ইতিহাস

ভারতবর্ষের শিল্পে আধুনিক ধারার পথিকৃৎ রামকিঙ্কর বেইজ

ভারতবর্ষের শিল্পে আধুনিক ধারার পথিকৃৎ রামকিঙ্কর বেইজ
Key Highlights

রামকিঙ্কর বেইজ: ৭৪ বছরের জীবনকালে তিনি সৃষ্টি করেছেন এক অনন্য শিল্প শৈলী, যেই শিল্পকলার মধ্যে দিয়ে ভারতীয় শিল্পের ইতিহাসে শুরু হয়েছিল নতুন একটি অধ্যায়।

২৫শে মে, ১৯০৬ সালে পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার যোগীপাড়ায় এক পরমানিক পরিবার চন্ডীচরণ প্রামানিকের ঘরে জন্ম নিয়েছিলেন ‘আধুনিক শিল্প ধারার পথিকৃৎ’ রামকিঙ্কর বেইজ। রামকিঙ্কর বেইজের মাতা সম্পূর্ণা। পিতা ছিলেন চণ্ডীচরণ (বেইজ),  পেশায় একজন নাপিত। ক্ষৌরকর্ম ছিল তাদের পারিবারিক পেশা। ছোট থেকেই তিনি ছিলেন ডানপিটে, খামখেয়ালী পাগলাটে গোছের। তিনি নিজেই তার পদবী পরিবর্তন করে 'বেইজ' রেখেছিলেন । শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এটাই সত্যি। বৈদ্য পদবীটির পরিবর্তিত রূপ হল "বেইজ" পদবী।

ছোটবেলায় কুমোড় পাড়ায় ঘুরে ঘুরে তিনি মূর্তি বানানো দেখে নিজের খেলার ছলেই মূর্তি সৃষ্টির কাজে ব্রতী হন । ক্রমে ছবি অঙ্কনের দিকেও তার মন যায়, কৈশোর অবস্থার মাঝামাঝিতে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি আঁকতেন । কোনোদিনই তাঁর পড়াশোনায় মন ছিলনা, মেট্রিক পাশ করার পর আর বিশেষ পড়াশোনা করেননি তিনি। চিত্রকলা এবং মূর্তি তৈরীই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। অভাবের সংসারে অর্থ আয়ের জন্য তিনি নিষিদ্ধ পল্লীতে গিয়েও মহিলাদের মূর্তি গড়ে দিতেন।

ছোটবেলা থেকেই বড় ইচ্ছে ছিল, যেখান দিয়ে যাব, রাস্তার ধারে ধারে মূর্তি রচনা করে চলব। সূর্যের আলো, চাঁদের আলো আর বর্ষাতুর আকাশের তলায় বড় মূর্তি দেখতে ভালো লাগে।

রামকিঙ্কর বেইজ

দেশ তখনও স্বাধীন হয়নি, চারিদিকে জ্বলছে বিপ্লবের আগুন। সেই বিপ্লবের আগুনে উত্তপ্ত হয়ে রামকিঙ্কর বন্দুক হাতে তুলে নেননি ঠিকই কিন্তু সামান্য তুলির টানে বিভিন্ন ছবির মাধ্যমে তিনি তার ভেতরে থাকা বৈপ্লবিকতাকে বার বার জনসমক্ষে তুলে ধরেছেন। এহেনো পরিস্থিতিতেই তিনি নজরে পড়েন বাঁকুড়ার বিশিষ্ট সাংবাদিক এবং প্রবাসী পত্রিকা র সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের।

রামকিঙ্করের বয়স তখন সবে ১৯, সাল হল ১৯২৫। প্রাপ্তবয়স্কের সীমানা পেরিয়ে সদ্য উত্তাল যৌবনে পা রাখা এক যুবক শান্তিনিকেতনে পা রেখেই যেন বুঝতে পারলেন, এতদিন এই আলকেমির সন্ধানেই ছিল তার অন্তরাত্মা। রামানন্দের সহায়তায় ভর্তি হয়ে গেলেন বিশ্বভারতীর কলাভবনে। নন্দলাল বসু এবং স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শিক্ষক হিসেবে পেয়ে তিনি স্নেহধন্য হলেন।

আমি যখন শান্তিনিকেতনে কিছু ভাস্কর্য গড়া নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম, তখন আমার মা মারা যান। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়েও আমি দেখতে যেতে পারিনি। বড্ড খারাপ লেগেছিল। কিন্তু মায়ের মৃত্যু আমার শিল্পের ছায়াকে স্পর্শ করতে পারেনি। সবাই মারা গেছে, আমার দাদা-বোন-বাবা-মা— সবাই, সবাই।... মৃত্যু সম্পর্কে আমি সব সময়ই উদাসীন। একজন শিল্পী যতক্ষণ সৃষ্টির নেশায় মাতাল হয়ে থাকেন, ততক্ষণ পর্যন্ত মৃত্যু কোনোভাবেই তাকে স্পর্শ করতে পারে না।

রামকিঙ্কর বেইজ

পাঁচ বছরের অধ্যয়নপর্ব শেষ করে, ১৯৩০ সালে তিনি কলাভবনে যোগ দেন খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে। তবে পেশাগত জীবনে পদার্পণ করেন ১৯৩৪ সালে। তখন কলাভবনের স্থায়ী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। পরবর্তী সময়ে তিনি ভাস্কর্য বিভাগের প্রধানও হয়েছিলেন। সেই চল্লিশের দশক ; ভারতবর্ষ তখন উপনিবেশবাদে নিমজ্জিত। নিজের সংস্কৃতির অস্তিত্ব যখন চাবুকের আঘাতে আর ঘোড়সওয়ারের ধুলোয় লুটোপুটি খাচ্ছে তখন শান্তিনিকেতনকে শিল্প-সাহিত্য চর্চার এক গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গিয়েছিলেন ত্রয়ীখ্যাত রামকিঙ্কর বেইজ, নন্দলাল বসু এবং বিনোদবিহারী মুখার্জী। তাদের দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গি আর নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং শিল্পচর্চার ফল হচ্ছে- শান্তিনিকেতনকে ভারতের শিল্প-সাহিত্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা।

রামকিঙ্করের সবচাইতে বিখ্যাত এবং পূর্ণাঙ্গ দুটি শিল্পকর্মের নাম হচ্ছে 'সাওতাল পরিবার' (১৯৩৮) এবং 'কলের বাঁশি' (১৯৫৬)। শান্তিনিকতনের পাশেই ছিল পিয়ার্সন পল্লী। সেখানে ছিল সাঁওতালদের বাস। তারা প্রতিদিন সকালে কাজে বের হয়ে যেত আর ফিরে আসত সন্ধ্যায়। প্রতিদিনই তাদের দেখতে পেতেন শিল্পী। এভাবে তারাও হয়ে ওঠেন রামকিঙ্করের মডেল।

তিনি মনে করতেন স্ব ইচ্ছায় এবং নিজের তাগিদে শিক্ষা গ্রহণ করাই হল প্রকৃত শিক্ষা । নিজে থেকেই, নিজের তাগিদে শিক্ষা গ্রহণ ই আসলে প্রকৃত শিক্ষা । তিনি নিজেই নিজের শিক্ষক ছিলেন । তার শিল্পকর্মের মধ্যে দিয়ে তিনি সেইসব শিক্ষারই প্রর্দশন ঘটিয়েছেন । ১৯৭০ সালে তিনি পদ্মভূষন এ ভূষিত হন, ১৯৭৭-এ রবীন্দ্রভারতী তাকে দেশিকোত্তম প্রদান করে সম্মানিত করেন ,এছাড়া ১৯৭৯-এ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি.লিট সম্মাননায় ও ভূষিত করে । এত কিছুর পরেও শিল্পী চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করেন এবং অবশেষে ১৯৮০ তে এই মহান ব্যক্তিত্বের জীবনাবসান ঘটে ।

জীবনে অনেক মেয়ে এসেছে, এটা সত্যি। কেউ এসেছে দেহ নিয়ে, কেউ এসেছে মানসিক তীব্র আকর্ষণ নিয়ে। কিন্তু ছাড়িনি কাউকে। ধরেছি, আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছি। হজম করে ছিবড়ে করে ছেড়েছি। হজম করার মানে জানো? ও মন্ত্রটা আমার গুরুদেবের কাছে শেখা। তাঁর থেকে জন্ম নিয়েছে আমার অনেক ছবি, মূর্তি, অনেক কল্পনা, আর অনুভব।…আমার মডেলরা আমার বহু স্কেচে, ছবিতে, মূর্তিতে, বেঁচে আছে। মডেলরা তো এভাবেই বেঁচে থাকে।

রামকিঙ্কর বেইজ

Bangladesh Plane Crash | বাংলাদেশে বিমান দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৯! আহত ১৬৪ জন!
21st July Live | '২৭ শে জুলাই থেকে ভাষা আন্দোলন শুরু হবে'! প্রতি শনি ও রবিবার মিটিং-মিছিল করার নির্দেশ দলকে!
Cruise Ship Fire | সমুদ্রে অগ্নিকান্ড, মৃত ৩, আহত ১৮ জন! আতঙ্কে জাহাজ থেকে ঝাঁপ দিলেন বাকি যাত্রীরা
Live-in Partner Murder | পুলিশকে খুন থানায় আত্মসমর্পণ লিভ-ইন পার্টনারের! গুজরাটে ভয়াবহ নৃশংসতা
Balurghat Hospital | মেদিনীপুরের পুনরাবৃত্তি? ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরই অসুস্থ ১০ প্রসূতি! রাতেই বালুরঘাট হাসপাতালে পৌঁছলেন CMOH
EMU Local Train | ট্রেন যাত্রীদের জন্য সুখবর! ডায়মন্ড হারবার ও বারাসত শাখায় চলবে অতিরিক্ত ৫টি ট্রেন!
২১ টি সেরা যোগাসন এবং তাদের উপকারিতা সঙ্গে ছবি | 21 yoga poses and their benefits with photo