতে একটু সময় লাগে। প্রথম ৫-৬টা পাতায় কোনও বিন্যাস বা নকশা থাকে না। তবে একটু বড় হলেই তখন দেখা যায় এই গাছের আসল সৌন্দর্য। ফলে এই গাছ রাখলে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে আপনাকে। পাশাপাশি খেয়াল রাখবেন যাতে মাটি ভিজে ভিজে থাকে।

মনস্টেরা বড় হতে একটু সময় লাগে
মনস্টেরা বড় হতে একটু সময় লাগে

৭. কোলিয়াস | Coleus :

সবুজ রঙ বাদে আপনি যদি একটু অন্যরকম রঙের গাছ খোঁজেন, তাহলে কোলিয়াস হতে পারে আপনার প্রথম পছন্দ। ডাল কেটে বসিয়ে নিয়মিত জল দিলেই গাছ হয়ে যাবে। কোলিয়াসের ক্ষেত্রে নিয়মিত ডগা ছাঁটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবেই এই গাছ ঘন ও সুন্দর হবে। কারণ ডগার পাতা না ছাঁটলে গাছ বেশি লম্বা হয়ে যাবে, পাশাপাশি পাতার সংখ্যাও কম হবে। এই গাছের ডাল খুব নরম। তাই একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। 

কোলিয়াসের ক্ষেত্রে নিয়মিত ডগা ছাঁটা খুব গুরুত্বপূর্ণ
কোলিয়াসের ক্ষেত্রে নিয়মিত ডগা ছাঁটা খুব গুরুত্বপূর্ণ

৮. রবার প্লান্ট | Rubber Plant :

ইনডোর প্লান্ট হিসাবে রাবার প্লান্টের জনপ্রিয়তা বহু যুগ ধরেই। একটু বড় ঘর হলে ও প্রচুর আলো বাতাস ঢোকে এমন পরিবেশ থাকলে বেশ সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে এই গাছ।  এই গাছ রাখলে নার্সারি থেকে একটু হরমোন পাউডার (Hormone Powder)  কিনে ডালের কাটা স্থানে লাগিয়ে বসাবেন। আর খেয়াল রাখবেন যাতে মাটি অল্প ভিজে থাকে।

একটু বড় ঘর ও প্রচুর আলো বাতাস ঢোকে এমন পরিবেশ থাকলে বেশ সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে  রাবার প্লান্ট
একটু বড় ঘর ও প্রচুর আলো বাতাস ঢোকে এমন পরিবেশ থাকলে বেশ সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠে  রাবার প্লান্ট

গাছ দিয়ে ঘর সাজানো এক শিল্পকলা। যাতে বেশি খাটা খাটনি না করেই ভালো ফল পাওয়া যায়। উপরোক্ত গাছগুলি বেড়ে ওঠে কম যত্নেই। তবে ইনডোর প্ল্যান্ট লাগালে আপনাকে মাথায় রাখতে হবে কিছু বিষয়। যে ইনডোর প্লান্ট হলেও গাছের সালোকসংশ্লেষের (Photosynthesis) জন্য প্রয়োজন আলো। তাই চেষ্টা করুন দক্ষিণ, পূর্ব বা পশ্চিমের রোদ আসে এমন জানলার পাশে গাছটি রাখার। পাশাপাশি চেষ্টা করুন একই জাতের দুটি টব ব্যবহার করার। ঘরে একটানা ৩ দিন পর দুটি গাছের স্থান অদলবদল করে নিন। কারণ বাইরের রোদ-আলো পেলে গাছের বৃদ্ধি ভাল হয়। পাশাপাশি গাছের পাতার উপরের ধুলোর আস্তরণ মাঝে মাঝে জল দিয়ে ধুয়ে দিন, এতে গাছ সতেজ থাকবে। মাটির শুস্কতা বুঝে জল দিন। বেশি বা কম জল দিলে গাছের ক্ষতি হতে পারে। এছাড়াও আপনি যদি ১ সপ্তাহের জন্য বেড়াতে যান, সেক্ষেত্রে ভালো ভাবে গাছে জল দিয়ে যাবেন এবং বাড়ি ফিরেই আবার জল দেবেন। এতে গাছও বেঁচে থাকবে আর আপনারও চিন্তা কমবে।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File