রাজনৈতিক

Electoral Bond | 'সুপ্রিম' নির্দেশ মানলো SBI! সময়ের মধ্যে ইলেক্টোরাল বন্ড সংক্রান্ত তথ্য কমিশনকে হস্তান্তর করলো রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্ক!

Electoral Bond | 'সুপ্রিম' নির্দেশ মানলো SBI! সময়ের মধ্যে ইলেক্টোরাল বন্ড সংক্রান্ত তথ্য কমিশনকে হস্তান্তর করলো রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্ক!
Key Highlights

একদিনের মধ্যে নির্বাচনী বন্ডের তথ্য নির্বাচন কমিশনকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় এসবিআইকে। এবার সেই কথা মতো মঙ্গলবার নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য দুটি পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত পিডিএফ ফাইল-সহ একটি পেনড্রাইভেকমিশনের কাছে হস্তান্তর করল ব্যাঙ্ক।

সোমবার ইলেক্টোরাল বন্ড (Electoral Bonds) নিয়ে এসবিআই-কে (SBI) রীতিমতো কড়া নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। একদিনের মধ্যে নির্বাচনী বন্ডের তথ্য নির্বাচন কমিশনকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কটিকে। এবার সেই কথা মতোই সুপ্রিম নির্দেশ মানলো এসবিআই। বুধবার শীর্ষ আদালতে একটি হলফনামা দাখিল করে এসবিআই-এর চেয়ারম্যান দীনেশ কুমার খারা জানালেন, মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে সেই সব তথ্য কমিশনের কাছে হস্তান্তর করল এসবিআই।

সামনেই লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha Election)। এখনও ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের তারিখ (Lok Sabha Election 2024 Date) ঘোষণা না হলেও সকলের নজর রাজনৈতিক দল ও তর্কের দিকেই। এর মধ্যে বর্তমানে সবথেকে উল্লেখ্য, ইলেক্টোরাল বন্ড। লোকসভা ২০২৪ (Lok Sabha 2024) নির্বাচনের আগে গত ১৫ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দিয়েছিল সুপ্রিমকোর্ট।  নির্দেশ দেওয়া হয়, ভারতীয় স্টেট ব্যাঙ্ক (SBI) ৬ মার্চের মধ্যে নির্বাচনী বন্ডের যাবতীয় তথ্য দেবে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে। এরপর সেই তথ্য জনসমক্ষে আনবে কমিশন। তবে নির্ধারিত সময়সীমার মাত্র ২ দিন আগে অর্থাৎ ৪ঠা মার্চ শীর্ষ আদালতে এসবিআই জানায়, ওই সময়সীমার মধ্যে বন্ডের তথ্য দেওয়া সম্ভব নয় তাদের পক্ষে। ওই তথ্য জমা দিতে আগামী ৩০সে জুন পর্যন্ত সময় লাগবে। তবে সোমবার পালটা এসবিআইকে শীর্ষ আদালত প্রশ্ন করে, '২৬ দিন ধরে কী করছিলেন?’ রীতিমতো আদালত দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ককে ভর্ৎসনা করে। এর পর স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয় ১২ মার্চের মধ্যে কমিশনকে সমস্ত নথি তুলে দেওয়ার জন্য যা, ১৫ মার্চ বিকেল ৫ টার মধ্যে প্রকাশ করবে কমিশন। সুপ্রিম কোর্টের সেই নির্দেশ মতোই, মঙ্গলবার বিকেলে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী বন্ডের নথি দিয়েছে এসবিআই।

ইলেক্টোরাল বন্ড বা নির্বাচনী বন্ড কী?

নির্বাচনের আগে আর্থিক অনুদান দেওয়ার একটি পদ্ধতি হল নির্বাচনী বন্ড বা ইলেক্টোরাল বন্ড (Electoral Bonds)। এই নিয়ম চালুর জন্য ২০১৭ সালে একাধিক সংশোধন করা হয়। ২০১৮ সাল থেকে তা চালু হয়। নির্বাচনী বন্ড বা ইলেক্টোরাল বন্ডের নিয়ম অনুয়ায়ী, কোনও ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কোনও রাজনৈতিক দলকে আর্থিক অনুদান দিতে চাইলে, স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া থেকে ইলেক্টোরাল বন্ড কিনে পছন্দের রাজনৈতিক দলকে দিতে পারেন। অর্থাৎ পরিচয় এবং অর্থের অঙ্ক গোপন রেখে রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দেওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়েছিল নির্বাচনী বন্ডে।  সেই ব্যবস্থার দায়িত্বে ছিল স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। কথা ছিল, কোনও ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থা রাজনৈতিক দলগুলিকে চাঁদা দিতে চাইলে, স্টেট ব্যাঙ্কের কাছ থেকে নির্দিষ্ট অর্থের অঙ্কের বন্ড কিনে সংশ্লিষ্ট দলকে দেবেন।অনুদানপ্রাপ্ত রাজনৈতিক দলগুলি ১৫ দিনের মধ্যে এসবিআই-এর শাখার গিয়ে সেই বন্ড ভাঙিয়ে নগদ করতে পারে। মূলত কালো টাকার লেনদেন রুখতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিল মোদি সরকার। তবে এই প্রকল্পের অপর একটি শর্ত হল, যে রাজনৈতিক দল গত লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে কমপক্ষে এক শতাংশ ভোট পেয়েছে তারাই এই প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক অনুদান পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবে। এর ফলে নতুন রাজনৈতিক দলগুলির অর্থনৈতিক অনুদান পাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় সম্পূর্ণ।

প্রসঙ্গত বিষয়, নির্বাচনী বন্ড নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এই বন্ড নিয়ে বিতর্কের মূল কারণ হল ক্রেতার নাম গোপন থাকা। দাতার নাম-পরিচয় প্রকাশ্যে ও নির্বাচন কমিশনের সামনেও জানানো যায় না। যদিও কোনও নাগরিক বা কর্পোরেট ইলেক্টোরাল বন্ড কিনতে পারে কিন্তু তথ্য অনুসারে এখনও পর্যন্ত যত ইলেক্টোরাল বন্ড বিক্রি হয়েছে তার মধ্যে  ১ লাখ ১ কোটি মূল্যের ৯৯ শতাংশই কিনেছে কর্পোরেটরা। এছাড়াও নির্বাচনী বন্ড বিক্রির একমাত্র অধিকারী স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। যেহেতু স্টেট ব্য়াঙ্ক অফ ইন্ডিয়া বর্তমানে শাসকদলের পরিধির মধ্যে, সেক্ষেত্রে কোনও সংস্থা বা ব্যক্তি নির্বাচনী বন্ড কিনেছে তা ক্ষমতাসীন শাসকরে পক্ষে জানা সহজ। এক্ষেত্রে বিরোধী রাজনৈতিক কোনও দলকে কেউ নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে অনুদান দিলে ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষে সেই ব্যক্তি বা সংস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে। এদিকে লোকসভার আগেই ১৫ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দিয়েছিল সুপ্রিমকোর্ট। ফলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের তারিখ (Lok Sabha Election 2024 Date) ঘোষণা না হলেও, এই বন্ড নিয়ে রাজনৈতিক বির্তকের ঝড় সৃষ্টি হয়েছে।

কবে, কোথায় প্রকাশিত হতে পারে ইলেক্টোরাল বন্ড সংক্রান্ত তথ্য?

লোকসভা ২০২৪ (Lok Sabha 2024) নির্বাচনের আগেই ১৫ই মার্চের মধ্যে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত। ১৫ই মার্চের পরে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত সব তথ্য দেখা যেতে পারে নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে। তবে যে তথ্য জমা দেওয়া হয়েছে তা অনেক বড়। শুক্রবারের মধ্যে সব তথ্য গুছিয়ে আপলোড করা কতটা সম্ভব তা নিয়ে প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের কাছে চ্য়ালেঞ্জিং হতে পারে।

এসবিআই জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৪-এর ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২২, ২১৭টি নির্বাচনী বন্ড সংগ্রহ করেছেন ক্রেতারা। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলি ২২,০৩০টি বন্ডের অর্থ সংগ্রহ করেছে। বাকি ১৮৭টি বন্ডের অর্থ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল দান করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টকে এসবিআই আরও জানিয়েছে, দুটি পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত পিডিএফ ফাইল-সহ একটি পেনড্রাইভে নির্বাচনী বন্ডের তথ্য হস্তান্তর করা হয়েছে কমিশনকে। এরপর তা লোকসভা নির্বাচন (Lok Sabha Election) এর আগে প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন।