কাজের দমবন্ধ চাপ থেকে ছুটি নিয়ে একটু আশাপাশ থেকে ঘুরে আসা যায় তাহলে মন্দ হয় না। ট্রেন, বাস, ফ্লাইটের টিকিটের ঝুট ঝামেলা ছাড়াই বেরিয়ে পড়ুন রোড ট্রিপে।
চাকুরীজীবিদের জীবনের নিত্য রুটিন হল - রোজ সকালে ঘুম থেকে ওঠা, দাঁত মাজা, খবর কাগজে বিজ্ঞাপন খোঁজা। এরপর হাজার ব্যস্ততায় স্নান খাওয়া সেরে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া।
বাড়ি, অফিস আর ফের বাড়ি। দিনগুলো যেন হাওয়ার মতো চলে যায়। কাজ কাজা আর কাজ। দমবন্ধ এই পরিবেশে ভালোবাসার শহর কলকাতাকেও যেন অসহ্য মনে হয়। কাজ তো করতেই হবে। কিন্তু এই কাজের মাঝেই যদি শহরের দমবন্ধ করা পরিবেশ ছেড়ে আশাপাশ থেকে ঘুরে আসা যায় তাহলে মন্দ হয় না। বেড়াতে যেতে হবে এমন কোনও জায়গায় যেখানে ইচ্ছে হলেই চলে যাওয়া যায়। ট্রেন, বাস, ফ্লাইটের টিকিটের ঝুট ঝামেলা থাকে না। নিজের একটা গাড়ি থাকলেই চলে। মানে সাদা ভাষায় যাকে বলে রোড ট্রিপ। পাহাড় হোক বা সমুদ্র, কিংবা জঙ্গল গাড়ি রোড ট্রিপেই কেটে যাবে দিন কয়েক। দারুণ মজা।
কলকাতা ভ্রমণ করতে চাইলে শীতকালই সেরা। কিন্তু কলকাতা থেকে রোড ট্রিপ করতে চাইলে সারা বছরই সেরা সময়। এদিকে খরচও বিশেষ হবে না। তাহলে রোড ট্রিপ শুরু করা যাক?
Bolpur | বোলপুর
ট্রেনে বোলপুর যেতে লাগে আড়াই ঘণ্টা আর গাড়িতে গেলে ঘণ্টা তিনেক। কলকাতার খুব কাছেই অবস্থিত বীরভূমের এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তথা শান্তি নিকেতন। সংস্কৃতিপ্রেমী বাঙালির প্রিয় স্থান এটি। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রায় নিজের হাতে গড়া শান্তিনিকেতনে পা রাখলেই মনটা ভালো হয়ে যায়। শহরের আনাচ কানাচে রয়েছে রবি ঠাকুরের স্মৃতি। রাঙা মাটির পথ দিয়ে চলে যেতে পারেন কোপাই নদীতে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্রভবন, সংগ্রহশালা ইত্যাদি দেখে নিতে পারেন। শনিবার করে সোনাঝুরির জঙ্গলে আদিবাসীদের হাট বসে। সেই হাটের টানেই আজকাল শান্তিনিকেতনে হাজির হন পর্যটকরা। এখানে পাবেন নানা বাজেটের হোটেল, হোমস্টে, গেস্ট হাউজ। শান্তি নিকেতন থেকে ঘুরে আসতে পারেন শ্রীনিকেতন, কঙ্কালীতলা আরও কত কী।
মন্দারমণি | Mandarmoni
রোড ট্রিপের জন্য দিঘার পরেই আসে মন্দারমণির নাম। দিঘার থেকে মন্দারমণির বাজেট একটু বেশি। আর দিঘা স্বপরিবারে ঘোরার জায়গা হলেও মন্দারমণিতে ছোটোদের না যাওয়াই ভালো। গাড়িতে করে মন্দারমণি যেতে প্রায় ছয় ঘণ্টাই লাগে। সমুদ্র, সমুদ্র সৈকত, সামুদ্রিক খাবার, পানীয় সব মিলিয়ে মন্দারমণি জমজমাট। অবসর যাপনের সেরা স্থান এটি। সন্ধ্যায় সমুদ্র সৈকতে সময় কাটানোর মজাই আলাদা। ভোরে সূর্যোদয় দেখার অভিজ্ঞতাও অনন্য।
গ্যাংটক | Gangtok
কলকাতা থেকে রোড ট্রিপে ঘুরে আসা যায় গ্যাংটক থেকে। সিকিম যেতে গেলে রাজধানী গ্যাংটকে একবার পা রাখতেই হবে। সেখান থেকে কীভাবে কোথায় যাবেন প্ল্যান করে নেন সকলে। গ্যাংটকে প্রচুর ট্যুর অপারেটর পাবেন। তাঁদের পরামর্শ মেনে ঘুরতে পারেন আবার নিজের প্ল্যান মতোও ঘুরতে পারেন। শপিং করার জন্য গ্যাংটক দারুণ জায়গা। তবে সেটা বরং ফেরার সময় করুন। সিকিমের চারটি দিক। পূর্ব-পশ্চিম-উত্তর-দক্ষিণ। যত উত্তরে যাবেন ঠান্ডা তত বাড়বে। গ্রীষ্মকালেও সেখানকার ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। গ্যাংটক থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সোংমো বা ছাঙ্গু লেক। প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ফিট উপরের এই লেকটি একবার চোখের দেখা না দেখলে মিস করবেন। এর সৌন্দর্য্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। এখানে চমরীগাই বা ইয়াকের পিঠে চড়ে ঘুরতে পারবেন। সম্প্রতি সিকিমকে ভারতের সেরা শ্যুটিং স্পট বলে ঘোষণা করেছে কেন্দ্র সরকার। ছাঙ্গু লেকে গেলে তার কারণটা বুঝতে পারবেন।
সুন্দরবন | Sundarban
সুন্দরবনে বেড়াতে যেতে চাইলে বিন্দাস ঘুরে নিন। গাড়ি চড়ে সুন্দর বন যাওয়াই যায়। তবে নৌকার মধ্যে গাড়ি চাপিয়ে নদী পেরোতে হবে। নদী পেরিয়ে ফের নিজের গাড়িতে ঘুরুন। ম্যানগ্রোভ অরণ্য, কুমীর, হরিণ, নানা জাতির পাখি সবই দেখতে পাবেন। লঞ্চে করে নদীতে ঘুরে বেড়ান। চারদিকে সবুজ বনানী দেখে চোখ জুড়িয়ে যাবে। সুন্দরবন অভয়ারণ্য ঘুরে নিন মন মতো। ভাগ্য ভালো থাকলে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেখাও পেয়ে যেতে পারেন। জঙ্গলে প্রবেশের জন্য প্রশিক্ষিত গাইড পেয়ে যাবেন। আর হ্যাঁ, নদীর টাটকা মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি এবং বন মোরগ খেতে খেতে ভুলবেন না যেন।