Rath Yatra 2023 | চড়া রোদেও পুরীতে ভিড় ভক্তদের! কেবল জগন্নাথের রথেই নয়, বলরাম, সুভদ্রার রথেও রয়েছে বহু অজানা বিশেষত্ব!

Thursday, December 21 2023, 2:33 pm
highlightKey Highlights

জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার রথের রয়েছে আলাদা আলাদা নাম ও বিশেষত্ব। এই রথ বানানো হয় বিশেষ নিয়মে, যা ছাড়া অসম্পূর্ণ রথযাত্রা।


অবশেষে এসে গেল রথযাত্রা (Rath Yatra 2023)। নীলাচলে সুভদ্রা, বলরামকে নিয়ে মাসির বাড়ি যাওয়ার জন্য প্রস্তুত জগন্নাথ। দেশজুড়ে বিশেষত বাংলা (West Bengal) এবং ওড়িশায় (Odisha) রথযাত্রা মহোৎসবের জন্য ভিড় করেছেন দেশ-বিদেশ থেকে আশা অগুনতি মানুষজন। চলতি বছর অর্থাৎ ২০২৩-এ জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা পড়েছে আজ অর্থাৎ ২০ই জুন।এবারের রথযাত্রা শুরু হবে এদিন রাত ১০ টা ৪ মিনিটে। যা শেষ হবে পরের দিন অর্থাৎ ২১ সে জুন সন্ধ্যে ৭  টা ৯ মিনিটে।

রথযাত্রা মহোৎসবের জন্য ভিড় করেছেন দেশ-বিদেশ থেকে আশা অগুনতি মানুষজন
রথযাত্রা মহোৎসবের জন্য ভিড় করেছেন দেশ-বিদেশ থেকে আশা অগুনতি মানুষজন

আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষে দ্বিতীয় তিথিতে বের হয় জগন্নাথের রথযাত্রা। ঐতিহ্যগতভাবে প্রতিবছরের ওড়িশার পুরীতে (Puri) ধুমধাম করে পালন করা হয় রথযাত্রা উৎসব। মনে করা হয়, পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো এই পুরীর জগন্নাথ মন্দির (Puri Jagannath Mandir)। রথযাত্রার দিন জগন্নাথ,বলরাম এবং সুভদ্রা যথাক্রমে তিনটি আলাদা আলাদা রথে বের হন। এই তিনটি রথের আবার আলাদা নামও রয়েছে। রয়েছে আলাদা আলাদা বিশেষত্বও। প্রতিবছরই এই তিনটি রথ সুন্দরভাবে সাজানো হয়। রথ বানানোর ক্ষেত্রে মানা হয় বিশেষ নিয়ম।

আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষে দ্বিতীয় তিথিতে বের হয় জগন্নাথের রথযাত্রা
আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষে দ্বিতীয় তিথিতে বের হয় জগন্নাথের রথযাত্রা

জগন্নাথ দেবের রথের বিশেষত্ব | Speciality of Jagannath Rath :

জগন্নাথ দেবের রথকে চক্রধবজ বা নন্দীঘোষ বলা হয়। যার অর্থ কোলাহলপূর্ণ এবং আনন্দময় শব্দ। এই রথের সারথির নাম দারুক। জগন্নাথ দেবের রথে থাকে ১৬ টি চাকা, যার এক একটির পরিধি ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি। পুরাণে কথিত আছে, এই রথের নাম দেন স্বয়ং ইন্দ্র। ভক্তরা মনে করেন, জগন্নাথ দেব প্রকট হওয়ার আগে ১৬ টি উপাদান দিয়ে পৃথিবী নির্মাণ করেন। চন্দ্রের যে ১৬ টি কলার কথা আমরা শুনে থাকি, সেটা আসলে চাঁদ ১৬ টি কলার পরিক্রমণের মধ্য দিয়ে একটি কালচক্র সম্পন্ন করে সেটি। জগন্নাথ দেবের রথের চাকা ও সেই ১৬টি কলারই প্রতীক। ছোট বড় আকারের মোট ৮৩২টি কাঠের টুকরো দিয়ে তৈরি করা হয় জগন্নাথ দেবের রথ। নন্দী ঘোষ রথের উচ্চতা সাড়ে ১৩ মিটার অর্থাৎ ৪৫ ফুট। যা চূড়ায় থাকে ত্রৈলোক্য মোহিনী নামে ধ্বজা। এই রথের প্রতিটি শাখা হলুদ রঙের হয় রথের কাঠামো ঢাকা থাকে লাল হলুদ কাপড় দিয়ে। এই রথ টানে শঙ্খ, বলাতক, শ্বেত ও হরিদাক্ষ নামের চারটি ঘোড়া এবং রথে জগন্নাথ দেবের পার্শ্বদেবতা হিসেবে থাকেন ৯ জন দেবতা। যারা হলেন, গোপীকৃষ্ণ, গোবর্ধন, রাম, নারায়ণ, ত্রিবিক্রম, বরাহ, রুদ্র, নৃসিংহ এবং হনুমান।

জগন্নাথ দেবের  রথে থাকে ১৬ টি চাকা, যার এক একটির পরিধি ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি 
জগন্নাথ দেবের  রথে থাকে ১৬ টি চাকা, যার এক একটির পরিধি ৬ ফুট ৬ ইঞ্চি 

বলরামের রথের বিশেষত্ব | Speciality of Balaram Rath :

বলরামের রথকে তালধবজা বলা হয়। যার অর্থ অত্যাবশক শক্তিশালী ছন্দের শব্দ। এই রথে রয়েছে ১৪ টি টাকা যা কালো কাঠের ঘোড়া দ্বারা টানা হয়। এছাড়াও বলরাম দেবের রথের চূড়ায় থাকে শ্রী হনুমান।

বলরামের রথকে বলা হয় তালধবজা
বলরামের রথকে বলা হয় তালধবজা

সুভদ্রার রথের বিশেষত্ব | Speciality of Subhadra Rath :

সুভদ্রার রথকে পদ্মধবজ বা দর্পদলান বলা হয়। যার অর্থ অহংকার ধ্বংসকারী। ১২টি চাকা দিয়ে এবং চারটি লাল কাঠের ঘোড়া দ্বারা টানা হয় এই রথ। যার চূড়ায় রয়েছে একটি পদ্ম।

সুভদ্রার রথের অর্থ অহংকার ধ্বংসকারী
সুভদ্রার রথের অর্থ অহংকার ধ্বংসকারী

রথ তৈরির বিশেষ নিয়ম | Special Rules for Rath Making :

রথ যাত্রার ব্যবহৃত প্রতিটি রতি নতুনভাবে প্রতিবছর তৈরি করা হয়। ছুতোররা অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে এই রথ নির্মাণ কার্য শুরু করে উজ্জ্বল রঙে আঁকা হয় এবং শীর্ষ গুলির লাল কালো সবুজ বা হলুদ রঙের ছাতা দিয়ে আবৃত করা হয়। ভগবান জগন্নাথ দেবের রথের ক্ষেত্রে লাল এবং হলুদ, বলরাম দেবের রথের ক্ষেত্রে লাল এবং সবুজ, এবং সুভদ্রা দেবীর রথের ক্ষেত্রে লাল এবং কালো রং ব্যবহার করা হয়। 

অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে রথ নির্মাণ কার্য শুরু করে ছুতোররা
অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে রথ নির্মাণ কার্য শুরু করে ছুতোররা

আধ্যাত্মিক দিক অনুযায়ী, এই রথের গভীর ব্যাখা রয়েছে। এখানে মানব দেহকে রথ হিসেবে এবং এর সারথী বা চালককে ভগবান হিসেবে বর্ণনা করা হয়। এই তিনটি রথী নিম এবং অন্যান্য গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। রথযাত্রা শেষ হওয়ার পর এই রথগুলি ভেঙে ফেলা হয় এবং মন্দিরের রান্নাঘরে জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

রথযাত্রা শেষ হওয়ার পর রথগুলি ভেঙে ফেলা হয় এবং মন্দিরের রান্নাঘরে জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়
রথযাত্রা শেষ হওয়ার পর রথগুলি ভেঙে ফেলা হয় এবং মন্দিরের রান্নাঘরে জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়

রথযাত্রার দিন জগন্নাথ দেবকে তার দাদা বলভদ্র এবং বোন দেবী সুভদ্রার সঙ্গে পুজো করা হয়। ভক্তরা বিশ্বাস করেন যে জগন্নাথের পবিত্র রথ হল স্বয়ং দেবতার মূর্ত প্রতিক। যার আত্মা রথের ওপরে অতিষ্ঠ দেবতাদের মধ্যে থাকে। এছাড়াও বছরে একবারই রথযাত্রা উপলক্ষে মন্দির থেকে বেরিয়ে ভক্তদের দর্শন দেন জগন্নাথ বলভদ্র এবং সুভদ্রা। ফলে ভক্তদের বিশ্বাস জগন্নাথ দেবের রথের স্পর্শ করলে সমস্ত পাপ মুছে যাবে। বিশ্বাস অনুযায়ী জগন্নাথ দেবের রথের দরি স্পর্শ করলে পুনর্জন্মের কষ্ট সহ্য করতে হয় না।

ভক্তদের বিশ্বাস, জগন্নাথ দেবের রথের স্পর্শ করলে সমস্ত পাপ মুছে যাবে
ভক্তদের বিশ্বাস, জগন্নাথ দেবের রথের স্পর্শ করলে সমস্ত পাপ মুছে যাবে

রথযাত্রার দিন সকালের রীতি মেনে করা হয় মঙ্গলারতি। এরপর একে একে হয় মইলম ও অবসর। গর্ভগৃহ থেকে ২২ ধাপে নামিয়ে আনা হয় জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রাকে। ২২ ধাপের তৃতীয় ধাপে শিবের দর্শন নেন জগন্নাথ। এরপর বাজনা বাজিয়ে দুলিয়ে দুলিয়ে বিগ্রকে তোলা হয় রথে, যা পরিচিত নামে পোহান্ডি নামে। এরপর প্রথা মেনে সোনার ঝাঁটা দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করে দেন পুরির রাজা।

 ২২ ধাপে নামিয়ে আনা হয় জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রাকে
 ২২ ধাপে নামিয়ে আনা হয় জগন্নাথ, বলভদ্র এবং সুভদ্রাকে

  রথযাত্রা শুরু হলে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরত্ব জুড়ে গুন্ডিচা মন্দিরে (Gundicha Mandir) এই যাত্রা শেষ হয়। এই মন্দিরে পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় একদিন। এরপর এই মন্দিরে ৮ দিন থাকার পর ৯ দিনের মাথায় রথ নিয়ে ফিরে আসেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা। এই যাত্রাকে বলা হয় 'বহুদা যাত্রা' (Bahuda Yatra)। উল্লেখ্য, এই যাত্রায় জগন্নাথের রথ থামে জগন্নাথের 'মাসির বাড়ি'। তবে অনেকেই 'মাসি' মানে এখানে মায়ের বোন '' বলে মনে করলেও তা কিন্তু নয়। এক্ষেত্রে 'মাসি'র পরিচয় হলো পোর্ণমাসী। যিনি আসলে জগন্নাথ দেবের ভক্ত। তার কাছেই আসেন জগন্নাথ দেব।

গুন্ডিচা মন্দিরে ৮ দিন থাকার পর ৯ দিনের মাথায় রথ নিয়ে ফিরে আসেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা
গুন্ডিচা মন্দিরে ৮ দিন থাকার পর ৯ দিনের মাথায় রথ নিয়ে ফিরে আসেন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা

ইতিমধ্যেই আজ রথযাত্রা উপলক্ষে আহমেদাবাদের (Ahmedabad) জগন্নাথ মন্দিরে (Jagannath Temple)  'মঙ্গল আরতি' করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। গত বছরও আহমেদাবাদের জামালপুর (Jamalpur) এলাকার জগন্নাথ মন্দিরে দেখা গিয়েছিলো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে, এবারেও সেই ধারা বজায় রাখলেন শাহ। এদিন গুজরাট (Gujarat) সফরে তাঁর একাধিক কর্মসূচি থাকলেও রথ যাত্রা উপলক্ষে   'মঙ্গল আরতি' র জন্য বের করলেন তাঁর সময়।

রথযাত্রা উপলক্ষে আহমেদাবাদে জগন্নাথ মন্দিরে  'মঙ্গল আরতি' করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ
রথযাত্রা উপলক্ষে আহমেদাবাদে জগন্নাথ মন্দিরে  'মঙ্গল আরতি' করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ

অন্যদিকে , রথযাত্রায় পুরীতে ভিড় করেছেন অগুনতি ভক্ত। সকলেরই আশা, একবার জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার রথের রশি ধরে টানার। ভিড় সামাল দিতে প্রস্তুত প্রশাসনও। পুরী জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, মজুত রাখা হয়েছে অন্তত ২৫ লক্ষ জলের বোতল, ৭২টি অ্যাম্বুল্যান্স। ব্যবস্থা করা হয়েছে ‘গ্রিন করিডর’ও। নিকটবর্তী  হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ঢেলে সাজানো হয়েছে চিকিৎসা পরিকাঠামো। প্রশাসনের ধারণা, এবার রথযাত্রায় ভিড় হতে পারে প্রায় ২০ লক্ষ ভক্তের। পুরীতে প্রতিবছরই ভক্তদের সীমাহীন ভিড় দেখা যায় জগন্নাথ মন্দির চত্বরে। অনেকেই গরমে ও ভিড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে এবার যেন সেই সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে তীব্র গরম ও চড়া রোদ। ফলে  জগন্নাথ মন্দিরের সিংহদ্বার থেকে গুন্ডিচা মন্দির পর্যন্ত কিলোমিটার তিনেক পথ (বড় দাণ্ড বা গ্র্যান্ড রোড) জুড়ে অন্তত ২২টা জায়গা জল ছিটনো হবে বলে জানায় প্রশাসন।




পিডিএফ ডাউনলোড | Print or Download PDF File