Sonam Wangchuk | ২১দিন পর অনশন ভাঙলেন 'রিয়েল লাইফ ব়্যাঞ্চো'! প্রশাসনের তরফে দাবি পূরণের সদিচ্ছা না দেখা গেলে আরও বড় আন্দোলনের ডাক সোনম ওয়াংচুকের!
৬ মার্চ থেকে অনশন করছিলেন ‘থ্রি ইডিয়টস’ খ্যাত আসল ‘র্যাঞ্চো’সোনম ওয়াংচুক। এক শিশুর হাতে সরবত খেয়ে অনশন ভাঙলেন সোনম। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় সোনম জানিয়েছেন, অনশন তুলে নিলেও তাঁর লড়াই চলবে।
অবশেষে ২১ দিন পর অনশন প্রত্যাহার করলেন রিয়েল লাইফ 'ব়্যাঞ্চো' সোনম ওয়াংচুক (Sonam Wangchuk)। ২১ দিন ধরে তিনি কেবলমাত্র লবণ আর জলের উপর প্রাণরক্ষা করছিলেন বিজ্ঞানী তথা পরিবেশ এবং মানবাধিকার কর্মী সোনম ওয়াংচুক। গত ৬ মার্চ থেকে অনশন করছিলেন তিনি। মঙ্গলবার এক শিশুর হাতে সরবত খেয়ে অনশন ভাঙলেন সোনম। যদিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর ‘র্যাঞ্চো’ জানিয়েছেন, অনশন তুলে নিলেও তাঁর লড়াই চলবে।
কেন অনশন করেছিলেন সোনম ওয়াংচুক ?
ইঞ্জিনিয়ার থেকে পরিবেশ কর্মীতে রূপান্তরিত হওয়া সোনম ওয়াংচুক (Sonam Wangchuk) বিধানের ষষ্ঠ তপসিলের অধীনে লাদাখকে বিশেষ সুবিধা দান ও হিমালয়ের পরিবেশ রক্ষার দাবিতে বেশ কয়েকমাস ধরেই সরব হয়েছে বাস্তবের বাস্তবের ‘র্যাঞ্চো’। কিন্তু, কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর কথায় কর্ণপাত না করায় মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে অনশনে বসেন সোনম। তখনই তিনি জানিয়ে ছিলেন যে টানা ২১ দিন ধরে নিজের দাবি পূরণে অনশন করবেন।
সোনম ওয়াংচুকের অনশনের কারণের মধ্যে রয়েছে লাদাখের জলবায়ু (Ladakh climate)। প্রাকৃতিক সম্পদকে রক্ষা করার যে আশ্বাস সরকার ২০১৯-২০ সালে দিয়েছিল, তা রাখা হয়নি বলে দাবি করেন সোনম। পাশাপাশি লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের স্বীকৃতিও দেওয়া হয়নি। সেখানকার পরিবেশরক্ষার ক্ষেত্রেও কোনও দৃঢ় পদক্ষেপ করেনি কেন্দ্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, সরকার বলে ভারত গণতন্ত্রের জননী। অথচ সেই ভারতেই লাদাখের মানুষ (ladakh people) এর গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। নয়াদিল্লি থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে লাদাখকে। চার বছর পরও সরকার কোনও প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। এটা লাদাখবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা বলে কটাক্ষ করেন সোনম।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ই আগস্ট জম্মু-কাশ্মীর থেকে লাদাখকে বিচ্ছিন্ন করে গড়ে তোলা হয়েছিল দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। অবিভক্ত ওই রাজ্যে বিধানসভা ছিল। কেন্দ্রশাসিত জম্মু-কাশ্মীরকে বিধানসভা দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত তা সম্ভব হয়। তারপরই হিমালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও পরিবেশ রক্ষার দাবি এবং লাদাখকে সংবিনের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত দাবি করেন ইঞ্জিনিয়ার থেকে পরিবেশকর্মী হয়ে ওঠা সোনম। মার্চের প্রথমে কেন্দ্রীয় সরকার লাদাখের মানুষদের (ladakh people) জানিয়ে দিয়েছিল,তাঁদের সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। এর প্রতিবাদেই ৬ মার্চ থেকে সোনম ও তাঁর অনুগামী সমর্থকরা আমরণ অনশনের সিদ্ধান্ত নেন।
উল্লেখ্য, সোনম ওয়াংচুককে সমর্থন জানিয়ে ও লাদাখকে বিশেষ সুবিধাভুক্ত এলাকা ঘোষণার দাবিতে কার্গিলের কয়েকশো মানুষ কার্গিল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (Kargil Democratic Alliance)-এর নেতৃত্বে তিনদিনের অনশন শুরু করেছে। এদিকে ওয়াংচুকের অনশনের ১৯তম দিন প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও ৫ হাজার মানুষকে তাঁর সঙ্গে যোগ দিতে দেখা যায়। তবে অবশেষে ২১ দিন পর সোনম নিজের পূর্ব নির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী লাদাখের লে-তে অনশন ভাঙলেন একটি ছোট্ট শিশুর হাত থেকে সরবত খেয়ে। তিনি যখন সরবতের গ্লাস হাতে তুলে নেন তখন খুশির হাসি দেখা যায় তাঁর পাশে থাকা অনুগামী ও সঙ্গীদের।
অনশন ভঙ্গ করলেও আরও বড় পদক্ষেপের কথা বলে সোনম। অনশন ভঙ্গ করার পর তিনি বলেন, লাদাখের সাংবিধানিক সুরক্ষা এবং সেখানকার মানুষদের রাজনৈতিক অধিকারের জন্য লড়াই চলবে। এদিকে লাদাখের মানুষ তাদের জেদ থেকে পিছু হটছেন না। এবার স্থানীয় মহিলাদের একটি দল অনশন শুরু করবে বলে জানিয়েছেন। লাদাখকে পূর্ণ রাজ্যের স্বীকৃতির পাশাপাশি লাদাখের জলবায়ু (Ladakh climate) ও হিমায়লের বাস্তুতন্ত্রের সুরক্ষাও ছিল সোনম ওয়াংচুকের অন্যতম প্রধান দাবি। তিনি জানিয়েছেন, আপাতত ২১ দিনের জন্য হলেও পরবর্তীকালে প্রশাসনের তরফে তাঁর দাবি পূরণে কোনও সদিচ্ছা দেখা না গেলে অনশন আমরণও চলতে পারে। কিন্তু, এই তিন সপ্তাহে তাঁর সঙ্গে কথা বলার কোনও ইঙ্গিত সরকারের তরফে দেওয়া হয়নি বলেই খবর। এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবারই এক ভিডিয়ো বার্তায় আরও একবার কেন্দ্রের কাছে নিজের দাবিদাওয়ার কথা জানান সোনম।
- Related topics -
- দেশ
- লাদাখ
- অনশন
- কেন্দ্রীয় সরকার
- পরিবেশ রক্ষা
- পরিবেশ